গনতান্ত্রিক রাজনীতির বিনাশ হলে যা হয় তা-ই হচ্ছে বাংলাদেশে।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৯ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৩:৩৮:৪৭ দুপুর

যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদপত্র ফাইনান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,' বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যেমনটা বলেছেন যে বাংলাদেশের গনতন্ত্র এখন মৃত তা হয়ত নয়,কিন্তু এখানে জালিয়াতির যে নির্বাচন মন্চায়ন হয়েছে তাতে এটা নিশ্চিত যে এখানে গনতন্ত্র গুরুতর অসুস্হ।দক্ষিন ও দক্ষিন পূর্ব এশিয়ায় শুধু বাংলাদেশেই নয়, শ্রীলন্কা থেকে কম্বোডিয়ার পথ ধরে থাইলেন্ডের সংসদীয় গনতন্ত্র এখন স্বৈরতন্ত্র , সহিংসতা ও কঠোর রোগের শিকারে পরিনত হয়েছে।তবে পাকিস্তানের গনতন্ত্র ভংগুর হলেও গত বছর সেখানে প্রথমবারের মত সফলভাবে একটি নির্বাচিত সরকার আরেকটি নর্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে।নেপাল ও ভুটানেও সফল নির্বাচন হয়েছে।বাংলাদেশে গনতন্ত্রের কথা শুধু মুখেই বলা হয়।এখানে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেয়ার মত গনতন্ত্রের পরিবেশ গড়ে উঠে নি।এর কারন হলো প্রধান রাজনৈতিক দল দু'টো গনতন্ত্রের কথা বলে পরিবারতন্ত্রকে আঁকড়ে আছে যা প্রতি ৫ বছর পর দেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করছে।এটা তাদের ব্যার্থ গনতন্ত্রের পদক্ষেপ ছাড়া কিছুই নয়।জুডিশিয়ারির মত একটা প্রতিষ্ঠান সে কারনে পরিবারতন্ত্রের ধামাধরা হয়ে কাজ করছে।যে ভারত আমাদের গনতন্ত্রের কথা শিখানোর চেষ্টা করছে তারাও এ থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি।বিরোধী দল বিএনপি গত ৫ বছর গনতন্ত্রের আদর্শে থেকে সংগ্রাম করতে অনেকটাই ব্যার্থ হয়েছে।দলের তৃনমুল থেকে হাই কমান্ড পর্যন্ত একটা চেইন অব কমান্ড থাকা দরকার সেটা ছিল না যেমন তেমনি দলকে প্রশিক্ষিত করার পরিকল্পনাও তাদের ছিল কিনা তাদের ভাবতে হবে।দেশ চালাবে রাজনীতিবিদরাই , সেজন্য তাদের দেশ চালানোর মত প্রজ্গা সম্পন্ন রাজনীতিবিদ তৈরি করা জরুরি।এদিক থেকে কমিউনিস্ট পার্টি কর্মিদের গুরুত্ব দেয় যারা অন্তত পড়াশুনা করে।গনতান্ত্রিক না হয়ে রাজনীতি পরিবারতন্ত্রে ঢুকে যাওয়ার কারনে সফল রাজনীতিবিদ গড়ে উঠছে না।কারন নেতা নেতৃরা ভাবে আমরা যতই ভাল করিনা কেন প্রধানমন্ত্রির আসনে বসা সম্ভব নয়।সেজন্য তারা বেচে নেয় নিজেদের টাকা বানানোর হাতিয়ার হিসেবে।আর আমাদের সংবিধানও দায়ি এ একচেটিয়া ক্ষমতা দেয়ার জন্য।

এবারের নির্বাচনে আওয়ামিলীগ সরকার গঠন করলেও তা দেশের মানুষকে বিমর্ষ করেছে এবং জনগন মনে রাখবে তাদের।৬০ বছরের একটি রাজনৈতিক দল তাদের আসল মুখোশ উম্মোচিত করেছে দেশ ও বিদেশের কাছে।কোন অবস্হায়ই তাদের জনগনকে ফাঁকি দেয়া ঠিক হয়নি।বেগম খালেদা জিয়া যে কিছু রাজনৈতিক ভুল করেছেন তা ভেবে দেখতে হবে।রাজনীতি হলো আদর্শিক বিষয়,আর এ আদর্শ কোন ব্যাক্তিগত আদর্শ নয়।এর সাথে জড়িত দেশের মানুষের জীবন মরন সমস্যা।যে কোন দলই হরতাল ও অবরোধকে সাথে নিয়ে নেয় যখন তারা সরকারকে মোকাবিলা করতে চায়।এতে সরকারের তেমন ক্ষতি হয় না,ক্ষতি হয় জনগনের।অয়ামিলীগের ১৭৩ দিন ও এবারের হরতাল অবরোধে কোটি কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে ও অসংখ্য সাধারন মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে।এতে কি দেশ ও দেশের মানুষ লাভবান হয়েছে? যারা এমপি মন্ত্রী হচ্ছে তারাই লাভবান হয়।

গত আওয়ামিলীগ সরকারকে জনগন ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলেও সেখানে অযোগ্য নেতৃত্বের কারনে যতটুকু উন্নতি হওয়ার দরকার তা হয় নি।সব সরকারগুলো উন্নতির দিকে না তাকিয়ে নেগেটিভ জিনিসগুলো নিয়ে আসে।আর তার সাথে থাকে বিরোধীদের উপর জেল জুলুম।সহনশীলতা না থেকে নির্যাতনের পথ বেচে নেয় তারা।এ কারনে বিরোধীদের সাথে বনিবনা হয়ে উঠে না।তার পরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন বেগম খালেদা জিয়াকে আমন্ত্রন জানালেন, উনার উচিত ছিল জনগন ও দেশের স্বার্থে সাড়া দেয়া।হয়ত তখন একটা সুরাহা হতো আর তিনি নির্বাচনে আসতে পারতেন।বিএনপির নির্বাচনে না আসা , রাজনৈতিক প্রজ্গার দিক থেকে তাদের কিছু সময়ের জন্য হলেও পতিত করেছে।এদিকে আওয়ামিলীগ বা সারা বিশ্ব যদিও বলছে বিএনপিকে জামাত ছেড়ে আসার জন্য।বিশ্ব জনমত বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে কতটুকু সোচ্চার আমার জানা নেই।তবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় দুই দলকে টিকে থাকতে হলে অন্য ছোট দলগুলোকে সাথে রেখেই সামনে এগুতে হবে।আওয়ামিলীগের কথা বিএনপি মেনে নিত যদি তারা জামাতকে ব্যাবহার না করতো।আমরা অয়ামিলীগকে তো দেখছি জাতীয় পার্টিকে কিভাবে সংসদে সুবিধা দিয়ে নিয়ে এসেছে।বিএনপি যদি জামাতকে ছেড়ে দেয় নি:সন্দেহে তারা তাদের অস্তিত্ব রক্ষায় অন্য কাউকে খুঁজবে আর সে ক্ষেত্রে আওয়ামিলীগ ই তাদের লুফে নিবে।গত ৪২ বছর ধরে জামাতকে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ইসলামের রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে তারা সমাজে অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে।অন্যান্য দলের চেয়ে জামাতের মজবুত অর্থনৈতিক ভিত্তি ও ত্যাগী নেতা রয়েছে।এত নির্যাতন হওয়ার পরও জামাতের কোন নেতাকে অন্য দলে চলে যেতে দেখা যায় না যা অন্যান্য দলের নেতাদের যেভাবে আমরা দেখি।এর কারন হলো তাদের মুল হলো ইসলামকে কেন্দ্র করে।যদিও ইসলামের সঠিক পথে তারা নেই।ইসলামের এটাই অন্তর্নিহিত দিক যে তারা মৃত্যু এসে গেলেও ইসলামের পথ ছেড়ে যাবে না।জামাতে ইসলামকে যতই মানুষ খারাপ চোখে দেখুক, ইসালামের অনুগত জনগন ভোটের সময় ইসলামের লোকদেরই খুঁজবে।এদিক থেকে বিএনপির একটা ভোট ব্যাংক এখানে আছে।এই কারনে বেগম খালেদা জিয়া এত সহজে দলটিকে হাত ছাড়া করবে বলে মনে হয় না।

আওয়ামিলীগ বা বিএনপিতে জামাত-শিবিরের মত ত্যাগী নেতা খুব কম-ই আছে যারা জীবন বাজি রেখে সামনে এগিয়ে যায়।আমরা বিভিন্ন ক্রাইসিস গুলো পর্যালোচনা করলে দেখি, আওয়ামিলীগ বা বিএনপি ভাড়া করে লোক নিয়ে আসে কিন্তু জামাতে তাদের একটিভ কর্মিরা এগিয়ে যায়।এটা ১৮ দল তথা বিএনপির একটা বড় প্লাস পয়েন্ট।আমি মনে করি এদিক থেকে বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক প্রজ্গা আছে যদিও তিনি এখন ছাপের মধ্যে রয়েছেন।এমনকি হেফাজতে ইসলামের মত একটা বড় গোষ্ঠিকেও অনেকটা বিস্তার করে আছে এ দলটি।এই কারনেই হয়ত বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন,' জামাত জোটে থাকবে কি থাকবে না সেটা নির্ধারন করবে জোট ও জনগন' তবে জামাত যদি কোন সন্ত্রাসী কাজের সাথে সম্পৃক্ত না রেখে তাদের মুক্ত চিন্তার দিকে নিয়ে আসে এবং বর্তমান প্রজন্ম যদি নতুন কোন দল গঠন করে দেশে গঠনে অংশ গ্রহন করে ভবিষ্যতের জন্য সেটাই হতে পারে উত্তম একটি ব্যাবস্হা।তবে এটা সম্ভব হয়তবা হবে না কারন এই উপমহাদেশে জামাত সক্রিয় অবস্হানে আছে দলগত দিক থেকে।বাংলাদেশে জামাত হেয় হয়ে আছে একমাত্র ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার বিরোধীতার কারনে।এ ছাড়া সংগঠন হিসেবে তাদের অন্য কোন দায় নেই।

গত নির্বাচনে এবং এর আগেও দেশের বিভিন্নস্হানে সংখ্যালঘুদের শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এবং তাদের বাড়িঘর ভাংচুর করে আগুন দিয়ে অনেককে ঘরছাড়া করতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে তথাকথিত অসাম্প্রদায়িক বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের একটা মহলে মহোৎসব দেখা যাচ্ছে। এটা কোনো নতুন ব্যাপার নয়। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার জোয়ার বইছে এটা প্রমাণ করার জন্য কাঠখড় পোড়াতে উৎসাহের অভাব এক ধরনের বুদ্ধিজীবীর মধ্যে কোনো সময়ই দেখা যায়নি। এখন সুযোগ পেয়ে এরা নিজেদের ‘সাম্প্রদায়িকতা’বিরোধী তৎপরতায় ব্যস্ত রেখেছে। বিস্মিত হওয়ার কিছু থাকবে না যদি এ বক্তব্যকে এরা জনগণের সাম্প্রদায়িকতার নিদর্শন আখ্যা দিয়ে নিন্দাবাদ করে। উপরন্তু এটাই হবে এদের জন্য স্বাভাবিক।বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৪২ বছর পর এরা কারা বা কোন দল খোলাখুলি রাস্তায় নেমে যে তান্ডব মাসের পর মাস রাজনীতির নামে চালিয়ে যাচ্ছে, তার সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় হিন্দুদের ওপর তাদের আক্রমণ পরিচালনাকে বিচ্ছিন্ন ব্যাপার মনে করার কারণ নেই। এসবই একই সূত্রে গাঁথা।একটা স্বাধীন দেশে নাগরিকদের সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালগু ভাবার যে হীনস্বার্থ তা কেন পরিস্ফুটিত হচ্ছে তা ভেবে পাচ্ছি না।সংখ্যা লগুর যেমন অধিকার রয়েছে সংখ্যাগুরুর ও তেমনি অধিকার।মানবিক দিক থেকে তো এই-ই হওয়া উচিত। কিন্তু যখনই কোন দুর্ঘটনা ঘটে তখন সরকার ঢালাওভাবে বিরোধীদের উপরে ছাপিয়ে দেয়।আবার বিরোধীরাও বলে এ সরকারি লোকরা করছে।তাহলে সরকার কেন খুঁজে বের করছে না।অনেক আগে আইজিপি খন্দকার রকিব সাহেব বলেছিলেন,২৪ ঘন্টায় আমি দেশ ঠান্ডা করে দিতে পারি কিন্তু পারছিনা।তার না পারার কারন হলো,পুলিশ প্রশাসন সরকারের হাতে বাঁধা।সরকার যদি চায় যে কোন সময় সমস্যার সমাধান, তা করতে পারে।গত নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের কাছে কি ক্ষমতা ছিল না? তারা কি জানে না সংখ্যালগুদের উপর আক্রমন হবে? তাহলে কেন আগে থেকে এ সমস্ত এলকাগুলোতে পুলিশ,রেব ও আর্মি নিয়োগ করে নি? কারন আমাদের রাজনীতি হলো ক্ষমতা দখলের রাজনীতি। তারা জনগনের কল্যানে রাজনীতি করে না।

একাত্তরে জনগণের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে যা বোঝায়, সে চেতনার প্রধান অংশজুড়েই ছিল এমন এক মুক্ত জীবনের আকান্খা যেখানে মানুষ শুধু খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদির সহজ নিশ্চয়তা পাবে তা-ই নয়, তাদের চিন্তার জগৎও পশ্চাৎপদতা, রক্ষণশীলতা, প্রতিক্রিয়াশীলতামুক্ত হবে এবং তারা এক সুস্থ সাংস্কৃতিক জগতে বসবাস করবে।একটার পর একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনার কোন প্রতিকার করার উদ্দোগ কোন সরকার থেকেও নেয়া হয়নি বা এদের ধরে বিচারের আওতায় আনা হয় নি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মধ্যে উপরোক্ত যে আশা-আকান্খার কথা উল্লেখ করা হয়েছে তার কিছুই পূর্ণ হয়নি। বাংলাদেশে ধনসম্পদ অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, ভোগসর্বস্ব একটি মধ্যশ্রেণী গঠিত হয়েছে, যারা বাংলাদেশের শাসকশ্রেণীর ওতপ্রোত অংশ। এরা নিজেদের জন্য অনেক রকম সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করেছে।এ সব সরকার পতনের পরপর তাদের কোটি কোটি টাকার সম্পদের তছরুপের কাহিনী পত্র পত্রিকায় ছাপা হয়েছে কিন্তু তাদের কারো বিরুদ্ধে ব্যাবস্হা নেয়া হয়নি বরং তাদের অনেককেই পদোন্নতি দিয়ে মন্ত্রীত্ব ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে যা বোঝায়, সেটা ১৯৭২ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারের শাসনামলে অধরাই থেকে গেছে। শুধু তাই নয়, একশ্রেণীর ও দলের ক্ষমতার দাপটে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। তারাই এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে সব থেকে বড় আওয়াজ দেয়। এই আওয়াজ দিতে গিয়ে তারা দাবি করে যে, তারা ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহক আর কেউ নেই। এমনকি যারা তাদের বিরোধিতা করে, তারা নাকি পাকিস্তানের চর!! বাস্তবত এরা শুধু প্রতিক্রিয়াশীলই নয়, প্রতারকও বটে। এই অবস্থান থেকে সৃষ্ট বিকৃতি তাদের কার্যকলাপ সামগ্রিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।

যে কোন ধর্মে কোন প্রতিক্রিয়াশীলতা বা ধ্বংসাত্বক কাজ নেই।ধর্মের নামে ধ্বংসাত্মক কোন কাজ নেই।ধর্ম হলো শান্তির প্রতীক।মুসলমানের ধর্মের ইতিকথায় পরিষ্কার দেখতে পাওয়া যায় ইসলামে নেতা নির্বাচিত হয় গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আর সেটা ইসলামিক গনতন্ত্র।আর বর্তমান গনতন্ত্র হলো ক্ষমতা ভাগাভাগির গনতন্ত্র।ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্যই তৈরি হয় পেশিশক্তি।এখন যে মানুষগুলো মারা যাচ্ছে তা ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার জন্য নয়।আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রয়োজনে ধর্মের নামের কিছু প্রতিক্রিয়াশীলদের ব্যাবহার করে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে।প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো এ ব্যাপারের গনমাধ্যমে যা বলে ভিতরে তারা করে উল্টোটা।এপ্রতিচ্ছবি আমরা দেখতে পাই ভোটের দিনগুলোতে যারা বিশাল অন্কের মাধ্যমে এদের ভাড়া করে।দেশে একটার পর একটা ছোট বড় ঘটনা ঘটছে,সেখানে কোথায় আমাদের পুলিশ ,রেব , ইন্টেলিজেন্সের লোকবল।কোন ঘটনার সঠিক তথ্য ও বিচার জনগন পায় নি।এই মুহূর্তে এদেশে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে সেদিকে তাকালে দেখা যাবে, গ্রাম্য বর্বরতার ধারক-বাহক হিসেবে একটি গোষ্ঠী ইসলামের নামে এখানে যে অপরাজনীতি চাঙ্গা করার জিহাদে অবতীর্ণ হয়েছে। এই অপকর্মে নিযুক্ত হয়ে এরা ইসলামের গৌরব বৃদ্ধি করছে না, উপরন্তু তাকে কলুষিত করছে।যদি জামাতের ভিতরে এই উগ্রপন্থি থেকে থাকে তাহলে তাদের উচিত সংগঠন থেকে বের করে দেয়া।কারন উগ্রপন্থি দিয়ে কখনো মুক্ত গনতন্ত্রমনা হওয়া যায় না। হিন্দু-মুসলমানসহ জনগণের সমগ্র অংশের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে এই উগ্রপন্থিরা বাংলাদেশের শাসকশ্রেণীর ফ্যাসিবাদী চরিত্রকেই জোরদার করছে। ফ্যাসিবাদী শক্তি হিসেবে ক্ষমতাসীনদের মতো এরা একই গর্তের শেয়াল। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন এই শেয়ালদের দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষের এক পরিস্থিতিই বাস্তবত দেখা যাচ্ছে। এক ধরনের বুদ্ধিজীবীর দল এদেশে ধর্মযুদ্ধে অবতীর্ণ ক্রিমিনালরা আবার চাঙ্গা হয়ে ওঠা নিয়ে মাতামাতি করলেও স্বাধীনতাঠিক এ কারণেই আওয়ামী লীগের তল্পিবাহক ও মুখপাত্র হিসেবে র ৪২ বছর পর কেন এটা ঘটল এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন করে না, এ নিয়ে কোনো গ্রাহ্য আলোচনা তাদের মধ্যে নেই। এটা না থাকার কারণ এক্ষেত্রে এই তথাকথিত সাম্প্রদায়িকতা বিরোধীদের নিজেদের অবস্থান ও ভূমিকাই প্রধান। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে যা বোঝায়, তার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করে দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে বাংলাদেশের শাসকশ্রেণীর মূল রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং সেই সঙ্গে তাদের শেকড় থেকে গজিয়ে ওঠা বিএনপি, জাতীয় পার্টি ইত্যাদি রাজনৈতিক দল জনগণের জীবনে যে বঞ্চনা জারি রেখেছে, তার ফলস্বরূপ জনগণের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে গভীর হতাশা। এই হতাশার কারণেই এক ধরনের চরমপন্থিদের মধ্যে পরকালে কিছু পাওয়ার চিন্তার উদ্ভব হয়েছে।পরকালের কর্মসূচির প্রতি তাদের আকৃষ্ট হওয়ার শর্ত তৈরি হয়েছে।কিন্তু তাদের ভাবতে হবে পরকালের পথটা সহিংসতা নয় সেটা হলো আদর্শগত দিক যা অনুসরন করতে হবে একমাত্র রাসূল সা: এর জীবন আদর্শ থেকে। যে প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মীয় শক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ঘাপটি মেরে ছিল এরা ইসলামের মুল ধারার শক্তি নয় এবং তারা যা করছে এটা ইসলামিক পথে নয়।এরা বড় দুটি দলের আজ্গা পালন করছে মাত্র।তারা এই সুযোগ নিয়ে মাঠে ও রাস্তায় নেমেছে। বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই যে, আওয়ামী লীগের চরম রাজনৈতিক ব্যর্থতার পর এদেশে সাধারণভাবে জনগণের রাজনৈতিক চেতনা ও কর্মকাণ্ডের থেকে নয়, সামরিক ছাউনিতে আওয়ামী লীগের বিকল্প হিসেবে একের পর এক বিএনপি ও জাতীয় পার্টির জন্ম হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে যে ফ্যাসিবাদী শাসনের প্রচলন হয়েছিল তার ধারাবাহিকতাই রচিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের পর এদেশে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির উদ্ভবের শর্ত আওয়ামী বাকশালী শাসনামলেই তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে শর্ত তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিকাশ ও শক্তি বৃদ্ধির। এরা প্রত্যেকেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে অভিন্ন বিষবৃক্ষের ফল। এ কারণে দেখা যাবে যে, এ দলগুলোর সঙ্গে ধর্মীয় রাজনীতি ও জামায়াতে ইসলামীর কোনো চীনের প্রাচীর নেই। কোনো আপসহীন দ্বন্দ্ব নেই। প্রয়োজন অনুযায়ী এরা সবাই জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আপসের রাজনীতি ও লেনদেন করেছে এবং ধর্মীয় রাজনীতির ব্যবহার করে এসেছে। আপাতদৃষ্টিতে বিস্ময়কর মনে হলেও যুদ্ধাপরাধী হিসেবে যে মাউলানা নিজামীর বিচার এখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার বুক ফুলিয়ে করছে, জামায়াতে ইসলামীর আমীর বা সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে এই একই নিজামীর সঙ্গে ১৯৯২ সালে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বাধীন জামায়াতবিরোধী আন্দোলনের পরপরই শেখ হাসিনা বৈঠক করেছেন। তার সচিত্র রিপোর্টও তখন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। পরে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিজামীর নেতৃত্বাধীন জামায়াতে ইসলামীকে গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে আখ্যায়িত ও আলিঙ্গন করে রাজনৈতিক ফায়দা উঠিয়েছে। কাজেই এখন বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে যেভাবে গাঁটছড়া বেঁধেছে, তার আগেই শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ তাদের সঙ্গে আপসের রাজনীতি করে নিজেদের স্বার্থে কীভাবে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে মৈত্রী বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যায় সেটা দেখিয়ে দিয়েছে। এদিক দিয়ে বিচার করলে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক জোট নিয়ে আওয়ামী লীগ যতই নিজেকে পূতপবিত্র প্রমাণের চেষ্টা করুক, বিএনপির সঙ্গে তাদের কোনো পার্থক্য নেই।

মূল কথা হল, গণতান্ত্রিক রাজনীতির বিনাশ ঘটলে যা হয়, বাংলাদেশে তাই হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের শাসন কায়েম ও তার বিকাশের মধ্য দিয়েই জামায়াতে ইসলামীর জন্ম ও শক্তি বৃদ্ধি হয়েছে। জামায়াতের এই শক্তি বৃদ্ধির মূল বাংলাদেশের শাসকশ্রেণীর রাজনীতির প্রতিক্রিয়াশীল চরিত্রের মধ্যেই প্রোথিত। পাকিস্তানিরা এতে খুশি হতে পারে, হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু এক্ষেত্রে তাদের কোনো কৃতিত্ব নেই। এ কৃতিত্ব বাঙালিদের নিজেদের। এটা স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি থেকেই সৃষ্ট। এ পরিস্থিতি সৃষ্টির ক্ষেত্রে বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবীদের অবদান ছোট করে দেখার উপায় নেই। ১৯৭১ সালের আগে জনগণ সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম করেছিলেন, তখনকার বুদ্ধিজীবীরা যে ভূমিকা এক্ষেত্রে পালন করেছিলেন, তাতে সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় রাষ্ট্রের প্রতি জনগণের সমর্থন দ্রুত কমে এসে প্রায় শেষ হয়েছিল। জনগণ সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী হয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশ আমলে আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবীরা যেভাবে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তাদের তথাকথিত সংগ্রাম করে থাকেন, তার ফলস্বরূপ সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার কমে না এসে আরও জোরদার হয়। সেটা না হলে আজ বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর শক্তি বৃদ্ধি যেভাবে হয়েছে তা হতো না। পরিস্থিতির এ দিকটির প্রতি চোখ বুঝে থাকলে ধর্মীয় রাজনীতির ব্যবহার ও শক্তিবৃদ্ধি তো কমবেই না, উপরন্তু আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

এরশাদ ইসলামকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম করে যে সংশোধনী পাস করেছিলেন, অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মবিযুক্ত রাজনীতির ধ্বজাধারী আওয়ামী লীগ ও তার নেতা শেখ হাসিনা কি জাতীয় সংসদে নিজেদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সে সংশোধনী বাতিল করেছেন? কেন করেননি? ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘাড়ে নিয়ে কি ধর্মভিত্তিক রাজনীতি এবং সাম্প্রদায়িকতার কোনো বিরোধিতা করা যায়? এ প্রশ্ন কি কোনোদিন আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবীরা শেখ হাসিনা ও তাদের দল আওয়ামী লীগের কাছে করেছেন? এর কোনো কৈফিয়ত চেয়েছেন? শুধু তাই নয়, এ প্রশ্ন কি তারা নিজেদের কাছেও করেছেন? এই বুদ্ধিজীবীদের প্রতারণামূলক চরিত্রের প্রমাণ কি এর মধ্যে নিহিত নেই? অবশ্যই আছে। এজন্য এই মতলববাজরা বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক শান্তি এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক অসাম্প্রদায়িকতা সত্ত্বেও সব সময় প্রচার করে এসেছে, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িকতার জোয়ারে ভাসছে। এটা প্রমাণ করার জন্য এদের মধ্যে এমন লোকজনের অভাব নেই, যারা বাংলাদেশে বিক্ষিপ্ত কোনো কোনো ঘটনা কদাচিৎ ঘটলে তার ওপর তথ্যচিত্র বা ডকুমেন্টারি তৈরি করে ভারতে এবং ভারতের বাইরে তার প্রদর্শনী করেছে! এর দ্বারা সাম্প্রদায়িকতার উস্কানি দেয়া ছাড়া আর কী হয়েছে? বিস্ময়কর ব্যাপার যে, তারা এই তথ্যচিত্র দেখিয়ে এসেছে এবং এখনও দেখাচ্ছে ভারতে- যেখানে সাম্প্রদায়িকতা বিভিন্ন রাজ্যে শক্তিশালীভাবে সক্রিয় রয়েছে। ২০০২ সালে গুজরাটে যে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় হাজার হাজার মুসলমান নিহত হয়েছিলেন, তার বিরুদ্ধে কি এরা কোনো বাক্য ব্যয় করেছেন? অতি সম্প্রতি মুজাফফরপুরে যে বড় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে সে বিষয়ে কি তারা কোনো ‘অসাম্প্রদায়িক’ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন? না, কিছুই তারা করেননি। কারণ তাদের কাছে ভারত সরকার ও অসাম্প্রদায়িকতা সমার্থক। কাজেই বাংলাদেশে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ব্যাপারে পাকিস্তানের অবস্থা ঠুঁটো জগন্নাথের মতো হলেও তাদের মতে, সাম্প্রদায়িকতা ও জামায়াতে ইসলামীর উত্থানের জন্য পাকিস্তানই দায়ী! আর ভারতীয় সরকার তার থাবা বাংলাদেশের ওপর শক্তিশালীভাবে বিস্তার করে রেখে এখানকার নির্বাচনের নির্ধারক শক্তি হিসেবে কাজ করলেও তাতে এদের কিছু যায় আসে না। বস্তুত ভারতের এই ভূমিকা এদের কাছে অভিনন্দনযোগ্য। ভারতের অনেক বুদ্ধিজীবী ও সংবাদপত্র এর সমালোচনা করলেও এখানকার আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবীরা এতে সন্তুষ্ট!! ভারতের গোলামিকে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরোধী মনে না করায় ভারত এখন বাংলাদেশে পাকিস্তানের স্থান দখল করে আছে। শুধু রাজনৈতিক দলই নয়, তাদের বুদ্ধিজীবীদের এই ভূমিকা বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার শক্তি বৃদ্ধি এবং জামায়াতে ইসলামীকে চাঙ্গা করার ক্ষেত্রে যে ভূমিকা রেখেছে, তার বিশ্লেষণ করলে বাংলাদেশের এই ‘অসাম্প্রদায়িক’ বুদ্ধিজীবীদের বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার অগ্রণী বাহিনী হিসেবে আখ্যায়িত করা হলে যুক্তিসঙ্গতভাবে এ বক্তব্যের সত্যতা অপ্রমাণ করার কোনো উপায় নেই। এক্ষেত্রে গায়ের জোর ও প্রচার-প্রচারণার শক্তি প্রদর্শনের সুযোগ আছে। কিন্তু গায়ের জোর যুক্তির কোনো সার্থক ও কার্যকর বিকল্প নয়। কাজেই বর্তমানে বাংলাদেশে কিছু সংগঠিত ক্রিমিনালের সাম্প্রদায়িক কার্যকলাপে উৎসাহিত হয়ে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে উপরোক্ত বুদ্ধিজীবীরা যতই প্রচারণার উৎসব করুন, তারা নিজেরা যেভাবে এ পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য দায়ী সেটা এক ঘৃণ্য ও বিপজ্জনক খেলা ছাড়া আর কিছু নয়।

বিষয়: বিবিধ

১৩৩০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File