ভ্রমনপিপাষু মানুষ অধিকতর কর্মদক্ষ হয় আর সাথে সাথে শিশু ও মায়েরাও নতুন জীবনের সন্ধান পান।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২২ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৯:২৯:৫০ রাত
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ব্যাস্ততা অনেককে উদ্বিগ্ন ও হতাশ করে তোলে।সকাল থেকে সে রাত পর্যন্ত কর্মক্ষেত্রে একঘেয়েমির জীবন স্ত্রী ও সন্তান থেকে অনেক দূরে নিয়ে যাচ্ছে। ইচ্ছে থাকলেও একটু আদর সোহাগ কেউ কারো কাছ থেকে নিতে পারে না।সামাজিক অস্হিরতা স্বত্বেও পরিবারের ব্যায়ভার বহন, করার নিমিত্তে একজন মানুষকে সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত বাইরে থাকতে হয়।অনেকে ছুটির দিন ছাড়া সন্তানদের সাথে বসে গল্প করার সময়-ই পান না।দূরের অফিস হলে সকালে বের হতে হয় বলে ছেলে মেয়ে ঘুমে থাকে আবার বাসায় ফিরতে দেরি হয় বলে রাতেও ঘুমে পান।এই যে যান্ত্রিক জীবন হয়ে উঠেছে তা আমাদের প্রতিটি জীবনকে বিষিয়ে তুলছে।মানুষিক চাপকে লাঘব করার জন্য দরকার কিছু সময়ের ভ্রমন।আমাদের ছুটিগুলোতে যদি আমরা পরিকল্পনা করে নেই কোথাও বেড়িয়ে আসার তাহলে বছরের প্রথমেই তা করা উচিত।এতে পরিবার ও ছেলেমেয়ে বাকি সময়টা কাজে লাগানোর জন্য উৎসাহ পাবে।বিশেষ করে যদি আপনি বেচে নিতে পারেন নতুন কোন যায়গা যেখানে সবুজে ঘেরা প্রকৃতি ও তার সমুদ্রতীর।আপনি চলছেন আর চলছেন দেখবেন আপনার মধ্যে জমে থাকা চাপ ও বিষন্নতা কমে যেতে থাকবে।আপনার জীবন চাংগা হয়ে আবার কর্মদ্দীপনা ফিরে আসবে।
বের হওয়ার প্রাক্কালে আপনার প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো গুছিয়ে নিন।পরিবার ও ছেলেমেয়ের জন্য ভ্রমনে যা যা দরকার তা ব্যাগে পুরে নিন।বিশেষ করে বাচ্ছাদের খাবার , প্রাথমিক এইড বক্ক্স, প্রয়োজনীয় কাপড় চোপড় ও কিছু শুকনো খাবার যা আপনদের সাহায্য করবে দুর্গম এলাকায়।যদি হিলি এলাকায় যান তাহলে সেখানকার জন্য আলাদা জুতো ও পোষাক নিবেন অবশ্যই।ভ্রমনের সবচেয়ে বড় আনন্দ হলো নতুন স্হান ও মানুষের সাথে পরিচিত হওয়া।অনেকের সাথে আপনার বন্ধুত্ব হয়ে যেতে পারে যা আজীবন চলমান থাকবে।আর অচেনা মানুষের সাথে চলতে গেলে আলাপ আলোচনায় আপনার সামাজিক দক্ষতা বেড়ে যাবে নি:সন্দেহে।আমাদের সবারই কর্মক্ষেত্রে কাজের চাপ থাকে, যদি আমরা উদ্বিগ্নতা কমাতে চাই তাহলে এটাই আমাদের সহায়তা করবে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করার জন্য।
ভ্রমণের পরিকল্পনা করার পর থেকেই মনের মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনা তৈরি হবে। ভ্রমণে কী কী সঙ্গে নেবেন তার তালিকা তৈরি কিংবা ভ্রমণে গিয়ে কীভাবে সময় কাটাবেন তা নিয়ে ভাবতে ভাবতে আপনার মনে এক নতুন উদ্দেশ্য তৈরি হবে। নিজের এই লক্ষ্য পূরণ করার সাফল্য আপনাকে যে আত্মবিশ্বাস এনে দেবে তা আপনার অন্যান্য কাজের উপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।অনেক সময় দেখবেন ভ্রমণে একরকম পরিকল্পনা করে বের হয়েছেন কিন্তু শুরু থেকেই আপনার পরিকল্পনা মাফিক কিছুই হচ্ছে না। হয়তো দেখবেন আপনার গন্তব্যে উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পর প্রয়োজনীয় অনেক কিছুর কথা ভুলে গেছেন, কিংবা খারাপ আবহাওয়ার কারণে বের হতে পারছেন না কিংবা যাত্রা বাতিল করতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মোটেও হতাশ হবেন না। একটু চেষ্টা করলে বিকল্প ঠিকই খুঁজে নিতে পারবেন। আর যখন ভ্রমণে বেরিয়ে এরকম কাজের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবেন তখন আপনার মনটাও নমনীয় হয়ে উঠবে। ভ্রমণ শেষে দেখবেন বিভিন্ন পরিস্থিতিতে মনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়ে যাবে।
ভ্রমণে আপনি যে বিষয়টি শিখবেন তা হচ্ছে ধৈর্য। আপনি খেয়াল করবেন ভ্রমণে বের হওয়ার পর থেকে আপনাকে বিভিন্ন সময় প্রয়োজন অনুযায়ী অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। কখনও লাইনে দাঁড়িয়ে, কখনও বা প্লেনের জন্য আবার কখনও রেস্তোরাঁয় খাবারের জন্য অপেক্ষা।হতে পারে কেউ অসুস্হ হয়ে পড়েছেন এতে ঘাবড়ানোর দরকার নেই,আশে পাশে কোথাও চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে চিকিৎসা নেয়া যায় কিনা দেখতে হবে।ভ্রমনে হালকা খাবার খাওয়া জরুরি কারন স্পাইসি খাবার আপনাকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হতে পারে বার বার কিন্তু আপনি হয়ত টয়লেট পাবেন না।সে জন্য এ বিষয়টি মাথায় রাখা জরুরি। এই বিষয়গুলোর জন্য আপনার ধৈর্য থাকা প্রয়োজন যা আপনার ভ্রমনকে অর্থবহ করে তুলবে। আপনি আপনার অপেক্ষার সময়টুকু নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন। অনেক সময় চুপচাপ দাঁড়িয়ে আরও অনেকের সঙ্গে অপেক্ষা করবেন। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কীভাবে মাথা ঠান্ডা রেখে জীবনকে উপভোগ করবেন ভ্রমণের মাধ্যমে শিখতে পারবেন আপনি।মানসিক চাপ আর উদ্বিগ্নতা ঝেড়ে ফেলবেন।আপনার পক্ষে বিষয়গুলো খুবই সহজ কাজ হবে যদি আপনি একজন ভ্রমণপিপাসু মানুষ হন। ভ্রমণে যতো পথ পাড়ি দেবেন মনের মধ্যে জমে থাকা চাপ, বিষণ্নতা সব কিছুই কমে যেতে থাকবে যদি আপনি আপনার সহধর্মিনীর সাথে জমিয়ে তুলতে পারেন।আর যদি পেয়ে যান আপনার মনের মত সংগি তাহলে আর তো কথাই নেই।
অনেকে ছুটি পেলে ঘরে বসিয়ে কাটিয়ে দেন এটা কোনক্রমেই সমিচীন নয়।আপনি হয়ত বাইরে যান কিন্তু আপনার পরিবার সন্তানরা উম্মুখ হয়ে থাকে বাইরে যাওয়ার জন্য আমাদের শিশুরা আজ বড় ক্লান্ত ,অবসন্ন। আমাদের উচিত তাদের নিয়ে ভ্রমন করা। ভ্রমণে শিশুর সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হয়, মানসিক উৎকর্ষের পাশাপাশি শিশুকে দায়িত্বশীল হতে শেখায়। চার দেয়ালের বন্দিত্ব শিশুদের মনকে সঙ্কীর্ণ করে তোলে। অবারিত সবুজ, খোলা প্রান্তর শিশুদের প্রাণবন্ত করে তোলে। যেখানে সেখানে নগরায়নের সভ্যতায় হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ গাছ, নদী, খাল, হাওর, বাঁওড়। যতটুকু টিকে আছে তাও আবার বিষাক্ত। যেমন—আমাদের অধিকাংশ নদীগুলো আজ প্রায় মৃত। ভবিষ্যত্ প্রজন্মের জন্য যেন কারও কিছু করার নেই। সচেতনতার বড় অভাব। সবাই ছুটছি নিজের স্বার্থে। চারপাশে তাকানোর সুযোগ নেই। এমনকি কোমলমতি শিশুদের পাঠশালাও আজ বাণিজ্যিক। এখনও সময় ফুরিয়ে যায়নি। যতটুকু সময় আছে তাতেই অনেক কিছু করা সম্ভব। প্রয়োজন একটু সুস্থ মানসিকতার। আসুন আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে সচেতন হই। গড়ে তুলি আগামীর প্রাকৃতিক প্রাচুর্যময় সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশ। বাতাসে সীসামুক্ত বুকভরা নিঃশ্বাস নিয়ে যেন বলতে পারে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি। ভালোবাসি দেশকে মায়ের মতো।’ অনেক বাবা-মা-ই আছেন তাদের সন্তানদের ভবিষ্যত্ সুখের আশায় শুধু অর্থের পিছে ছুটছে। অথচ সন্তান একাকিত্বে ভোগে। অভিভাবকদের যথেষ্ট পরিমাণ সঙ্গ, আদর, সোহাগের অভাবে তাদের মেজাজ-মর্জি বিগড়ে যাচ্ছে। বিষণ্নতা এক সময় তাদের অপ্রতিরোধ্য করে তোলে। ডুবে থাকে ভার্চুয়াল জগতে, টিভি,
কম্পিউটার আর ভিডিও গেমস নিয়ে। তাই তো ওরা হয়ে ওঠে আত্মকেন্দ্রিক। ছোট্ট সোনামণিদের প্রতি অবিচার করার ফলে সুন্দর ভবিষ্যত্ গড়ার জন্য আয় করা অর্থই অনর্থের মূল হয়ে দাঁড়ায়। আসুন আমরা মাঝে-মধ্যেই বাড়ির ছোট্ট সোনামণিদের নিয়ে ছুটে যাই দূরে-বহু দূরে। যেখানে নয়নজুড়ানো প্রকৃতি তাদের আপন করে নেবে। সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে অনুপ্রাণিত হবে। প্রকৃতি তাদের উদার হতে শেখাবে, অনেক বাবা মা একা ঘুরতে যান,ছেলে মেয়েকে নেন না। কিন্তু সবারই বাইরের পরিবেশে যাওয়া স্বাস্থকর।এতে পারিবারিক জীবন হয়ে উঠে প্রানবন্ত ও ভবিষ্যত হয় সম্ভাবনাময়।
বিষয়: বিবিধ
১১৭৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন