যুদ্ধ অপরাধী ইস্যুটা আংশিক বা সম্পূর্ণ বাংলাদেশে মিডিয়ার সৃষ্ট কিনা তা আমাদের ভাবার দাবি রাখে।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২১ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০২:১৫:৪৪ দুপুর

আমরা পৃথিবীতে মানুষ হিসেবে যারা আছি তারা সবাই এক আল্লাহর দাস তা কেউ স্বীকার করুক বা না করুক , ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক সবাইকে তার কাছে ফিরে যেতে হবে।১৯৭১ সালে যারা পাকিস্তানীদের সহযোগী হয়ে এদেশে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করেছিল ও মানুষ হত্বা করেছিল নি:সন্দেহে তারা অপরাধী।সেই অপরাধের বিচার হওয়া উচিত এবং সে যে দলেই থাকুক।শুধুমাত্র যদি বিরোধী পক্ষকে ঘায়েল করার জন্য হয় তাহলে তা গনতান্ত্রিক রীতি হতে পারে না। কিন্তু গত ৪২ বছরে জনমনে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে এ ব্যাপারে।শেখ মুজিবুর রহমান চুক্তি বা অন্য যে কারনেই হোক পাকিস্তানী ১৯৫ জনকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।তিনি তো সাধারন ক্ষমা করেছিলেন দেশের কল্যানের চিন্তা করেই।আর এ থেকে প্রতিয়মান হয় তিনি একজন বড় মাপের নেতাই ছিলেন।কিন্তু যার নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছিল যাকে আওয়ামিলীগ নেতা হিসেবে মানেন তার কথা কি তারা অনুসরন করছেন? তিনি কি কোথাও বলে গেছেন আমি না থাকলেও তোমরা এর বিচার করবে।বিচার করার দায়িত্বতো ছিল তার সরকারের।৭৫ এর পট পরিবর্তনের পর প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গনতন্ত্রের আবির্ভাব ঘটালেন।জামাতের নেতাদের পুনর্বাসন করা হলো বলে যে কথাগুলো আওয়ামিলীগ বলে,সেই তাদেরই দেখলাম ক্ষমতার জন্য আবার জামাতকে সাথে করে ক্ষমতায় এলো।আবার জামাত যখন বিএনপিতে চলে গেল তখন তাদের বিচারের পিছনে লেগে গেল ৪১ বছর পর।এ থেকে কি প্রতীয়মান হয়? এদের দু'দলকেই জামাতের প্রয়োজন ক্ষমতায় আসার জন্য।কাদের মোল্লা আসলেই যুদ্ধ অপরাধী ছিল কিনা? কসাই কাদের আর কাদের মোল্লা আসলেই এক ব্যাক্তি কিনা? যুদ্ধ অপরাধীর বিচার রাষ্ট্র করছে? নাকি কোন রাজনৈতিক সংগঠন করছে? আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল নাকি অন্য কোন ট্রাইব্যুনাল? আব্দুল কাদের মোল্লার একমাত্র সাক্ষী মোমেনা বেগম কে? মোমেনা বেগম কি সাক্ষী দিতে গিয়েছিল না যায় নি? এই প্রশ্নগুলো যখন উঠেছে তখন এই প্রশ্নগুলোর নিস্পত্তি না করে একজন মানুষ কিংবা অমানুষের মৃত্যুদণ্ডে শাহবাগে আমাদের উল্লাস আর যাই হক কোনদিন প্রগতিশীলতা অথবা মানবতা কোনটাই বহন করে না।গনজাগরনের উপরই যদি বিচারবিভাগ নির্ভর করে বা সরকার সংবিধান পরিবর্তন করে তাহলে তো ভবিষ্যত প্রজন্ম তথা জাতির জন্য এ এক ভয়ংকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।এই যুদ্ধ অপরাধী ইস্যুটা বাংলাদেশে মিডিয়ার সৃষ্টি কিনা তা জাতির ভাবার প্রয়োজন রয়েছে।

মিডিয়া বার বার বলছে যে এই হল কাদের মোল্লা, পাক বাহিনীদের সাথে একসাথে মিশে সে নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে।যে ছবিটি দেখিয়ে তারা বলছে তার বয়স কত হতে পারে আনুমানিক আর তখন বর্তমান কাদের মোল্লার বয়স কত ছিল অন্তত এইটুকু খোজ নিলেও মানুষ জানতে পারত কে আসলে কসাই কাদের আর কে কাদের মোল্লা। আর এই লোকটাই যে আজকের কাদের মোল্লা তার কোন উপযুক্ত প্রমান আমাদের হাতে আছে কি? যে মিডিয়াগুলো খেটে খাওয়া মানুষের কথা বলে না, যেই মিডিয়া গুলো রাষ্ট্র আর বিদেশি বেনিয়াদের দালালি করে, যেই মিডিয়া মানুষ হত্যা করে সেই মানুষের মৃত্যু নিয়ে ব্রেকিং নিউজ দেয় সেই মিডিয়ার উপরে আস্থা রেখেই আজকে আমরা কাদের মোল্লাকে কসাই কাদের বানিয়েছি কিনা। রায়ের পর যখন ভি (V) সাইন দেখিয়েছিল কাদের মোল্লা সেটিকে আমাদের মিডিয়া এমন ভাবে প্রকাশ করেছে যে আমাদের তরুনপ্রজন্মের গোপন ইন্দ্রিয়ে চেতনার আগুন জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। আবার যখন জেলগেটে দেখা হবার পরে কাদের মোল্লার স্ত্রী ভি (V) সাইন দেখিয়েছিল তখন মিডিয়া এমনভাবে প্রকাশ করেছে আমাদের চেতনা তখন গোপন ইন্দ্রিয় থেকে জ্বলে পুড়ে কাপড় চোপড় সব পুড়িয়ে বেরিয়ে আসছে। অথচ কাদের মোল্লার স্ত্রী যখন ভি

(V) সাইন দেখিয়েছিল সেটা ছিল নিজের দিকে ফেরানো। আর এই ভি সাইন নিজের দিকে ফেরানো মানে হল প্রচলিত আইনের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন। কাদের মোল্লার স্ত্রী নিজের দিকে ভি সাইন দেখাবেন তথা আইনের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করবেন এটাই কি স্বাভাবিক নয়? অথচ আমাদের মিডিয়া বলেছে এটা নাকি বিজয় সূচক, আর আমরা সেটাই বিশ্বাস করে আরও খেপে উঠেছি। এখান থেকে পরিষ্কার হল সবার উপরে মিডিয়া। মিডিয়া বস্তুত এই দেশের কতিপয় বেনিয়ার দখলে যারা সব সময় শাসকগোষ্ঠীর ছায়াতলে বসে রস আস্বাদন করে। মিডিয়াকে আজ আমরা প্রভু বানিয়ে দিয়েছি, তারা যা-ই বলে তা-ই আমরা বিশ্বাস করছি।আমরা সত্যকে বিশ্বাস করতে চাই।আমরা কি সঠিক খবর নিয়েছি বা পর্যালোচনা করেছি, কাদের মোল্লা কি আসলেই কসাই কাদের , যাচাই বাছাই না করেই আমরা আজ তার মৃত্যুতে উল্লাস করছি। জয় বাংলা শ্লোগান দিচ্ছি। কাদের মোল্লা কি বলতে চেয়েছিল? তাও জানতে চাই নি। আজ হোক কাল হোক আমরা কি পারবো এই দায় এড়াতে? মিডিয়ার মুখো মুখি না হয়ে, রাষ্ট্রীয় রাজনীতির তৈরি দলিলে নির্ভর না করে নিজেদের দায় থেকে একটু খোজ নিয়ে দেখতে পারতাম কসাই কাদের আসলেই কাদের মোল্লা কিনা। যদি আমরা সত্যিকারের মানুষ হতে পারতাম তাহলেই এই দায়টা থাকতো যেই দায় থেকে নিজেদের মুক্তির কথা ভাবতাম। একজন কাদের মোল্লাকে অথবা একজন কসাই কাদেরকে ফাঁসিতে ঝুলাতে গিয়ে আমরা যে নাটক দেখলাম তা কতটা সত্য আমরা জানি না একমাত্র আল্লাহ ছাড়া।আজ কোন রাষ্ট্র কিংবা কোন আদালত কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয় নি।হয়তবা তাকে ঝুলিয়েছে প্রতিহিংসা। একটা স্বাধীন দেশের রাষ্ট্র ব্যবস্হা আন্তর্জাতিক কোন আবেদনকে ভ্রুক্ষেপ করছে না।পৃথিবীর একটি ছোট দেশ হলেও আন্তর্জাতিক অংগনে আমাদের অনেক সম্মান রয়েছে।একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। এটা কোন ধরনের প্রগতিশীলতা বহন করে আমার জানা নেই। তবে এটা যে নিছক একটি অবিবেচনা সেটা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। কাদের মোল্লা আসলেই যুদ্ধ অপরাধী কিনা আমরা এখনো জানতে পারি নি। কিন্তু মিডিয়া আমাদের মাথায় ঠিকই ঢুকিয়ে দিয়েছে এই সেই কাদের মোল্লা কসাই কাদের যে হত্যা, লুটপাট, ধর্ষণ সহ নানা অপকর্ম করেছে।

একজন মানুষ ভাল কি মন্দ তা তার সমাজ থেকে ও প্রতিফলিত হয়।তার বয়স পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ১৯৭১ সালে তার বয়স ১৮ বা ২০ বছর।অজপাড়াগাঁয়ের একটি ছেলের পক্ষে এ কাজ গুলো করা হলে তার এলাকায় প্রমান থাকবে নিশ্চই।যে প্রমানগুলো এসেছে তা যদি অন্যের দোষ তার ঘাড়ে চাপানোর মত হয় তাহলে তো হয়েছে এক জঘন্য অন্যায়। আমরা অনেকে যেখানে বেড়ে উঠেছি সব মানুষই আমাদের জীবন সম্পর্কে ভাল করে জানে।আর তার পরিবার বা তার আশে পাশের লোকজন এতগুলো বছর এ চরিত্রগুলো কেউ অনুধাবন করতে পারলো না অথচ তাকে অন্য কারো কর্মের বলি হতে হলো কিনা সেটা ভাবার প্রয়োজন রয়েছে।তার ফাঁসির সময় ঘনিয়ে আসলেও সে ছিল অত্যন্ত দৃড়।আল্লাহ ছাড়া কারো উপর নির্ভরশীলতার ছাপ ছিল না।যদি আসল কাদেরের বিচার না হয়ে অন্য একজনকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়ে থাকে তাহলে ক্কেয়ামতের দিন তো এই বিচারক সহ অন্যদের অনন্তকালের জন্য ঝুলতে হবে তাতে সন্দেহ নেই।সূরা ফাতিরের ১০ আয়াতে আল্লাহ বলেন,' যে কেউ মান সম্মান চায় সমস্ত সম্মান তো আল্লাহর।তাঁরই দিকে উত্থিত হয় সমস্ত বাক্যালাপ ও পূর্নময় কাজ।তিনি তার উন্নতি সাধন করেন।আর যারা মন্দকাজের ফন্দি আঁটে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি আর ফন্দি তা-ব্যার্থ হবেই।"

এটা যদি একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হয়ে থাকে বা একটি জুডিশিয়াল কিলিং তাহলে কাদের মোল্লা আর যাই হোক সে যদি যুদ্ধ অপরাধী না হয়ে থাকে তবে সে তো ইসলামের পক্ষেই কাজ করছিলো যা থেকে মানুষ কিছুটা হলেও উপকৃত হতো।যাদের স্বাধীনতার নামে উল্লাস করতে দেখা যায় তারা তো ধর্ম কর্ম থেকে অনেক দূরে।প্রগতিশীলতার নামে যারা কথা বলেন তাদেরই দেখেছি যত রকম পাপাচারে লিপ্ত হতে।এরা সমাজে দিব্যি ব্যাবিচার করে বেড়ায়,ঘুষ খেয়ে ৪/৫ বছরের মাথায় টাকার পাহাড় গড়ে তোলে তাদের কোন বিচার করতে সরকার আগ্রহী হয়ে উঠে না।আর এরাই নিজেদের প্রগতিশীল বলতেই সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কিন্তু কোথায় সেই প্রগতিশীলতা, কোথায় সেই মানবতা। তাহলে কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে কি প্রমান পেয়েছ তোমরা? কোন প্রমানের তাগিদে আজ তোমরা বলছ কাদের মোল্লা যুদ্ধঅপরাধী? আজ শাহবাগে আমরা যারা উল্লাস করছি তাদের ৯০ ভাগের জন্ম একাত্তরের অনেক পরে। তার মানে আমরা চোখে দেখিনি। "যে জিনিস চোখে না দেখে বিশ্বাস করবো সেটা হবে বড় মূর্খতা" তাহলে আজ কেন বিশ্বাস করলে কাদের মোল্লা যুদ্ধ অপরাধী? এটা তো দেখিনি? "তথ্য, দলিল, ইতিহাস আর মিডিয়া। তথ্য, দলিল, আর ইতিহাস এই তিনটা জিনিসকে পুজি করেই বর্তমান শাসক গোষ্ঠী আজকে সহিংসতার নারকীয় দৃশ্যে পাল্টাপাল্টি অভিনয় করছে। অপরদিকে যুদ্ধ অপরাধী বিষয়টি তৎকালীন স্বাধীন বাংলার রাষ্ট্রপতি থেকে মীমাংসিত একটি বিষয়। আর মীমাংসিত বলেই মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটি একসাথে যুদ্ধ অপরাধী দলটির সাথে সম্মিলিত হয়ে রাজনীতি করেছে। ইতিহাস বদলে যায়, মানুষের হাতে বদলে যায়। সেই বদলানোর পালা বদলেই হয়তোবা আজকের এই কসাই কাদের এর সৃষ্টি। এই যুদ্ধ অপরাধী ইস্যুটা আংশিক বা সম্পূর্ণ বাংলাদেশে মিডিয়ার সৃষ্টি কিনা তা নিশ্চই আগামী প্রজন্মকে ভাবতে হবে।

বিষয়: বিবিধ

১৫৮১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File