বন্ধুত্বের পরশে ছুঁয়ে যায় হৃদয়।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৯:৪৮:৪৩ রাত
'সৌন্দর্য আবিষ্কারের অর্থই হলো ভলবাসাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখা' কবি মতিউর রহমান মল্লিকের কবিতার এ পঙতির উপর ভালবাসার আর রুপ থাকতে পারে বলে আমার মনে হয় না।যার সাথে যার সম্পর্ক আছে তা হৃদয়ে উঁকি দিবেই।ভালবাসার মাঝে বেঁচে থাকার একটা অবলম্বন খুঁজে পাওয়া যায়।যদিও আজকের যান্ত্রিকতা কেড়ে নিছ্ছে আমাদের ভালবাসার মানুষগুলোকে।আমি যখন নিজের জীবনের কথা ভাবি, নিজেই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে নিজের অফিসের জানালায় দুর দুরান্তে শূন্যে চোখ মেলে তাকিয়ে থাকি।আমি মুলত: তখন কিছুই দেখি না।আমার চোখের সামনে ঘুরে বেড়ায় অস্ংখ্য মানুষ।কলরব করে , উৎসব করে,হাসি তামাসায় ভরে উঠে,আবার কখনো মৃতের খবরে কান্নায় ভে্ংগে পড়ে।আমার ভাবনা ভালবাসাটাই সবার উপরে।পিছনে তাকিয়ে হতবাক হয়ে যাই,কতগুলো বছর পার করে দিলাম।মনকে প্রশ্ন করি কিন্তু মন সায় দেয় না,বলে এই তো সেদিন বন্ধু্ত্বের বাঁধনে বাঁধা ছিলে।আসলে এই যে আমাদের হৃদয় কারো কাছে পানির মত তরল,কারো কাছে শক্ত পাথরের মত আবার কারো কাছে,"হৃদয় হলো আকাশের মত কাউরে দিয়ে শেষ করন যায় না" ইদানী্ং বন্ধুদের সাথে আলাপ করে মনে হয় সেই বন্ধুত্ব আর নেই।এমনকি ঘরের কাছে বন্ধু থাকলেও একেবারে নির্জিব।অথচ রাসূল সা: বলেছেন, একদিন জিবরিল আমিন আসলেন আর প্রতিবেশি সম্পর্কে বলতেই থাকলেন যেন প্রতিবেশিকে আমার ওয়ারিশ বানিয়ে দিবেন।আর একটি বর্ননায় এসেছে, ডানে বামে সামনে পিছনে ৪০ টি ঘর পর্যন্ত প্রতিবেশির হক্ক রয়েছে।
কবি সাহিত্যিকদের যত বই পড়েছি , আর আমার ছোট খাট লিখা যখন শুরু করেছি , আমার মনে হয়েছে প্রতিটি লেখকই চির নবীন হৃদয়ের দিক থেকে।আমার ক'দিন থেকে অতীত স্মৃতি গুলো এমন করে নাড়া দিতে থাকলো যে প্রায়শই ঘুম ভে্ংগে যায়।কি চমৎকার স্মৃতি বিজড়িত জীবন।আমাদের ক'জনের বন্ধুত্বের গভীরতা তৈরি হয়েছিল স্কুল থেকে।দিনের অধিকা্ংশ সময় কেটেছে একসাথে।আমাদের সময়ে গ্রামের রাস্তাগুলো ছিল ভা্ংগাচুরা।কোথাও সোজা রাস্তা,কোথাও সর্পিল বা কোথাও ভাংগা পানিপথ।রাস্তার দু'ধারে সবুজ ধান ও পাটের সমারোহ, কৃষ্নচূড়া ,কড়াই গাছ,আম কাঁঠাল ও কলা গাছ।আবার মাঝে মাঝে সবুজ তরি তরকারির গাছ।আমাদের আছে ছ'টি ঋতু।এই ঋতু দু'মাস পর পর পালা বদল করে নিয়ে আসে প্রকৃতির বিভিন্ন রুপ।সে জন্য আমাদের কৃষকেরা ফলায় হরেক রকমের ফসল।গ্রীষ্মের দাবদাহ শেষ হলেই বর্ষা নিয়ে আসে অঝোর ও আঁধারঘন বৃষ্টি বাদল,শরতের মেঘের ভেলা ও কাশবন মনকে উদাস করে,হেমন্তের পাকা ধান নিয়ে আসে গ্রাম বাংলার কৃষকের নবান্নের উৎসব,শীতে পিঠা পুলি , খেজুরের রস ও সবুজ তরি তরকারি আর বসন্তে শীতের কায়ক্লিষ্ট মানুষ ও প্রকৃতির পুনর্জীবন আমদের উজ্জিবিত করে নব উজ্জিবনে।
বিশেষ করে বর্ষাকালে মাইলের পর মাইল হেঁটে যাওয়া ছিল কঠিন।রাস্তায় পানি আর কাদা। কোথাও পুল ভা্ংগা,কোথাও অথৈ পানি। তার পরও একদিন স্কুলে না যেতে পারলে মন খারাপ হয়ে যেত।আমরা যত আড্ডাই দিতাম , পড়ার সময় পড়াশুনা করতাম।আর গ্রুপ ষ্টাডি ছিল আমাদের নৈমিত্বিক পড়াশুনার অ্ংশ।দূরন্ত শৈশবে নির্ঘুম দিন রাত্রিতে আমরা "ক" জন ঘুরে বেড়িয়েছি গ্রামের পর গ্রাম।পড়ার ফাঁকে ফাঁকে ঘুরে বেড়িয়েছি আত্মীয় স্বজন ,পাড়া প্রতিবেশি ও বন্ধুদের বাড়ি।কখনো মাছ ধরা,কখনো গাছ থেকে ফল পেড়ে খাওয়া,কখনো ফুটবল , ভলি বল, হা ডু ডু ও কানামাছি খেলা আবার মাঠে বসে ফুটি - তরমুজ খাওয়া।আমার দু'বন্ধু এরফান ( এখন সুপ্রিম কোর্টের উকিল), শরিফ ( এখন লে.কর্নেল) আরো "ক" জন আড্ডা জামাতাম দীর্ঘ সময় ধরে।রাতের আঁধারে সর্পিল রাস্তা ধরে কখনো একা আবার কখনো বন্ধুরা মিলে যেতাম গ্রাম্য বাজারে আবার কখনো বা যাত্রা পার্টিতে।
সেকালে আজকের মত মিডিয়া ছিল না।অনেক বিজ্গ লোকেরাও তখন যাত্রা পালাতে যেত কারন টিভি ছিল না আর ছিল না তড়িৎ ব্যাবস্হা-ও।আমার পড়ার ঘর ছিল আলাদা।বাবা ছিলেন চরম কনজারভেটিভ।রাতে বন্ধুদের সাথে যেতে হলে নিতে হতো বুদ্ধিমত্তার সাথে পদক্ষেপ যাতে বাবা বুঝতে পারে আমি ঘরেই আছি।এটা ছিল নিতান্তই শৈশবের দূরন্তপনা যা থেকে খুব কম বাবা মা রেহাই পায়।বেডে দুটো বালিশ সমান্তরাল রেখে তার উপর কম্বল মুড়িয়ে বাইরে থেকে খিড়কি দিয়ে চলে যাওয়া।অবশ্য এ কাজ বেশি দিন করা যায় নি,ধরা পড়তে হয়েছিল একদিন যেদিন আসতে দেরি হয়েছিল ও ফজরের নামাজের ওয়াক্ত হয়ে গিয়েছিল।কখনো এরফানের বাসায়,কখনো শরিফের আবার কখনো আমার বাসায় রাত যাপন।আমার বাবা মা'কে হারিয়েছি ১৫ বছর হলো,শরিফের বাবাকে হারিয়েছে মা এখনো বেঁচে আছেন রোগ শোক নিয়ে,এরফানের বাবা আমাদের শিক্ষক ছিলেন তিনিও চলে গেলেন তবে মা বেঁচে আছে।কি চমৎকার ছিল রাত্রগুলো? চাঁদনি রাতে আমরা একসাথে রাতের খাবার খেয়ে গল্প করতাম।আমাদের তিন জনের বাবাই ছিল শিক্ষক।চমৎকার কথা বলতেন।ভবিষ্যতের কথা শুনাতেন ও দিক নির্দেশনা দিতেন কি করে ভাল মানুষ হওয়া যায়।যদিও তাঁরা আজ কাছে নেই তাঁদের কথাগুলো স্মৃতিতে ভাস্মর হয়ে আছে।তাঁদের কথার উপাদানগুলো আকাশচুম্বি আলোর সরলরেখায় রেখায়িত করেছে আমাদের জীবনকে।
আমরা যখন অষ্টম শ্রেনী অতিক্রম করলাম তখন আমাদের আর একটি গ্রুপের সাথে মিলন হয়।আমি(খোকন),শরিফ , এরফান, মুজিব, শাহআলম(আল্লহু ইয়ার হামু), কামাল (আল্লহু ইয়ার হামু), মোহাম্মদ হোসেন, রহিম,কান্চন ,আব্বাছ, শওকত মুনির, বিলাল , মোস্তফা কামাল,টেলু ,আহসান হাবিব,সোহরাব ,লোকমান,দুলাল,শহিদুল্লাহ,হেলাল,মোফিজ ও পশুমামা।বান্ধবীদের মধ্যে ,মিলন,রাজিয়া হেলেন,মতি,ফেরদৌসি প্রমুখ।জুনিয়রদের মধ্যে ডেইজি, রাহিমা,দীপা (এখন রহিমের জিবন স্ংগিনি) শিপন,রুনু,সীমা,ঝরনা,মুন্নি,সুমী,লিপন,পান্না আরো অনেক।কাছাকাছি সিনিয়রদের মধ্যে ,রোজি ,কুসুম ,নায়লা ও নিলু আপু।আমাদের সময়ে বন্ধুত্বের এক মহান মর্যাদা ছিল।আমাদের ছিল সম্মান ও ভালবাসার সম্পর্ক।আমাদের এক বান্ধবী ছিল মিলন যা আগে উল্লেখ করেছি,একদিন আমাদের না দেখলে তার দিন ভাল কাটতনা।আমরা একটু আড্ডা প্রবন ছিলাম আর তা ছিল গঠন মুলক। আর সে জন্য সবাই জীবনে প্রতিষ্ঠা পেয়েছি।আজ সামান্য ক'জন ছাড়া কাউকে মনে করতে পারছিনা। অবশ্য এর একটা কারন ও রয়েছে।৮৭ সালের পর থেকে কারো সাথে দেখা না হওয়া আর তার সাথে বিদেশে অবস্হান।এ যে আড্ডার কথা বললাম, এটাকে অনেকে খারাপ দৃষ্টিতে দেখে কারন হলো অধিকা্ংশ ছেলেরা একে ডেস্ট্রাকটিভ ওয়েতে নিয়ে যায়।এই আড্ডা শব্দের ইতিহাস অতি প্রাচীন।এর উৎপত্তি দ্রাবিড় অড্ডা শব্দ থেকে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আড্ডার একজন বিশেষজ্গ ছিলেন।তিনি ৩০-৪০ এর দশকে অধ্যাপনা করতেন।দেশ বিভাগের পর তিনি দিল্লিতে চলে যান।সেখানেও তার ভাল লাগেনি।তিনি সেখান থেকে একটি চাকুরি নিয়ে নিউইয়র্ক চলে যান এব্ং কিছুদিন পর মারা যান।তিনি একটি বিখ্যাত তত্ব রচনা করেছিলেন তা হলো ভ্যাগলোজি বা ভ্যাগ জিনিসের বিজ্ঞান।ভ্যাগলোজির বিষয় হলো এতে বাক্য থাকবে কিন্তু কোন অর্থ থাকবে না এব্ং অর্থহীন ভাবে বক্তৃতা দিতে হবে।আমাদের বন্ধু এরফান ও তাই, কথা কোথা থেকে শুরু হলো আর কোথায় শেষ হবে বুঝা আমাদের জন্য কঠিন হতো। অবশ্য এখন সুপ্রিম কোর্টের আঙিনায় বড় একজন উকিল।৭৯/৮০ সালের দিনগুলোর কথা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।আসলে এ বয়সটা এমন যে খুব কম ছেলে মেয়ে বুঝে উঠতে পারে। এ সময় ছেলেময়ে হোছট খেতে পারে যদি পিতামাতার কেয়ার না থাকে।
যৌবনের প্রারম্ভটা অনেকের জীবনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।আর ২৫ বছর পা দেয়া মানে চরম একটা সময় দাম্পত্বজীবনের প্রাপ্তির।যখন দায়িত্ব বেড়েযায়,দাম্পত্বজীবনের প্রাপ্তি ও কমে যায়।অবশ্য অভাবগ্রস্ততা না থাকলে এ প্রাপ্তির সম্ভাবনা হতে পারে ধীর্ঘ হতে ধীর্ঘতর।যাই হোক আমাদের কিছু সিলেকটেড বাসা ছিল যেখানে বেড়াতে যেতাম।মতিন স্যার (এমপি) এর বাসা, হেলেনদের বাসা,রহিমদের বাসা, দীপাদের বাসা,টেলুদের বাসা , মুনিরদের বাসা ও রুনুদের বাসা।শালীনতার অভাব ছিলনা আমাদের যদিও কারো কারো কদর ছিল বেশি যেমন: হোসেন , রহিম ও শরিফ।এটা ওরাই ভাল জানে।সারাদিন ঘুরেও কোন ক্লান্তি আমাদের স্পর্শ করেনি।আজ ধীর্ঘ পরেও মনে হয় দিনগুলো শুধু অতীত।একজন লেবানিজ ইন্জিনিয়ার এর সাথে উঠছিলাম ১৭ তলায়।তিনি এক দৌড়ে উঠে গেলেন। আমরা ক'জন ৬/৭ তলায় পড়ে থাকলাম।যখন উপরে উঠলাম তিনি বললেন, বলতো আমার বয়স কত।আমরা বললাম আপনিই বলুন।তিনি বললেন আমার বয়স ৭১, আরো বললেন কখনো বয়সকে মাথায় নিবে না তাহলে তুমি দুর্বল হয়ে পড়বে।আমার মনে পড়ে গেল কবি নজরুল ইসলামের যৌবনের গানের পঙতি গুলোর কথা ," বহু যুবককে দেখেছি যাদের যৌবনের উর্দির নিছে বার্ধক্যের কন্কালমৃত্যু আবার বহু বৃদ্ধকে দেখেছি যাদের বার্ধক্যের জীর্নাবরনের তলে মেঘলুপ্ত সূ্র্যের মত প্রদীপ্ত যৌবন" বিশ্ববিদ্যলয়ে ভর্তি হয়ে গেলাম। আবার কে্উ কেউ ঢাকার বাইরেও ছিল তবে ছুটিতে একসাথ হওয়া ছাড়া উপায় ছিলনা।সপ্তাহের শেষে ঢাকার আত্মীয় স্বজনদের বাসায় যেতাম দল বেঁধে।আমার বন্ধু রহিমের বাসা ছিল কমন।খালম্মার রান্না যে কত খেয়েছি।কনাদের বাসা। এখন আমাদের বন্ধু কাশেমের শশুর বাড়ি।কনার আম্মা অনেক খাবার ডিসপ্লে করতো যে আমাদের প্রায়ই যাওয়ার ইছ্ছে জাগতো।তবে এরফানের অপেক্ষা কনাকে বিমর্ষ করলেও দু'জনের জন্যই মঙল বয়ে এনেছে।
আমাদের সময় ঢাকার পরিধি আজ যেমন এমন ছিল না।আমাদের বিচরন ছিল পুরনো ঢাকা,ধানমন্ডি,মোহাম্মদপুর,মিরপুর,বনানি,গুলশান,তেজকুনিপাড়া,শাহজাহানপুর,গোরান,খিলগাঁও,আজিমপুর ।এখনকার মত মোবাইল সবার কাছে ছিল না। খুব রেয়ার যাদের কাছে ছিল আভিজাত্য মনে হতো।তবে আমাদের কয়েকটি সেন্টার ছিল। টি এস সি , ঢাকা মেডিকেল , পিজি হাসপাতাল , নিউমার্কেট ইত্যাদি।সেদিন আর এ দিনের পার্থক্য মাএ ৩০ বছর। এখন সবাই উচ্চ পদে আসীন দু'একজন ছাড়া।বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ আজকের মত ছিলনা।তখনো রাজনীতি ছিল।বড়রা ছোটদের স্নেহ করতেন আবার ছোটরাও সম্মান করতো।জুনিয়র ও সিনিওরের মধ্যে ছিল ভালবাসার সম্পর্ক যদিও বিরোধি মত ছিল।রোকেয়া হল ও শামসুন্নাহার হলের সামনে আমাদেরও আড্ডা ছিল কিন্তু ছিল শালিনতা ও বন্ধুত্বের বিনিময়।আজ এতকাল পর এক বন্ধু তার দাদশী মেয়েকে সাথে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরতে গিয়ে প্রশ্নের সম্মুখিন হয়েছে , বাবা এখানে অশ্লিলতা কেন? কি উত্তর দিবে বাবা মেয়েকে। আমদের বন্ধু কান্চন আসতো চিটাগা্ং থেকে।তার গান আমাদের মনের গহীনে তোলপাড় সৃষ্টি করতো।আমার আর এরফানের মধ্যে স্বভাবের বৈপরিত্ব থাকলেও আমরা ছিলাম শিক্ষকের ছেলে এব্ং ছোট বেলার বন্ধু।দু'জন একসাথে থাকতাম। বুয়েটে আহসানউল্লাহ হলের কেন্টিনে বিকালে নাস্তা করতে যেতাম কারন ওখানকার আলুর ছপ ও ছোলা আমাদের বেশ পছন্দের ছিল। আমাদের দোস্ত হোসেনকে কখনো পেতাম না।এমনকি সপ্তাহের শেষেও খোঁজ নিতে গেলে অন্য বন্ধুরা বলতো , উনারতো একটিই যায়গা।অবশ্য মনিকা ভাবিকে জীবন স্ংগী পেয়ে হোসেন জীবনকে স্বার্থক করেছে।রহিমেরও একই দশা।আমার বড় মেয়ের বিয়েতে দীপাকে স্মরন করতেই বলে উঠলো আপনার এত কিছু মনে আছে। আমরা তো অনেক কিছু ভুলেই গিয়েছি।বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে বাটার সিগনালে ইকবালদের বাড়িতে আমরা একটা ফ্লাট ভাড়া নিয়েছিলাম।সেখানে সামস ভাই ( বিসিএস ৮৬ ফরেন এ্যাফেয়ারস), সিদ্দিক ভাই( বিসিএস ৮৬ পুলিশ) ,সেলিম রেজা ভাই( বিসিএস ৮৬ এপিএমজি), কচি - লেকচারার) একসাথে থাকতাম আর বাসুদেব ও ভোলানাথ ভা্ই (বিসিএস এ্যাডমিন) আসতেন মাঝে মাঝে।রাতে সবাই একসাথ হতাম। মনে হতো পুরো পৃথিবী আমাদের কাছাকাছি।সূধু বিসিএস পরিক্ষা নিয়েই আলোচনা।আমি ও এরফান মাঝে মাঝে পুরনো ঢাকায় চলে যেতাম।ধোলাই খাল পাঁচভাই ঘাট লেনে থাকতো আমাদের বন্ধু মুনির , রুহুল আমিন, জহির আমিও কিছুদিন ছিলাম সেখানে।ওরা মিলে নারিন্দা মোড়ে নাস্তা খেতে যেতাম।এই রেষ্টুরেন্টকে আমরা ফয়োষ্ট নাম দিয়েছিলাম কারন অনেকটা ফয়োষ্টের মতই।ঘুরে বেড়াতাম লক্ষিবাজার,রায়সাহেব বাজার ,কোর্টকাচারি,সদর ঘাট।সদর ঘাটে রাতের বুড়ুগ্ংগার পাশে বসে কাটিয়ে আসতাম ধীর্ঘ রাত।ভরা নদি লন্চ , বার্জ আসছে যাছ্ছে।পানির ছলাৎ ছলাৎ শব্দ থেকে কানে বেজে আসতো এক অজানা সুর।আজকাল কোথায় সেই পানি আর কোথায় সেই বুড়িগ্ংগা।এখন ময়লা আবর্জনা আর নদি দখল হয়ে স্ংকীর্ন হয়ে আছে যা দেখলে অশ্রু ঝরতে বাকি থাকেনা।
এক ঈদের ছুটিতে সবাই ঠিক করলাম হাজিগন্জ ও আমাদের চির ভালবাসার শহর চাঁদপুরে যাব। সবাই সবার মত করে হাজিগন্জ গেল। আমরা ক'জন আমি , এরফান ও শরিফ একসাথে গেলাম ও সকাল এগারটায় পৌঁছালাম।আমরা কৃতজ্গ হাজিগন্জে দুই বন্ধুর কাছে।সব সময় মুনির ও বিলালকে পাই। যেখানে থাকুক কল করলেই হাজির। এমন বন্ধু পা্ওয়া মুশকিল।আমাদের অনেক বন্ধুই প্রতিষ্ঠিত। আমারা কি ভেবে দেখেছি এ দু'জনের কথা। তারা তো মুখ ফুটে কখনো বলে না অথচ আমরা সবাই মিলে ওদের হেলপ করতে পারি যদিও ওরা অভাবগ্রস্ত নয়।তবে আমাদের তুলনা্য় তো কিছুটা খারাফ।মুনির কি আজ হতে পারতো না বড় কিছু।সে তো প্রাইমারি স্কলার।অবশ্য তার ইমোশনটা বেশি আর এ কারনেই বড় কিছু হতে না পারলেও এমপি থেকে শুরু করে সবার ই কাজে লেগে আছে। মতিন স্যার ইছ্ছে করলে কি পারতো না ওকে উপজেলায় দাঁড় করে দিতে।অথচ মুনিরের ব্যাপারটা ছিল এ রকম, গ্রামে যেমন মাঠের আইলে আধাপাকা ধান পড়ে থাকে আর মানুষ এর উপর হেঁটে যায়,ধানগুলোকে আইল থেকে সরিয়ে হাঁটেনা , এতটূকুই দরকার ছিল তার তত্তাবধান।সে যেমন বুঝতে পারেনি অন্যরা ও বুঝানোর চেষ্টা করেনি।তার পর ও খোঁজ নেয় ,কখন আসবি ,আমাকে জানিয়ে আসিস,ভাবিকে বলিস ওদের নিয়ে যেন বেড়িয়ে যায়।জীবনে বন্ধু থেকে তো মানুষ এতটুকুই আসা করে।
হাজিগন্জে সবাই একসাথ হলাম কি যে আনন্দ। রয়াল রেষ্টুরেন্টে বসে চা নাস্তা ও কুশল বিনিময়।তার পর একে একে সব বাসায় গেলাম। প্রথমে রহিমদের বাসায় ,পরে মতিদের, কলিমুল্লাহ খালুর বাসায় (শওকতের খালু), মতিন স্যার এর বাসা ও মুনিরদের বাসা ,নজরুল ডাক্তার এর বাসা ও বজলু স্যার এর বাসায় (আল্লাহু ইয়ার হামু) গেলাম।বান্ধবিদের অনেকে বিয়েতে আবদ্ধ হওয়ায় খুঁজে পাওয়া যেতো না।তবে একটা চমৎকার কাহিনী জড়িয়ে আছে রোজি আপুর সাথে।আমদের সিনিয়র আপুদের চিনতে পারা খুবই মুশকিল।আমি ছুটিতে গেলে আমার অনেক আত্মিয়াদের বাচ্চাদের চিনতে কষ্ট হয় যদিও ছোটবেলা্য় দেখছি।আমি জেদ্দাহ আসার কিছুদিন পর এক অনুষ্ঠানে আমার গৃহিনি রোজি আপুকে পরিচয় করে দিয়ে বলেন, আন্টিকে চিন তোমার এলাকার। আন্টি বলার কারন হলো আমার শ্বাশুড়ি মায়ের সাথে রোজি আপুর পরিচয় আগে আর আপুও আমার শ্বাশুড়ি মা কে ভাবি বলেই ডাকেন।তার পর তো বাসায় আসা যাওয়া। আপুর রান্না খাওয়ার জন্য মাঝে মাঝেই যাওয়া হয়।আর সালেহ ভাই(বাবুল) ও চমৎকার লোক। সব সময় হাওয়ার জন্য তাড়া করেন।বাসা যদিও কাছে সময়ের অভাবে কমই যাওয়া হয়।তবে সৃতি ধরে রাখার একজন আছে আর গেলে হাজিগন্জে আছি বলে মনে হয়।রোজি আপু ডেইজির বড় বোন।
অনেক ঘুরাগুরি করে মুনিরের বাসায় গিয়ে গোসল করে রেষ্ট নিলাম।পরের দিন সকালে আমাদের কয়েকজন ট্রেনে চাঁদপুর গেলাম। সেখানে আবার আমাদের কিছু বন্ধু অপেক্ষা করছিল।আমরা অষ্টম শ্রেনী পেরুতেই চাঁদপুরের সাথে পরিচিত।আমাদের কেউ কেউ চাঁদপুরে পড়াশুনা করেছি।আমরা অনেক বন্ধু ৮০ সালের দিকে নদীর ধারে বেড়াতে যেতাম।কোর্টপাড়া, কলেজপাড়া, ছায়াবানি ,চিএলেখা সিনেমা হল এলাকা , কোর্ট ষ্টেসন এলাকা , পুরান বাজার ঘুরে বেড়াতাম। বিশেষ করে ওয়ান মিনিটে চা না খেলে আমাদের ভাত হজম হতো না।আমরা দশটায় পৌঁছলাম কোর্ট ষ্টেসনে।পুরনো রেওয়াজে ওয়ান মিনিটে চা খেলাম।আমাদের বন্ধু রশিদ এলো।অনেকদিন পর দেখা তার ছোখ কোটরে ঢুকে গেছে।জিগ্গেস করতেই বললো শরীরটা ভাল যাছ্ছে না অনেকদিন থেকে।তার পর আত্মীয় ও বন্ধুদের বাসায় দেখা করলাম।দুপুর গড়িয়ে বিকেলের সূর্যটা লাল হওয়ার অপেক্ষায়।দ্রুত কয়েকটা রিকশা ডাকলাম। ‘মামা, কোথায় যাবেন?’ রিকশাওয়ালারা জিজ্ঞেস করলেন। ‘নদীর ঘাটে যাব, মেঘনা নদী।’ ভাড়া জিজ্ঞেস না করেই রিকশায় চেপে বসলাম। যেতে যেতে রিকশাওয়ালা মুনির বললেন, ‘এইখানে শুধু মেঘনা নদী না আরও দুইটা নদী আছে। পদ্মা আর ডাকাতিয়া নদী। তিনডা তিন দিক থেইক্কা কোড়ালিয়ার মুখে আইসা মিলছে। এ জন্যই এইখানে এত ইলিশ মাছ আসে!’ দেখতে দেখতে আমাদের রিকশা চাঁদপুর বড় স্টেশনে এসে থামল।বিকেলের সূর্যাস্ত দেখতে শত শত মানুষের ভিড়। সূর্যাস্তের সঙ্গে খাঁজকাটা মেঘের মিতালি সৃষ্টি করেছে অসাধারণ এক সৌন্দর্যের। চাঁদপুরের বড় স্টেশনের বিকেলের এই গোধূলিবেলা হার মানাবে অনেক সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্যকেও। দূরে দেখা যাচ্ছে চর রাজরাজেশ্বর। নৌকা আর ট্রলারে চড়ে মানুষ ছুটে যাচ্ছে সেখানে। চাঁদপুর বড় স্টেশন থেকে রাজরাজেশ্বর চরে যেতে সময় লাগে ৩০ মিনিট। নদীতে নৌকায় করে ঘুরে বেড়ানো আর রাজরাজেশ্বরের বালুচরে হেঁটে চলা যেন সমুদ্রসৈকতের তৃপ্তি এনে দেয়।
ব্রিটিশ শাসনামলে চাঁদপুর ছিল তৎ কালীন পূর্বভারতীয় উপমহাদেশের প্রবেশদ্বার। এ জেলা তখন থেকেই বেশ সমৃদ্ধশালী। তবে যেটির জন্য সমৃদ্ধশালী সেটি আর অন্য কিছু নয়, আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশ। ইলিশের জন্য এখনো চাঁদপুর তার সুদীর্ঘ ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। এই ইলিশের জন্যই চাঁদপুরে গড়ে উঠেছে তিন ধরনের যোগাযোগব্যবস্থা। সূর্য ডোবার পরপরই ইলশাঘাটে গেলাম ইলিশ দেখতে। চারদিকে ইলিশ আর ইলিশ। নৌকা থেকে জেলেরা বড় বড় খাঁচা ভরে ইলিশ নামাচ্ছে ঘাটে। আর ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছে তাদের পছন্দের ইলিশ কিনতে। ক্রেতা-বিক্রেতায় পরিপূর্ণ ইলশাঘাট। ইলিশের পাশাপাশি গলদা চিংড়ি, বোয়াল ও চিতল মাছও চোখে পড়ল। আমরাও দরদাম করলাম। ছয় কেজি ওজনের তিনটি ইলিশ ও ডিম কিনে ফেললাম। ইলিশ মাছ বড় হলে একটু লালচে রঙের হয়।একটি বিশ বছরের যুবক এগিয়ে এলো।বললো " স্যার এই মাএ তাজা ইলিশ আইছে।তাজা আন্ডা ও আছে।ভাল কিইরা ভাইজ্যা খাওয়ামু" আমরা বললাম তুমি জান কি করে আমরা মাছ খাব কি খাব না। সে বললো " স্যার আঁই জানি এহানে সাহেবরা মাছ খাওনের লাই আহে" আমরা বললাম তাহলে এই তিনটা ইলিশ ও তার সাথে ডিম রান্না কর আমরা একটু নদীর পাড়ে বসি।আমরা সবাই নদীর দৃশ্য দেখতে লাগলাম। মনে হলো দৃশ্য আমাদের উদাস করে দিল।কখন যে ঘন্টার কাছাকাছি চলে এলাম ভাবতে পারিনি।খাওয়া শেষ করে সিদ্ধান্ত নিলাম ফিরবার পথে চাঁদপুর হয়ে ঢাকা যাব।
এখানে আমরা এর আগেও তাজা ইলিশ ও ইলিশের ডিম খেয়েছি।কি চমৎকার তাজা ইলিশ আর ডিম ভূনা।এখন সে শুধু স্বপ্ন।চাঁদপুরের প্রধান আর একটি কারন এটি একটি নদীবন্দর।"পদ্মানদীর মাঝি" উপন্যাস যখন পড়েছি তখনি চাঁদপুরের সাথে একটা সখ্যতা গড়ে উঠেছিল।মাঝে মাঝে বড় ষ্টেসনে গিয়ে উত্তাল তরঙ দেখে মন ভরে আসতাম।আমার আর এক বন্ধু রহিম ছিল কত সময় একসাথে ঘুরেছি চাঁদপুরের আনাছে কানাছে ,বিরহের কথাগুলো শেয়ার করেছি।এমনকি ঢাকায় মিরপুর ১৪ ন্ং এ নিশিরাত হৃদয় নি্ংড়ানো অনেক কথার অবতারনা করেছি।বন্ধু এখন জাহাঙির নগর ইউনিভার্সিটিতে প্রিতিলতা হলের এ্যাকাউন্টস অফিসার ও একজন হোমিওপ্যাথ ডাক্তার।মাঝিরা ইলিশের নৌকা ভিড়াতো আর মাছ চিক চিক করতো।নদীর পাড়ে বসলে যে কবি সাহিত্যিক হওয়া যায় তা আজ টের পাছ্ছি খুব করে।তিতাস পাড়ের আল মাহমুদ,কপোতাক্ষের মাইকেল মধূসুদন দত্ত, পদ্ধা পাড়ের জসিমউদ্দিন আরো অনেক।
যথারিতি মুনিরদের বাড়িতে রাতে চলে গেলাম।পরের দিন চাঁদপুর হয়ে ঢাকার উদ্দ্যেশ্যে রওয়ানা করলাম।এদিকে বেলাল ও অন্য বন্ধুরা আমাদের বিদায় জানানোর জন্য দাঁড়িয়ে আছে।একটি স্কুটার ঠিক করলো।এরফান সামনে এব্ং আমরা পিছনে বসে পড়লাম।এক ঘন্টায় চাঁদপুর বড় ষ্টেসনে পৌঁছে গেলাম।যথা সময়ে লন্চ ছাড়লো।চাঁদপুরে ছিল অনেকগুলো চর।হয়ত এখনো খুঁজে পাওয়া যাবে কোন কোন চরে কুবেরের বালিশ,মালার সরলতা, মাকসুদার চন্চলতা আর ময়না দ্বীপের মত অনেক চোট বড় চর।বিকেলের পড়ন্তবেলা লন্চ ধীরে ধীরে চলছে।সূর্য ঢলে পড়ছে পশ্চিম আকাশে।আকাশে ছোট ছোট মেঘের ভেলা,দক্ষিনা সমিরন এক ভাবাবেগের সৃষ্টি করলো।অনেক কবিই নদীর সাথে নারিকে কল্পনা করেছে কেন জানি বলতে পারছিনে।তবে নদী ভ্রমন যে রবের সাথে সম্পর্ক করে দেয় তা আবারো প্রমান করলো দু'নদীর স্রোত দেখে।এক পানি আর এক পানির সাথে মিশছে না এক অজানা নির্দেশে।আকাশে সাদা মেঘের ভেলা,বাতাস এলোমেলো করে দিছ্ছে মাথার চুল।সূর্যের আলো আর নদীর ঢেউয়ে পাল ঝিলিক মেরে উঠছে।ছোট ছোট নৌকা মাছ ধরছে।এখানে অনেক লোকের বসবাস যাদের উপজিবিকা মাছ ধরা ও কুলির কাজ করা। কিন্তু বর্তমানে আর সেই দিন নেই।নদীর সেই উচ্ছলতা নেই , মাছ নেই।সন্ধা নেমে এলো।পাশ দিয়ে লন্চ ও ট্রলার যাছ্ছে আর পৎ পৎ আওয়াজ আসছে।সুর্যের রক্তিম আভা যেন মিলে গেছে নদীর কিনারে সে চিরপরিচিত শাড়ির আঁছলের সাথে।
বর্তমান নগর জীবনে ঢাকার আকাশ উঁচু উঁচু দালানে ঢেকে গেছে আর পাশে ইট, কাঠ আর কংক্রিকেটের আস্তরণ, সবুজের দেখা মেলা ভার। বুকভরা নিঃশ্বাস, শিশু সুলভ দৌড়-ঝাঁপ সে তো আজ কল্পনার রাজ্য। দু’চারটি পার্ক, উদ্যান যাও আছে তাও আবার বিকৃত রুচিসম্পন্ন মানুষের পদভারে পূর্ণ। যতটুকু সম্বল বারান্দার গ্রিল সেখানেও আবার বখাটেদের উত্পাত। তাই মানসিক প্রশান্তির জন্য শত ব্যস্ততার মধ্যেও আমরা ঘুরে আসতে দূরে কিংবা বহুদূরে। যেখানে কোমল প্রকৃতি তার আপন গৌরবে উজ্জ্বল।
আমাদের শিশুরা আজ বড় ক্লান্ত ,অবসন্ন। আমাদের উচিত তাদের নিয়ে ভ্রমন করা। ভ্রমণে শিশুর সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হয়, মানসিক উত্কর্ষের পাশাপাশি শিশুকে দায়িত্বশীল হতে শেখায়। চার দেয়ালের বন্দিত্ব শিশুদের মনকে সঙ্কীর্ণ করে তোলে। অবারিত সবুজ, খোলা প্রান্তর শিশুদের প্রাণবন্ত করে তোলে। যেখানে সেখানে নগরায়নের সভ্যতায় হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ গাছ, নদী, খাল, হাওর, বাঁওড়। যতটুকু টিকে আছে তাও আবার বিষাক্ত। যেমন—ঢাকার সৌন্দর্য বুড়িগঙ্গা নদী আজ প্রায় মৃত। ভবিষ্যত্ প্রজন্মের জন্য যেন কারও কিছু করার নেই। সচেতনতার বড় অভাব। সবাই ছুটছি নিজের স্বার্থে। চারপাশে তাকানোর সুযোগ নেই। এমনকি কোমলমতি শিশুদের পাঠশালাও আজ বাণিজ্যিক। এখনও সময় ফুরিয়ে যায়নি। যতটুকু সময় আছে তাতেই অনেক কিছু করা সম্ভব। প্রয়োজন একটু সুস্থ মানসিকতার। আসুন আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে সচেতন হই। গড়ে তুলি আগামীর প্রাকৃতিক প্রাচুর্যময় সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশ। বাতাসে সীসামুক্ত বুকভরা নিঃশ্বাস নিয়ে যেন বলতে পারে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি। ভালোবাসি দেশকে মায়ের মতো।’ অনেক বাবা-মা-ই আছেন তাদের সন্তানদের ভবিষ্যত্ সুখের আশায় শুধু অর্থের পিছে ছুটছে। অথচ সন্তান একাকিত্বে ভোগে। অভিভাবকদের যথেষ্ট পরিমাণ সঙ্গ, আদর, সোহাগের অভাবে তাদের মেজাজ-মর্জি বিগড়ে যাচ্ছে। বিষণ্নতা এক সময় তাদের অপ্রতিরোধ্য করে তোলে। ডুবে থাকে ভার্চুয়াল জগতে, টিভি,
কম্পিউটার আর ভিডিও গেমস নিয়ে। তাই তো ওরা হয়ে ওঠে আত্মকেন্দ্রিক। ছোট্ট সোনামণিদের প্রতি অবিচার করার ফলে সুন্দর ভবিষ্যত্ গড়ার জন্য আয় করা অর্থই অনর্থের মূল হয়ে দাঁড়ায়। আসুন আমরা মাঝে-মধ্যেই বাড়ির ছোট্ট সোনামণিদের নিয়ে ছুটে যাই দূরে-বহু দূরে। যেখানে নয়নজুড়ানো প্রকৃতি তাদের আপন করে নেবে। সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে অনুপ্রাণিত হবে। প্রকৃতি তাদের উদার হতে শেখাবে, অনেক বাবা মা ছেলেদের ঘুরতে নিয়ে যান, মেয়েটিকে নেন না। কিংবা বাবা আর ছেলে যান বেড়াতে মা মেয়ে ঘরে থাকে। কিন্তু সবারই বাইরের পরিবেশে যাওয়া স্বাস্থকর। আর সন্তান ছেলে কিংবা মেয়ে যাই হোক সবাই যেন থাকে সমস্নেহ ধন্য।
বিষয়: বিবিধ
১৯৪১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন