মুসলমানদের মুসলমানিত্ব ধরে রাখতে ইসলামিস্ট হতে হবে আর তার সাথে ইতিহাস ,সাহিত্বচর্চা ও অন্য ধর্মের তুলনামুলক অনুশীলন করতে হবে।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১২:৪৬:২৫ দুপুর

আমার জীবনের স্বল্প পরিসরে সামান্য যা অধ্যয়ন করলাম ও তা থেকে যা বুঝলাম , শিখলাম ও তার সাথে বর্তমান সমাজ ব্যবস্হার যে প্রতিফলন দেখছি তাতে মনে হয়েছে আমরা যারা আমাদের মুসলিম দাবি করছি তাদের সিংহভাগ আমাদের ইসলামের ইতিহাস,আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও সাহিত্যচর্চা থেকে অনেক দূরে অবস্হান করছি।অতিপঠন একজন মুসলিমের প্রাত্যহিক কাজ যদিও আমরা তা থেকে বন্চিত রাখছি নিজেদের এবং তার যায়গা দখল করেছে হিংসা-বিদ্ধেষ ও সম্পদ আহরনে।একজন মানুষ ধার্মিক হয় ধর্মের সঠিক অনুশীলনে।সমাজে বিভিন্ন ধর্ম থাকতে পারে,তাদের নিজেদের ধর্মীয় কর্মকান্ডও থাকতে পারে,যে যার ধর্ম পালন করবে এটাই স্বাভাবিক।ধর্ম মানুষের জন্য,মানুষ ধর্মের জন্য নয়।যিনি একজন প্রকৃত ধার্মিক তার পক্ষে কখনো সম্ভব নয় অন্য ধর্মের উপর আঘাত করা বা অন্য ধর্মের মানুষের ক্ষতি করা।ধর্মে কোন চরমপন্থির কথা নেই।ধর্ম এসেছে মানব কল্যানের জন্য।একজন মুসলিমকে ইসলামিস্ট যেমন হতে হবে তেমনি একজন অন্য ধর্মের লোককেও তেমনিই হতে হবে।তারা যে লোকালয়ে বাস করবে, সে বাস হবে একজন মানুষের স্বাভাবসিদ্ধ বসবাস।ইসলামের ইতিহাসে আমরা এমন-ই দেখেছি একজন রাসূলের সাহাবির সাথে বসবাস করেছে আর একজন ইহুদি।কোন দ্বন্দ সংঘাত ছিল না।সেখানে ছিল মানবিক দিক ও যে যার ধর্ম পালন করেছে সহনশীলতার সাথে।

আজকে যেদিকে যাই এ কোন ধর্মের লোকদের দেখি? এখানে ধর্মের লড়াই চলছে।এক ধর্মের লোক অন্য ধর্মের লোকদের হেয় করে দেখছে।এক ধর্মের লোক অন্য ধর্মের লোকদের সামান্য ইস্যুতে হত্বা করছে অথচ তাদের সৃষ্টিকর্তা এক।প্রতিটি মুসলিম বিশ্বাস করে তার রব এক ও একক।যা কিছু আছে এ ভূমন্ডলে ও নভমন্ডলে তা তাঁর-ই সৃষ্টি।প্রতিটি ভূখন্ড বা লোকালয়ের কি ক্রুটি আছে? তাহলে কারা এখানে বিশৃংখলা সৃষ্টি করছে? উত্তর খুঁজলে আমরা পাই আমরা এই মানুষগুলো।এই মানুষের একটা অংশ বিপর্যস্ত করছে এই পৃথিবীকে।মানুষকে যোগ্যতম করে তোলে তার সু-শিক্ষা ।আর এর মুলে রয়েছে ধর্মীয় শিক্ষা সে যে ধর্মের-ই হোক না কেন।মানুষের শিক্ষার একটা প্রধান বাহন হলো ইতিহাস ও সাহিত্বরসের আস্বাধন।কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা দেখছি ভিন্নতর রুপ।ইতিহাস বিকৃত হচ্ছে একশ্রেনীর ইতিহাসবিদদের মাধ্যমে,সাহিত্য বিকৃত হচ্ছে এক ধরনের বিকৃত সাহিত্ব রসিকদের দ্বারা।ইতিহাস যেমন মানবজাতির জন্য একজন প্রশিক্ষকের কাজ করে তেমনি সাহিত্য মানুষের মননশীলতাকে উর্বর করে।ইতিহাস থেকে প্রজন্ম জেনে নেয় ভাল ও মন্দকে।কারা যোগ্যতম ছিল বা সমাজ ও জাতির জন্য সফলতা নিয়ে এসেছে,আবার কাদের দ্বারা সমাজ ও জাতি কলুষিত হয়েছে।ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ মাত্র ২৩ মাসে সে সমাজে উমায়্যা শাসনের ১০০ বছরের গ্লানি দুর করে মানুষকে সুন্দর সহঅবস্হানের অবস্হান তৈরি করেছিলেন।আবার হিটলারের মত একজন ডিকটেটর ৬ মিলিয়ন ইহুদিকে হত্বা করে ইতিহাসে স্বাক্ষর রেখেছেন।তাহলে ইতিহাস রচিত হতে হবে খাঁটি ইতিহাসবিদদের দ্বারা যেখানে কোন চলচাতুরি থাকবেনা।বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা জাতির মধ্যে যে বিভাজন দেখি তাতে ইতিহাসবিদ ও সাহিত্যিকদের ও বিভাজিত হতে দেখা যায়।এ থেকে যে প্রজন্ম বিভাজিত হয়ে পড়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।এটা জাতির জন্য এক ভয়ংকর দিক।এ ভয়ংকর অবস্হা যদি চলতে থাকে তাহলে আমরা জাতি হিসেবে অনেকদূর এগুতে পারবো কিনা সন্দেহ রয়েছে।

কাজেই ইতিহাস ও সাহিত্য জাতির জন্য একটি বড় শিক্ষকচিত কাজ করে যা আমাদের অবশ্যই পড়তে হবে। আরও অনেক কিছু আছে যেটা পড়তেই হবে। সাহিত্য জীবনের দর্পণ। তা পড়ে একটা সমাজ কেমন ছিল তা জানা যায়।আমরা আজ বিভিন্ন জাতি যে হীনমন্যতায় ভুগছি তা হলো, একে অন্যের কৃষ্টি ও সভ্যতাকে অবগ্গা করছি।আমরা যেমন নিজের ধর্মকে অনুশীলন করবো তেমনি অন্য ধর্মের উপর তুলনা মুলক আলোচনা ও করবো।তাহলে আমরা বুঝতে পারবো আমার ধর্মের মাহাত্ম কত অধিক।আমি যদি হিন্দুতত্ত বা বৌদ্ধতত্ত পড়ি এটার অর্থ এই নয় যে আমি হিন্দু বা বৌদ্ধ হয়ে গেলাম।বরং এর মাধ্যমে আমি আমার ধর্মের প্রচারনা করতে পারি আরো সুন্দরতম উপায়ে।তাছাড়া অন্য ধর্মের মানুষের সাথে তার ধর্ম জানার কারনে সামজিক সখ্যতা ও গড়ে তুলতে পারি।আমার মনে আছে বছর ৩০ পূর্বে আমার এক হিন্দু বন্ধু তার পুজোয় দাওয়াত করেছিল।আমি গিয়েছিলাম পূজো করতে নয় ,তার ধর্মের প্রতি সম্মান দেখাতে।সে আমাকে প্রসাদ দিয়েছিল আমি খেয়েছিলাম।এখন যদি কেউ আমাকে মনে করে আমি হিন্দু হয়ে গিয়েছি সেটা তার আজ্গতার ব্যাপার।পরবর্তিতে আমার সে বন্ধু তার পরিবার নিয়ে আমার বাড়ি এসেছিল এবং গরুর মাংস খাওয়াকে তার ধর্মের অন্তর্ভুক্ত করেনি কারন সে আমার আপ্যায়ন রক্ষা করেছিল এবং বলেছিল এটা আমার বন্ধুত্বের প্রতিফলন,ধর্মের প্রতিফলন নয়।ধর্ম যার যার পালনের ব্যাপার এর উপর কারো বাড়াবাড়ি চলে না।কিন্তু সমাজে আমরা সামজিক জিব হিসেবে বাঁচতে চাইলে একে অন্যের সাথে সৌহার্দপূর্ন সম্পর্ক রেখে বাঁচাই উত্তম কাজ কারন আমরা একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি।দুনিয়ার জীবনে আল্লাহ আমদের স্বাধীনতা ও জ্গান দিয়েছেন সে অনুযায়ি আমরা চলবো।চূড়ান্ত বিচার হলো আখেরাতে, সেখানে আল্লাহ বিচার করবেন আমাদের দুনিয়ায় বিশ্বাস ও কর্মের কারনে।

আমাদের চলার পথে ইতিহাস ও সাহিত্য দুটোর-ই সমান বিচরন থাকতে হবে।অথচ ব্যাপকভাবে এ দুটোর চর্চাই কমে গেছে। ধর্মের বিষয়ে পড়াশোনা নেই। ধর্মকে তো ফিলোসফিই বলা যায়। এটাও মানুষ পড়ছে না। সাহিত্য ও ইতিহাসও কম পড়ছে আগের তুলনায়।একটা জিনিস নতুন প্রজন্মকে শিখতে দেখছি তা হলো বিজনেস ও বিজ্গান।নি:সন্দেহে এ দুটো দরকার তবে ধর্মকে বাদ দিয়ে নয়।আমার পর্যবেক্ষনে দেখতে পেয়েছি মুসলমানদের একটা বিরাট অংশ এখন ধর্মকে বাদ দিয়ে পাশ্চাত্যের আবরনে ঢুকে পড়েছে।এতে তারা যেমন মুসলমানিত্য হারাচ্ছে তেমনি হয়ে উঠছে সমাজে বেপোরোয়া।

একটা অনৈসলামিক দেশে সেটা তার কালসার কিন্তু যদি কোন মুসলিম সে কালসারটা ধারন করে তাহলে কি করে সে আর তার মুসলমানিত্য টকিয়ে রাখবে।ইউরোপ ,এমেরিকা , জাপান , অস্ট্রেলিয়া ও এদের মত অনেক দেশ এখন তাদের নিজস্ব ধর্মীয় শৃংখলায় শৃংখলাবদ্ধ নয়।সেখানে এখন মানবিক দিক হারিয়ে একটা আত্মকেন্দ্রিক জীবন তৈরি হয়েছে।সামাজিক কোন বন্ধন সেখানে নেই।কিন্তু আমাদের মুসলিম ইতিহাস ঐতিহ্য বা আমাদের ফিলোসফি বা ধর্ম পড়তে হবে যেখানে ছিল এক চিরন্তন বন্ধন।সেজন্য সাহিত্য ও ইতিহাস পড়তে হবে।ইতিহাস বিকৃত করা যায় না। ইতিহাসের ওপর কোনো যোগ-বিয়োগ করা যায় না। ইতিহাস হচ্ছে যা ঘটেছে এবং কারা ঘটিয়েছে এদের কথা। কী ঘটেছিল তার বর্ণনা। এটা সাহিত্য নয়। এখানে গল্প বানানোর কোনো অবকাশ নেই। ইতিহাস আর সাহিত্য এক জিনিস নয়। ইতিহাস অবশ্যই সত্য ঘটনাভিত্তিক হতে হবে। এখানে আমাদের পছন্দমত বাড়িয়ে দিলাম বা কমিয়ে দিলাম—এগুলো চলবে না।

আমার মনে হচ্ছে, আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার একটা ব্যর্থতা হলো, এখানে সেক্যুলারিজম থেকে অনেক কিছু আসছে। মানুষ আত্মকেন্দ্রিক হচ্ছে আধুনিক সভ্যতার কারণে। আধুনিক সভ্যতার মূল ভিত্তি সেক্যুলারিজম। এর ফলেই ক্রমে ক্রমে মানুষের শিক্ষা থেকে ধর্ম বাদ পড়ে গেল। বিশেষ করে পাশ্চাত্যে এটা বাদ পড়ে যায় এবং নৈতিকতার গুরুত্ব কমে যায়। ফলে আর ধর্মীয় বিষয় অধ্যয়নের গুরুত্ব রইল না।

পরবর্তী সময়ে আরও দেখা গেল, তারা এই স্বার্থপরতার মধ্যে বলতে লাগল, টাইম ইজ মানি। তার মানে সময় অন্য কোনো কাজে নষ্ট করা যাবে না; অর্থোপার্জনের কাজে ব্যবহার করতে হবে। তাই যদি হয়, তাহলে আমাকে ব্যবসায় শিখতে হবে বেশি করে, যা অর্থ দেয়, তার ব্যবস্থা করতে হবে এবং সেটা করতে গিয়েই মানুষ বিজনেস সায়েন্সে চলে গেল। কোনোটাই খারাপ নয় যদি সবকিছু মিলে হতো। ধর্ম ও নৈতিকতাকে সঙ্গে নিয়ে যদি করা হতো। কিন্তু ধর্ম বাদ দেয়ার কারণে এগুলো একবারে একপেশে, একতরফা, একমুখী হয়ে গেল। এমনকি বর্তমান প্রজন্ম এছাড়া কিছুই ভাবছেনা। আজকের তরুণ ছেলেমেয়েদের দেখলে মনে হয় না যে তাদের জীবনে কোনো উচ্চ লক্ষ্য আছে। তাদের সামনে লক্ষ্য হচ্ছে, একটা ছোট সংসার যেখানে থাকবে সুন্দরি একটি মেয়ে বা ছেলে,একটি সুন্দর বাসস্হান ও দুটি সন্তান।

মানুষের জন্ম নেয়ার যে কারন রয়েছে প্রতিটি ধর্ম , মতবাদ ও দর্শন কোন না কোনভাবে এই মৌলিক প্রশ্নের উত্তর দিতে ছেয়েছে।এক কথায় বলা যায় ,আমরা যে পৃথিবিতে বাস করি এটা বস্তুবাদি ও ধর্মনীরপেক্ষ পৃথিবী।পৃথিবীর অনেক দেশ যেমন-ভারত ,বৃটেন ,ফ্রান্স,এমেরিকা ও ইউরোপের বেশির ভাগ গনতান্ত্রিক দেশ দাবি করে তারা ধর্ম নীরপেক্ষ রাষ্ট্র।সোভিয়েত ইউনিয়ন এক সময় দাবি করতো তারা একটি নাস্তিক সমাজ যাদের চিন্তাধারা পুরোপুরি বস্তুবাদি।বস্তুবাদি সমাজ বলে আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য এ জীবনটাই।Theory of evolution ও একথাটিই বলে।আর এক শ্রেনীর মানুষ এ থিয়রি অবলম্বন করেই জীবন পরিচালনা করছে।তারা ভাবে আমরা মানব জাতি প্রকৃতির একটি পন্য।তাদের মতে এখানে আল্লাহর কোন অস্তিত্ব নেই।তারা বলে মানবজাতির পূর্ব পুরুষ ছিল বানর জাতীয় প্রানী।তাদের মতানুসারে বুঝা যায় পশু আর মানুষে কোন পার্থক্য নেই।একটু লক্ষ্য করলে দেখবেন আজকের পৃথিবিতে ইসলামিক ও অনৈসলামিক সমাজে মানুষের বসবাস কিরুপ।একটি পশু যেমন একটি বাসস্হান , খাদ্য ও একটি সঙি পেয়ে সুখ অনুভব করে , মানুষের মধ্যেও একটি শ্রেনী এ জিনিসগুলো পেলেই তারা সুখী।তাহলে মৌলিকভাবে মানুষ ও পশুর মধ্যে তেমন ব্যাবধান নেই শুধু মানুষের পরিবেশটা একটু আলাদা।বস্তুবাদের আসল কথা এখানেই আর Theory of evolution ও এ কথাটিই বলে।অবাধ যৌনতা,নগ্নতা,ব্যাভিচার,সমকামিতা এসবই মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি।আমাদের বেশিরভাগ মানুষ এর মধ্যে আটকা পড়েছে।আমরা বলি আমরা মুসলমান কিন্তু বাস্তবে আমরা বশিরভাগই এ দুনিয়াকে উপাসনা করি।আজকের পৃথিবিতে

মানুষের ভাবনা হলো একটু স্বছ্ছন্দে থাকা।একটা সুন্দর বাড়ি,একটি সুন্দরি স্ত্রী ও দু'টো সন্তান।তারা একটা ধর্ম পালন করে যা তাদের পূর্ব পূরুষ থেকে পেয়ে এসেছে যদিও তাদের পূর্ব পূরুষরা অজ্গ।একজন মুসলিমের জন্য তার স্রষ্টাকে জানা জরুরি।পৃথিবির বিভিন্ন ধর্ম পর্যালোচনা করলে দেখা যায় মানুষ তাদের দেবতাদের উপাসনা করে।তাদের একটা বিশ্বাস রয়েছে যে,এই দেবতারা তাদের অভাব অভিযোগ মেটাতে পারে।প্রকৃত বিশ্বাস হলো যার কাছ থেকে কিছু চাওয়া হয় তার কাছ থেকে কিছু পাওয়া।এ ছাড়াও মানুষ আরো কিছুর উপাসনা করে।যেমন-টাকা , ডলার , পাউন্ড , ইউরো ইত্যাদি।অনেকে ভাববে টাকাকে আবার কিভাবে উপাসনা করা হয়।রাসূল সা: বলেছেন,ধীক সেই সব মানুষকে যারা উপাসনা করে দিনার ও দিরহামকে।' টাকাকে উপাসনা করা হয় কারন মানুষ টাকার উপরই নির্ভর করে।আর টাকা না থাকলে হা হুতোশ করতে থাকে।এমনকি শির্ক পর্যন্ত পৌঁছে যায়।ধরুন আপনি একটি বিপদে পড়লেন কারো কাছে টাকা পাছ্ছেন না।হঠাৎ আপনার এক বন্ধু টাকা দিয়ে আপনার সমস্যার সমাধান করলো।আপনি বলতে শুরু করলেন বন্ধুটি না থাকলে আপনি মরেই যেতাম।বিপদ থেকে আল্লাহই উদ্ধার করলেন অথচ আপনি ক্রেডিট টি দিয়ে দিলেন আপনার বন্ধুকে। এভাবে আপনি শির্ক করে ফেললেন। আমাদের ইবাদাতে এ রকম অনেক শির্ক আছে যার আমরা খবর রাখি না।রাসূল সা: আরো বলেছেন ধীক তাদের যারা পছন্দ করে কারুকার্য করা জামা কাপড়কে।'বর্তমান সময় এটা বেশ পরিলক্ষিত হছ্ছে।সমাজে এখন এর প্রতিযোগিতা চলছে। কোন লেটেষ্ট জিনিস বাজারে আসলে তার প্রতিযোগিতায় মানুষ মেতে উঠে।আর এভাবে ফেশনের উপর বিশ্বাস জন্মে যায়।ক্ষমতা ও সম্মান কাউকে নিয়ে যেতে পারে আল্লাহর সমকক্ষে।প্রশ্ন করুন আমাদের নিজ নিজ অবস্হান থেকে।আমরা কি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করছি না অন্য কিছুর জন্য।আমাদের সমস্ত ইবাদাত করতে হবে আল্লাহর জন্য।আশা করতে হবে আল্লাহর কাছে,চাইতে হবে আল্লাহরই কাছে।এটাই জীবনের উদ্দেশ্য।এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে আমাদের খুব বেশি করে ইতিহাস ও সাহিত্যচর্চা করতে হবে।

যদি এ সব অসংলগ্ন কাজ থেকে ফিরে আসতে হয়, ধর্মেই ফিরে আসতে হবে। এটা বলতে বোঝাচ্ছি না যে, ধর্ম বলতে ইসলাম সবখানেই। আমি যেহেতু একজন মুসলমান সেহেতু অবশ্যই ইসলাম চাই। তারপরও বাস্তববাদী বলেই মনে করি, যেখানে হিন্দু ধর্মই প্রধান, সেখানে হিন্দু ধর্মেই ফিরে আসতে হবে। বৌদ্ধদের বৌদ্ধ ধর্মের দিকেই ফিরে আসতে হবে। খ্রিস্টানদের ফিরে আসতে হবে খ্রিস্টান ধর্মের দিকে। কেননা, কোনো কিছু চাপিয়ে দেয়া উচিত নয়। যদি পরিবর্তন চাই, তাহলে সবখানেই ধর্মের দিকে ফিরে আসতে হবে। কেননা আমরা মুসলিম বিশ্বে হয়তো করলাম কিছুটা, কিন্তু আমরা তো বিচ্ছিন্নভাবে থাকতে পারব না। টিকতেও হয়তো পারব না। এজন্য বিশ্বব্যাপী দরকার ধর্মে ফিরে যাওয়ার একটা আন্দোলন। খ্রিস্টান ও হিন্দুদের যদি এ রকম উদ্যোগ থাকে, এটাকে স্বাগত জানাই। তবে বিজেপির মতো হওয়া উচিত নয়, যেখানে মুসলিমবিরোধী একটা চেতনা আছে। বরং এরকম হতে হবে যে, হিন্দু ধর্মের প্র্যাকটিস তারা পুরোপুরি করবে। নৈতিক মূল্যবোধ পুরা নেবে, আইন থাকলে তাও মানবে। কিন্তু অন্য ধর্মের লোকদের তারা মানবাধিকার দেবে। ইসলামের ক্ষেত্রে একই কথা। এ রকম হওয়া সম্ভব। পোপ বর্তমানে যেসব কথা বলছেন, তা এ রকমই। ব্যাক টু ফ্যামিলি ভ্যালুস, রিজেক্ট সেক্যুলারিজম—এ রকম কথাই বলেছেন তিনি। চার্চ অব ক্যান্টারবারি এ কথাই বলেছেন। কারণ, হয়তো বস্তুবাদ, সেক্যুলারিজম ও নাস্তিকতার প্রভাব তারা বেশি অনুভব করেছেন। তাদের সত্যিকার মুভমেন্ট, সেখানে দাওয়াত থাকবে, যেমন আমরা বলি দাওয়াতের কথা। যেমন ইসলামপন্থীরা যতই ত্রুটিপূর্ণ হোক না কেন, তারা বলে, আমাদের দাওয়াত দিতে হবে, লোকদের বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে। আমরু বিল মারুফ করতে হবে। নেহি আনিল মুনকার করতে হবে। খ্রিস্টান ধর্মের তাত্পর্যও এটাই। ইসলামে বলা হয়েছে আমরু বিল মারুফ, কিন্তু খ্রিস্টান ধর্মে এই মূল কথাটা যে নেই, তা বলা যাবে না। নিশ্চয়ই ঈসা (আ,) চেয়েছেন যে, ধর্মের কথা অন্যদের বলো। চার্চের এ ব্যাপারে অনেক দায়িত্ব। তাদের ভালো লোকদের অনেক দায়িত্ব আছে এটা করার জন্য।

গোটা বিশ্বেই ব্যাক টু রিলিজিয়ন, ব্যাক টু মোরালিটি, ব্যাক টু এথিকস—এটা হতে হবে। না হলে মানুষের মুক্তি নেই। মানুষ একেবারেই বর্বর, স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছে। প্রতারক, বাটপাড়, লোভী হয়ে যাচ্ছে। জাতির ওপর জাতির অত্যাচার, ব্যক্তির ওপর ব্যক্তির অত্যাচার, শ্রেণীর ওপর শ্রেণীর অত্যাচার। সব সম্পদই একমাত্র আমেরিকার বা সব কতৃত্বই পৃথিবী ব্যাপি তারা করবে এমন কি করে সম্ভব? এটা তো অত্যাচারেরই অন্য নাম। কাজেই অনেক মৌলিক প্রশ্ন এর সঙ্গে জড়িত। আমাদের দেশে ইতিহাস চর্চা হচ্ছে না, তা বলব না। হচ্ছে এই অর্থে যে, আমরা যে ইতিহাস পড়ি, উপমহাদেশের যে ইতিহাস পড়ি, কম-বেশি কিছু ভালো লেখক আছেন যারা সেটা লিখেছেন। তবে কিছু লেখক হয়তো-বা বিকৃত করছেন। বেশিরভাগ লেখকই ভালো লিখছেন। কিন্তু আমাদের ইতিহাসের কোথাও কোথাও যেসব বিকৃতি চলে আসছে, সেসব দূর করতে হবে। এটা করতে হবে একদল সাহসী লোককে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর জন্ম নিয়েছে, এমন লোক তা করতে পারবে, আগের লোকেরা করতে পারবে না। ইতিহাস আপন গতিতে চলে; এটা এই অর্থে ঠিক যে কোনো এক ব্যক্তি ইতিহাস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ইতিহাসে কোটি কোটি লোক জড়িত। তাই একটা ছোট গোষ্ঠী এটা বদলাতে পারবে না। রেকর্ডিং ভুল হতে পারে, কিন্তু কেউ না কেউ সেই রেকর্ডিং চ্যালেঞ্জ করবে। যেমন আওরঙ্গজেব নিয়ে অনেক কথা আছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে হিন্দু ঐতিহাসিকরাই বলছেন, এগুলোর অনেক কিছুই মিথ্যা। মনে করি ইতিহাস নিজের গতিতে চলে এই অর্থে যে, কোনো এক ব্যক্তি এটাকে বদলাতে পারে না। কারও হাতে এটার নিয়ন্ত্রণ নেই। একটা পার্টিও এটা নিয়ন্ত্রণ করে না। কোটি লোক যে একটা গতি, কোটি লোক যে একটা মিলিত চিন্তা, এর প্রতিফলন ঘটবেই।

আমাদের শিক্ষাব্যবস্হায় অনেক উন্নতি হলেও নৈতিক মান বজায় নেই এবং ইতিহাস ও সাহিত্যকে যে আংগিকে পড়ানো দরকার তা হচ্ছে না।শিক্ষাকার্যক্রমের প্রতিটি স্তরে ইতিহাসকে ঢেলে সাজাতে হবে জাতে প্রজন্ম প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারে।যে যে বিষয়ে পান্ডিত্য অর্জন করুক, ইতিহাসের অংশ তাদের পাঠ্যক্রমে সংযুক্ত করলে তারা সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।এটা হতে পারে একটা বেসিক নলেজের মত।ইতিহাস ও সাহিত্যকে উপেক্ষা করা যাবে না।ঐতিহাসিকভাবেই মানতে হবে, কালচারের ভিত্তি ধর্মই ছিল। এটা না মানা মানে বাড়াবাড়ি। হিন্দুদের ক্ষেত্রে হিন্দু ধর্ম প্রাথমিকভাবে। মুসলিমদের ক্ষেত্রে ইসলাম ধর্ম, আর অন্যরা মাইনর গ্রুপ। খ্রিস্টানরা তো অনেক পরে এসেছে। বৌদ্ধ ধর্মই বৌদ্ধদের কালচারের ভিত্তি ছিল। পরবর্তী সময়ে একটা কালচার এসেছে পশ্চিমাদের থেকে। সেটা সবাইকে কম-বেশি প্রভাবিত করছে। ড্রেস প্যাটার্নে, ভাষায়, বিনোদনে প্রভাব পড়েছে। যেটুকু ভালো এটুকু হয়তো-বা বাদ দেয়া যাবে না। কিন্তু যা মন্দ তা গ্রহণ করা উচিত নয়। তাই আমাদের বর্তমান কালচারে একটা মিশ্রণ ঘটছে। দেশে একটা মিক্সড কালচার সৃষ্টি করার চেষ্টা হচ্ছে, যেন এখানে হিন্দু ধর্ম ও ইসলাম মিশে যায়। অথবা এর কাছাকাছি যেন চলে আসে ধর্ম হিসেবে। এখানে মঙ্গল প্রদীপ দিয়ে শুরু করা হবে। আর্ট কলেজে বেসিক্যালি হিন্দু থটভিত্তিক বা হিন্দু প্র্যাকটিসভিত্তিক হবে। কিন্তু আমি মনে করি, মানুষের মৌলিক পরিচয় হচ্ছে ধর্ম। কোরআনও তাই বলে। আল্লাহ পাক সূরা বাকারায় বলেছেন, ‘লা তামুতুন্না ইল্লা ওয়া আনতুম মুসলিমুন’—তোমরা মৃত্যুবরণ করো না, যতক্ষণ না তোমরা মুসলিম হয়েছ। অবাক লাগে, আল্লাহ তায়ালা বললেন না যে, আমেরিকান বা পাঞ্জাবি বা ভারতীয় না হয়ে মরো না। কিংবা বাঙালি না হয়ে মরো না। এটা প্রমাণ করে, রাব্বুল আলামিনের কাছে মূল হচ্ছে মুসলিম পরিচয়। তাই হিন্দু ধর্ম একজন হিন্দুর আসল পরিচয়। এই পরিচয়ের ভিত্তিতে যদি বাংলাদেশে দুটি কালচার থাকে, তাতে সমস্যা নেই। এক রাষ্ট্রে কয়েকটা কালচার থাকতেই পারে। ভারত একটা রাষ্ট্র হলেও অন্তত বিশটা ভাষা আছে সে দেশে। কী সমস্যা এতে? যে ভাষা বেশি চলে, সেটা রাষ্ট্রভাষা হলো। ইসলাম যারা মানে না, মুসলিম আইডেনটিটির মধ্যে যে কোনো রকম আপস নেই, এটা তারা বুঝতে পারে না। কাজেই ভিন্ন কালচারকে মেনে নেয়াই ভালো। কিন্তু একদল সেক্যুলার ইচ্ছা করে ইসলামকে দুর্বল করার জন্য বাঙালি কালচার এবং বাঙালিত্বকে বড় করে দেখাচ্ছে। বাঙালিত্বও একটা বিষয়। কিন্তু এটা মৌলিক নয়। বিশ্বাস যেমন মৌলিক, এক আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ও আখেরাতে বিশ্বাস যেমন মৌলিক, কোন ভাষায় কথা বললাম এটা অতটা মৌলিক নয়। বিশ্বাসই মানুষের কার্যকে, সব কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করে। সেই বিশ্বাস আসে ধর্ম থেকে। যে মূল্যবোধ মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে, সেটা আসছে ধর্ম থেকে। আমি কী মাছ খেলাম, এটা আমাকে নিয়ন্ত্রণ করে না। এ দেশের তৈরি সবজি খেলাম, এটা আমার জীবনধারাকে নিয়ন্ত্রণ করে না। কিন্তু এটাকেই কিছু লোক প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছে। এই বিষয়টাকে মৌলিকভাবে চ্যালেঞ্জ করা দরকার। এটা করছে মূলত তারা, যারা ইসলামকে সহ্য করতে পারছে না। এটা করছে যারা নাস্তিক বা নাস্তিকের কাছাকাছি, তারা। যারা বামপন্থী, যারা না বুঝে মনে করছে আমাদের আর কিছু করার নেই, এখন ইসলাম বিরোধিতাই আমাদের একমাত্র কাজ। যেহেতু আমাদের কিছু করার নেই, আমরা কী প্রতিষ্ঠা করব? সোশ্যালিজম প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। কমিউনিজম সম্ভব নয়। তাহলে আমরা কাজ নিলাম ইসলামবিরোধিতা করার—এমন মনোভাব। তাদের যে ব্যর্থতা তারা তা মানতে পারছে না। তাদের উচিত ছিল ইসলামকে বিচার-বিবেচনা করা। তারপর যদি এটা গ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে গ্রহণ করা। কিন্তু সেই বিচার তারা করতে পারছে না। কারণ অন্ধ বিদ্বেষ দ্বারা তারা পরিচালিত। নিজেদের পরাজয় তারা মানতে পারছে না।

ইসলাম বলে মুনকার গ্রহণ করো না। শিরক আর ফাহেশা গ্রহণ করো না। এই তিনটা জিনিসকে বর্জন করে আমরা অন্য কিছু নিতেও পারি সাবধানতার সঙ্গে; যদিও নেয়া কোনো বিজয়ী জাতির পরিচয় নয়। বিজয়ী জাতি নিজে উদ্ভাবন করে। ভারত থেকে যে কালচারটা আসছে, তার অর্ধেক হচ্ছে শিরকভিত্তিক, আর অর্ধেকটা হচ্ছে ওয়েস্টার্ন, এটা মুম্বাইতে হয়ে আসছে। এই দুটোই মুসলিমদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। অবস্থাটা এরকম যে, ওরা জিততে পারছে না। কিন্তু আমরাও জিততে পারছি না। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, আস্তে আস্তে বিশ্বব্যাপী ইসলামের প্রচার-প্রসার হচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশেও দেখছি ইসলামের প্রচার-প্রসার ঘটছে। এটা চূড়ান্ত পর্যায়ে বিজয়ী হবে যদি আমরা আসলমুসলমানিত্বে বিশ্বাস ও সে অনুযায়ি কাজ করি। বামপন্থীদের ভিত্তিটা দুর্বল। পজিটিভ কোনো ভিত্তি নেই। ‘লা ইলাহা’ শুধু চলে না ‘ইল্লাল্লাহু’ ছাড়া। ওদের শুধু লা ইলাহ আছে, লা ইসলাম আছে। কিন্তু তার পরিবর্তে কিছু নেই। সেক্যুলারিজম কোনো পজিটিভ আইডিয়া নয়। এটা বলে ‘ধর্ম থাকবে না রাষ্ট্রে’ কি করে এটা সম্ভব? মুসলমানদের জিতে যাওয়া সম্ভব তবে তাদের এক হতে হবে ও বুদ্ধিমান হতে হবে, তবে ইসলামের-ই বিজয় অন্য কারো নয়।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরে চৌদ্দশ’ বছর চলে গেছে। উনিশশ’ সাতচল্লিশের পর এখানে প্রধানত মুসলিম আইডেনটিটি ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে একটা অন্ধ জাতীয়তাবাদ চলে এলো। সেটা আমাদের মুসলিমত্ব কমিয়ে দিল। কমিউনিস্টদের সফলতা হচ্ছে, তারা আমাদের মুসলিমত্ব ভোলাতে ও কমাতে পারছে। তবে এখন তাদের এই প্রচেষ্টা থমকে গেছে এ কারণে যে, ইসলামিস্টরা আবার কম-বেশি জেগে উঠেছে। তাদের মধ্যে ছোট হলেও একটা ইন্টেলেকচুয়াল গ্রুপ তৈরি হচ্ছে। বিশ্বব্যাপীই ইন্টারন্যাশনাল ইন্টেলেকচুয়াল গ্রুপের প্রভাব পড়ছে।

বিষয়: বিবিধ

১৭৩১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File