সাব্বাস সংসদ ও সাংসদেরা-মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আর এক নাম সম্পদের পাহাড় বানানো।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০২:৩৬:৪৩ দুপুর
শুনেছি মুক্তিকামি মানুষের জন্য গনতন্ত্রের মানসকন্যারা ও মানসপুরুষেরা দিন রাত নির্ঘুম রাত যাপন করেন।ভোট আসলে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যান, ও পা ছুঁয়ে বা কোলাকুলি করে শেষ বারের মত নির্বাচিত করার জন্য আবেদন নিবেদন করেন। এমনকি তাদের বেগমরাও আজকাল তাদের পক্ষে কাজ করেন।সাংসদ নির্বাচিত হয়ে গেলে লেঠা শেষ। পাঁচ বছর কেন পাঁচ যুগের গেরান্টি করে নেন সমাজে বসবাস করার।সেদিন একজন দিন মজুরকে নিউজ পেপার নিয়ে এগিয়ে আসতেই জিজ্গেস করলাম একি তোমার হাতে নিউজ পেপার? বললো স্যার, আমরা কুলি-মজুর বলে খবর ও পড়তে পারুম না? আমি বললাম আমি সেটা বলিনি।তোমাকেতো আমি এভাবে ধেয়ে আসতে দেখিনি।যাই হোক খবরটা দেখিয়ে বললো," স্যার আমগ কপাল খারাপ,বিএনপির পতনের পর তাগরে জ্বেলে ভইরা কত্ত খবর ছাপা হইছিল,নামে বেনামে ওরা কোটি কোটি টাহার সম্পদ করছিলো, আর অহন কি দেহি,অগোরে হারাই দিছে মহাজোটের এমপিরা।যামু কই আমরা স্যার? কই গত পাঁচ বছরে তো আমরা পন্চাশ হাজার ও জমাইতে পারি নাই।যায়গা জমি যা ছিল তার অর্ধেক বেইচা হালাইছি।যদি সামনে এই রহম দুইডা ইলেক্শন আহে দেশের সম্পদ ওগো মতন দুই হাজার মানুষের পেটে চইলা যাইবো।"
গণতন্ত্রের সাথে এমপি মন্ত্রিদের সম্পদের হিসাব নিকাশের কোন সম্পর্ক নেই।যারা দেশ চলাতে আসেন তারা দেশের কল্যান কামনা করতে আসেন ও দেশের জন্য কাজ করতে আসেন।একজন রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বের স্বভাবত বাপ দাদা থেকে কিছু সম্পদ পেয়ে আসেন সে যেভাবেই হোক।এগুলো কারো জানার দরকার নেই। কিন্তু এই হিসাব নিকাশের খাতা তৈরি করে এবার জনমনে যে প্রভাব ফেলা হলো তাতে জনগনের আর বুঝতে দেরি হলো না সংসদে কেন যায় এমপিরা? সরকার ও বিরোধীদলীয় এমপি ও মন্ত্রীরা যেভাবে পাঁচ বছরে 'শ' 'শ' কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তাতে করে মানুষের আর বুঝতে বাকি নাই তারা কিভাবে এ সব অর্জন করেছেন? প্রশ্ন হলো তাহলে সরকারের বিচার বিভাগ,আর্মি ,পুলিশ ,ইন্টেলিজেন্স থেকে কি লাভ? চিঁছড়ে চোর যে নাকি পেটের দায়ে কারো ঘর থেকে কিছু চুরি করলো বলে তাকে জেল বাস করতে হলো।আর এসব রাষ্ট্রীয় খাত থেকে দিনে দুপুরে টাকা চলে যাওয়া বা বিদেশে লাখ লাখ ডলার দিয়ে বিলাস বহুল বাড়ি করা সম্মনীয় ব্যাক্তিরা সরকারের নাকের ডগায় বসে দম্ভের সাথে কেউ কেউ মিডিয়াতে বলেন ইচ্ছে করলে এর চেয়েও বেশি সম্পদ করতে পারতাম।তাহলে হীনতম কে? ঐ ছেলেটি যে পেটের তাড়নায় খাবার ছুরি করেছিল না প্রশাসনে থেকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ কুক্ষিগত করেছিল? আমাদের মিডিয়া এমন এক সৃষ্টি যা এদের মত লোকদের ডেকে এনে সুন্দর সুন্দর কথা শুনায়।অথচ ব্যাক্তি জীবনে এরা সবচেয়ে কপট।ইদানিং নির্বাচনের প্রার্থীদের হলফনামার সচিত্র প্রতিবেদন কাগজে বেরোচ্ছে। পাঁচ বছরে কারও আয় বেড়েছে ৩৫১ গুণ। কারও ১০৭ গুণ। কারও ৬৭ গুণ। কারও বা ৪০ গুণ। কেউ পাঁচ কোটি টাকায় ৭০ একর জমি কিনেছেন। স্ত্রীর নামে শেয়ার আছে এক কোটি ২২ লাখ টাকার। এক কোটি ১৮ লাখ টাকায় দুটি গাড়িও কিনেছেন। পাঁচ বছর আগে ছিল একজনের এক কোটি ৪৪ লাখ টাকা ও সাড়ে পাঁচ একর জমি। এখন ১৪৬ একর জমি ও পাঁচ কোটি টাকা।সরকারি দলের এমপি ছাড়াও জাপার এমপিরাও কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে খবর বেরিয়েছে।আওয়ামিলীগ ঘরানো নাটোরের এমপি পলক, অনেকের ধারনা ছিল এ নবপ্রজন্মের একজন তরুন এমপি যে টক শোতে সুন্দর সুন্দর কথা বলেন।তাঁর ও তাঁর স্ত্রীর গত পাঁচ বছরের সম্পদের বিবরনী নয়াদিগন্তে প্রকাশিত হয়েছে।গত কয়েক মাস আগে আমি একটি কলাম লিখেছিলাম " কান্চন মিয়া ভাংলো টিভি মধ্য রাতের টকশোতে।" একজন প্রান্তিক মানুষের টিভি ভাংগার ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছিল।নিত্যদিনের মত তিনি টকশো দেখার জন্য টিভি খুললেন।যখন দেখলেন এ চরিত্রের একজন এমপি সুন্দর সুন্দর কথা বলছেন তখন তিনি তার হাতের কাছে কাসার বাটিটি ছুঁড়ে মারলেন টিভির দিকে আর ভেংগে গেল টিভিটা।আমাদের অনুরোধ মিডিয়ার কাছে, আপনারা টক শোতে যাদের আনবেন অন্তত: তাদের ব্যাক্তি জীবনের ইতিহাস পর্যালোচনা করে আনবেন যাদের ব্যক্তিজীবনের কলন্ক আছে তাদের এখানে নিয়ে আসলে জাতি কলন্কিত হবে।তাছাড়া যাদের থেকে প্রজন্ম কিছু শিখতে পারবেনা তাদের এনেই বা কি লাভ?টক শোয় মাঝেমধ্যে কিছু কিছু ব্যক্তি আসেন, যাঁদের কোনো দল নেই, তেমনি দলীয় বলও নেই; কিন্তু দেশের প্রতি আছে ভালোবাসা, আছে মমত্ববোধ, আছে সৎ সাহস। তাই নির্ভয়ে সত্য কথা বলতে পারেন। তাঁদের কথা শুনতে ভালো লাগে। মানুষ আশার আলো দেখতে পায়। কিছুদিন আগে এক টিভি দর্শক একটি চ্যানেলের লাইভ অনুষ্ঠানে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আচ্ছা ভাই, আপনারা মিডিয়ায় এই দুই দলের লোকদের না ডেকে দেশের উন্নতি-অগ্রগতির লক্ষ্যে বিভিন্ন সেক্টরের বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের ডেকে আলোচনা করাতে পারেন না? তাতে দেশের মানুষ উপকৃত হবে।’ আপনারা মিডিয়ায় এসব আলাপ কমিয়ে দিয়ে দেশের বিভিন্ন সম্ভাবনা, সমস্যা ও এর সমাধান নিয়ে আলোচনা করেন। তাতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অনেক মেধাবী মানুষ টেলিফোনের মাধ্যমে সরাসরি অনেক পরামর্শ দিতে পারেন। তখন দেশে একটি জ্ঞানভিত্তিক আলোচনা শুরু হবে।
সব সরকারের এই কপোট গনতন্ত্রমনাদের কী হয়নি? প্রাসাদের মতো বাড়ি, পূর্বাচল সহ অন্যান্য প্রজেক্টে প্লট (নিজের ও স্ত্রীর নামে), বহু ফ্ল্যাট, কৃষিজমি, দোকান, কোম্পানির শেয়ার, ব্যাংকের গচ্ছিত অর্থ জলোচ্ছ্বাসের মতো ফুলে উঠেছে, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বহু রকম, কোটি কোটি টাকার গাড়ি, কয়েক 'শ' কেজি সোনাদানা। গণতন্ত্র তাদের জীবনকে এসব দিয়ে ভরে দিয়েছে।।তাঁদের নিজেদের হলফনামার সংবাদ কাগজে পড়ে অনেকে অট্টহাসিতে ফেটে পড়েছেন। এতে অসম্মানের কিছু নেই।এগুলো গৌরবের কথা।কথায় আছে মানির মান পিটালেও যায় না। হলফনামায় আছে অর্থ-সম্পদের অংশমাত্র। এত বোকা তাঁরা নন। বরং দেশবাসীকে বোকা বানিয়ে দিয়েছেন। এ তো আমাদের সম্পদের পাঁচ-সাত ভাগের এক ভাগ। বাকি আছে নামে-বেনামে। তা ছাড়া হলফ তো করেছি দেশের ভেতরের সম্পদের। দেশের বাইরে বাড়ি, ফ্ল্যাট, ডলার, ইউরো, পাউন্ড স্টার্লিং যা আছে, তা আলাদা।তাহলে এখন দুদকের কাজ কি? এ যে পত্র পত্রিকায় প্রতিদিন সবার কেঁছো খুঁড়তে সাপ বেরুচ্ছহে দুদক কি কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে? এ সব সম্পদতো জনগনের সম্পদ।পাঁচ বছর তারা আসে এলাকার উন্নতির কথা বলে আর তা না করে টাকার পাহাড় বানিয়ে চলে যায়।আসলে আমরা মেহনতি মানুষেরা সবচেয়ে বোকা।আমরা তাদের চিনতে পারছিনা।ভোটের সময় সামান্য ৫০০ টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে মূল্যবান ভোটটি নিয়ে নেয় তা এ সব প্রান্তিক মানুষেরা বুঝতে পারে না।এবার কি তাদের বোধদয় হবে?
বাংলাদেশি গণতন্ত্র রাষ্ট্রের চার মূলনীতি ও চেতনা বাস্তবায়নের গণতন্ত্র। এ গণতন্ত্র হলো বাঙালি জাতীয়তাবাদী গণতন্ত্র। ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র। সর্বোপরি সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র। ক্ষমতার পাঁচ বছরেই সাংসদ কী করে এত সম্পদ গড়লেন, তা তাঁর প্রতিবেশী ও বন্ধুদের তাজ্জব করেছে। তাঁরা বলেন, ‘যার একটি মোটর সাইকেল কিনার আর্থিক সংগতি ছিল না’ পাঁচ বছর আগে, তিনি ‘এখন রাজার হালে তিনটা গাড়িতে চড়েন।’ সকালে যে গাড়িতে বাজারে যান, দুপুরে পার্টি অফিসে সেটায় যান না। স্ত্রী ওটা নিয়ে যান বাপের বাড়ি। সন্ধ্যায় জেলা সদরে যান অন্য গাড়িতে।এভাবে পাহাড়, ফসলি জমি, বনভূমি দেশের সব সম্পদ হলফনামাওয়ালাদের হাতে চলে যেতে থাকলে আর মাত্র দুটি নির্বাচনের প্রয়োজন হবে। এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে শুধু বাংলা ভাষাটা বাঙালির মুখে থাকবে, তার পায়ের তলায় পলিমাটির বাংলাদেশটা থাকবে না। একাত্তরের শহীদ ও জনগণের ভাগ্যের কী সুন্দর পরিহাস স্বাধীনতার চেতনার সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে সম্পদের চেতনা।
দেশে দেশে উগ্র পন্থিদের যে সামাজিক উত্থান আমরা দেখছি তার কারন এখানে।জনগনের কল্যানে প্রকৃত সাংসদ যদি সংসদে না যায় তাহলে একটা কেন দশটি ইলেক্শন হলেও দেশের উন্নতি হবে না।প্রতিটি মানুষ যদি মানুষের কল্যানে না আসে তাহলে এভাবেই কিছু মানুষ গড়ে তুলবে সম্পদের পাহাড় আর নিপিড়িত হতে থাকবে দেশের আপামর প্রান্তিক মানুষ আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর্তচিৎকার করবে যুগ যুগ ধরে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন