সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রচলিত তাবলিগের অবদান একটি প্রাইমারি স্কুলের মত।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৪ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৭:৫৬:৪৭ সন্ধ্যা

টঙ্গীর তুরাগতীরে আজ শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) থেকে শুরু হচ্ছে তাবলিগ জামাতের ৪৯তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে এবং গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাবলিগ জামাতের কয়েক লাখ অনুসারী ইজতেমায় যোগ দিয়েছেন। আজ জুমার নামাজের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম এ মুসলিম জমায়েতের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে। ফলে আজ দুপুর পর্যন্ত আরো কয়েক লাখ অনুসারী তাতে যোগ দেবেন।বাংলাদেশের জন্য ইসলাম অনুসারিদের জন্য নিশ্চ-ই একটি ইতিবাচক দিক কারন এর মাধ্যমে সারাবিশ্বে ইসলামের বারতা ছড়িয়ে দিচ্ছেন।তাছাড়া আন্তর্জাতিক ভাবে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র একটি দেশ হলেও এর প্রচারনা ছড়িয়ে পড়ছে।বাংলাদেশের বৃহৎ দু'দল প্রতি বছর-ই অংশ গ্রহন করছে।আর এর মধ্যে সরকারি দল যে-ই থাকছে প্রশাসনিক দিক থেকে সহযোগিতা করছে।ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) প্রতি বছরই তাদের কার্যক্রম সুন্দরভাবে পরিচালনা করে থাকেন।এবারও বিজ্গপ্তি দেওয়া হয়েছে কোন এলাকায় কিভাবে গাড়ি পার্কিং করবে এবং কোথায় কোথায় পার্কিং করা যাবে না।অর্থাৎ সরকারের পক্ষ থেকে মোটামুটি একটা সরব অবস্হান থাকে যেন দেশী বিদেশী মেহমান রা কোন বিশেষ সমস্যায় না পড়েন।তবে যে বিষয়টি লক্ষ্য করার মত, তা হলো, আমাদের অন্যান্য ইসলামপ্রিয় সংগঠন গুলোর পক্ষ থেকে কোন বিবৃতি শুনা যায় না বা কুরআন ও সূন্নাহের উলামাগন কেন এতে অংশ গ্রহন করেন না তা পর্যালোচানার ব্যাপার রয়েছে।উপমহাদেশে ইসলামের বিভিন্ন দল ও উপদলের যে সৃষ্টি হয়েছে তার সবই ভারত থেকে।এ দলগুলো সম্পর্কে কুরআন ও সূন্নাহের উলামাদের ফিখহ্ (মতামত) রয়েছে যা আমি আমার সামান্য পড়াশুনা থেকে যা জেনেছি চেষ্টা করবো আলোকপাত করার,যাকে উৎস করে আপনারা গভীরে যেতে পারবেন বলে আমি আশা করি।

বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে আকান্খিত বিষয় হলো শান্তি।অতীতেও এই শান্তির-ই জন্য কাফের-মুশরিকদের সাথে লড়াই হয়েছিল।রাসূল সা: কোন যুদ্ধ করতে যান নি।তিনি সবগুলো যুদ্ধ প্রতিহত করেছিলেন।আজকের পৃথিবীতে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য কাফের মুশরিক রুপী চরিত্রধারি মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে যারা সংগ্রাম করছেন তারা হলো বিভক্ত ইসলামের কর্নধাররা, যারা ইসলামকে পূঁজি করে তাদের নিজস্ব মতবাদ তৈরি করেছে।এখানে তারা একদিকে ইসলামকে বিভক্ত করে ইসলামের শক্তিকে বিনষ্ট করেছে অন্যদিকে ইসলামের একটি উম্মাহ গঠন করার জন্য যে চরিত্র দরকার তা গঠন করতে ব্যার্থ হয়েছে।আজ শান্তির অন্বেষনে হন্য হয়ে ফিরছে বিশ্বের সব জাতিগোষ্ঠী। প্রযুক্তির বদান্যতায় জীবনযাত্রা সহজ হলেও মানুষের জীবনে শান্তি ক্রমেই অধরা হয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের উন্নত ও ধনী দেশগুলোর সামপ্রতিক অগ্রাধিকারের বিষয়ও শান্তি-নিরাপত্তা। সামাজিক অস্থিতিশীলতা ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি এখন উন্নত বিশ্বের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার বিষয়। মানুষ এখন ঘরে-বাইরে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছে। সর্বাধুনিক অস্ত্র ও প্রশিক্ষিত-সুশিক্ষিত বাহিনী থাকতেও মানুষের নিরাপত্তা নেই। বৈষয়িক ঐশ্বর্য এবং অঢেল প্রাচুর্য সত্ত্বেও শান্তি নেই পরিবার ও সমাজে। শান্তি নেই রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে।কিছুদিন আগেও আমেরিকায় অকারনে নির্বিচার গুলিবর্ষণে স্কুলের ফুটফুটে কতগুলো শিশুর প্রাণ ঝরে গেল।সভ্য দুনিয়ার আরেক মোড়ল অস্ট্রেলিয়ায় পিতা কর্তৃক একটি মেয়েকে ছয় বছর ধরে লাগাতার ধর্ষণের সংবাদেও বিশ্ববিবেক বিস্মিত হয়েছিল। বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক অসামপ্রদায়িক রাষ্ট্র ভারতে নারী ও মেয়ে শিশুদের জীবন-সম্ভ্রমের নিরাপত্তা নেই। ভারতের দিল্লি খ্যাতি পেয়েছে ধর্ষণ তথা নারী নির্যাতনের রাজধানী হিসেবে। প্রায়ই পত্রিকায় খবর ছাপা হয়, ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জাহিলী যুগের মতো কন্যাশিশুকে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়েছে।গত ডিসেম্বরের আগের ডিসেম্বরে ভারতে দামিনী নামের এক তরুণী চলন্ত যানবাহনে গণধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনায় সারা বিশ্ব কেঁপে উঠেছে।আমাদের দেশেও পর পর অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে এবং পত্রিকার পাতা খুললে এ রকম দৃশ্য প্রতিনিয়তই চোখে পড়ে। তার পরও শিশু থেকে নিয়ে বিদেশি পর্যটক পর্যন্ত ধর্ষণ আর গণধর্ষণের ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে সেখানে।

বলতে দ্বিধা নেই, এ অধরা শান্তির সবচেয়ে নিরাপদ ও সহজ ঠিকানা ইসলাম। বিশ্বের ইতিহাস সাক্ষী, অশান্তির অনলে দগ্ধ পৃথিবীকে ইসলাম যেভাবে শান্তি ও নিরাপত্তা উপহার দিয়েছে আর কোনো ইজম-ব্যবস্থাই তা দিতে পারেনি। বর্তমানে ইসলামের শান্তিময় বাণী প্রচারের জন্য যে দলটিকে বিশ্বে প্রচলিত তাবলীগ জামাতে বলে চিনে তাদের কার্যক্রম একটি প্রথমিক স্কুলের কার্যক্রমের মত।একথা নি:সন্দেহে বলা যায় তারা বিশ্বশান্তির জন্য কাজ করছে, সামাজিক শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানে এ জামাতে তাবলিগ নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার এক নীরব বিপ্লবে বলে তারা দাবি করছে।তবে, দেশ যে পাপ পংকিলে ভরে যাচ্ছে, দেশের গনতান্ত্রিক সরকারগুলো দেশে বিজাতীয় সভ্যতার আমদানি করছে,সাধারন মুসলমানরা ইসলামের কাজকর্ম করতে পারছে না, কোথাও কোথাও মসজিদ বন্ধ করে দিচ্ছে, সমাজে অনৈতিক কাজ চলছে, কবর পূজা ও বিদা'আত ছড়িয়ে পড়ছে,পিরতন্ত্রের আওতায় হাজারো আখড়া গড়ে তুলে অজ্গ মানুষগুলোকে শির্ক ও বিদা'আতি ইবাদাত করাচ্ছে, এদের বিরুদ্ধে এই তাবলিগে জামাত ইতিবাচক ভূমিকা রাখছেনা।এ দাওয়াত পেশ প্রাথমিক কাজ মাত্র।রাসূল সা: সমাজ থেকে সমস্ত পংকিলতা দূর করে একটা পূর্নাংগ ইসলামি সমাজ প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। ইসলামের কাজ ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকের নির্দেশনা দিবে কিন্তু প্রচলিত তাবলিগ শুধু ইতিবাচক দিকেই নির্দেশনা করে।

সামাজিক অশান্তির যত উৎস আছে, সমাজের যত দুষ্টক্ষত রয়েছে, তা নির্মূলে সর্বপ্রথম দরকার মানুষের ভেতর পরকালে জবাবদিহিতার ভয় এবং আল্লাহর সামনে দাঁড়াবার চেতনা জাগ্রত করা। মানুষের ভেতর ধর্মীয় মূল্যবোধ ও আল্লাহভীতি তথা তাকওয়া সৃষ্টি করা। সোজা কথায়, পবিত্র কোরআনের নির্দেশনা আর রাসুলের আদর্শে আলোকিত জীবন গড়া। ভেতরের সব অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভশক্তির উন্মেষ ঘটানো। নিখিল বিশ্বের স্রষ্টা ও একক নিয়ন্তা আল্লাহর কোরআনি নির্দেশনামাফিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। আত্মশুদ্ধির শুভ্র পাঠ নিয়ে ব্যক্তি ও সমাজকে শ্বেত-শূচি বানানো। তাবলিগের মেহনতের ফলে সমাজে এমন বৈশিষ্ট্যের মানুষই তৈরি হচ্ছে। সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তা আজও যতটুকু আছে, তার পেছনে শান্তির ধর্মের এবং তা প্রচারের জামাত তাবলিগের অবদান অস্বীকার করার সুযোগ নেই।সে তাবলিগ হলো রাসূল সা: এর পথে তাবলিগ।দাওয়াত সম্পর্কে সূরা মায়দার ৬৭ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'হে প্রিয় রাসূল! তোমার প্রভুর কাছ থেকে যা তোমার কাছে অবতীর্ন হয়েছে তা প্রচার কর।আর যদি তুমি তা না কর তবে তার বানি তুমি প্রচার করলে না।'রাসূল সা: বলেছেন,'তোমরা আমার পক্ষ থেকে যদি একটি আয়াত ও জান তা প্রচার কর।' এ তাবলিগের মাধ্যমে হাজার হাজার অধঃপতিত তরুণ, উচ্ছন্নে যাওয়া শত শত যুবক ফিরে আসছে শান্তির মোহনায়। যে মাদকাসক্তি নিয়ে দেশ-সমাজ উদ্বিগ্ন, তার ছোবল থেকে হাজারো যুবক রেহাই পাচ্ছে। যে যৌতুকের অভিশাপ নিয়ে বলি হচ্ছে শত শত নিরীহ মা-বোন, ঘুম হারাম হচ্ছে হাজারো অভিভাবকের, তা নির্মূলেও নিঃশব্দে কাজ করছে তাবলিগ। কত ভাঙা সংসার জোড়া লাগছে, কত চোর-গুণ্ডা সুপথে আসছে, তার ইয়ত্তা নেই। যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সারা বিশ্ব সোচ্চার হয়েও ফল হচ্ছে না, দাওয়াতের ও তাবলিগের মাধ্যমে তার সমাধান হচ্ছ ।তাকওয়ার জীবনের পাঠ নিয়ে কত ব্যবসায়ী সৎ হচ্ছেন, কত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী দেশের প্রতি দায়িত্বশীল হচ্ছেন, নিজের বেতন হালাল করা এবং হালাল উপার্জনের দরকারি শিক্ষা নিচ্ছেন, তার হিসাব একমাত্র আল্লাহ- মাবুদই জানেন।

সূরা আল ইমরানের ১০৪ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'তোমাদের মধ্যে একটি দল হওয়া চাই যারা আহ্বান করবে কল্যানের প্রতি আর নির্দেশ দিবে ন্যায় পথের আর নিষেধ করবে অন্যায় থেকে।এরা নিজেরাই হছ্ছে সফলকাম।' অধিকাংশ ইসলামের দলগুলো কুরআনের এ ধরনের আয়াতগুলোকে বিকৃত করে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে।অথচ ইসলামে ক্কেয়ামত পর্যন্ত একটি দল ও একটি উম্মাতের কথাই কুরআন ও হাদিসে বিবৃত হয়েছে।কোন দাওয়াত পৌঁছাতে হলে দেখতে হবে তা কুরআন ও হাদিসে আছে কিনা? তাবলিগ সম্পর্কে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে আমরা কোন তাবলিগ পৌঁছাবো।তাবলিগ করার জন্য কুরআন ও হাদিসের ইলম থাকতে হবে। অধিকাংশ মাণুষ তাদের জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে গাফেল।উদাহরন স্বরুপ বলা যায়, আপনি যদি কোন কোম্পানির এজেন্ট হয়ে থাকেন এবং যে প্রডাক্ট টির সেবা জন গনকে দিবেন সে প্রডাক্ট ও কোম্পানি সম্পর্কে আপনার গভীর জ্গান থাকতে হবে।যদি আপনি ভোক্তাদের সন্তুষ্ট করতে চান তাহলে এর ব্যাবহারিক দিক সহজভাবে বর্ননা করতে হবে যেন তারা বুঝতে পারে।তাহলে বুঝা গেল এটা নির্ভর করছে আপনার কোম্পানির প্রডাক্ট টির গুনাগুন এবং আপনার দক্ষতার উপর।আল্লাহপাক এই কুরআন নাজিল করেছেন আর দ্বার্থভাষায় বলে দিয়েছেন এতে কোন সন্দেহ নেই।শুধু তাই নয় তার সাথে একজন প্রশিক্ষিত রাসূল পাঠিয়েছেন যিনি এ বিষয়টি জন গনকে সুচারুরুপে বুঝিয়ে দিবেন আর সুধীর্ঘ ২৩ বছর ব্যাপী তিনি প্রচার করে পৃথিবিতে একটি সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

প্রচলিত তাবলিগ জামাত যাকে ইলিয়াছি তাবলিগ বলা হয় এর সূচনা করেছিলেন মাউলানা ইলিয়াছ সাহেব।তিনি একজন দেওবন্দি আলেম।তাবলিগ জামাত প্রথমে শুরু হয় ভারতের হরিয়ানা প্রদেশের মেওয়া গ্রাম থেকে।এটা ছিল একটা অশিক্ষিত গ্রাম। ইলিয়াছ সাহেবের জন্ম ১৩০৩ হি: ও মৃত্যু ১৩৬৩ হি.।'এই হিসেবে ধরে নেওয়া যায় প্রায় ৮০ বছর এ জামাতটির বয়স।তাবলিগের প্রথম মার্কাজ হছ্ছে দিল্লি নিজামুদ্দিন।এটি ৫ তলা মসজিদ।মসজিদের বারান্দায় ৬টি কবর রয়েছে এবং সেখানে মুসুল্লিরা নামাজ পড়ে অথচ যে মসজিদে কবর থাকে সে মসজিদে নামাজ পড়া হারাম।সেখান থেকে ৪০০ বা ৫০০ মিটার দূরে নিজামউদ্দিন আউলিয়ার মাজার যেখানে অসংখ্য হিন্দু,শিখ,তথাকথিত মুসলমান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বিরা কবর পূজায় লিপ্ত।এর পর এ জামাতটি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে বিস্তৃতিলাভ করেছে।বাংলাদেশে কাকরাইল মসজিদ তাদের কেন্দ্র ও ইজতেমা হয় টঙির তুরাগ নদীর পাড়ে।তাদের কিছু জাহেল বা মুর্খ অনুসারি রয়েছে যারা মনে করে কখনো মক্কা যাওয়াতো তাদের পক্ষে সম্ভব নয়,যদি তারা এই ইজতেমায় আসে তাহলে হজ্ব বা ওমরার সওয়াব পাবে।এর স্বপক্ষে যুক্তি দিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে লিখা হয়েছে যাতে করে এই অজ্গ ভাইরা বুঝতে পরে যে হজ্জ ও বিশ্ব-ইজতেমা এক নয়।হজ্জ ইসলামের একটি রোকন যা আল্লাহর পক্ষ থেকে ধনী ব্যাক্তিদের জন্য জীবনে একবার পালন করার মত বিধান। তাদের কিতাবগুলোর মধ্যে রয়েছে ফাজায়েল আমল প্রথম খন্ড যা উর্দুতে লিখা হয়েছে এবং পরে বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে।বাংলায় অনুবাদ করেছেন মাউলানা শাখায়েতুল্লাহ।আর একটি অনুবাদ রয়েছে আম্বরআলীর।ফাজায়েলে যে বিষয় রয়েছে তা হলো-ফাজায়েলে তাবলিগ,নামাজ,কুরআন,জিকির,রমজান ও হেদায়েতে সাহাবা।এগুলো মুসলিমদের অধপতনের কিতাব।আমি অনুরোধ করছি পড়ুন তা হলে বুঝতে পারবেন তারা কি প্রচার করছে।অধিকাংশ মানুষ তাদের বাইরের রুপটিই দেখে ভিতরে কি আছে তা পড়াশুনা না করার কারনে দেখেনা।এই শির্ক ও বিদা'আত নিয়ে অন্ধ অনুসারিরা দ্বীন প্রচার করছে।দ্বিতীয় খন্ডে রয়েছে-ফাজায়েলে সদাকা ,দুরুদ শরিফ,হজ্ব ও জাজাউল আমল।ফাজায়েলে দুরুদ ও ফাজায়েলে হজ্ব এই দু'টোতে সবছেয়ে বেশি শির্ক ও বিদা'আত রয়েছে।যারা চিল্লা দিয়ে অন্ধ ভক্ত হয়ে গিয়েছে তাদের এই কিতাবগুলো দেয়া হয়।ফাজায়েলের ভূমিকায় একটি বিষয় পড়লে পাঠকগন বুঝতে পারবেন এর ভিতরে কি আছে।আল্লাহর প্রশংসা ও দুরুদ পাঠ করার পর লিখছেন,'একটা সংক্ষিপ্ত বই লিখি।এত বড় বুজুর্গের সন্তুষ্টি বিধান আমার পরকালের নাজাতের ওসিলা হইবে মনে করিয়া আমি উক্ত কাজে সচেষ্ট হই।' মু'মিনের যে কোন কাজ হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।আর এখানে বইটি লিখা হয়েছে বুজুর্গের সন্তুষ্টির জন্য।এই কিতাবগুলো এক একটি ৮০০ পৃষ্ঠা সম্বলিত।আর একটি কথা লিখেছেন অনেকেই শির্ক ও বিদা'আতে লিপ্ত রয়েছে তারা শির্ক কে শির্কই মনে করে না।আমি বলছি ভূমিকা লিখে শির্ক করেছেন তিনি বুঝতে পারলেন না নিজেই শির্ক ও বিদা'আতে হাবুডুবু খাছ্ছেন।সূরা রা'দ এর ২২ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'তাদের হেদায়েত করার দায়িত্ত তোমার উপর নয়।আল্লাহ হেদায়েত করেন যাদের ইছ্ছা করেন।ভাল জিনিসের যা তোমরা খরচ কর তা তোমাদের জন্য।আর তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য ছাড়া খরচ করবে না।ছহি বোখারি ও মুসলিমে রাসূল সা: বলেন,'আল্লাহপাক জাহান্নামের উপর ঐ ব্যাক্তিকে হারাম করেছেন যে ব্যাক্তি লা ইলহা ইল্লাল্লাহ বলবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।'

প্রচলিত তাবলিগ জামাত সম্পর্কে একবিংশ শতাব্দির কুরআন ও সূন্নাহর বিশিষ্ট উলামাদের কিছু ফিকহ(মতামত) পেশ করছি পাঠকদের জানার জন্য।তাদের কিতাবগুলো প্রমান করে এটা তারা স্বপ্নের ধর্ম প্রচার করছে।অসংখ্য কিছ্ছা কাহিনী রয়েছে যার সাথে কুরআন হাদিসের কোন সম্পর্ক নেই।আপনাদের অবগতির জন্য কিছু রেফারেন্স দিচ্ছি যেন পাঠকবৃন্দ গভীরে যেতে পারেন। ফাজায়েলে দুরুদ ২য় খন্ড পৃষ্ঠা ১১৩ কিস্সা নং ৩৫। ২য় কিস্সা চিশতি মাশায়েখের ইতিহাস পৃষ্ঠা নং ২৩২ দেখুন। এ রকম অনেক কিস্সা কাহিনি রয়েছে।আমার অভিজ্গতায় দেখেছি যারা ওখানে যায় অধিকাংশই অজ্গ যারা কথাগুলো খতিয়ে দেখে না।আর এক শ্রেনী আছে যারা মনে করে বয়স হয়েছে জীবনে অনেক গুনাহ করেছি যদি চিল্লা দিয়ে গুনাহ মাপ হয়ে যায় তাহলে বেঁচে যাব।তাদের বুঝা দরকার এ চিল্লা রাসূল সা: দিয়েছেন কিনা।স্ত্রি ও লায়েক মেয়েদের হেফাযত করা ফরয।তারা এ না করে দীর্ঘদিন বাইরে পড়ে থাকে ও বিদা'আতি ইবাদাত করে।

আব্দুল্লাহ বিন বাজ (র) কে নিম্নরুপ প্রশ্ন করা হয়েছিল তাবলিগ সম্পর্কে:

প্রশ্ন: আমরা তাবলিগ জামাত সম্পর্কে শুনেছি তারা দাওয়াতের কাজ করে।আপনি কি আমাকে পরামর্শ দেন আমি এ জামাতে লাগতে পারি।আশা করি আপনি আমাকে দিক নির্দেশনা দিবেন ও সৎ পরামর্শ দোবেন।আল্লাহ আপনাকে মহা পুরস্কার দান করুন।

উত্তর: যে ব্যাক্তি আল্লাহর দিকে ডাকবে সে হছ্ছে মুবাল্লিগ।কিন্তু তাবলিগ জামাত ইন্ডিয়ান জামাত হিসেবে প্রসিদ্ধ।তাদের আক্কিদায় বহু কুসংস্কার রয়েছে এবং তাদের কাছে শির্ক ও বিদা'আত রয়েছে।তবে যদি কেউ তাদের সাথে যেতে চায় শর্ত হলো যাদের কাছে কুরআন হাদিসের সঠিক ইলম (জ্গান) রয়েছে তারা যেতে পারে তাদের সঠিক রাস্তা দেখানোর জন্য যেন তাদের মধ্যে যে শির্ক ও বিদা'আত রয়েছে তার প্রতিবাদ করতে পারে যাতে তারা বাতেল ত্বরিকা ছেড়ে আহলে আল সূন্নাতের মাযহাব(পথ) ধরে নিতে পারে।

আব্দুল্লাহ বিন বাজকে ২য় পশ্ন : আমি তাবলিগ জামাতে গিয়েছিলাম ইন্ডিয়া ও পাকিস্তানে।আমরা সেখানে গিয়ে দেখলাম বহু মসজিদে কবর রয়েছে যেখানে আমরা ইজতেমা করতাম।যে মসজিদে কবর আছে সে মসজিদে নামাজ বাতেল এবং আমরা নামাজ পড়েছি ও এখন ফিরে এসেছি।এখন কি নামাজগুলো পড়বো? এসব যায়গায় যাওয়ার হুকুম কি?

উত্তর: আক্কিদা ও মাসলা মাসায়েলে তাবলিগ জামাতের কোন জ্গান নাই।তাদের সংশোধন করা ছাড়া তাদের সাথে যাওয়া যাবে না।কবর ওয়ালা মসজিদে যে নামাজ পড়েছেন তা আবার পড়তে হবে।কারন নবী সা: বলেছেন,'ইয়াহুদি ও খৃষ্টানদের উপর অভিসম্পাত যারা নবীগনের কবরগুলোকে মসজিদে পরিনত করে।( বোখারি ও মুসলিম)

আল্লামা নসিরুদ্দিন আলবানী (র) কে পশ্ন:তাবলিগ জামাত সম্পর্কে আপনার মতামত কি? কোন তালেবে ইলম বা অন্য সাধারন লোকজন দ্বীনের দাওয়াত দিতে যেতে পারে কি এই জামাতের সাথে?

উত্তর: তাবলিগ জামাত আল্লাহর কিতাব ,রাসূল সা: এর সূন্নাহ ও সালাফে সালেহিনদের ত্বরিকার উপর প্রতিষ্ঠিত হয় নি।তাদের সাথে চিল্লায় বেরিয়ে যাওয়া যায়েয নয় কারন এটি হছ্ছে সালাফে সালেহিনদের ত্বরিকার পরিপন্থি।তাবলিগ জামাত কুরআন ও সূন্নাহর দাওয়াতের গুরুত্ব দেয় না।এই জামাত মিশরে হাছানুল হক্ক বান্নার এখোয়ানুল মুসলিমিন ও বাংলাদেশ ,পাকিস্তান ও ভারতে জামাতে ইসলামের মত। তবে জামাতে ইসলামের সাথে কিছু কিছু মত পার্থক্য আছে যেমন- জামাতে ইসলাম গনতন্ত্রের ছায়ায় ইসলাম কায়েম করতে চায়।তাবলিগ জামাত তা করে না। তারা দাবি করছে আমরা কোরআন ও সূন্নাহ মোতাবেক দাওয়াতের কাজ করছি এটা তাদের মুখের কথা মাত্র।তাদের ছহি কোন আক্কিদা নেই।এদের মধ্যে মাতুরিদি, আশোয়ারি ও ছুপি আক্কিদা রয়েছে।তাবলিগ জামাতের তাবলিগ হলো আধুনিক ছুপি মতবাদ।'

প্রশ্ন ও উত্তর দিলেন-আব্দুল্লাহ বিন বাজ (র),আব্দুল্লাহ ইবনে হুদাইয়্যান,সালেহ আল ফুজান ও আব্দুল আজিজ আলি শেখ(বর্তমান গ্রান্ড মুফতি সাউদি এরাবিয়া)- সম্মানিত শেখ ,আমি তাবলিগ জামাতের বেশ কিছু আমল দেখলাম,যে আমলগুলো না কুরআনুল কারিমে আছে , না রাসূল সা: এর হাদিসে আছে।তারা মসজিদে কয়েকজন গোলাকার হয়ে বসে এবং তাদের বিশেষ কোর্স আছে যেমন কোরআনের শেষ দশটি সূরা শিখায়,প্রত্যেক বৃহসপতিবারে এতেকাফে বসে,নির্দিষ্ট দিনের সময় দেয় যেমন-মাসে ৩ দিন ,বছরে ৪০ দিন এবং সারা জীবনে ৪ মাস,প্রত্যেক বয়ানের পর সম্মিলিত মুনাজাত করে।যদি এই জামাতে যাই তবে এগুলোর ব্যাপারে করনীয় কি?

উত্তর: এই জামাতের কাজকর্ম সম্পর্কে যা আপনি উল্লেখ করলেন এ সমস্ত হছ্ছে বিদা'আত বা কুসংস্কার।তাদের সাথে অংশগ্রহন করা যায়েয নয় যতক্ষন পর্যন্ত তারা কুরআন ও সূন্নাহর পথ না ধরে এবং বিদা'আত না ছাড়ে।আল্লাহ তাওফিক দিন।

প্রশ্ন করেছেন মোহাম্মদ সালেহ বিন মুনাজ্জিদ (র) কে ( যার দাম্মামে বিশাল ইসলামের উপর নেট ওয়ার্ক রয়েছে)- যে জামাত ৩দিন ,৪০দিন ও ৪ মাসের তাবলিগ করতে বিভিন্ন দেশে যায় ধর্মিয় কথা বলার জন্য তাদের সম্পর্কে আপনার মত কি?

উত্তর: তাবলিগ জামাত ইসলামের স্বার্থে কাজ করছে ও কিছু প্রচেষ্টা করছে অস্বীকার করার উপায় নেই।তাবলিগ জামাত অন্যান্য জামাতের মত।তাদের অনেক ভুল রয়েছে এগুলো নিম্নরুপ:

১-তাহারা আহলে সূন্নাহ আল জামাতের আক্কিদায় বিশ্বাসি নয়।

২-ইলম শিখতে আগ্রহি নয় ও বাধা প্রদান করে।

৩-তারা নিজের স্বার্থে কোরআনকে বিকৃত করে ও জাল হাদিস বয়ান করে।

৪-বিদা'আতকে এবাদাত মনে করে।

৫-তাদের মধ্যে অনেক বিদা'আতি কাজ আছে যেমন-যখন তারা দাওয়াতে বের হয় একজনকে আমির,একজনকে মুতাকল্লিম এবং একজনকে রাহবার নিয়োগ করে।এই ত্বরিকাগুলো বিদা'আতি ত্বরিকা।

৬-তারা কখনো নেতিবাচক কথা বলবে না।শির্ক ও বিদা'আত কে উপড়ানোর কথা বলে না বরং ওর মধ্যেই ইবাদাত করে।

৭-তারা যদি ১/২ টা চিল্লা দেয় তাহলে অহংকার করে ও অন্যকে তুচ্ছ মনে করে।

৮-তাদের কাছে চিল্লায় বের হওয়া উত্তম কাজ।

৯-ফতোয়া তাফছির ও হাদিসের ক্ষেত্রে তাদের দু;সাহসিকতা বেশি।

১০-তাদের অনেকেই স্ত্রি সন্তানের খবর রাখে না ও তাদের উপর ধর্মের নামে নির্যাতন করে।

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, এ বিষয়গুলো যা আমি উল্লেখ করলাম তা আমার দীর্ঘ দিনের তাদের কিতাব পড়া ও কোরআন ও সূন্নাহর আলেমদের ফিখহ থেকে সংগৃহিত তথ্য উপস্হাপন মাত্র। কাউকে হেয় করার জন্য নয় বরং এক মুসলিম আর এক মুসলিমের আয়না স্বরুপ কল্পনা করেই জানাতে বাধ্য হলাম যা কোরআন ও সূন্নাহর সাথে সংঘাতপূর্ন।আপনারাও রেফারেন্স গুলোতে যাওয়ার চেষ্টা করুন ইনশাআল্লাহ তাদের আবিষ্কার করতে পারবেন ও তাদের সংশোধন করার চেষ্টা করতে পারবেন।আমি আবারো বলছি তাবলিগের ভাইরা যদি রাসূল সা: এর দাওয়াত ও তাবলিগ করে থাকেন তাহলে সমস্ত ইসলামি দলগুলোকে একত্রিত করার জন্য আপনাদের কাজ করতে হবে।সমকালীন শক্তিকে হাত করে সুবিধাজনক যায়গায় থেকে দ্বীন প্রচার করা প্রকৃত দ্বীন নয়।প্রকৃত দ্বীন হলো মানুষ তৈরি করা ও সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে আল্লাহর জমীনে দ্বীন প্রতিষ্ঠিত করা।তাবলীগ জামাত সেই নেতৃত্ব তৈরি করার মত সংগঠন নয় তবে ইসলামের সহায়ক শক্তি।কোন অসুবিধে নেই তবে কোরআন ও ছহি সূন্নাহের আমল তাদের করতে হবে।কোরআন ও ছহি সূন্নাহ বিবর্জিত যে সমস্ত কিতাবের তারা আমল করে তা নিশ্চই সাংঘর্ষিক।এ থেকে নিস্কৃতি পাওয়ার জন্য হক্কানি উলামাদের আরো এগিয়ে আসতে হবে তাদের সংশোধনের জন্য। আজকের দুনিয়ায় ইসলামকে ক্ষতবিক্ষত যতটুকু করছে বিধর্মিরা তার চেয়ে বেশী করছে মুসলিমদের ভিতর এক ধরনের বিভক্ত মুসলিমরা।সে জন্য আমাদের উচিত সবারই ইসলামের সঠিক তথ্যগুলো জনসম্মুখে তুলে ধরা। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।

বিষয়: বিবিধ

১৭৪৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File