মুসলিম কবি সাহিত্যিকদের সৃজনশীলতায় বিজাতীয় ভালবাসাকে প্রভাবিত করছে।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৫ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৩:০২:০৬ দুপুর
শৃংখলিত সভ্য মানুষমাত্রই ধর্মের অনুবর্তী।সৃষ্টির আদিকাল থেকে মানব সম্প্রদায় সামাজিক ভাবে একে মেন চলে আসছে।একজন ধর্মপ্রান মানুষ ও আর একজন ধর্মহীন মনুষের মধ্যে আকাশ পাতাল ব্যবধান দেখতে পাওয়া যায়।ধর্মপ্রান কোন মানুষের পক্ষে নিয়ম ভংগ করা চলে না।যিনি যে ধর্মের তাকে সে ধর্মের প্রতি অনুগত হয়ে চললে কোন সমালোচনা থাকে না।আবার তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা সম্মান করবেন সামাজিক ক্ষেত্রে।এখানে মানবতার(Humanity) একটি ব্যাপার পরিস্ফুটিত হয়।ইসলামের যুগে আমরা দেখেছি সাহাবাদের পাশেই ইহুদের অনেকের বসবাস ছিল।তারা মানবিক দিকগুলোকে এমন করে দেখতেন যা নিজের পরিবারের লোকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতো।আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক একজন প্রখ্যাত সাহাবি ছিলেন যার প্রতিবেশী ছিল একজন ইহুদি।ইহুদির বাড়িটি একেবারে লাগা ছিল আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারকের বাড়ির সাথে।দু'জনের বাড়িই ছোট হওয়ায় আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক অনেকবারই ইহুদিকে বাড়িটি বিক্রি করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন কিন্ত ইহুদি রাজি ছিল না আর সে সময় সে ছিল সবল মানুষ।কিছুদিন পর ইহুদি তার বাড়িটি বিক্রি করার প্রস্তাব দিল কিন্তু আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক নাকচ করে দিলেন যে বাড়িটি তিনি কিনবেন না।ইহুদি বললো আপনি কতবার আমাকে প্রস্তাব দিলেন বাড়িটি বিক্রি করার জন্য এখন আমি আসুবিধায় পড়ে বাড়ি বিক্রয় করার প্রস্তাব দিচ্ছি কিন্তু আপনি নাকচ করছেন।আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক বললেন,আমি যখন বাড়িটি খরিদ করতে চেয়েছি তখন তুমি ছিলে সবল।আর এখন তুমি অসুবিধায় পড়ে বাড়ি বিক্রি করছ, এ অবস্হায় তোমাকে অসুবিদায় ফেলে আমি বাড়িটি খরিদ করতে পারি না।কত টাকা লাগবে তুমি নিয়ে নাও আর তুমি এ বাড়িতেই থাক।এ ছিল ইসলামি সমাজের ভ্রাতৃত্ববোধ যার ইতিহাস আমাদের প্রজন্মের অনেকের জানা বা চর্চাও নেই।
একজন মানুষের জন্য আর একজন মানুষের এই মানবতা থাকা স্বাভাবিক ও থাকতে হবে।স্বাধীনতার পর থেকে রাজনৈতিক ইস্যুকে কেন্দ্র করে আমাদের দেশে সংখ্যালগুদের উপর, আবার অনেক ক্ষেত্রে সংখ্যাগুরু গরীব মানুষদের উপর যে নির্যাতন হয়ে আসছে তা সমাজে কি প্রমান করে? কোন দুর্ঘটনার বিচার করতে কোন সরকারই সমর্থ হয় নি।আমাদের লেখক ও শুশিল সমাজের কেউ কেউ গরম গরম কথা ও লেখা লেখি করে এর পর ঘুমের ঘোরে চলে যান।এ ঘটনাগুলো রিভিউ করা বা সরকারকে চাপ দেয়ার মত কাজ তারা করেন না।বরং দেখা যায় কারো মৃত্যু হলে আবেগ ছড়িয়ে দিতে কিছু দিনের জন্য।আর সে আবেগটা এমন যে নিজ ধর্মের আবরন থেকে বেরিয়ে অন্য ধর্মের ভিতরে নিজের কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে ঢুকিয়ে দেয়ার অবস্হা।একজন লেখক ও সাহিত্যিকের কাজ তার স্ব স্ব ধর্মের অনুকূলে লিখা।অন্য ধর্মের কারো মৃত্যু হলে স্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য সমবেদনা জাননো একটি সামাজিক কাজ।কিন্তু প্রশংসা করতে গিয়ে যদি এমন হয় যে নিজের ধর্মের কথাই যদি কবি বা সাহিত্যিক ভুলে যান তাহলে তো নিজেই কপটতার অন্ধকারে ডুবে গেলেন।কিছুদিন ধরেই পত্র পত্রিকায় ফলাও করে 'মহানায়িকার' কথা আলোচিত হচ্ছে।তার ধর্মের অবতার বা তার অনুসারিরা তার সুখ্যাতি করতেই পারে যা তাদের ধর্ম তাদের শিখিয়েছে।এটা নিতান্তই তাদের ধর্মীয় কৃষ্টি ও সংস্কৃতি যা তারা পালন করবে।কিন্তু একজন মুসলিমের ভালবাসাও কি তাদের মতই হবে? একজন মুসলিম সাধারন যে সামাজিক আচরন তা-ই করবে।কিন্তু তা না করে যারা তার কর্মকে মুসলিম ধর্মের নিগূড় ভালবাসায় রুপান্তরিত করেন তা এক অপব্যাখ্যা ছাড়া কিছুই নয়।ইসলামে গান বাদ্য,সিনেমা , নাটক ও এ জাতীয় অপসংস্কৃতকে হারাম করা হয়েছে।সূরা বাক্কারার ১৬৫ আয়াতে আল্লাহ বলেন,' আর মানুষের মাঝে কেউ কেউ আল্লাহকে ছেড়ে অন্যকে মুরুব্বি বলে গ্রহন করে,তারা তাদের ভালবাসে আল্লাহকে ভালবাসার ন্যায়।তবে যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি তাদের ভালবাসা প্রবলতর।আফসোস! যারা অন্যায় করে তারা যদি দেখতো-যখন শাস্তি তারা দেখতে পায়,তখন সমস্ত ক্ষমতা পুরোপুরি আল্লাহর।আর আল্লাহ নি:সন্দেহে শাস্তি দানে কঠোর।' বারা ইবনে আজেব (রা) থেকে বর্নীত রাসূল সা: বলেন,' যখন কোন মানুষের মৃত্যুর সময় উপস্হিত হয় তখন মালাকুল মওত তার দলবল নিয়ে মৃত ব্যাক্তির শিয়রে এসে বসেন।তিনি তখন বলেন হে! আত্মা বেরিয়ে আস।যদি আত্মাটি নেককার হয় তখন তরল পানির মত বেরিয়ে আসে আর যদি আত্মাটি বদকার হয় তাহলে শিরা উপশিরা পর্যন্ত লুকোতে থাকে।এ অবস্হায় ফেরেস্তারা হাত ঢুকিয়ে বের করে আনে।নেক আত্মাটিকে ফেরেস্তারা তাদের আনীত কাফনে নিয়ে নেয় ও তার থেকে সুগন্ধি ছড়াতে থাকে এবং উপরের দিকে নিয়ে যায়।প্রথম আসমানে গেলে তার জন্য উপরে যাওয়ার অনুমতি মিলে ও আল্লাহর আদেশে ইল্লিনে প্রবেশ করানোর অনুমতি দেয়া হয়।আর বদ আত্মাটিকে নিয়ে প্রথম আসমানে গেলে দরজা খোলা হয় না আর ফেরেস্তারা নিছের দিকে ছুঁড়ে ফেলে ও তা থেকে এত গন্ধ বের হয় যে আসমানের অন্যান্য ফেরস্তারাও বিরক্ত হয়।এর পরে এ আত্মাটিকে সিজ্জিনে পাঠানো হয়।ইল্লিন ও সিজ্জিনে নাম অন্তর্ভুক্তির পর এই দু'ধরনের আত্মাকে কবরে পাঠানো হয় এবং তিনটি প্রশ্ন করার হয়।প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারলে আল্লাহর পক্ষ থেকে আদেশ দেয়া হয় তাকে জান্নাতের পোষাক পরিয়ে শুইয়ে দাও যতদূর সে দেখতে পায়।আর যদি আত্মাটি উত্তর দিতে না পারে তাকে জাহান্নামের পোষাক পরিয়ে জাহান্নামের সাথে সংযোগ দিয়ে দেয়া হয়।ক্কেয়ামতের আগ পর্যন্ত এ সময়টাকে বারজাখ জীবন বলা হয়।এ হলো সংক্ষেপে হাদিসটি যা একজন মানুষের মৃত্যু হলে ঘটে থাকে।পরকালীন জিবন একটা বিশ্বাসের ব্যাপার।কবরে আজাব আছে এ কথা বিশ্বাস করতে হবে।আল্লাহ ভাল যানেন কিভাবে আযাব দিবেন বা কখন একজন আযাব থেকে রেহাই পাবে।এটা কোন মুমিনের ভাবার ব্যাপার নয় যে একটা কবরস্হানে হাজার হাজার কবর,এত সনকীর্ন যায়গায় কিভাবে আজাব দিবে।কবরের প্রশস্তার কথা যেমন বর্ননা করা হয়েছে তেমনি কবর যে সংকুচিত হয়ে শাস্তি দিবে তাও বর্নীত হয়েছে।মুলকথা হলো এগুলোর উপর ঈমানদারদের এক্কিন থাকতে হবে।
তাহলে আমরা মুসলিমরা অন্তত এতটুকু এ আয়াত ও হাদিস থেকে বুঝতে পারলাম যে,পরকালের নির্ভরতা হলো সৎ আমলের উপর, আর সৎ আমলের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছানো সম্ভব।যারা এর বিপরীত অবস্হানে আছে তাদের কি হবে আমরা অনুমান করতে পারি আর আল্লাহ এ সম্পর্কে ভাল জানেন।আমি মুসলিমদের বলতে চাই,কখনো কি আপনাদের হৃদয় জাগ্রত হয়েছে? আপনার শিল্পী মন কি আপনাকে কখনো রেখাপাত করেছে? আপনার সুপ্ত মনে কি কখনো সৃজন রেখা অন্কিত করার ভাবনা জেগেছে এমন এক ব্যাক্তিত্বকে ঘিরে? যার আবির্ভাবে এ ধরনীর অন্ধকার বিদূরিত হয়ে আলোকের সরলরেখা বিম্বিত হয়েছে।যাকে নিয়ে কোন সেমিনার হতে দেখা যায় না,কোন আলোচনা হয় না, কোন মহাকাব্য রচিত হয় না।কেন বলুন ত হে কবি সাহিত্যিকগন? পৃথিবীর তথাকথিত মহানায়ক ও মহানায়িকাদের যত পূজা অর্চনাই আপনারা করুন না কেন তাঁর অনুসরন ছাড়া পুলছেরাত পার হওয়ার কোন উপায় নেই।আপনার শিল্পীমনে যদি রবের আল্পনা না আঁকেন , সেই নবীর চরিত্র মাধুর্যে নিজেকে অবগাহন না করান কেমন করে মহাসংট থেকে বেঁচে যাবেন?আপনার কবিতায়,সাহিত্যে,আপনার রং তুলিতে সেই নায়ককে যত ফুটিয়ে তুলবেন ততই ফুটে ও সজিব হয়ে উঠবে এ পংকিল সমাজ ও ধরনী।আপনি কি মনে করছেন সে সময়টা যোযন যোযন দূরে,নিশ্চই নয়।সময়টা খুব সন্নিকটে যা আমাদের অজানা।তা অনুভব করতে হলে যেতে আলকুরআন ও সূন্নাহের কাছে।হৃদয়ের জানালা খুলে অনুভব করতে হবে যা আপনার হৃদয়কে আন্দোলিত করবে,আপনার ঘুমকে হারাম করে দিবে,আপনাকে বিমোহিত করবে, আপনার শৈশব ,যৌবন ও বার্ধক্যের আশুভ কাজের জন্য মর্মাহত করবে, আবার আপনাকে আশায় আশান্নিত করবে।আপনার ভালবাসার দু'নায়ক।একজন মহাশক্তিশালী অদেখা আপনার 'রব' আর একজনও আমার ও আপনারই অদেখা তাঁরই রাসূল যিনি পেরিয়ে গেছেন চৌদ্দশ বছর আগে।কিন্তু রেখে গেছেন তার জীবন কর্ম যার আদর্শে এখনো বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের হৃদয় উদ্বেলিত হয়, তাঁর প্রতি অবজ্গা করা হলে তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে তার সম্ভ্রম রক্ষায়।সেই মহানায়কের অভীনয়ে মুগ্ধ হতে দেখি না আমাদের মুসলিম কবি সাহিত্যিকদের।কিন্তু কেন? কারন দেখি একটাই তিনি তাঁর রবের কথা মনে চলেছেন তার জীবনের প্রতি বাঁকে বাঁকে।সমস্ত অন্যায় অবিচার,অশ্লীলতা থেকে সমাজকে মুক্ত করেছেন।স্বাবলম্বি ও স্হিতিশীল করেছেন সে সমাজকে,মানুষকে নির্মান করেছেন এক শিশাযুক্ত প্রাচীরে।সে জন্য দেখা যায় তিনি চিরন্তন হয়ে আছেন কোটি মানুষের হৃদয়ে।আমাদের জীবনের সৌন্দর্য খুঁজতে হবে তাঁর জীবনকে ঘিরে।কবি সাহিত্যিকের কল্পনার অন্ধকার দূরিভূত হবে তখন, যখন পুরো হৃদয়ের আসন জুড়ে বসে যাবে সেই মহানায়কের জীবন কর্ম।স্বর্গের কল্পনা নিছক কোন কর্ম নয়, সে এক মহাকর্ম ও সত্য পথের সন্ধান যা অর্জিত হয় নবীদের,সত্যবাদিদের, এক আল্লাহর পথে জীবন দান(শাহিদ) কারিদের ও সৎ আমল কারিদের পথে।এ পথের চেতনা অর্জনের পথ দেখাতে হবে আমাদের কবি সাহিত্যিকদের আর বিজাতীয় সংস্কৃতি পরিত্যাগ করতে হবে তাহলেই সফলতা আসবে জীবনের সর্বস্তরে।
বিষয়: বিবিধ
১২৩৭ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন