শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেম হলো সর্বোত্তমভাবে নিজের কাজ করা।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০৩ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৬:২৮:৫৩ সন্ধ্যা
পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ একটি ক্ষুদ্র দেশ হলেও এতে রয়েছে অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও প্রাচুর্য।চারদিকে শস্যশ্যামলা ও সবুজের সমারোহে ঘেরা।গ্রামবাংলার মেঠোপথে কৃষকের শস্য ফলানোর দৃষ্য, কোথাও সোজা পাকা রাস্তা,কোথাও সর্পিল বা কোথাও মাটির সরু রাস্তা।রাস্তার দু'ধারে সবুজ ধান ও পাটের সমারোহ, কৃষ্নচূড়া ,কড়াই গাছ,আম কাঁঠাল ও কলা গাছ।আবার মাঝে মাঝে সবুজ তরি তরকারির সামারোহ।আমাদের আছে ছ'টি ঋতু।এই ঋতু দু'মাস পর পর পালা বদল করে নিয়ে আসে প্রকৃতির বিভিন্ন রুপ।সে জন্য আমাদের কৃষকেরা ফলায় হরেক রকমের ফসল।গ্রীষ্মের দাবদাহ শেষ হলেই বর্ষা নিয়ে আসে অঝোর ও আঁধারঘন বৃষ্টি বাদল,শরতের মেঘের ভেলা ও কাশবন মনকে উদাস করে,হেমন্তের পাকা ধান নিয়ে আসে গ্রাম বাংলার কৃষকের নবান্নের উৎসব,শীতে পিঠা পুলি , খেজুরের রস ও সবুজ তরি তরকারি আর বসন্তে শীতের কায়ক্লিষ্ট মানুষ ও প্রকৃতির পুনর্জীবন আমদের উজ্জিবিত করে নব উজ্জিবনে।দেশের সিংহভাগ মানুষই আপন মনে যার যার কাজ করে যাচ্ছে।এ দেশের মানুষ খেটে খাওয়া মানুষ।তারা কারো জন্য অপেক্ষা করে না।সরকারি পৃষ্ঠোপোষকতা থাক বা না-ই থাক কোন অভিযোগ তারা করে না।প্রচন্ড শীত,প্রচন্ড গরম বা প্রবল বর্ষায় ও তারা ঘরে বসে থাকে না।আপনি যদি শীতের সকালে গ্রামের রাস্তায় হেঁটে বেড়ান দেখবেন এই প্রচন্ড ঠান্ডায় কৃষক বীজ বপন করছে, জমি চষে বেড়াচ্ছে।সে কি আপনাকে বা আমাকে কোন অভিযোগ করছে? তারা অল্পতেই সুখি।কিন্তু এই অল্পে সুখী মানুষগুলোর জন্য যা যা করা দরকার তার কতটুকু আমরা করেছি?
একটি স্বাধীন দেশ এবং আমরা স্বাধীনতা চিনিয়ে এনেছি অনেক রক্তের বিনিময়ে।আমাদের দেশপ্রেম ছিল বলেই আমরা এক হতে পেরেছি।যুদ্ধের দিনগুলোর দিকে তাকালে সত্যিই হতবাক হয়ে যাই।কি অদ্ভুত চিন্তা চেতনা মানুষকে ঘরের মোহ থেকে টেনে নিয়ে গেছে।কৃষক মাঠের হাল ছেড়ে যুদ্ধে যোগ দিয়েছে যার কোন ট্রেনিং ছিল না।যুবক , বৃদ্ধ,শিক্ষিত ,অশিক্ষিত কারো মধ্যে ভেদাভেদ ছিল না।এটাই ছিল দেশকে মুক্ত করার প্রাথমিক চেতনা।এই চেতনাকে বাস্তবে রুপায়িত করার জন্য যে কাজ করার দরকার তা গত ৪২ বছরে হয়ে উঠেনি সঠিক নেতৃত্ব তৈরি হওয়ার কারনে।আমদের অনেক সফলতা আছে সেটা ঠিক।কিন্তু যে চেতনার কথা আমরা বলি সে চেতনাগুলো আমরা চিহ্নিত করতে পারিনি আমাদের রাজনৈতিক সমঝোতার কারনে।আমরা বিদেশী শক্রুকে বিতাড়িত করেছি কিন্তু আমাদের নিজের পোষাকের আস্তিনে যে শক্রুরা আছে তাদের চিহ্নিত করতে পারি নি।এরা ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন দলে উপদলে।আমরা এদের সবাইকে দেখি সুন্দর কথা বলেন আবার কিছুকাল ক্ষমতায় আসার পর তারাই ফুলে ফেঁফে উঠে কিন্তু তাদের বিচার করতে কেউ সামনে এগিয়ে আসে না।এতে বুঝা এরা মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ।মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র, জনগণের ভোটাধিকার, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ, ভিন্নমত পোষণের অধিকার, সভা-সমাবেশ আর কথা বলার স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে সংখ্যালঘু, সংখ্যাগুরু সবার স্বার্থরক্ষা করা। বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা আর ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা।১৬ কোটি মানুষের এই বিশাল জনগোষ্ঠীর যে প্রান্তিক সম্প্রদায় যেখানে রয়েছে গরীব শিক্ষক,কৃষক,দিন মজুর, জ্বেলে , মুচি , কামার,কুমার,ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি আরো অনেকে।তাদের জীবন মানের কতটুকু উন্নতি হয়েছে? সমাজ এখন বিভিন্ন বিত্ততে বিভক্ত।আমি আমার উপজেলায় অনেকগুলো গ্রামের মানুষের সমিক্ষা নিয়ে দেখেছি নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তের অবস্হান খুব-ই করুন।এভাবে সারা দেশের চিত্র আমাদের সামনে ভেসে উঠছে।
দেশের রাজনৈতিক যে হানাহানি হচ্ছে এর মুল কারন আমরা আমাদের স্বাধীনতার অর্থ এখনো বুঝতে পারিনি।আমাদের যে রাজনৈতিক ও মানবিক প্রজ্গা থাকা দরকার ছিল তার প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিতে পারিনি।এর কারন হিসেবে বলা যায়,এখানে দু'শ্রেনীর উদ্ভব হয়েছে।১-শাসক শ্রনী ২-শোষক শ্রেনী।শাসক শ্রেনীর যারাই সংসদে আসে তারা শোষক শ্রেনীকে বার বার তাদের কথার রং দিয়ে ভুলিয়ে তাদের ভোট নিয়ে নেয়।ফলে দেখা যায় বার বারই তারা একই ভাবে এদের পদদলিত করে।যেহেতু শাসক শ্রেনীর মধ্যে ভিভাজন হয়ে আছে আর তারা পালা বদল করে আসে সেহেতু এই শোষক শ্রেনী আর কোন বিকল্প খুঁজে পায় না।আর শোষক শ্রেনী তাদের নিয়তিকেই মনে নেয়।এ ছাড়া তাদের করারই বা কি আছে? তাদের যে ভালবাসা তারা অবিরাম দিয়েই যাচ্ছে।আমরা যদি একটু দূরে গিয়ে জীবনের দিকে তাকাই, পৃথিবীর ইতিহাসকে স্মরন করি তবে আজকের এই হানাহানি, দ্বন্দ্ব-সংঘাতকে হয়তো অত বড় মনে হবে না। আমরা যেন ভুলে না যাই, ইতিহাসে আমাদের কোনো দিন নিজেদের রাষ্ট্র ছিল না। আমরা কোনো দিন স্বাধীন ছিলাম না। আমরা পুরোপুরি রাষ্ট্রের অভিজ্ঞতাহীন জাতি। এই প্রথম রাষ্ট্র পেয়েছি। সবে বুঝতে শুরু করেছি একটি ন্যায়সম্মত আধুনিক রাষ্ট্র কী। কী করে তা চালাতে হয়। এ নিয়ে গোটা জাতি কম চেষ্টা করছে না। সব দেশই কোনো না কোনো সময় এ রকম সংকটের ভেতর দিয়ে যায়। ইংল্যান্ডে কত দিন যুদ্ধ হয়েছে। আমেরিকায় গৃহযুদ্ধ হয়েছে বছরের পর বছর। ফরাসি বিপ্লবের সময়ও কত মানুষ নিহত হয়েছে। জনজীবন কীভাবে তছনছ হয়ে গেছে। সে তুলনায় আমরা কত দিকে ভালো করছি।শুধু আমাদের দরকার স্বার্থপরতাকে জ্বলান্জলি দেওয়া,অন্যকে হীনচোখে না দেখা,এক দল অন্য দলকে ভাল চোখে দেখা,নিজের চেয়ে অন্যকে ছাড় দেওয়া সর্বোপরি দেশ ও মানুষের স্বার্থরক্ষা করা।
বড় যে সমস্যা সে হলো আমাদের রাজনীতি। জাতি আজ দাঁড়াতে চাচ্ছে, বড় হতে চাচ্ছে, জয় করতে চাচ্ছে। কিন্তু সমস্ত স্বপ্ন ও উদ্যমের বুকের ওপর জল্লাদের মতো চেপে বসেছে রাজনীতি। রাজনীতির এই বিপাকে পড়া শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়ার জন্য হয়নি। এ হয়েছে মূলত সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের কারনে। এ ধারার ফলে দলে স্বৈরাচারী নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই অনুচ্ছেদের জন্য দুই দশক ধরে আমাদের দেশে চলছে “গণতান্ত্রিক স্বৈরাচার।" সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়েছে এক জায়গায়। এই নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ও গণতন্ত্র একসঙ্গে চলতে পারে না। এর পরিবর্তন করার জন্য কেউ এগিয়ে আসছে না।যখন এর পরিবর্তন করার জন্য কেউ এগিয়ে আসে তখনি প্রশ্ন আসে অনেক রক্তের।তাই এখান থেকে আমাদের বেরোতে হবে। যে কোন ঝড় একটা সাময়িক ব্যাপার। যখন ঝড় ওঠে, মনে হয় কোনো দিন এ বুঝি থামবে না। কিন্তু দেখা যায়, একসময় থেমে গেছে। তার পরে আসে এক দীর্ঘ সুন্দর দিন।সূরা আল ইনশিরাহের ৫/৬ আয়াতে বলা হয়েছে,"অতএব কষ্টের সংগেই তো আরাম রয়েছে, নিশ্চই কষ্টের সংগে আরাম রয়েছে।" আমাদের এখানেও তা আসবে। এসব দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ভেতর দিয়েই সমাধানে আসতে হবে, যেমন এসেছে অগ্রসর জাতিগুলোতে। আমাদের বিশ্বাস থাকতে হবে, সারা জাতির উৎকণ্ঠা ও শুভবুদ্ধি এ থেকে বেরোনোর পথ বের করে নেবেই, তবে জাতির ভাল মানুষগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।
আমরা যদি সাধারন দৃষ্টি দেই পৃথিবীর অধিকাংশ উন্নত দেশেই গনতন্ত্র আছে এবং তারা দেশের স্বার্থে গনতন্ত্রের চর্চা করছে।সব দেশেই গণতন্ত্র দুই ভাগে বিভক্ত—প্রগতিশীল ও তুলনামূলকভাবে কম প্রগতিশীল। এই দ্বন্দ্ব আদর্শিক ও সর্বকালীন। সব কালের সব দেশের মধ্যে এ ছিল, আছে। প্রাচীন গ্রিসে গণতন্ত্রী-অভিজাততন্ত্রী, রোমে প্লেবিয়ান-প্যাট্রিসিয়ান, এ যুগের আমেরিকায় ডেমোক্রেটিক-রিপাবলিকান, যুক্তরাষ্ট্রে কনজারভেটিভ-রিপাবলিকান এবং ভারতে কংগ্রেস-বিজেপি তো এই দ্বন্দ্বেরই রাজনৈতিক রূপ। সহিংসতা সব দেশেই আছে। কিন্তু আমাদের মতো সহিংসতা ও সংঘাত আশাপাশের গণতন্ত্রগুলোতে এভাবে নেই। কারণ, ওসব দেশের গণতন্ত্রে গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের ক্ষমতা গণতন্ত্রের পরিধির মধ্যে সীমিত। অন্যদিকে, আমাদের নেতৃত্বের ক্ষমতা গণতন্ত্রের ক্ষমতাকে ছাড়িয়ে আছে। আমাদের দলপ্রধানেরা অপরিসীম ক্ষমতার অধিকারী। এভাবে গণতন্ত্র একনায়কতন্ত্রী হয়ে ওঠার ফলেই আমাদের রাজনীতি এমন সংঘাতপূর্ণ ও সহিংস হয়ে উঠেছে। সামরিক অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে আসতে হয় বলে স্বৈরতন্ত্রী দেশগুলোতে স্বৈরতন্ত্র থাকে একটি। কিন্তু আমাদের “গণতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্রীদের” ক্ষমতায় আসতে হয় জনগণের ভোটে। এই জনগণ আবার এক দলকে দুবার ক্ষমতায় আনে না। তাই স্বৈরতন্ত্র এ দেশে হয়ে পড়েছে দুটি। চিরকাল স্বৈরতন্ত্রের মূল প্রবণতা দেশে একচ্ছত্র কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। এরাও তা-ই করছে—দুই বৈরী পতাকার নিচে দেশের জনসাধারণকে সংঘবদ্ধ করে পরস্পরকে ধ্বংসের মাধ্যমে একচ্ছত্র ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। এ কারণে গণতন্ত্র হয়ে উঠছে আরও সংঘাতময়।’
আমাদের দেশে এখনো খুঁজে পাবেন লক্ষ লক্ষ মানুষ যারা নিজেদের ব্যাস্ত রাখছে তাদের কাজে।তারা এ সমস্ত দিকে জাড়াচ্ছেন না।ঘৃনা করছেন তাদের অনৈতিক কাজকে।আবার কথা ও লিখার মাধ্যমে তুলে ধরছেন জাতির জন্য।বাইরে কি হলো সেগুলো নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে নিজের কর্তব্য করে যাচ্ছেন।এরাই প্রকৃত দেশপ্রেমিক। আমরা যদি ক্রমাগত আশান্বিত বা বিমর্ষ হতে থাকি, তবে তো কাজ করতে পারব না। তাই বাইরের পরিস্থিতি প্রতিকূল হয়ে গেলেও আমাদের কাজ করে উচিত। যা-ই ঘটুক আমাদের কাজের মধ্যে যদি আমরা পরিপূর্ণভাবে নিমগ্ন থাকি আর ওদের অবজ্গা করি তাহলে একসময় একটা ভাল ফল আসবে নিশ্চ-ই। প্লেটোর রিপাবলিক-এর একটি কথা আমাদের স্মরন রাখা দরকার। সক্রেটিসকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, দেশপ্রেম কী? জবাবে সক্রেটিস বলেছিলেন, নিজের কাজ সর্বোত্তমভাবে করে যাওয়াই সর্বোচ্চ দেশপ্রেম।আমাদের সবাইকে আগে নিজের কাজটা সুন্দরভাবে করতে হবে।' আসুন আমরা নিজেদের প্রশ্ন করি কতটুকু দেশপ্রেমিক আমরা হতে পেরেছি নিজ নিজ অবস্হানে।শুধু সমালোচনা করলে কল্যান বয়ে আনবেনা,গঠনমুলক সমালোচনা ও নিজের আপাদমস্তক নীরিক্ষন করে সমালোচনা করলে অন্যের প্রতি সুবিচার করতে সহায়ক হবে বলে আমার ধারনা।
বিষয়: বিবিধ
১৩৯০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন