প্রতিভার গতিপথ রুদ্ধ হলে সমাজ-বিবেকের অবরুদ্ধতাও অনিবার্য।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৭ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৬:০২:৫৫ সন্ধ্যা
প্রতিভার স্বভাবদাবি অস্বীকার করার জো নেই করোরই।একজন লেখক তার প্রতিভার প্রভাবে মানুষের হৃদয়কে জয় করেন।এই প্রতিভা নামক জ্গান আল্লাহর বিশাল জ্গানের তুলনায় অনু মাত্র।একজন লেখক তার কলম রুদ্ধ দ্বারে বন্দি করে রাখতে সক্ষম নন।সমাজে লেখকের মৃত্যু হলে সমাজের মৃত্যু অনিবার্য।অনেক লেখক বা জীবনবাদিদের কর্মক্ষেত্রে হতাশ হতে দেখি।কিন্তু একজন সত্য মানবহিতৈশীকে হতাশ হতে দেখলে দু:খ হয়।বিশৃংখলিত এ সমাজে একজন লেখক যদি তার কলন বন্ধ করে রাখেন তাহলে সমাজে পংকিলতা সর্বগ্রাসি হয়ে আমাদের সমাজ জীবনকে বিপর্যস্ত করবে।হতাশা এক ধরনের রোগ যে কারনে আল্লাহ বলেছেন হতাশ হয় মুজরিম লোকেরা।একটু বিপদ হলে যারা হতাশ হয়ে পড়ে তাদের জ্গানের গভিরতা হয়তবা অনেক কম কিন্তু মনে রাখতে হতাশার মধ্যে জন্ম নিতে পারে ভবিষ্যতের সুন্দর স্বপ্ন।কবি নজরুল ইসলাম ও মানবতার এ রকম কবি ও সাহিত্যিকদের লিখার ক্ষুরধার আমরা দেখতে পাচ্ছি।যখনই তাদের বাক শক্তিকে সমকালীন শক্তি রুখে দিয়েছে তাদের লিখা থেকে বিচ্ছুরিত হয়েছে স্ফুলিংগ।
জীবনের সংকীর্নতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা জরুরি।সংকীর্ন মন ও সংকীর্ন দৃষ্টিভন্গি নিছতার লক্ষন।জীবনের সমস্ত সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে মানুষের পথকে করে দিতে হবে সহজ থেকে সহজতর।একজন মানুষের সফলতা ও বিফলতা তার নিজের বিচার্য বিষয় নয়।ইতিহাস নিজেই বিচার করবে একজন প্রতিভাবান ব্যাক্তিত্বকে।সৃষ্টিশীল লেখক হওয়ার জন্য কোন ডিগ্রির প্রয়োজন পড়ে না। তবে স্পেশালাইজড ডিগ্রি থাকলে সেটা নিরপদ।কারন একজন বিশেষজ্গ লেখক সৃ্ষ্টিশীল লিখার অলিগলি জেনেই লিখেন।আসল কথা হলো প্রতিটি মানুষ তার জীবনদর্শনকে সমাজে তুলে ধরার চেষ্টা করছে কিনা সেটা একমাত্র ভাবার বিষয়।কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র হাতে গুনা 'ক' জন সমাজ সংস্কারকের কাজে অনুবর্তী।বাকী কিছু নিতান্ত অনুসরনকারি।আর বিশাল অংশ তেজষ্ক্রিয়তাকে ছড়িয়ে দিচ্ছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে।কি করে সম্ভব সামান্য প্রতিভা এই বিশাল তেজষ্ক্রিয়তাকে নির্বাপিত করে?
আমাদের মেধার স্ফুরন ঘটাতে হবে।কলমের গতিময়তাকে আরো গতিময় করে তুলতে হবে।আমাদের সাহিত্য সম্ভারকে আরো সমৃদ্ধ করতে হবে।লেখদের তাদের উত্তরশূরী তৈরির পদক্ষেপ নিতে হবে।আমাদের সাহিত্য সাধকরা এখন অর্থ আহরনের বাঁকমোড়ে নিজেদের সীমাবদ্ধ করে ফেলেছেন।সাহিত্যিকরা দলে বিভক্ত হয়ে সাহিত্য সম্ভারকে কলুষিত করছেন অনেকে।সাহিত্যের শিক্ষকের কাজই হলো সাহিত্যের ইতিহাস, অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত্, সাহিত্যের সম্ভাবনা এবং তার ভালো-মন্দ নিয়ে পর্যালোচনা করা।তারা যদি নিজেদের কলুষমুক্ত না রাখেন সে সমাজের গতিপথ রুদ্ধ হতে বাধ্য।তাদের জ্ঞানসাধনার একটি মূল্যবান অংশ জড়িয়ে আছে প্রত্যাশিত অভিজ্ঞতার সঙ্গে। সাহিত্যসাগরের অতল গভীরে ডুব দিয়ে তারা বের করে আনেন সাহিত্যের অমূল্য রত্নমানিক।সে চর্চাকে রুদ্ধ করার অধিকার বন্চিত যিনি নিজেকে করেন তিনি বন্চিত করেন গোটা জাতিকে।সাহিত্যিক যে-ই হোন না কেন, চাই তিনি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হোন, চাই সাংবাদিক, বা সরকারি চাকরিজীবী কিংবা ব্যবসায়ী-সংগঠক, এমনকি চাই হোন তিনি একজন গৃহিনী—আমাদের দেখার বিষয় হলো তার কর্ম, কর্মের শিল্পোত্তীর্ণতা। তিনি শিল্পমন নিয়ে নিজের প্রতিভার স্ফুরন ঘটাবেন এটাই স্বাভাবিক।কোন সাহিত্যিক যদি কোন কারনে মাঝপথে ভেংগে পড়েন কোন কারনে তিনি তার সাহিত্যিক জীবনকে রুদ্ধই করলেন না বরং পাঠকদের হতাশ করে তাদের জ্গান আহরনের পথ রুদ্ধ করলেন।যিনি তার জ্গানকে সংকির্নতার অন্ধকরে নিক্ষেপ করলেন তিনি তো সৃষ্টিকর্তার সামনে এক জবাবদীহিতা তৈরি করলেন।
আপনার সাহিত্যচর্চা আপনাকে যদি সন্তুষ্ট করে তাহলে অন্যদেরও নিশ্চ-ই করবে।প্রকৃত সাহিত্যিকদের মাথা ব্যাথার কোন কারন নেই।আপনি আপন মনে আপনার লিখা লিখে যান।আপনার জীবনের যে সীমাবদ্ধতা তা জানার চেষ্টা করুন।খুব অল্প সময়ই পাচ্ছেন আপনার প্রতিভার স্ফুরন ঘটাতে।সাহিত্যের সোনালি জমিতে কত মানুষই না চাষ করে যাচ্ছে। সবার শ্রম কিন্তু ফসল হয়ে গোলায় উঠছে না তেমন। কতশত কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ছড়া ও নাটক লেখা হচ্ছে আজকাল। এসব নিয়ে গড়ে উঠছে সাহিত্যের উঁচু-উঁচু টিলা ও পাহাড়। কিন্তু কোনো নাখান্দা সনদ দিচ্ছে যে, এগুলোর সবটাই উন্নত সাহিত্য! এসব ঘটনা-দুর্ঘটনা শুধু আমাদের সাহিত্যে বা দেশে নয়, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ও সাহিত্যেও ঘটছে। তাই বলে প্রকৃত সাহিত্যব্যক্তিরা গাল ফুলিয়ে বসে নেই। তারাও সমানভাবে সৃষ্টি করে যাচ্ছে উন্নত সাহিত্য। তা হলে ওই যশোপ্রার্থী বর্ণচোরাদের প্রতিবাদ তো হয়েই যাচ্ছে নীরবে। ঘাবড়ে গিয়ে হাত গোটাবার প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন নেই বিশেষ কোনো পেশাকেও অভিযুক্ত করার। প্রয়োজন শুধু এতটুকু যে, কে কী লিখল এবং কীভাবে লিখল—তারই সুষ্ঠু বিচার করা। সে বিচার ও পর্যালোচনার জন্য চাই অনেক কিছু। এই ‘অনেক কিছুও কিন্তু এমনি হয় না। এজন্য দরকার ত্যাগ ও আত্মত্যাগ, চিন্তা-চেতনা এবং সাহিত্যের প্রতি নিখুঁত নিষ্ঠা। নিজেকে তিলে তিলে ব্যয় করে, দিন-রাতকে এক করে এবং মন-মস্তিষ্কের সবটুকু ঢেলে দিয়ে দখল করতে হয় এ ‘অনেককিছু’র কলকব্জা।তাই আমি আহ্বান করছি যারা ভাবছেন আপনার লিখা, মাত্র কতেক ব্যাক্তিরাই পঠন পাঠনে নিবদ্ধ হবে তা নিতান্তই হীনচিন্তা।সাহিত্য রচনা সমাজের প্রতিভাবানদের কাজ। এর পথ রুদ্ধ করার কারো হাত থাকতে পারে না।যারাই একে রুদ্ধ করবে তারাই অবরুদ্ধ হবে এবং তার ফলে সমাজ ও বিবেকের অবরুদ্ধতাও অনিবার্য।
বিষয়: বিবিধ
১১৬৬ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন