আমার পোশাক আমিই ঝলসাই।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৩ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৪:০৮:৪৫ বিকাল
চিরাচরিত নিয়মে বিদেশী একটি পেপার খুলতেই সে ঘটনার সাথে হাজারো ঘটনা মনে পড়ে গেল।ভাবছি আপনাদের এ ব্যাপারে আর একটু গভীর ধারনা দেয়া দরকার।সূরা বাকারার ১৮৭ আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন, " তোমরা তাদের পোশাক , তারা তোমাদের পোশাক।' আমাদের নিউজ পেপার গুলো প্রতিদিন উল্টালেই দু' চারটা ঘটনা দেখতে পাই।কারো পিঠ ঝলসে দিয়েছে,কাউকে ছেঁকা দিয়েছে,কাউকে মেরে বস্তাবন্দি করেছে,কাউকে গলা কেটে হত্মা করেছে,কাউকে টুকরো টুকরো করেছে,আবার কাউকে বেদম পিটিয়ে হত্মা করেছে।এদের মধ্যে রয়েছে অধিনস্ত কাজের লোক, রয়েছে গৃহবধু,রয়েছে প্রেমিকা।কেস স্টাডি করে দেখুন এদের ৯৫% হলো মায়ের জাতি।পুরুষশাসিত সমাজে মুসলিম সমাজে কি করে এ ঘটনা গুলো ঘটা সম্ভব।অবশ্য দু'একটা বিচার যে হয় নি তা নয়।কিন্তু এ বিচার গুলো tip of iceberg এর মত।অধিকাংশ ক্ষেত্রে এদের বিচার হয় না আইনের শাসন না থাকার কারনে।যারা বলে ইসলামে কেন হাত কাটার কথা বলছে বা শিরচ্ছেদ করার কথা বলছে।ইসলাম এ জন্যই করেছে যে,একজনকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসলে অন্যরা সতর্ক হয়ে যাবে।আর ইসলামি যুগ পর্যালোচনা করলে আমরা সেটাই দেখতে পাই।কোন দেশে আইন রচিত ও বাস্তবায়ন হয় শাস্তির জন্য নয় বরং এর মাধ্যমে কমে যায় সমস্ত খারাপ কাজ (corruption)।
সোবহানাল্লাহ! আমারা যারা মুসলমান তারা কি ভেবে দেখেছি উপরের এ আয়াতটির তাৎপর্য কি? কেন আপন আদরের ঘরনীকে ঝলসানো? কেন নিজের গৃহকর্মীকে নির্যাতন? এ কোন বিকারগ্রস্ত মানুষীকতা? আমি পর্যালোচনা করে দেখলাম আমাদের পারিবারিক বন্ধনে নিশ্চয়ই কোন ব্যবধান আছে। আসুন মনের গভীর থেকে কিছু কথা জেনে নেই।একবার পৌর বিজ্ঞান পড়তে গিয়ে দেখলাম পরিবার হলো রাষ্টে্ৃর একক।আর সূরা নিসায় বলেছে পুরুষকে নারির এক ধাপ উপরে মর্যাদা দেয়া হয়েছে।এই এক ধাপের কারনে এত বাহাদুরি? এই যে ধর্ষন দেখছেন পৃথিবী ব্যাপী এর জন্য কারা দায়ী? গত এক বছর আগে ডিসেম্বরে দিল্লীতে দামিনি নামে যে মেয়েটির উপর পাশবিক অত্যাচার হয়েছিল তার নেপথ্যে কারন কি? আমার লিখা " A beautiful muslim society infected by disease" নামক টপিকটি পড়লেই বুঝতে পারবেন সেখানে আরো সামাজিক অনেক কারন বর্নিত হয়েছে।আল্লাহ পাক এ দু'জন পুরুষ ও মহিলার সম্পর্ক এত গভীর করে দিলেন তা আমরা কি কখনো খুঁজে দেখেছি? আজকের পৃথিবী আসলে আমরা মানুষগুলি নিজেরাই জটিল করে ফেলেছি।নিজের মনকে প্রশ্ন করুন দৈনন্দিন কতটুকু ভালবাসার আদান প্রদান আমরা করছি।দু'জন দুজনার কত গভীরে যেতে পেরেছি।ইসলাম আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে।একদিন রাসূল সা: ছাঁদনী রাতে দৌড় প্রতিযোগিতা করলেন আয়শা (রা) এর সাথে।হেরে গেলেন রাসূল সা:।
আবার একদিন প্রতিযোগিতায় রাসূল সা: প্রতিশোধ নিলেন।আ্য়শা (রা) বললেন আগের দিনের তুলনায় এ দিন আমি সামন্য ভারি হয়ে গিয়েছিলাম।আমাদের ব্যাস্ততা অনেক কিন্তু আমাদের সময় বের করে নিতে হবে। একে অন্যকে সময় দেয়ার মত সময় খুঁজে নিতে হবে।ধরুন আপনি একজন চাকুরিজীবি বা ব্যাবসায়ি বা অন্য কোন প্রফেশনের।আপনার সময়কে নিশ্চই আপনি মনিটর করেই চলেন।আপনার মাসিক আয়কে একটি বাজেটে রুপান্তরিত করুন।মাসিক খরচগুলোর তালিকা তৈরি করুন। এতে করে দেখা যাবে প্রতি মাসেই সারপ্লাস থেকে যাবে যদি আপনি অপব্যায় না করেন।মনে রাখবেন আপনি আপনার ঘরনীকে যদি সম্মান করেন তিনিও করবেন।আমরা ইছ্ছে করলে প্রতিদিনই একে অন্যকে সারপ্রাইজ দিতে পারি। এটা হলো মনের ব্যাপার।আপনার যত অভাবই থাকুক না কেন মনকে প্রফুল্ল রাখুন।আমি মানে করি স্বামীকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসলে ভাল।আপনার ঘর আপনার আ্ংগিনা।এখানে বাধা দেয়ার কেউ নেই। আমরা অনেকে বাইরে রোমান্স করতে ভালবাসি যা বারন করা হয়েছে।আপনার পছন্দের কথাগুলো বলতে শিখুন।তিনি তো আপনার পোশাক।বাইরে থেকে আসলেন, বস সুলভ আচরন না করে জড়িয়ে ধরুন।আপনার ধী্র্ঘ বিরহকে জীবনের প্রাপ্তিতে ভরে দিন। বিকালে সবাইকে নিয়ে ঘুরে আসুন মুক্ত বাতাসে।না হয় খেয়ে নিন বাইরে।শোবার আগে বসুন না কিছু ক্ষণ দু'জন বারান্দায় যেখানে কোলাহল নেই,আবছা আলোতে জড়িয়ে নিন চাদরে। সকালে নাস্তাটা একসাথে করুন।দুপুরে লান্স করুন একসাথে। রান্না ঘরে রান্না করছেন চুপি চুপি গিয়ে চিমটি কেটে দিন। কখনো নিয়ে আসুন না তার পছন্দের খাবার বা অন্য কোন উপহার, এতে ভালবাসা আরো গভীর হবে।পরকীয়ার ভাবনা কখন আসে? চারিত্রিক পদস্খলন সেটা কারো কারো রোগের ব্যাপার।সেটা ঘরে সুন্দরী সত্রী বা পুরুষ থাকলেও হতে পারে।তবে যে কারনগুলো দায়ি তা হলো,স্বামি বা স্ত্রীর মধ্যে প্রপার বুঝাপড়া নেই,একে অন্যের দুর্বলতাগুলো মেনে নিতে না পারা, কেউ কারো উপর সহনশীল না হতে পারা,দাম্পত্য জীবনের ব্যাক্তিগত আপারগতা ইত্যাদি।একটা দাম্পত্য জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করার দু'জনের সহযোগিতা জরুরি।অনেকে আছেন দীর্ঘ সময় অফিসে বা দেশের বাইরে আছেন সংসারের খবরই রাখেন না।স্ত্রী কোথায় যাচ্ছেন,কিভাবে সংসার চালচ্ছেন কোন খবর থাকে না।কেস স্টাডিতে দেখা গেছে যারা বিদেশে দীর্ঘ কাল থাকছেন ও ধর্মীয় আইন কানুন মেনে চলেন নি তাদের অনেকেই অনৈতিকতার শিকার হয়েছেন।আবার অনেকে কৃপনতা করেন স্ত্রীর সাথে।একটি ছোট গল্প আছে যা বাস্তবে ঘটেছে। এ থেকেও অনেকে কিছু শিখে নিতে পারেন। গল্পটা নিতান্ত-ই সত্য তবে শিক্ষনীয়।এক ভাবির বায়না পূরন করেননি ভাই।দু'বচর দেই দেই করে বেচারি অপেক্ষা করছিলেন একটি পছন্দের সোনার সেটের।একবার ঈদ এলো আর চার দিন বাকি।এদিকে ভাই ক'দিনের জন্য বাইরে গেলেন।ভাবির এক সহচরি ব্যাপারটা জানতো।তিনি কিছু টিপস দিলেন।যেই কথা সেই কাজ।ভাবি এবার আগের মত না থেকে ঘর সাজালেন চমৎকার করে।পছন্দের খাবার রান্না করলেন।পার্রলারে গিয়ে সাজলেন।ভাই বেচারা তার সময় মত ভ্রমন থেকে এলেন।ঘরে প্রবেশ করে পরিবর্তন দেখে বললেন কি হয়েছে তোমার? আগে তো কখনো এমন দেখিনি? ভাবি বললেন স্বামির জন্য এ তো বেশি কিছু নয়।ভাই নিজেকে ফ্রেশ করলেন ও খাবার খেতে ডাইনিংএ এলেন।ভাবি লক্ষ্য করলেন ভাই খাচ্ছেন তবে একটা চিন্তার চাপ আছে চোখে মুখে।ভাবি মিট মিট করে হাসছেন। খাওয়া দাওয়া শেষ।এবার ঘুমানোর পালা।হাত বাড়াতেই ভাবি বলে উঠলো, ওগো! একদিন পর ঈদ, কাল আমার সখের সেটটা কিনবো টাকাটা দাওনা।বেচারা বললো ঠিক আছে সকালে দিব।ভাবি বললেন আমার অপেক্ষার পালা শেষ এবার তোমার।বেচারা আর কি করবে।পকেট থেকে টাকাটা বের করে বললেন, মেয়েদের চলচাতুরি বুঝা ভার।আমি বলছি না আমরা এমন হব তবে আমাদের সামর্থানুসারে সত্রীকে খুশি রাখতে তো কোন আপত্তি থাকার কথা নয়।একে অন্যকে বুঝা বা যত কাছা কাছি থাকা যায় ততই সামাজিক এ অনাচার গুলো কমে যাবে।আর একটি বড় সামাজিক ব্যাধি হলো যৌতুক। এই যৌতিকের বলি হচ্ছে হাজারো বধূরা। এ ব্যাপারে সরকারের পাশা পাশি আমাদের সবাইকে সামাজিক ভাবে সচেতন হতে হবে। কোন ঘটনা ঘটলে সরকারের উচিত হবে উচিত ব্যাবস্হা গ্রহন যাতে অন্যরা সতর্ক হয়ে যায়। মনে রাখবেন আপনার আ্ংগিনা শুধু আপনারই জন্য।তার হেপাযত আপনাদের দু'জনকেই করতে হবে।
আমাদের ভালবাসার কমতি ও সামাজিক সমস্যাগুলোর জন্য দায়ী আমরাই।আমাদের ভালবাসা যত গভীর হবে ঝলসানো কমে যাবে।আমাদের স্কুল,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ছাত্র চাত্রীদের সচেতন করা ও শরীর চর্চার ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দেয়া জরুরি।কয়েক মাস আগে আব্দুল গাফ্ফার ছৌধুরির একটা কলাম পড়ে এর গুরুত্ব অনুভব করলাম।তিনি একটি মেয়ের চমৎকার ঘটনা বর্ননা করলেন।তিনি পূর্ব লন্ডন থেকে বাসায় ফিরছিলেন।পাতাল ট্রেনে উঠে একটি টিন এজার এর সামনে বসলেন।মেয়েটি একটি বই পড়ছিল যেমন জাপানিরা ট্রাভেল এ পড়ে থাকে।পরের স্টেশন থেকে তিনটি বালক উঠে বালিকাটির সামনে বসে টিজ শুরু করলো বিভিন্ন ভাবে।হঠাৎ একটি বালক তার পাশে এসে বসলো।এবার মেয়েটি বই বন্ধ করে তাকাল ছেলেটির দিকে, যেমন চৈত্রের প্রখর সূর্যকিরন প্রকম্পিত করে।মেয়েটির কারাত জানা ছিল।এক মিনিটের মাথায় ছেলেটিকে ধরাসায়ি করে ফেললো।বাকি দু'জন হতবিহবল হয়ে গেল।পরের স্টেশন আসতেই নেমে পালিয়ে গেল।আমাদের মেয়েদের আত্মরক্ষার জন্য এরকমই সজাগ হতে হবে।মনে রাখবেন রাসুল সা: বলেছেন ,তোমাদের ভাল সব কাজই সদাকা।আপনার সুন্দর কথাগুলো ও সদাকা।আপনার পোশাক অন্যের কাছে দেখতে যত অসুন্দর-ই হোক তা আপনার কাছে প্রিয়।একে অবহেলা করলে আপনার-ই অসম্মান হবে,আপনি-ই পংকিলতায় ডুবে যাবেন।কবি বলেছেন , কালো আর ধলো বাহিরে কেবল ভিতরে সবার সমান রা্ংগা।আসুন না কবির কথাকে সম্মান জানিয়ে আজ থেকে আমাদের হৃদয়ের ভ্রান্তি ও কপটতা দূর করে আপন পোশাকের যত্ন নেয়া শুরু করি।
বিষয়: বিবিধ
১২২৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন