বিশ্বজগতের প্রভু কেন বললেন কবিদের অনুসরন করে ভ্রান্তপথগামিরা।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৫ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৪:০৭:৫২ বিকাল

নবী সা: ছিলেন একজন মানুষ তবে বিশেষ একজন মানুষ যিনি এসেছিলেন মানবতাকে সমস্ত পংকিল থেকে মুক্তি দিতে আর যার শিক্ষক ছিলেন একমাত্র আল্লাহ স্বয়ং নিজে।নবুওতের পূর্বেও তিনি ছিলেন সে মূর্খ সমাজের একজন সত্যবাদি মানুষ যাকে তারা আলআমিন বলতে দ্বিধা করেনি ও তার কাছে গচ্ছিত রাখতো মালসম্ভার।তিনি ছিলেন মানবজাতির জন্য অনুকরনীয় চরিত্র।যে গোত্রে তিনি জন্মেছিলেন তা ছিল সা’আদ বিন বকর গোত্র। যে সমাজ-পরিবেশে তাঁর আবির্ভাব, সেটি ছিল কবিতার শব্দ-ছন্দ, উপমা-উেপ্রক্ষা, বাণী ও রূপকল্পে প্লাবিত। আরবদের শিক্ষা-সংস্কৃতি, জীবন-জীবিকা, ইতিহাস-ঐতিহ্য, স্বপ্ন-বাস্তবতা ও দুঃখ-বেদনার বাহন ছিল কবিতা।সেই সমাজে জন্মগ্রহন করার পরেও আল্লাহ নবী সম্পর্কে আলকুরআনে বলেন,আমি তাঁকে কবিতা শিক্ষা দেইনি এবং তাঁর জন্য তা শোভনীয়ও নয়।কারন নবী ও কবির মাঝে ঘোরতর বৈপরীত্য ও দ্বন্দ্ব রয়েছে।আর সূরা শূয়ারার ২২৪ থেকে ২২৭ আয়াতে স্পষ্ট ভাষায় কবিদের সম্পর্কে বলেছেন,'আর কবিগন- তাদের অনুসরন করে ভ্রান্তপথগামিরা।তুমি কি দেখ না যে তারা প্রত্যেক উপত্যকায় লক্ষ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ায়।আর তারা নিশ্চই তাই বলে যা তারা করে না।তবে তারা ব্যাতিত যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে,আল্লাহকে খুব করে স্মরন করে আর অত্যাচারিত হওয়ার পর প্রতিরক্ষা করে."

এই আয়াতগুলোর শেষ আয়াতে স্পষ্ট করা হয়েছে কবি হতে হলে ঈমানদার , সৎকর্মি ও আল্লাহর স্মরনকারি অর্থাৎ নামাজি হতে হবে।এই মাপকাঠির ভিতর যদি কবি হয় তাতে কোন অসুবিধে নেই এবং তারা যা লিখবে ও রচনা করবে তা মানবজাতির কল্যানই বয়ে আনবে।আমরা যদি আরবের সে মূর্খতার যুগের আরব সমাজের দিকে তাকাই তাতে দেখতে পাব আরবদের শিক্ষা-সংস্কৃতি, জীবন-জীবিকা, ইতিহাস-ঐতিহ্য, স্বপ্ন-বাস্তবতা ও দুঃখ-বেদনার বাহন ছিল কবিতা।নবী নিজেও নবীত্বের দায়িত্ব পালনের ফাঁকে ফাঁকে সাহাবি-কবিদের কবিতার খোঁজ-খবর রাখতেন। ভালো ও সৎ কবিতা সম্পর্কে তাঁর মনোভাব ছিল প্রসন্ন। প্রয়োজনে নিজে কবিতা আবৃত্তি করা, অন্যদের কবিতা শোনা, কবিতা আবৃত্তির নির্দেশ দেয়া, কবিদের প্রশংসা করা, তাদের জন্য দোয়া করা, পুরস্কৃত করা, কবিতার চরণ পাল্টে দেয়া, কবিতার প্রভাব ও আবেদনের স্বীকৃতি, সর্বোপরি কবিতার গঠনমূলক সমালোচনা ইত্যাদি বিষয়ে তাঁর ছিল স্বতঃস্ফূর্ত তৎপরতা।তাহলে এতটুকু আমাদের বুঝতে নিশ্চ-ই সহায়ক হলো যে, কবি হতে হলে বিশ্বজগতের প্রভুর আনুগত্য করেই কবি হতে হবে।

বর্তমান বিশ্বে যে সমস্ত কবি সাহিত্যিক রয়েছেন তাদের মধ্যে অমুসলিম কবিদের বাদ দিয়ে মুসলিম জাতির মোড়কে যে সমস্ত তথাকথিত কবি সাহিত্যিক রয়েছেন তাদের আছরন কি? আপনাদের অনেকের মনে আছে কবি আলমাহমুদ যখন ইসলামের উপর লেখালেখি শুরু করলেন তাকে কয়েক বছর পত্র পত্রিকায় খুঁজে পাওয়া যায় নি।আমাদের দেশে কবি সাহিত্যিকদের কতজনের রচনায় আলকুরআন ও হাদিসের স্হান হয়েছে পাঠকবৃন্দ মাত্রই অনুমান করতে পারেন।মুসলিম হওয়ার অর্থ কি? মুসলিম হলো যে ইসলামের আনুগত্য করে।আমি যদি নিজেকে মুসলিম বলে দাবি করি তাহলে আমার জীবন পথে দু'টো জিনিসকে স্হান দিতে হবে অর্থাৎ দু'টো জিনিস অনুসরনের মাধ্যমে আমার জীবনকে পরিচালিত করবো।সে দু'টো জিনিস হলো আলকুরআন ও নবী সা: এর সূন্নাহ।তাহলে যদি আমি মানবহিতৈষি হই তাহলে আমার রচনায় স্হান পাবে ইসালমের ইতিহাস ঐতিহ্য।আমাদের সাহিত্যসম্ভারে অনেক ব্যাপকতা আমরা লক্ষ্য করেছি। বিশেষ করে আমাদের স্বাধীনতার পর অনেক কবি সাহিত্যিক সৃষ্টি হয়েছে।বাংলাভাষার আধুনিকতা সমাজ জীবনে বিস্তৃত হয়েছে নি:সন্দেহে।কিন্তু ইসলামের অন্তর্নিহিত রুপ বা আলো আমাদের সাহিত্যে স্হান পায় নি।এর কারন হিসেবে বলা যায় ইসলামকে তার অতীত ইতিহাস থেকে অধ্যয়ন না করা ও না বুঝা।আমাদের উপমহাদেশে ইসলাম সম্পর্কে মানুষকে যে ধারনা দেয়া হয়েছে তা অতি সন্কীর্ন।ইসলাম যে মানবজীবনের জন্য একটি জীবন বিধান এটা ইসলামের ধারক বাহকরা যেমন মানুষকে বুঝাতে ব্যার্থ হয়েছেন আর এক দিকে ইসলাম বিদ্ধেষী এক শ্রেনীর কবি সাহিত্যিকদের প্রচারনা ক্ষতিগ্রস্ত করছে অথচ তারা মুসলিম জাতির মোড়কে বসবাস করছেন।ধর্মের কাজ না করলে যেমন ধার্মিক হওয়া যায় না তেমনি মুসলিমানিত্ব না থাকলে মুসলিম হিসেবেও গন্য হয় না।

সেজন্য কুরআনে সূরা শুয়ারায় অনেকগুলো জাতির ধ্বংসের কথা বর্ননা করা হয়েছে যারা ছিল শয়তানের অনুসারি , মিথ্যাবাদি ও পাপাচারি।একশ্রেনির কবি সাহিত্যিকদের আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তার কথা বলা হলেও তাদের জীবন কর্ম ও সাহিত্য রচনা পড়ে মানবজাতির একটা বিরাট অংশ যৌনতার শিকার হচ্ছে,সমাজিক শৃংখলা বজায় রাখছে না,নৈতিকতা বিবর্জিত কাজ করছে।এদের মধ্যে বিশ্বপ্রভুর ভয় নেই ,কেউ তো স্বীকারই করে না বিশ্বপ্রভু একজন আছে, কেউ নাস্তিক-মুরতাদ। আবার মৃত্যুর পর সেই বিশ্বপ্রভুর বাতলানো পথে সৎকার করা হয় তাদের।এ কোন বিশ্বাস? প্রকৃত বিশ্বাস হলো যার উপর ভর করে একটা জীবন পরিচালিত হয়।আমি সারা জীবন যার উপর বিশ্বাস স্হাপন করলাম তার উপরইতো আমাকে ভর করতে হবে এবং এটাই স্বাভাবিক।ইসলাম একটা শান্তির ধর্ম।শান্তি আসে এক আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্হাপনের মাধ্যমে।আল্লাহর দেয়া বিধি-নিষেধের কাছে মাথা নত করার মাধ্যমে।ইসলামের অর্থ শুধু নামাজ,যাকাত,রোজা ও হজ্জ পালনের মধ্যে নয়।এর ব্যাপকতা রয়েছে মানুষের জীবন ব্যাপী।ভাল কাজের আদেশ ও অন্যায় কাজের নিষেধের মাধ্যমে সমাজকে কলুষমুক্ত রাখা।ইসলাম রোজ ক্কেয়ামত পর্যন্ত একটি জাতি।এতে কোন বিভক্তি নেই।পৃথিবি ব্যাপি ইসলামকে বিভক্ত করে একটি কায়েমি শক্তি ইসলামের সৌন্দর্য নষ্ট করছে।ইসলামের পথে ইসলামকে বিজয় না করে মানবরচিত গনতন্ত্রের মধ্যে ঢুকে পড়ে সমাজিক শৃংখলা ও হানাহানি যারা বৃদ্ধি করছে তারা ইসলামের বিজয়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।ইসলামের মানুষদের কাজ, আল্লাহ রাসূল সা: এর পথে সব মানুষকে একত্রিভুত করা।মানুষকে দ্বীন শিক্ষা দেয়া ও সামজিক কাজে সহযোগিতা করা।শান্তির পথে মানুষকে ডাকা।

আলকুরআনে আল্লাহ যাদের ভ্রান্তপথগামি বলেছেন তারা অনুসরন করে শয়তানের পদাংক।অসংখ্য নবী রাসূল এসেছে এদের সংশোধনের জন্য।প্রতিটি সমাজে যখনি এক আল্লাহর বিধান মানার কথা নবী রাসূল বলেছেন তারা তাদের বিরোধীতা করেছে,কাউকে হত্বা করেছে এবং এর চিলচিলা রোজ ক্কেয়ামত পর্যন্ত চলবে।পাঠক সমাজ অত্যন্ত সহজেই এদের চিনে নিতে পারবেন।শুধু ইসলামকে যদি সহজে চিনে নিতে পারেন।ইসলাম বলেছে ব্যাভিচার করবে না, সুদ খাবে না,ঘুষ খাবে না, অন্যের হক্ক নষ্ট করবে না, পর্দার অন্তরালে কাজ করবে,কোন রকম অবিচার করবে না।এ কাজগুলো করতে গেলে একজন মানুষকে সংযত হতে হবে জীবনের সব দিকে।প্রগতিশীলতার নামে অনেক কবি সাহিত্যিকগন যে দুষ্কর্মগুলো করে তার প্রতিফলন সমাজে ঘটছে প্রবলভাবে।ইতিহাসে যে সমস্ত সমাজ ধ্বংশ করা হয়েছিল তার কারন হলো যখন অন্যায় অত্যাচার ও ব্যাভিচার সমাজে চরম আকার ধারন করেছে তখনি আল্লাহ ধর্মের বাহকদের সে সমাজে পাঠিয়েছেন এবং যখন তারা নবীদের হত্বা বা চরম বিরোধিতা করেছে তখনি আল্লাহ ধ্বংশ করে দিয়েছেন।মূসা ও ফেরাউনের কাহিনী ,নূহের জাতির কাহিনী,আদ' জাতির কাহিনী,ছামুদ জাতির কাহিনী,লূতের কাওমের কাহিনী,আইকার ও তুব্বার অধিবাসিদের কাহিনী প্রমান করে তারা ভ্রান্তপথগামি ছিল।

সে জন্যই আল্লাহ বলেছেন কবিদের অনুসরন করে ভ্রান্তপথগামিরা যারা নির্দেশ দেয় ভ্রান্ত পথের।আমাদের সমাজ পর্যালোচনা করলেই সহজে আমরা অনুমান করতে পারি কারা এ অপকর্মগুলো করে।যারা সত্যের পথে আছেন তাদের সৃষ্টি কর্ম অধ্যয়ন করলে পাঠক সমাজ সরল পথের সন্ধান পান।প্রেমের উপাখ্যান তৈরি করা,প্রেমের সুড়সুড়ি দেয়া রচিত কবিতা ও সাহিত্য যে পাঠক তৈরি করে তা সমাজকে কলুষিত করছে নিশ্চই।আল্লাহ কোন জনপদ ধ্বংশ করার আগে সতর্ক করেন।আমাদের সামনে মাঝে মাঝে তা এসে থাকে কিন্তু আমরা শিক্ষা নিতে সমর্থ হই না।আবার আল্লাহ কাউকে কাউকে ধীর্ঘ অবকাশ ও দিয়ে থাকেন।যারা সংশোধন করে নেয় তারাই হলো উত্তম।আর যারা সতর্কতা অবলম্বন করে না তাদের কাছে এসে পড়ে শাস্তি যা থেকে নিস্তার লাভ করার কোন রাস্তা তাদের থাকে না।সুতরাং যারা এখনো বিভ্রান্ত তাদের একটু চিন্তা করা উচিত, আমি কোথায় ছিলাম,কিভাবে এ পৃথিবীতে এলাম,এখানে এসে আমার কি কাজ এবং আমার সামনে একটি মৃত্যু ও আখেরাতে জবাবদীহিতা আছে এবং সর্বোপরি বিশ্বপ্রভুর সামনে দাঁড়িয়ে কি জবাব দিব এ জীবনের জন্য তার হিসাব নিকাশ করা ও অতীতের কাজের জন্য মার্জনার হাত সম্প্রসারিত করার বাসনা তৈরি করা।তাহলেই আসবে প্রকৃত সফলতা ও কল্যান।

বিষয়: বিবিধ

১৫৬১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File