আমার জীবনের সুন্দর দিনগুলো ছিল কৈশর ও শৈশবের সেই গ্রামে যা ছিল সবুজ ঝোপ ঝাড়ে ঘেরা।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৪:৪৫:২৫ বিকাল

আমার শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত "পাঁচই" গ্রাম যা হাজিগন্জ উপজেলায় অবস্হিত।চাঁদপুর থেকে হাজিগন্জের মধ্য দিয়ে কুমিল্লা হয়ে বা ঢাকা থেকে কুমিল্লা হয়ে হাজিগন্জ চাঁদপুর এ সড়কে এখানকার বাসিন্দারা আসা যাওয়া করে।বিগত ৫০ বছরের সেই সবুজের স্মৃতি আর এখন খুঁজে পাই না ।তবুও স্মৃতিরা মালা গাঁথার আহ্বান জানাতে থাকে স্বপনে শয়নে।পৃথিবীতে আমার মনে হয় তড়িৎ থেকেও মনের গতি অনেক গতিময়।এক মুহুর্তে স্মৃতির যায়গাগুলো ঘুরে এসে জানান দেয় দেখতো আগের মত সব ঠিক আছে কিনা।কি চমৎকার ও অদ্ভুৎ পাড়া গাঁ যা ছিল সবুজে ঘেরা।কোথাও সোজা রাস্তা,কোথাও সর্পিল বা কোথাও ভাংগা পানিপথ।রাস্তার দু'ধারে সবুজ ধান ও পাটের সমারোহ, কৃষ্নচূড়া ,কড়াই গাছ,আম কাঁঠাল ও কলা গাছ।আবার মাঝে মাঝে সবুজ তরি তরকারির গাছ।আমাদের আছে ছ'টি ঋতু।এই ঋতু দু'মাস পর পর পালা বদল করে নিয়ে আসে প্রকৃতির বিভিন্ন রুপ।সে জন্য আমাদের কৃষকেরা ফলায় হরেক রকমের ফসল।গ্রীষ্মের দাবদাহ শেষ হলেই বর্ষা নিয়ে আসে অঝোর ও আঁধারঘন বৃষ্টি বাদল,শরতের মেঘের ভেলা ও কাশবন মনকে উদাস করে,হেমন্তের পাকা ধান নিয়ে আসে গ্রাম বাংলার কৃষকের নবান্নের উৎসব,শীতে পিঠা পুলি , খেজুরের রস ও সবুজ তরি তরকারি আর বসন্তে শীতের কায়ক্লিষ্ট মানুষ ও প্রকৃতির পুনর্জীবন আমদের উজ্জিবিত করে নব উজ্জিবনে।

দূরন্ত শৈশবে নির্ঘুম দিন রাত্রিতে আমরা "ক" জন ঘুরে বেড়িয়েছি গ্রামের পর গ্রাম।পড়ার ফাঁকে ফাঁকে ঘুরে বেড়িয়েছি আত্মীয় স্বজন ,পাড়া প্রতিবেশি ও বন্ধুদের বাড়ি।কখনো মাছ ধরা,কখনো গাছ থেকে ফল পেড়ে খাওয়া,কখনো ফুটবল , ভলি বল, হা ডু ডু ও কানামাছি খেলা আবার মাঠে বসে ফুটি - তরমুজ খাওয়া।আমার দু'বন্ধু এরফান ( এখন সুপ্রিম কোর্টের উকিল), শরিফ ( এখন লে.কর্নেল) আরো "ক" জন আড্ডা জামাতাম দীর্ঘ সময় ধরে।রাতের আঁধারে সর্পিল রাস্তা ধরে কখনো একা আবার কখনো বন্ধুরা মিলে যেতাম গ্রাম্য বাজারে আবার কখনো বা যাত্রা পার্টিতে।সেকালে আজকের মত মিডিয়া ছিল না।অনেক বিজ্গ লোকেরাও তখন যাত্রা পালাতে যেত কারন টিভি ছিল না আর ছিল না তড়িৎ ব্যাবস্হা-ও।আমার পড়ার ঘর ছিল আলাদা।বাবা ছিলেন চরম কনজারভেটিভ।রাতে বন্ধুদের সাথে যেতে হলে নিতে হতো বুদ্ধিমত্তার সাথে পদক্ষেপ যাতে বাবা বুঝতে পারে আমি ঘরেই আছি।এটা ছিল নিতান্তই শৈশবের দূরন্তপনা যা থেকে খুব কম বাবা মা রেহাই পায়।বেডে দুটো বালিশ সমান্তরাল রেখে তার উপর কম্বল মুড়িয়ে বাইরে থেকে খিড়কি দিয়ে চলে যাওয়া।অবশ্য এ কাজ বেশি দিন করা যায় নি,ধরা পড়তে হয়েছিল একদিন যেদিন আসতে দেরি হয়েছিল ও ফজরের নামাজের ওয়াক্ত হয়ে গিয়েছিল।

কখনো এরফানের বাসায়,কখনো শরিফের আবার কখনো আমার বাসায় রাত যাপন।আমার বাবা মা'কে হারিয়েছি ১৫ বছর হলো,শরিফের বাবাকে হারিয়েছে মা এখনো বেঁচে আছেন রোগ শোক নিয়ে,এরফানের বাবা আমাদের শিক্ষক ছিলেন তিনিও চলে গেলেন তবে মা বেঁচে আছে।কি চমৎকার ছিল রাত্রগুলো? চাঁদনি রাতে আমরা একসাথে রাতের খাবার খেয়ে গল্প করতাম।আমাদের তিন জনের বাবাই ছিল শিক্ষক।চমৎকার কথা বলতেন।ভবিষ্যতের কথা শুনাতেন ও দিক নির্দেশনা দিতেন কি করে ভাল মানুষ হওয়া যায়।যদিও তাঁরা আজ কাছে নেই তাঁদের কথাগুলো স্মৃতিতে ভাস্মর হয়ে আছে।তাঁদের কথার উপাদানগুলো আকাশচুম্বি আলোর সরলরেখায় রেখায়িত করেছে আমাদের জীবনকে।আমাদের বাবা মা'রা ছিলেন এতই সরল যারা অনেকে টাকার নোট চিনতেন না বা হাতে ধরে দেখতেন না অর্থাৎ বাবার উপর ছিল নির্ভরতা।আজ কিন্তু সেটা নেই। সমাজ বদলিয়েছে শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে।তবে মানবিক দিকগুলোর অধ:পতন হচ্ছে।আজকালকার অনেক মা, বাবার বেতন হওয়ার সাথে সাথে খুব-ই সক্রিয়।শুনা যায় বাবা যদি ৩ লাখ মাসে অর্জন করেন,যদি কোন কারনে বিশ হাজার টাকার হিসেব দিতে না পারেন তাহলে বর্তমান মা'রা কৈফিয়ত চান।তাহলে সে যুগের কম শিক্ষিত মা'রা এ যুগের নৈতিকতাহীন মা'দের চেয়ে ভাল ছিল না? অবশ্য অনেক মা'কে ধন্যবাদ দিতে হয় যারা বাবার সংসারকে হিসেবের টাকা দিয়ে আগলে রাখে।নি:সন্দেহে তাঁরা আসল শয্যা সংগিনি।

আজ ব্যাবধান শুধু কতগুলো বছর।অনেক বছর পর গিয়ে বুকটা ধপ করে উঠলো।শৈশবের সে চিত্র আর নেই। সে মাঠ গুলো এখন সংকীর্ন হয়ে এখন পাকা বাড়ি তৈরি হয়েছে,রাস্তার ধারে এখন আর সেই সবুজের সমারোহ নেই,মাঝে মাঝে দোকান পাঠ গড়ে উঠেছে আর দুর্বিত্তের আড্ডা জমে উঠেছে।ঘন আঁধারের সেই জোনাকি দেখার সুযোগ এখন নেই কারন রাতে বের হলে জীবনের ঘন্টাধ্বনি কখন বেজে উঠে কিনা ।বাড়ির সেই নারিকেল , আম জাম ও কাঁঠাল গাছ, পুকুরে মাছের ঝপ ঝপ শব্দ ও তার সাথে হাঁসের ভেলার মত ভেসে থাকা,রকমারি ফুলের সুগন্ধ, ধানখেতে বকের নি:শব্দ মাছ বধ করার প্রতীক্ষা,খালে জেলের জালপাতা, নৌকার মাঝির পাল তোলা নৌকা বাইতে শুরেলা গান,গ্রামের বধূদের রকামারি শাড়ি পরে বিভিন্ন উৎসব পালন, চাঁদনী রাতে মা বোনদের কাজলা দিদির সে ছড়া আর এখন মোহিত করে না আমাদের পাড়া গাঁকে। বড় ছোট'র মধ্যে কথা বলার শালিনতার যায়গা করে নিয়েছে রাজনৈতিক তর্ক - বিতর্ক।ধনী গরীবের ব্যবধান বেড়েছে অনেক।সারাক্ষন মারা মারি ও হানা হানি ও সংঘাতের ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয়ে আসে চারদিক থেকে।জীবনের এই কঠিন বাস্তবতা থেকে কি আমরা আবার ফিরে যেতে পারিনা ছোট ছোট গ্রামগুলোতে? আমরা কি আবার সবাই গড়ে তুলতে পারিনা সেই অবারিত সবুজের মাঠ? আমরা কি একে অন্যকে আপন করে নিতে পারি না দেশ গড়ায়? আমাদের স্বার্থপরতায় বিষিয়ে তুলছে চারদিক।যত বড়-ই আমরা হই না কেন আমাদের ফিরে যেতে হবে সেই ঝোপ ঝাড়ের আংগিনায় যেভাবে ফিরে গেলেন ও চির নিদ্রায় শায়িত হলেন নেলসন মান্দেলা কুনোর মত একটি গ্রামে।তবে আর একটি বিষয় অতি প্রয়োজন এর সাথে আর তা হলো সঠিক ধর্ম বিশ্বাস যা একজন মুসলিম লালন করে তার জীবনের প্রতিটি স্তরে কুরাআন ও সূন্নাহের অনুসরনে।

বিষয়: বিবিধ

১৯৮৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File