ভুলের মাশুল।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৯ জানুয়ারি, ২০১৪, ১২:৩৮:১৬ রাত
নিত্যদিনের মত সাদেক আলি সাহেব অফিসে বের হলেন।তিনি জাজিরাতুল আরবে একটি প্রতিষ্ঠিত কম্পানির মধ্যম শ্রেনীর অফিসার।অফিসে ঢুকেই ইলেক্ট্রনিক ফংগারিং করে মোড় ফিরতেই রিসেপ্সনে বসা একজনকে দেখতে পেলেন।সাদেক আলি সাহেব লোক হিসেবে ভাল তবে ভাল মন্দ মিলেই কাজ করেন।ভদ্রলোককে দেখে বা্ংলাদেশি মনে হতেই জিজ্গেস করলেন আপনি কি বা্ংলাদেশি? আগুন্তক জবাব দিলেন জি হাঁ।কুশালাদি জিজ্গেস করে জানতে পারলেন তিনি এ কম্পানিতে একজন সেলস এ্ক্সিকিউটিভ হিসেবে জয়েন করতে এসেছেন।সাদেক আলি সাহেব বললেন সেলস ম্যানেজার আসতে সময় লাগবে আপনি আসুন আমরা কথা বলি।সাদেক আলি সাহেব নাম ধাম দেশের বাড়ি ইত্যাদি জিজ্গেস করে পিয়নকে ডাকলেন।ছালামত সাহেবকে বললেন, চা না কফি খাবেন। ছালামত সাহেব বললেন ,এ্যানিথি্ং এ্যালস।সাদেক আলি সাহেব বললেন একটা চা চিনি ছাড়া ও একটা কফি নিয়ে আস।চা পান করতে করতে কোম্পানি সম্পর্কে মোটামুটি ব্রিফি্ং দিলেন সাদেক আলি সাহেব।সেলস ম্যানেজার আসলো ছালামত সাহেব মিটি্ং রুমে গেলেন। এক ঘন্টা মিটি্ং হলো।অন্চল সেলস ও রুট সম্পর্কে ব্রিফি্ং দিলেন আর বললেন আগামি কাল বিকেলে রুট সেলসম্যানদের সাথে মিটি্ং কল করুন।সেক্রেটারিকে বললেন একটা মেমো ইস্যু করো যেন সব সেলসম্যান আগামি কাল মিটি্ং এ জয়েন করে।নেয়ামত সাহেব একটা ডায়েরিতে সব নোট করে পরের দিনের প্রোগ্রাম সম্পর্কে কিছু হোম ওয়ার্ক করলেন।এদিকে বেলা প্রায় দু'টোর কাছা কাছি।সাদেক আলি সাহেব বাসায় বলে দিয়েছেন একজন মেহমান আছে ভালমন্দ রান্না কর।আর ছালামত সাহেবকেও জানিয়ে দিলেন।ছালামত সাহেব বলললেন কি দরকার আছে।সাদেক আলি সাহেব বললেন বাসাটাও চিনা হবে আমার ছোট মেয়েটাকেও দেখে আসবেন।ছালামত সাহেব পাশের ষ্টোর থেকে একটি চকলেটের ব্ক্স ও কিছু বই কিনলেন মেয়েটির জন্য।এক ঘন্টার মধ্যে বাসায় পৌঁছে গেলেন।কলিং বেল টিপতেই সাদেক আলি সাহেবের মেয়ে টুসিয়া বাবার গলার স্বর শুনে মাকে বললো মা দরজা খোল বাবা এসেছে।দরজা খুলতেই সালাম বিনিময় হলো।ছালামত সাহেব সেলসম্যানদের আচরনে ভাবির খুব প্রশংসা করলো।সাদেক আলি সাহেব ছালামত সাহেবকে ড্রয়িং রুমে বসতে দিলেন।ছালামত সাহেব উপটৌকন যা নিলেন তা মেয়েটির হাতে দিলেন আর নাম , কোন স্কুলে পড়ে ইত্যাদি জিজ্গেস করলেন।সাদেক আলি সাহেব ফ্রেস হয়ে এসে ছালামত সাহেবকে বললেন ড্রেস পরিবর্তন করুন ও ফ্রেস হয়ে নিন। ছালামত সাহেব বলললেন আমি অফিস থেকে সব সেরে এসেছি।এবার বেগম সাহেবা খাবার ডাইনিং এ সাজিয়ে দু'জনকেই ডাকলেন।সবাই একসাথে বসলেন।সাদেক আলি সাহেব খাবার উঠিয়ে দিলেন।ভাবি এবার ছালামত সাহেবের পারিবারিক খবরাদি জিজ্গেস করলেন। ছালামত সাহেব বললেন আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে। ভাবি প্রশংসা করে বললেন বা: সুন্দর ছোট পরিবার।ছালামত সাহেব উত্তর দিলেন আপনারাও তো তাই।খাওয়া শেষ।ছালামত সাহেব ড্রয়িং রুমে চলে গেলেন।সাদেক আলি সাহেব বেগম ও মেয়েকে নিয়ে অন্দরে রেষ্ট করতে গেলেন।এক ঘন্টা পর আবার অফিসের উদ্দেশ্যে দু'জন বের হয়ে পড়লেন।ছালামত সাহেব একটি ফার্নিশড এ্যাপার্টমেন্টে উঠেছিলেন।রাতে সেখানে সাদেক আলি সাহেব ড্রপ করে দিলেন।
ছালামত সাহেব অফিসে সেট হয়ে গেলেন। নতুন গাড়ি পেলেন।সপ্তাহিক ছুটির দিনে আসেন ,একসাথে বেড়াতে যান , খাওয়া দাওয়া করেন।এভাবে কিছুদিন কাটে।ছালামত সাহেব চিপচিপে "ছ" ফুট লম্বা হলেও চেহারায় একটা মায়া আর তার সাথে কথার চমক চিল। কারন সেলসম্যানদের এটা একটা বড় পুঁজি।যে সেলসম্যান যত চতুর তত বেশি সেলস ফিলড জমাতে পারে।এরই মধ্যে ভাবি ও বাচ্চাকে ভাল গিফট দিয়ে একেবারে পরিবারের সাথে মিশে গেছে।সাদেক সাহেবের বাসার ঠিক উল্টো দিকে আর একজন বাংলাদেশি পরিবার থাকে।ভাইদের সাথে তেমন উঠা বসা না থাকলেও ভাবিদের যোগাযোগ আছে।একদিন সাদেক আলি সাহেব অফিসের কাজে একদিনের জন্য আর একটি শহরে যায়।সকাল দশটার দিকে ছালামত সাহেব এসে সাদেক আলি সাহেবের বাসায় কলিং বেল টিপলো।অনেক বাসার কলিং বেল পাশের বাসা থেকে শুনা যায়।পাশের বাসার ভাবি ছিলেন ধার্মিক প্রকৃতির এবং ইতিমধ্যে আসা যাওয়ার সময় তাদের কথায় হাস্যালাপের কিছু আলামত লক্ষ্য করেছেন।তাই এত সকালে কলিং বেলের শব্দ শুনে দরজার কাছে এসে দেখলেন ছালামত সাহেব দাঁড়িয়ে আছে আর ভাবি হাসিবরন মুখে আমন্ত্রন জানাচ্ছেন।পাশের ভাবি সন্দেহ করলেন একজন অফিস কলিগ এত সকালে এসেছে।তাছাড়া উনার স্বামি বা ময়েটিও নেই।২০/২৫ মিনিট পর ভাবি গেলেন ও কলিং বেল টিপলেন।টুসিয়ার আম্মু দরজার কাছে এসে যখন ভাবিকে দেখলেন তখন বললেন ভাবি আমি একটু ব্যাস্ত আপনাকে পরে ডাকছি।ভাবি বুদ্ধি খাটিয়ে বললেন আমি একটু আপনার টয়লেটটি ইউজ করবো।এবারতো না করার কোন উপায় নেই। বললেন একটু দাঁড়ান।ঘুরে এসে দরজা খুললেন।পাশের ভাবি টয়লেটের ভান করে এক মিনিট পরই বের হয়ে আসলেন।টয়লেটের দরজার শব্দ শুনে সাদেক ভাবি ড্রয়িং রুম থেকে দৌড়ে আসলেন।পাশের ভাবি ড্রয়িং রুমে যেতেই সাদেক ভাবি বাধা দিলেন এই বলে আমাদের একজন মেহমান আছে।ভাবির নিয়াত ছিল ভাল।তিনি বললেন কে এই মেহমান।সাদেক ভাবি বললেন আপনি চিনবেন না।এবার ভাবি বললেন আমি তো দেখেছি ছালামত সাহেব এসেছেন।এবার সাদেক ভাবি রেগে গিয়ে বললেন আপনার কত বড় আস্পর্ধা পরের ঘরের খবর করতে আসছেন। আর কখনো আমার বাসায় আসবেন না।পাশের ভাবি বেরোতেই ছালামত সাহেব বেরিয়ে গেলেন।পাশের ভাবি রাতে ভাইকে বিষয়টি জানলেন।যদিও সাদেক সাহেবের সাথে উঠাবসা নেই পরের দিন সাদেক সাহেবের অফিসে গিয়ে হাজির।সাদেক সাহেব তো ভদ্রলোককে দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলেন।বললেন আমরা পাশা পাশি অথচ যোগাযোগ নেই।শুধি পাঠক আমি এ বিষয়টিতে আসছি কোরানের কয়েকটি আয়াতের পর যা আপনাদের দাম্পত্ব জীবনকে বুঝতে সাহায্য করবে।সূরা নূরের ২৭/২৮/২৯/৩০/৩১ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'ওহে যারা ঈমান এনেছ! নিজেদের গৃহ ছাড়া অন্য গৃহে প্রবেশ করো না যতক্ষন না তোমরা অনুমতি পেয়েছ এবং তাদের বাসিন্দাদের সালাম কর।যদি তোমাদের বলা হয় ফিরে যাও তোমরা ফিরে যাবে এটিই তোমাদের জন্য উত্তম।আর মু'মিন পুরুষ ও মু'মিন মহিলারা দৃষ্টি অবনত করুক ও তাদের আঙিক কার্যাবলির হেফাযত করুক এবং তাদের অঙ শোভা যেন প্রদর্শন না করে।' এ আয়াতগুলো থেকে স্পষ্টই বুঝা যাছ্ছে কিভাবে আমরা পারিবারিক ভাবে মেলামেশা করবো।
সাদেক ভাবি ইতিমধ্যে ভাইকে পটিয়ে ফেলেছে ঠিক উল্টো তথ্য দিয়ে।সাদেক সাহেব এবার বললেন ভাই যে ব্যাপারে আমার আপনার কাছে যাওয়ার কথা সে ব্যাপারে আপনিই আমার কাছে এসেছেন।আপনি অফিস থাকা কালিন সকালে আপনার বাসায় লোক আসে।পাঠক এখানে একটি গুরুত্বপুর্ন ব্যাপার হলো আপনি যদি পরিবারের সাথে ওতপ্রোতভাবে মিশে থাকেন তাহলে আপনার পরিবারকে নিশ্চয়ই বুঝতে পারবেন। পাশের ভাই ভাবিকে এ ব্যাপারে কোন কিছু না বলে পরের দিন সকাল দশটা থেকে সাড়ে এগারটা পর্যন্ত এক সপ্তাহ বাসার কাছে অপেক্ষা করলেন।দেখলেন দু'দিন নেয়ামত সাহেব এসেছে ও এক বা দেড় ঘন্টা থেকে চলে গিয়েছে।এবার আবারো সাদেক সাহেবকে কথাটা বললেন।সাদেক সাহেব কি করে বিশ্বাস করবেন যে নারী সকালে নিজের জুতো শাড়ির আঁচলে মুছে দেয়, অফিসে যাওয়ার আগে সব প্রস্তুত করে রাখে আবার অফিস থেকে ফিরলে স্বামীর পরিচর্যা করে।এ নিয়ে দু'পরিবারের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ ও হয়ে যায়।কিন্তু এরই মধ্যে ষড়যন্ত্র চলতে থাকে।ছালামত সাহেব কানাডায় ট্রান্সফার নিয়ে নেন তবে কিছুদিন এখনো বাকি।পরামর্শ হলো সাদেক ভাবি দেশে বেড়াতে যাবে আর ওখান থেকে সাদেক ভাবিকে নিয়ে যাবে কানাডায়।এদিকে সাদেক ভাবি ভাইকে বললো আমার কেন জানি ভাল লাগছে না মাকে ক'দিনের জন্য দেখে আসি।আর টুসিয়ার ও ছুটি আছে। সাদেক সাহেব ভাবলো এতগুলো কথা হছ্ছে আর দেশে ঘুরে আসাটাই ভাল।এ্ক্সিট রিএন্ট্রি লাগানো হলো।সাদেক ভাবি চলে যাওয়ার আগের দিনও পাশের ভাই কান্না কন্ঠে বললো ভাই আপনি যতই আমাকে খারাপ ভাবুন আমি আপনার উপকার করতে ছেয়েছি।এবার নিশ্চয়ই আপনি ভুলের মাশুল দিবেন।সাদেক ভাবি চলে গেল টুসিয়াকে নিয়ে।১৫ দিন পর হঠাৎ খবর এলো টুসিয়ার মাকে পাওয়া যাছ্ছেনা।সাদেক সাহেব দেশে গেলেন।থানায় ডায়েরি করে জানতে পারলেন এ নামের যে পাসপোর্ট টির পাছেন্জার কানাডায় চলে গেছেন।সাদেক সাহেব টুসিয়াকে নিয়ে বিমর্ষ চিত্তে কর্মস্হলে চলে এলেন।মেয়েকে বড় করে বিয়ে দিলেন।অত্যন্ত ধার্মিক হলেন আর পাশের ভাই ভাবিকে জীবনের কথাগুলো বলললেন যা আমি আপনাদের অবগতির জন্য বর্ননা করলাম।এটি একটি সত্য ঘটনা যা আপনিও আপনার আশে পাশে দেখতে পাবেন সচরাচর ঘটছে।
সম্মানিত পাঠক আমাদের সমাজে এ কাহিনির শেষ নেই।তবে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে পরিবার লালন পালনের ক্ষেত্রে। আপনার একটি ভুলের জন্য সারা জীবন আপনাকে চরম অশান্তি ভোগ করতে হবে।শুধু আপনাকেই নয় সন্তানদের জীবনে ও নেমে আসে অশান্তি।আপনার মেহমান যতই আপন হোক, মেহমানের যায়গায় মেহমানকে রাখুন।পর্দার সুরক্ষা করুন।ইসলামের বিধিবিধান তথা হালাল হারাম জীবনের সর্বক্ষেত্রে মেনে চলুন।সামাজিক এ বিপর্যয়গুলো আসে বেপর্দা ও পরিবারকে স্বাধীনতা দেয়ার কারনে।সেজন্য পরিবারকে কোরআন ও সূন্নাহের আলোকে সুরক্ষা করুন। আসুন আমরা দৈনন্দিন জীবনে কোরান ও সূন্নাহকে আঁকড়ে ধরে পরিবারের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করি তাহলেই এই সামাজিক অবক্ষয় থেকে বাঁচতে পারবো।
বিষয়: বিবিধ
১৩০১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক সর্বনাশ হয়ে যায় মহান রবের ঐ নির্দেশটি ফলো না করায়! ধন্যবাদ আপনাকে!
মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন