বিজয়ের মাসে ধর্ষিতা মা ও মেয়ে - অথচ প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেত্রী মায়ের জাতি।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১২:৫৯:২৫ দুপুর

বিজয়ের মাস আসলে আমরা সবাই আবেগাপ্লু্ত হয়ে পড়ি।এটা একটা ভাল দিক যা আমরা অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জন করেছি।একটি পতাকা মানে একটি দেশ।গাড় সবুঝের মাঝে রক্ত বর্নের লাল বৃত্ত মানেই বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।এই পতাকার মর্যাদা ধরে রাখার জন্য ১৯৭২ সালে সংবিধানের ৪(২) অনুচ্ছেদে রক্ষাকবচ দেয়া হয়েছিল।আমরা কি সারা বছর ধরে বা প্রতিটি জীবনের মাঝে এর প্রভাব সৃষ্টি করতে পেরেছি? আজ ১৬ই ডিসেম্বরে যে আনন্দের দিন হওয়ার কথা ছিল সেটা কি দেশের চিত্র দেখে বুঝা যায়?

একটা সুখী - সমৃদ্ধিশালী , দুর্নীতি মুক্ত সমাজ ও গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করাই ছিল এ দেশ স্বাধীন করার মুল মন্ত্র। যদি তা-ই হয়ে থাকে তাহলে স্বাধীনতার ৪২ বছর পর দেশের গনতন্ত্র ও অর্থনীতি কেন লুটেরাদের হাতে জিম্মি? আদর্শের কথা মুখে ছাড়া তারা বাস্তবায়িত হতে দেয় নি।আমরা আদর্শ ভুলে গিয়ে প্রতিহিংসার দিকে যাচ্ছি দিন দিন।এর মধ্যেই পালন করছি বুদ্ধিজীবি দিবস,বিজয় দিবস ইত্যাদি।কাউকে বাহবা দিচ্ছি , কারো উপর ঢেলে দিচ্ছি প্রতিহংসার আগুন।এই বিজয় দিবসের দিনেও দেশের জেলায় জেলায় চলছে আর এক যুদ্ধ।সাধারন মানুষ জীবন যন্ত্রনায় ভুগছে আবার কোথায়ও চলছে ৭১ এর মত মা ও মেয়েকে তাদের পরিবারের সামনে রেখেই ধর্ষন।এ কোন স্বাধীনতা আমরা অর্জন করলাম? আমি আমার মা ও মেয়ের চলার স্বাধীনতা দিতে পারিনি? পারিনি আমার পরিবারের ঘরে থাকার নিশ্চয়তা দিতে? এর কারন হলো মুক্তি যুদ্ধের ঐক্যের ফাটল ধরেছে ঘরে ঘরে।এর জন্য আমার দেশের রাজনীতিবিদরাই প্রধানত দায়ী।

ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে বসে দুই নারী,দুই মা, যুদ্ধ করছেন জনগণের হাত-পা বেঁধে। যশোরে মা ও মেয়ে একত্রে ধর্ষিত হয়েছেন, বাবা-ভাই হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তা সহ্য করেছেন। আত্মরক্ষার কোনো সহায় তাঁদের ছিল না। একদিকে জাতিসংঘের দূত তারানকো যখন ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে বৈঠক চালাচ্ছিলেন, তখন যশোরের মনিরামপুর উপজেলায় ১০ জন পুরুষ একজোট হয়ে একটি বাড়ির দরজা ভাঙছিল। দুই নেত্রী এবং তাঁদের মন্ত্রীরা যখন তাদের রাতের ঘুমের আয়োজন করছেন, তখন হাত-পা বাঁধা হচ্ছিল মায়ের স্বামী-পুত্রের এবং বোনের বাবা-ভাইয়ের। বিটিভিতে তখন আমাদের বিষণ্ন সুন্দর জাতীয় সংগীতের শেষ চরণটি বাজছিল, ‘ওমা তোর বদনখানি মলিন হলে, আমি নয়নজলে ভাসি’, তখন মাতৃজাতির মেয়েটিকে মায়ের ঘরে আর মাকে উঠানে রাখা চৌকিতে চরম নির্যাতন করা হচ্ছিল। যখন টক শোয়ে মাতোয়ারা হচ্ছিলেন আলোচক ও দর্শক, তখন বাবা-ভাই হাত-পা বাঁধা অবস্থায় দর্শক হচ্ছিলেন নিজেরই স্ত্রী-কন্যা, মা-বোনের ধর্ষণযজ্ঞের।এ কি স্বাধীনতার প্রহর না মা মেয়ের উপর নিপতিত স্বাধীনতার গ্লানি?

যা দেখার নয়, যা সহ্য করার নয় তা যখন দেখতে ও সইতে হচ্ছিল তাঁদের, তখন দেশবাসীও যা দেখার কথা ছিল না, তেমন রাজনীতির অসহায় দর্শক হয়ে থাকছিলেন। মা মধ্যবয়সী, মেয়ে বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। ভাইটির বিবরণ খবর থেকে পাওয়া যায় না। হয়তো সে কিশোর বয়সীই হবে। এবং বাবা একজন রিকশাচালক। রিকশাচালক হলেও গ্রামে তাঁরা মোটামুটি সচ্ছলভাবেই দিন গুজার করছিলেন। প্রতিটি পরিবারে যা স্বপ্ন থাকে, তাঁদেরও সেটাই ছিল। চারপাশের বিপদ-আপদ, রোগ-বালাই এড়িয়ে পরিবারটার আর্থিক ভিত আরও মজবুত করা, ছেলেমেয়েকে পড়ালেখা শিখিয়ে মানুষ করা। এসব মৃদু মানুষের স্বপ্নগুলোও এতটাই মৃদু ও নির্বিরোধ, তা-ও যেন সম্ভব নয় আজ। রাষ্ট্রীয় দুর্যোগ এসব মৃদু মানুষের মৃদুমন্দ ব্যক্তিগত ইতিহাসের ওপর ঝড় বইয়ে দিচ্ছে। কেউ পুড়ছে, কেউ সর্বস্বান্ত হচ্ছে, কারও পেটে টান পড়ছে, কারও মূল্যবান সময় খোয়া যাচ্ছে। মা-মেয়ের ধর্ষণ এবং গ্রামবাসীর চোখে একটি পরিবারের ভয়াবহ পতন, দেশের আরও অজস্র পারিবারিক বিপর্যয়ের একটি।সারা দেশে যা হচ্ছে, যশোরের মনিরামপুরে সেটাই হচ্ছে। তবে তার থেকে কিছু বেশি। সেখানে সাংবাদিকও যেতে পারেন না, সড়কে গাছের গুঁড়ির বাধা যদিওবা পেরোতে পারেন, পিকেটারদের আগুনে মোটরসাইকেল পোড়ানো ঠেকাবেন কীভাবে? পুলিশও সেখানে যেতে ভয় পায়।কি করবে পুলিশ যেখানে প্রতি ৬০০ জনের জন্য একজন।তারাও তো এক একজন একটি পরিবারের মালিক।সরকারি চাকুরিজীবি ও আমলারা ও এক একটি পরিবারের মালিক।তারাও তো মানুষ।কতক্ষন তারা নির্যাতন সইবে? তারা তো মসনদে যারা বসে আছে তাদের আজ্গা পালন করছে নিজের জীবনের ব্যায়ভার বহন করার জন্য।তাদের অনেকেই এখন ভেংগে পড়ছে কারন কখন তাদের উপর খড়গ নেমে আসে। ধর্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা, তদন্ত, বিচার - সব তাই থমকে থাকবে। জাতীয় সমস্যার মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ ব্যস্ত থাকবে বিরোধী ঠেকাতে, কিন্তু সাধারণ মানুষ কি ততক্ষণ নিঃশ্বাস বন্ধ করে থাকবে? এই পরিস্থিতিই তো সুবর্ণ সুযোগ দুর্বৃত্ত ও দস্যুদের।

সংবাদটি গণমাধ্যমে সামান্য গুরুত্বই পেয়েছে। অথচ এটাই হতে পারত আজকের জাতীয় পরিস্থিতির শিরোনাম, প্রধান সংবাদ। যদি হতো, তাহলে হয়তো অনেকেরই অনুভূতিতে কাঁপন ধরত। অনেকেই ক্রোধে ফেটে পড়তেন। কিন্তু তা হয়নি। এ রকম অরাজনৈতিক ‘মানবিক কাহিনি’র দাম এখন কম। এখন এরশাদ-রওশন কাহিনি, সুজাতা-তারানকো কাহিনি, হাসিনা-খালেদা কাহিনির তামাসা চলছে। দুই দল ক্ষমতার পাঞ্জা লড়ছে। এ অবস্থায় মা ও মেয়ের ধর্ষণ তো অরাজনৈতিক ‘হিউম্যান স্টোরি’, নিতান্তই একটি গরিব পরিবারের পারসোনাল ট্র্যাজেডি।

আমরা সবাই যেন ভয়াবহ নির্যাতনের সাক্ষী শুধু নই, আমরা নিজেরাও এর শিকার। নিজ গৃহে নিজেরই কন্যা-জায়া-জননীর ওপর পাশবিক নির্যাতন যতটা মর্মান্তিক; জনপ্রিয় দুই নেত্রীর দেশবাসীর এই দুর্ভোগ চেয়ে চেয়ে দেখা ততই দুঃখজনক। যে দেশের নেতা-নেত্রীরা এ রকম দায়িত্বহীন, সেই দেশের ভয়ার্ত গ্রামবাসীর ঘুম ভাঙে ধর্ষিতা আর তাঁদের স্বজনের আর্তনাদে। সেই অক্ষম আর্তনাদে কেঁপে ওঠেনি বঙ্গভবন, কালো হয়ে যায়নি শুভ্র সংসদ ভবন, লজ্জিত হয়নি জাতীয় পতাকা, থমকে যায়নি রাজনীতির ইয়াজুজ-মাজুজেরা। তাহলে এরা কারা যায় ? বুদ্ধিজীবি চত্তরে,সভারে স্মৃতিসৌধে ও শিখা চিরন্তনে।যে স্বাধীন দেশে মা বোনের ইজ্জত কেড়ে নিচ্ছে স্বাধীন দেশের মানুষ,তা দেখে আমাদের কি মনে হয় আমরাএখনো স্বাধীন হয়েছি? যে স্বাধীন দেশের মানুষ এখন ঘর হতে বের হওয়ার সাহস পায় না,তারা কি করে এক ডাকে বের হয়ে দেশ স্বাধীন করেছিল? আমরা আজ ভীত হয়ে পড়েছি দেশীয় শক্রুদের কাছে।আমাদের আর কোন রক্ষাকবচ নেই।আমরা যদি অচিরেই সুধরে না নেই এক ভয়াভহ অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে আমাদের কাছে।আমারাই আমাদের অন্ধকার।এখন আর বাইরের শক্রু আমাদের তাড়া করবে না।কারন ঘরের শক্রু বাইরের শক্রুর চেয়েও ভয়ংকর।আমাদের জামার আস্তিনে এখন সাপের বাস।একে ধ্বংস করার সত্যি-ই কঠিন।

যত দিন না আমরা রাজনৈতিক ঘটনার কেন্দ্রে এসব মৃদু মানুষের জীবনকে প্রতিষ্ঠা করতে পারব, তত দিন দাপুটে পরিবারগুলোই রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করবে।ওই ১০ ধর্ষকের যে ছয়জন মাকে নিপীড়ন করেছিল, আর যে চারজন কন্যাকে চরম সহিংসতার শিকার করছিল, তারা সংসদে সংখ্যাগুরু আর সংখ্যালঘু দলের প্রতিনিধি কি না, আমরা জানি না। তবে এটা বলতে পারি, তারা প্রথম ধর্ষণটি ঘটায় দেশের প্রতীক মায়ের সঙ্গে। দ্বিতীয় ধর্ষণটি ঘটে কন্যাটির ওপর, যে হতে চাইছিল ভবিষ্যৎ। এই বাস্তবতায় দুই নারী যেন আমাদের দেশ ও ভবিষ্যতেরই প্রতীক। আমাদের সহনশীলতা হলো তৃতীয় ধর্ষণ, যা আমরা আমাদের সঙ্গেই করে চলেছি।

বিষয়: বিবিধ

১৭৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File