জাতিকে বাঁচানোর এখন একমাত্র পথ-নির্দলীয় সুশিলদের সামনে এগিয়ে আসা ও প্রধান দু'দলকে প্রকৃত গনতন্ত্রে ফিরে আসতে বাধ্য করা।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০২ জানুয়ারি, ২০১৪, ০১:০২:৩৩ দুপুর

একটি গনতান্ত্রিক স্বাধীন দেশের মানুষ কত বড় দেউলিয়াত্ব বরন করতে পারে তা গত কয়েক মাসে সারা দেশে প্রতিয়মান হয়েছে।দেশের মানুষ এখন এক অস্হির অবস্হায় জীবন যাপন করছে।তাদের আয়ের খাতগুলো নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে এবং অনেকে পথে বেসেছে।মানুষের মৃত্যুর বহর দিন দিন বেড়েই চলেছে।এ অবস্হায় যারা টক শো নিয়ে আলোচনায় মেতে আছেন তাদের এগুলো বন্ধ করে কিভাবে জাতিকে জরুরি ভিত্তিতে বাঁচাতে আসতে পারেন সে ফর্মুলা তৈরি করতে হবে।আমরা যে অচিরেই আন্ত্রর্জাতিকভাবে বন্ধুহীন হয়ে পড়েছি তা সবাই টের পাচ্ছি। আমাদের ব্যবসার চাকা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।বৈদেশিক কর্মসংস্থান, পোশাকশিল্পের মেয়েদের শ্রম, সাধারণ মানুষের সম্মিলিত উদ্ভাবনী চেষ্টায় দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল তা এখন ভাটির টানে সব ধ্বংস হতে চলেছে।এই মুহূর্তে যদি কেউ সামনে এগিয়ে না আসে তাহলে আমরা আবার নিজেদের পরাভূত জাতি হিসেবে দেখতে পাব আর তা অতি নিকটে।

রাজনৈতিক সংকটময় পরিস্থিতিতে আমাদের এক নব জাগরনের দিকে যেতে হবে।আমরা বৃহত দু'দলের উপর নির্ভর করেছি অনেকগুলো বছর।স্বাধীনতার স্বপ্ন ও গনতন্ত্রের সুফল কারো পক্ষেই বয়ে আনা সম্ভব হয় নি তাদের নিজেদের টানাপোড়নের কারনে।যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে তারা সে চেতনাকে উত্তোরন করতে ব্যার্থ হয়েছে।মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র, জনগণের ভোটাধিকার, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ, ভিন্নমত পোষণের অধিকার, সভা-সমাবেশ আর কথা বলার স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে সংখ্যালঘু, সংখ্যাগুরু সবার স্বার্থরক্ষা করা। বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা আর ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা।এ অবস্থায় কাউকে না কাউকে সামনে এগিয়ে আসতে হবে।এখনো কিছু কিছু মানুষ আছেন যারা নির্দলীয়, তারা রাস্তায় নামলেই দেশে জাগরণ হয়ে যাবে।এ অচলাবস্থায় বিতর্কিত সুশিলদের বাদ দিয়ে সর্বজনশ্রদ্ধেয় বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আকবর আলি খান ও ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের মতো ব্যক্তিত্বরা যদি সারা দেশের নীরপেক্ষ বুদ্ধিজীবিদের সাথে নিয়ে দেশের মানুষকে ডাক দেন তাহলে জাতি একাটা আশার আলো দেখতে পাবে।শুধু ডাক দিলেই হবে না ,তাঁদের এর আগে অল্প সময়ের মধ্যে একটা হোম ওয়ার্ক করতে হবে কিভাবে এ দুটো দলকে সংশোধন করা যায়।যদি তারা সাড়া না দেয় তাহলে এ তৃতীয় শক্তি জনগনকে নিয়ে রাষ্ট্রিয় ফর্মুলা তৈরি করবে যাতে দেশ পিছিয়ে না যায়।সংবিধানে বিতর্কিত সব আইন সংশোধন সহ কল্যান মুলক যা যা দরকার তা করতে হবে।যদি এ উদ্যোগ নিতে আমরা ব্যার্থ হয়ে যাই তাহলে আমাদের অদূর ভবিষ্যতে আরো মুল্য দিতে হবে।আমাদের স্মরন রাখতে এ দেশ আমার ও আপনার। আমরা কোন দেশের কাছে বা কোন দলের কাছে লীজ দিয়ে দেই নি।এ দেশের ভালমন্দ দেখার অধিকার আমাদের।আমরাই এ দেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছি,স্বাধীনতার সূর্য চিনিয়ে এনেছি লক্ষ লক্ষ মা বোনের ইজ্জত ও রক্তের বিনিময়ে।

যে কোনো মূল্যে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল, আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে ছাড়ের মনোবৃত্তি নিয়ে সমঝোতায় আসতে হবে। আমাদের লজ্বায় মাথা হেট হয়ে যায় যখন দেখি আমাদের মধ্যে বাইরের কেউ মিমাংসা করতে আসে।যারা আজ মিমাংসা করতে আসছে তারা আমাদের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দিতেও গড়ি মসি করেছিল।আমাদের দু'নেতৃত্ব যদি তা অনুধাবন করতে পারতো তাহলে তাহলে আমারা কিছুটা দু:খ গুছাতে পারতাম।বর্তমানে যে পরিস্থিতি চলছে তাতে জাতি হিসেবে আমরা নিজেদেরই অপমান করছি। আমাদের মেধা, রাজনীতি, ইতিহাস ও সংস্কৃতির অপমান করছি। এ অবস্থা চলতে পারে না।সংঘাত-সহিংসতার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের জাতিসত্তাকে অপমান করছি। পৃথিবীর মানুষ ইতিমধ্যে ভেবে নিয়েছে আমরা গণতন্ত্রের যোগ্য নই। দু'জন মানুষ, দুটি বড় দলের নেত্রী, তারা নিজেদের সমস্যার সমাধান করতে পারছেন না। এটা আমাদের ঐতিহ্য নয়। আমাদের পঞ্চায়েতভিত্তিক যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সক্রিয় ছিল সেদিক থেকেই সব কিছুর সমাধান করতে পারতাম। আমাদের বর্ণাঢ্য গণতান্ত্রিক ইতিহাস-ঐতিহ্য আছে।আমাদের দেশে এখনো সে মানুষ রয়েছে যারা তারানকোদের চেয়ে ভাল পরামর্শ দিতে পারে,এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। জাতি হিসেবে আমরা অনেক মেধাবী শুধু তা লালন করতে পারিনি আমরা।

আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের বুঝতে হবে, আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীর চাপ আছে। একসময় আমাদের জনসংখ্যার চাপটা দুর্বিষহ ছিল। দেশের উত্তরের জেলাগুলোয় প্রতি বছর মঙ্গা হতো। শিশুদের স্কুলে পাঠানো যেত না। এখন সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত হচ্ছে। বৈদেশিক কর্মসংস্থান, পোশাকশিল্পের মেয়েদের শ্রম, কৃষকের হাড়ভাংগা পরিশ্রমে যে ফসলের উৎপাদন হয় সে কারনে এখন কেউ অভুক্ত থাকছেনা, সাধারণ মানুষের সম্মিলিত উদ্ভাবনী চেষ্টায় দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি মানুষ এখন নিজেরাই পরিবর্তনের পথে নিরন্তর কাজ করছে। রাজনৈতিক কারণে এ অর্জন বিনষ্ট হতে পারে না। সংঘাত-সহিংসতায় আমাদের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। মানুষ কাজের ক্ষেত্র হারিয়ে ফেলছে। উৎপাদন ও উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে থাকছে দিনের পর দিন। রপ্তানি থমকে গেছে। আমরা অগ্রগতির গতি হারিয়ে পেছনের দিকে যাচ্ছি। এ পথ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

গনতন্ত্রে বিরোধ থাকবে কিন্তু সে বিরোধ কি জনগনের জান মালকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে? সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও বিরোধিদলের সংঘাত,সংঘর্ষ যা দরকার তা তারা সংসদে করবে।জয় পরাজয়ের ব্যাপারগুলো সংসদ বা সংসদের চৌহদ্দির মধ্যে যদি তারা আন্দোলন সংগ্রামে সীমাবদ্ধ রাখেন তাহলে দেশের মানুষ তাদের দৈন্দিন কাজকর্ম , ব্যবসাবানিজ্য,অফিস আদালত শান্তিতে করতে পারবেন।এতে করে দেশ উন্নতির দিকে যাবে।প্রতিটি দলকে ভাবতে হবে আমরা যা করলাম অন্যরা আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে।এর জন্য দরকার সরকার ও বিরোধীদলে টিম ওয়ার্কের মত কাজ করা।প্রতিহিংসার রাজনীতি বাদ দিয়ে নতুন ধরনের রাজনীতির যদি সংযোজন না করা যায় তাহলে কখনো দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবেনা।

এ অচলাবস্হায় শুশিলদের প্রথম কাজ হলো, নিজেদের একটি সার্বজনীন শক্তি তৈরি করা যা দেশের জন্য শতভাগ কাজ করবে।এখানে তাদের ব্যাক্তিগত কোন লোভ লালসা থাকবেনা।দ্বীতিয়ত-দু'দলকে জরুরি পরামর্শ ও ফর্মুলা দিয়ে দেশের কল্যানের দিকে নিয়ে আসা।তৃতীয়ত-যদি তারা মেনে না নেয় ও এই অচলাবস্হা চলতে থাকে তাহলে একটা সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে দেশের মানুষকে ডাক দেয়া।আমাদের সাবার উদ্দেশ্য কোন ক্ষমতা দখল নয়।দেশকে কিভাবে শান্তির দিকে নিয়ে যাওয়া যায়,আমরা যা হারিয়েছি তা কিভাবে পুনরুদ্ধার করা যায়,ব্যবসা বানিজ্যকে কিভাবে সচল করা যায়,সামাজিক স্হিরতা কিভাবে নিরুপন করা যায়,আইনশৃনখলার কিভাবে উন্নয়ন করা যায়,আর্থিক কাঠামোকে কিভাবে সবল করা যায় ও সর্বোপরি রাজনৈতিক স্হিতিশীলতা এনে সমাজে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন পুনস্হাপন করা যায় তার উদ্দোগ নিতে হবে।যদি আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করি আমাদের আরো মুল্য দিতে হবে।আসুন আমরা সবাই মিলে দেশকে বাঁচানোর চেষ্টা করি ,দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করি যার জন্য তাকিয়ে আছে সারা দেশের মানুষ পিপাসিত উটের পানি পান করার মত।

বিষয়: বিবিধ

১১২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File