যুদ্ধাপরাধি বলে আওয়ামিলীগ বেগম খালেদা জিয়াকে জামাত ছাড়তে বলছে তাহলে তারা স্বৈরাচারকে ছাড়ছেনা কেন?

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১১ জানুয়ারি, ২০১৪, ০১:৫৩:৩২ দুপুর

বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার বার বার তাগিদে একশ্রেনীর মানুষের মধ্যে চিন্তার খোরাক যুগিয়েছে।কেন বার বার তারা বিএনপিকে এ পরামর্শ দিচ্ছে বা ভারতই কেন শুধু খালেদাকে এ ব্যাপারে তাদের অভিব্যাক্তি প্রকাশ করছে। শেখ হাসিনা তার একতরফা নির্বাচনের পর সংবাদ সম্মেলনে পুরনো কাসুন্দির অবতারনা করেছেন। বিএনপির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের রাজনীতির এটাই সবচেয়ে মোক্ষম অস্ত্র। বিএনপির বিরুদ্ধে আওয়ামী সমর্থক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাদীদের এটাই প্রধান রাজনৈতিক প্রপাগাণ্ডা। ভারতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সাহায্য ও যুদ্ধাপরাধ প্রপাগান্ডা নিয়ে শেখ হাসিনা যে সাময়িকভাবে উত্তীর্ন হয়েছে তা অস্বীকার করার জো নেই।

সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে সাক্ষাতকারে খালেদা জিয়া জানিয়েছেন, জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করার সময় আসেনি, এ মুহূর্তে তিনি পারছেন না, সময় হলেই তিনি জামায়াতের সঙ্গ ছাড়বেন। এটাও বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট ‘স্থায়ী’ কোনো জোট নয়।অন্যদিকে, গত সোমবার বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথার উত্তরে বলেছিলেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) হুকুম করতে পারেন না। তিনিও জামায়াতের সঙ্গে ছিলেন। আমরা তার (শেখ হাসিনা) নির্দেশনা অনুযায়ী পার্টি চালাব না। আমরা একটি স্বাধীন পার্টি। সুতরাং আমরা আমাদের পার্টি নিজেদের পন্থাতেই চালাব।’ এখানে একটি কথা পরিষ্কার হওয়া দরকার যে, বাংলাদেশে বৃহৎ দু'টো দলের পাশা পাশি আরো দু'টো দল আছে যাদের ছাড়া প্রধান দু'টো দল ভারসাম্য বজায় রাখতে পারছে না।জামাতের যেমন রাজনৈতিক ভিত্তি আছে তেমনি জাতীয় পার্টির ও রাজনৈতিক ভিত্তি আছে।জামাত রাজনৈতিক কারনে স্বাধীনতা বিরোধী ছিল আর জাতীয় পার্টি ছিল স্বাধীন দেশের স্বৈরাচার।বিচারিক দৃষ্টিকোন থেকে দু'দলই রাষ্ট্রদ্রোহী।যখন কেউ রাষ্ট্রদ্রোহী হিসাবে প্রমানিত হয় তখন তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো প্রাথমিক দায়িত্ব।স্বাধীনতার পর শেখ মুজিব সরকার ক্ষমতায় আসার পর তার দায়িত্ব ছিল এর সমাধান করা।তিনি ব্যাপারটি সুরাহা করলেন সাধারন ক্ষমার মাধ্যমে।কাউকে ক্ষমা করার অর্থ হলো তার পূর্বেকৃত পাপ মোচন হয়ে যাওয়া।কেউ কা্উকে ক্ষমা করে দিলে কৃতজ্গ হওয়া ভাল।তবে জামাতের রাজনৈতিক প্রজ্গার যে ভুল ছিল তা হলো স্বাধীনতায় বিরোধিতা করা আবার সাধারন ক্ষমার পর জাতির কাছে মাপ না চাওয়া।জিয়াউর রহমান এসে বহুদলীয় গনতন্ত্রের আবির্ভাব করলেন এবং জামাতের নেতাদের পূনর্বাসন করলেন বলে আওয়ামিলীগ যে প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছেন তা জাতি মেনে নিত যদি তারা জামাতকে ব্যবহার না করতো।অন্যপক্ষে এরশাদের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে আওয়ামিলীগ ও বিএনপি একসাথে আন্দোলন করে গনতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠিত করেছিল।শেখ হাসিনা সেই স্বৈরাচারকে নিয়ে বার বার সরকার গঠন করেও সে জাতির কাছে দোষী প্রামনিত হচ্ছে না তা কেমন করে হয়।এখন বেগম খালেদা জিয়া যদি জামাতকে ছেড়ে দেয় কি প্রমান আছে যে তারা আওয়মিলীগে যোগ দিবে না।জামাত যেহেতু একটি রাজনৈতিক সংগঠন তার রাজনীতি করার অধিকার আছে।যুদ্ধাপরাধির বিচার আলাদা প্রসংগ।যারা যুদ্ধাপরাধী তাদের বিচার হয়ে গেলে তো আর কোন সমস্যা নেই।আজকে যারা জামাতকে নে্তৃত্ব দিচ্ছে তাদের সিংহভাগ ১৯৭১ সালের পরের জন্ম নেয়া নেতা ও কর্মি।

জামায়াত রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়। জামায়াতের একটা রাজনৈতিক ভিত্তি আছে।আর দেশের সর্বস্তরে বিশেষ করে চাকুরি , ব্যবসায় ও সামাজিক ভাবে গত ৪২ বছরে তারা প্রতিষ্ঠিত। নইলে আওয়ামী লীগ একসময় জামায়াতের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে আগ্রহী হয়েছিল কেন? আজ নানা কারণে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার রাজনৈতিক বিষয়ে পরিণত হয়ে গিয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল নিয়ে দেশে ও বিদেশে যে বিতর্ক তার আইনি দিক যেমন আছে, তেমনি তার রাজনৈতিক দিকও আছে। সাধারণভাবে বাংলাদেশের চলমান রাজনীতি থেকে এই বিচারকে বিচ্ছিন্ন করে দেখার সুযোগ নাই। আইনি পরিমণ্ডলে এর মীমাংসা অসম্ভব ছিল না। কিন্তু শেখ হাসিনা তা চেয়েছেন বলে এখন প্রমাণ করা মুশকিল। যে বিচার বাংলাদেশকে বিভেদ ও বিভাজনের বিষাক্ত রাজনীতি থেকে মুক্ত করতে পারত, তা হয়ে উঠেছে বিভক্তি ও বিভাজনকে আরও বিষাক্ত করে তোলার উপায়। এর পরিণতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা আমাদের জানা নেই।অতএব খালেদা জিয়া জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করবেন কি-না তা এখন অপ্রাসঙ্গিক বিষয়। কারণ বাংলাদেশে সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের লড়াইটা দিল্লি বনাম বাংলাদেশের জনগণের লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। জামাতের একাত্তরের ভূমিকা এই বিরোধিতাকে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তির বিরুদ্ধে রাজনীতির মোড়ক পরাতেই সহায়তা করছে না, বাংলাদেশ ইসলামপন্থী রাজনীতি দমন করার ছুতা হয়ে উঠেছে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার জিগির দেখলে তা অনায়াসেই টের পাওয়া যায়। একাত্তরে ইসলামাবাদ আমাদের বাংলা ভাষা ত্যাগ করতে বলায় ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি যেমন মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা হয়ে উঠেছিল, ঠিক তেমনি যদি দিল্লি­ চায় বাংলাদেশের জনগণ ইসলাম ত্যাগ করুক, তাহলে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি বড় তুফান আসন্ন। ইসলাম শুধু ধর্ম নয়, একই সঙ্গে ইতিহাস, সংস্কৃতি ও দর্শনও বটে। ভারতের ইতিহাস একই সঙ্গে ইসলামেরও ইতিহাস। ইসলামপন্থীরা দাবি করেন, ইসলাম একটি ‘পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা।' দিল্লি যদি ‘জঙ্গি’ ইসলাম প্রতিরোধের নামে ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের বলয়ের মধ্যে বাংলাদেশকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলার বোকামি অব্যাহত রাখে, তাহলে তার পরিণতি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেয়েও আরও রক্তাক্ত হবে। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নাই। এ আগুনে ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়বে। বাংলাদেশের জনগণ তাদের জগৎ ও জীবনকে বিচার করার জন্য যেমন বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে নিজের বলে গণ্য করে আর সেই সূত্রে সনাতন ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও লোকায়ত জ্ঞানের সঙ্গে কোনো বিরোধ দেখে না, ঠিক একইভাবে ইসলামও তার মনোজাগতিক ,ইহলৌকিক ও পারলৈকিক জগতের অংশ। এই জগতের বিরুদ্ধে দিল্লি ও শেখ হাসিনা কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। শেখ হাসিনার জামায়াত-বিরোধিতা আসলে কি ইসলাম-বিরোধিতারই নামান্তর কিনা সেটা নিয়ে জাতিকে ভাবতে হবে।তার সরকারের উচিত যেখানেই যুদ্ধাপরাধি আছে, এমনকি তার দলেও যারা আছে তাদের বিচার করে এর সমাধান করে জাতিকে ধূম্রজাল থেকে মুক্ত করা।৪২ বছর একে রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংগ করে যে তারা রাজনীতি করছে এই সত্য না বোঝার কোনো কারণ নাই।

খালেদা জিয়া যদি বলে থাকেন, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে তার সম্পর্ক নিছকই ‘কৌশলগত’, তাহলে তিনি ভুল করবেন এবং জনসমর্থন হারাবেন। বরং তাকে দৃড় থেকে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের সুষ্ঠ বিচার চাওয়া এবং অন্যদিকে সব ইসলামী দল ও আন্দোলনকে ঐক্যবদ্ধ করে ‘সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র’ রক্ষার লড়াইয়ে শামিল করার মধ্য দিয়েই তিনি আন্দোলনকে শক্তি দিতে পারবেন। এ ছাড়া তার সামনে আর কোনো বিকল্প নাই। কুটনৈতিক মহল বিকল্প নয়। ‘সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র’ রক্ষার যে ডাক তিনি দিয়েছেন, সেই ডাকে বাংলাদেশে ইসলামপন্থীসহ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সবাই যেন নীতিগত কারণে সাড়া দিতে পারে সেটা স্পষ্ট করে তোলাই এখনকার কাজ।এই নীতিগত রাজনীতির জায়গায় ইসলামপন্থীদের আনতে পারার অর্থ হচ্ছে বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতিকে সংকীর্ণতা ও সাম্প্রদায়িকতার হাত থেকেও রক্ষা করা। নিজেদের চিন্তা ও মতাদর্শ প্রচার এবং ইসলামী চিন্তা ও সংস্কৃতির বিকাশের জন্য গণতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা ইসলামপন্থীদের বোঝানোই এখন প্রধান কাজ। এটা কৌশল নয়, নীতি।

আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনার পথ খোলা, তিনি সব সময়ই আলোচনার জন্য প্রস্তুত, এ কথা তিনি আগেও বলেছিলেন, আবারও বিবিসিকে বলেছেন। আলোচনার অনুকূল পরিবেশ তৈরির জন্য তার দলের নেতাকর্মীদের কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া, নেতাকর্মীদের দমনপীড়ন বন্ধ করা, বেআইনিভাবে বন্ধ করে দেয়া পত্রিকা ও টেলিভিশন স্টেশনগুলো খুলে দেয়ার কথাও তিনি বলেছেন। আওয়ামী লীগ আলোচনা চায় না, আলোচনার অনুকূল পরিবেশও চায় না। ফলে আলোচনার অনুক‚ল পরিবেশও তৈরি হবে না।প্রধান মন্ত্রী ও তার এমপিরা যে ভাষায় কথা বলেন তা কোন ক্রমেই উচিত নয়।সরকারি দলে যে-ই থাকুক তাদের সহনশীল হওয়া বান্চনীয়। বিএনপি জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করলেও আওয়ামী লীগ কোনো আলোচনা ও সমঝোতায় আসবে না। আওয়ামী লীগের দিক থেকে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করার কথা নিতান্তই রাজনৈতিক প্রচারকৌশল মাত্র।বিএনপি জামাতকে ত্যাগ করলেই আওয়ামিলীগ তাদের সাথে আবার আঁতাত করে নির্বাচনের যে ডাক দিবে না তার কি প্রমান আছে? সে ক্ষেত্রে আওয়ামিলীগ , জাতীয় পার্টি ও জামাত মিলে একাদশ নির্বাচনে আওয়ামিলীগ আবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন করবে।আর বেগম খালেদা জিয়া তখন দলীয় দিক থেকে আরো দুর্বল হয়ে পড়বেন। তাই বেগম খালেদা জিয়ার এখন কাজ হলো হানাহানি বন্ধ করে তার জোটকে রাজনৈতিক প্রজ্গার সাথে শক্তিশালী করা।অন্য দিকে বিদেশী গণমাধ্যমকে খালেদা জিয়া একটি সাক্ষাতকার দিয়েছেন। সেখানেও তিনি বলেছেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে জোট বা আঁতাতের বিষয়টি শুধুই কৌশলগত ব্যাপার’ ফলে বিএনপির জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করা, না করার তর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক তর্কে পরিণত হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, তিনি শেখ হাসিনার প্রপাগান্ডার শিকার হয়ে পড়েছেন কি-না, কিংবা কোনো আন্তর্জাতিক চাপের। কৌশলের প্রশ্ন একদিক থেকে সহজ একটি ইস্যু। জটিল কিছু নয়। সংসদীয় রাজনীতিতে আঁতাত বা জোট বাঁধা একটি স্বাভাবিক রীতি বা কৌশল। সেটা হতেই পারে। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের ‘জোট’ যদি অন্যায় কিছু হয়, তবে সেটা পার্লামেন্টারি রাজনীতির সমস্যা বিএনপির নয়। আজ জামায়াতের সঙ্গে জোট আছে, কাল নাও থাকতে পারে। এর আগে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামায়াতের আঁতাত ছিল, এখন নাই। বিএনপি জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করলে আওয়ামী লীগ সেই শূন্যস্থানে জামায়াতের সঙ্গে জোট করবে না তার গ্যারান্টি কী? জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক সম্পর্ক কৌতুক ও কৌতূহল দুটোই তৈরি করেছে। যদি জাতীয় পার্টির সঙ্গে এই মহব্বত দেখি, তাহলে ক্ষমতার দরকারে জামায়াতের সঙ্গ শেখ হাসিনা কামনা করবেন না, তা বলা যাবে না। জামায়াত সেক্ষেত্রে কী করবে সেটা ভিন্ন তর্ক।

সঙ্গ ত্যাগ করা, না করা যদি নীতিগত প্রশ্ন হয়, তাহলে এর উত্তর আরও অনেক ব্যাখ্যা দাবি করে। বাংলাদেশে জামায়াতের সঙ্গ বা বিসঙ্গ নিয়ে তর্ক সুস্থভাবে করার উপায় নাই। জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিনাশ করার এবং সাধারণভাবে ইসলামী রাজনীতি ‘নির্মূল’ করার একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক ধারা বাংলাদেশে রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী তারপরও কেন আজও নির্মূল হলো না সেটাই বরং বিস্ময়ের। এই রাজনীতি রসদ সংগ্রহ করে একাত্তরে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা থেকে। একাত্তরে রাজনৈতিক মতাদর্শিক কারণে জামায়াতের মুক্তিযুদ্ধ বিরোধিতা করা অন্যায় কিছু নয়। কিন্তু জামায়াতের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ রাজনীতি নয়, অপরাধ। মূলত যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল গঠিত হওয়ার পর অপরাধের বিচার শুরু হয়েছে। ট্রাইবুনালের বিচার প্রক্রিয়া ও রায় নিয়ে তর্ক আছে। এতে নতুন রাজনৈতিক সমস্যা তৈরি হচ্ছে বটে, কিন্তু যেহেতু বিচার চলছে, ফলে একাত্তরের যুদ্ধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ নিয়ে বেশিদিন রাজনীতি করা যাবে না। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আন্তর্জাতিক আইনি মানদণ্ড রক্ষা করতে পারল, না ব্যর্থ হল সেই তর্ক নতুন রাজনৈতিক সংকট তৈরি করতে পারে। কিন্তু সেটা ভিন্ন বিতর্ক। বাংলাদেশের রাজনীতির প্রধান ইস্যু বরং হয়ে উঠবে রাজনীতিতে ইসলামের ভূমিকা।

বাংলাদেশকে রুশ-ভারত অক্ষশক্তি বা তখনকার চৈনিক রাজনীতির ভাষায় ‘সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ’-এর অধীনে নেয়ার পাঁয়তারার বিরোধিতা করেছিল বিপ্লবী রাজনীতির বেশ কয়েকটি ধারা। বাংলাদেশকে দিল্লি­র কলোনি বা উপনিবেশে পরিণত করার বিরুদ্ধে এই লড়াই যেন কোনো পরিণত রূপ নিতে না পারে তার জন্য দিল্লি সে সময় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং মুক্তিযুদ্ধকে সংক্ষিপ্ত করে আনে। বাংলাদেশকে মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে স্বাধীনভাবে মুক্ত করার সম্ভাবনাকে ভ্রুনেই বিনাশ করে দেয়। এই সুবাদেই দিল্লি আমাদের মিত্র।বহু উত্থান-পতন, বহু অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থান এবং তথাকথিত সংসদীয় রাজনীতির তামাশার মধ্য দিয়ে দিল্লি-ঢাকার সম্পর্ক আজ যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে, তাকে খোলা চোখে বিচার করলে সে সময়ের প্রগতিশীল রাজনীতির আশংকাকে আবার নতুন করে বিচার করা জরুরি হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত ৪২ বছর পর তারা সঠিক কী ভুল প্রমাণিত হয়েছেন সেই কুটতর্ক নয়, আমরা যেন খোলা মনে নির্মোহভাবে ইতিহাস বিচার করতে শিখি।

জামায়াত কেন পাকিস্তান ভাঙতে চায়নি, তার পক্ষে নিশ্চয়ই আদর্শগত কারণ রয়েছে। তার ব্যাখ্যা জামায়াতে ইসলামীকেই দিতে হবে। সেটা ইসলাম সংক্রান্ত জামায়াতের ব্যাখ্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। সে ব্যাখ্যা ইসলামের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়েছে কি-না, সেই মানদণ্ডেই জামায়াত তার রাজনীতির পর্যালোচনা করবে, কোনো সুবিধাবাদী জায়গা থেকে নয়। জাতীয়তাবাদীদের সন্তুষ্ট করা ইসলামী রাজনীতির কাজ নয়। কিংবা বঙ্গীয় ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদেরও নয়।জামায়াতের ব্যাখ্যা ইসলামের একমাত্র ব্যাখ্যা নাও হতে পারে।ফলে তারও সমালোচনা হতে পারে। কিন্তু জামায়াত সম্পর্কে প্রধান অভিযোগ হচ্ছে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। সন্দেহ নাই, সুষ্ঠ ও ন্যায়সঙ্গত বিচারের মধ্য দিয়ে এই অভিযোগের নিষ্পত্তি হওয়া উচিত ছিল অনেক আগে। কিন্তু সেটা হয়নি। আর তার দুর্ভোগ আজ সবাইকেই ভোগ করতে হচ্ছে।এমনকি যারা অভিযুক্ত তাদেরও। ভুল রাজনীতির মাশুল খুব চড়া দামে পরিশোধ করতে হয়। সেই দাম শুধু জামায়াতে ইসলামী পরিশোধ করছে না, বাংলাদেশের গোটা ইসলামী আন্দোলনকেও গত ৪২ বছর ধরে পরিশোধ করতে হচ্ছে। এর অবসান হওয়া দরকার।শুধু ক্ষমতার দখলের জন্য কোন দলকে ব্যবহার করা সমিচিন নয় হউক সে স্বৈরাচারি বা যুদ্ধপরাধি।সেদিক থেকে যেই অপরাধী তাকেই দূরে রাখা ভাল আর যদি ক্ষমা করে সহবাস করা যায় সেটাও শ্রেয়।

বিষয়: বিবিধ

১১৮৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

161331
১১ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০১:৫৯
লাঠীপেটা লিখেছেন : বর্তমান প্রধান মন্ত্রী যেসব বিষয় নিয়া ফেরী করে বেড়ান তার মধ্যে ঝামাত একটি ইসু,
যদি ঝামাত বলতো তিনশো আসনে ইলেকশন করবো বিনপি রে ছাড়া তা হলে ওদের দলের নিবন্ধন এক কাদের মুল্লার ফাসী হতো না সবার মোল ইসু ক্ষমতা এবং ক্ষমতা
161332
১১ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০২:০০
হতভাগা লিখেছেন : স্বৈরাচার আর রাজাকার এক জিনিস নয় হে বতস্‌
161340
১১ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০২:৩৪
আমি মুসাফির লিখেছেন :
161348
১১ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০২:৫১
মহিউডীন লিখেছেন : হতভাগাকে বলছি- ভাই দেশকে নিয়ে ভাবুন।৪২ বছর বিচারের নামে যে রাজনীতি চলছে তার বিচার করতে হলে আপনাকে ইতিহাস পড়তে হবে।সব শাসকগোষ্ঠী আপনার আমার কাঁধে বন্দুক রেখে শীকার করছে।তারা রাজনীতিকে কেন্দ্র করে হরিলুট করছে।আপনি আমি মুখে আংগুল পুরে শুদু তাদের অন্ধ অনুকরন করছি।আমাদের নিজেকে বুঝতে শিখতে হবে, দেশ ও দেশের মানুষের কল্যানে কথা বলতে হবে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File