অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নির্ভর করে সফল রাজনীতির উপর।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৪:৫৮:৪২ বিকাল

একটি দেশের সফলতা বিফলতা নির্ভর করে সুস্হ রাজনীতি ও নিয়মতান্ত্রিক গনতন্ত্র বিকাশের মাধ্যমে।আমাদের দেশে যে রাজনীতি আমরা দেখতে পাছ্ছি তা জননির্ভর না হয়ে কর্মিনির্ভর হয়ে উঠেছে।গনতন্ত্রের মূল মন্ত্রই হলো জন গনকে কেন্দ্র করে সব কাজ সম্পাদিত হবে।জনগন ভোটের মাধ্যমে তাদের রায় দিয়ে সাংসদদের সংসদে পাঠায় একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যারা দেশ শাসন করবে।প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তাদের দায় থাকবে জনগনের কাছে।রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগ-এ্ক্সিকিউটিভ , পার্লামেন্ট ও জুডিশিয়ারি তাদের স্ব স্ব দায়িত্ব পালান করবে সংবিধান অনুসারে।কেউ কারো উপর পক্ষপাতিত্ব করতে পারবে না।কিন্তু সমস্যা হলো আমাদের সংবিধান সেভাবে প্রনিত হয়নি।গনতান্ত্রিক বিশ্বে যদি এমেরিকাকে গনতন্ত্রের সূতিকাগার বলা হয় সেখানেও সমাজিক বিরোধ রয়েছে তবে তারা গনতন্ত্রের মূল বিষয় চর্চায় বদ্ধপরিকর।সরকার ও বিরোধী দল তাদের আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করে থাকে।এটা একটি সহজ কথা যে,যারা সংসদে যায় তাদের কাজ হলো দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।দেশের সম্পদের সংরক্ষন,বৈজ্গানিক পদ্ধতির মাধ্যমে খাদ্য সহ অন্যান্য বিভাগের উন্নতির চরম উৎকর্ষ সাধন,বিরোধী দলের সাথে সমন্নয় সাধন করে সংসদকে প্রানবন্ত করন।আমাদের সাংসদ রা এগুলোর দিকে নজর না দিয়ে ভোটে জয়ী হওয়ার সাথে সাথে জনবিছ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।আর তাদের কর্মিবাহিনীর দিকে নজর দেন রাষ্ট্রীয় সম্পদের যোগানের মাধ্যমে।যার ফলে স্বাধীনতার পর থেকে দেখতে পাছ্ছি শাসকদের সাথে জনগনের দূরত্ব বেড়ে গেছে।আর একটি প্রধান ব্যাপার হলো,প্রধানমন্ত্রীর হাতে ন্যাস্ত ক্ষমতা।পৃথিবীর অন্যান্য গনতান্ত্রিক দেশেও কোন প্রধানমন্ত্রী দু'বারের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারেন না কিন্তু আমাদের দেশে রাজনীতি পরিবারতন্ত্রে আটকা পড়ে আছে যার জন্য দলে বিজ্গ নেতা থাকলেও এ পদটি কারো পক্ষে স্হলাভিসিক্ত করা সম্ভব নয়।যারা এখানে গনতন্ত্র আছে বলে মনে করেন তাদের ভেবে দেখা উচিত এটাও এক ধরনের রাজতন্ত্র।আমরা অতীতে দেখেছি যারা দলে সংস্কার করতে চেয়েছে তারা কিভাবে দল থেকে ছিটকে পড়েছে ও যারা দলে থেকেছে তাদের ইনেকটিভ করে রাখা হয়েছে।তাছাড়া যুদ্ধবিদ্ধস্ত একটি দেশে প্রধান যে ইস্যুগুলোর উপর রাজনৈতিক নেতাদের কাজ করা উচিত তা না করে সমাজকে উছৃংখল ও কলুষিত করে এমন সব বিষয় প্রাধান্য পাছ্ছে যা অকল্যানকর,যার ফলে জনগনের মধ্যে বিভাজন ও অপসংস্কৃতির চালু হছ্ছে।আর পরিনতিতে দেশের অর্থনীতি এখন হুমকির মুখে।

সব সরকারের আমলে হর্তালের এ সংস্কৃতি দেশের অর্থনীতিকে যে ভংগুর অবস্হানে নিয়ে যাছ্ছে তা নিয়ে রাজনীতিবিদরা ভাবছেন না।তাদের বুঝতে হবে দেশ-ই যদি না থাকে,দেশের আর্থিক কাঠামো যদি মজবুত না থাকে তাহলে তারা কি নিয়ে রাজনীতি করবেন।তাদেরতো সম্পদ উৎপাদনে সহযোগিতা করার কথা।সেটা না করে যা আছে তার ক্ষতি করে দেশকে পিছিয়ে দিছ্ছে।আমাদের যে অপার সম্ভাবনা তা ধূলিসাৎ হয়ে যাছ্ছে।গত মাসখানেকের হর্তাল- অবরোধে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। লাগাতার হরতাল-অবরোধে দেশের শিল্প-বাণিজ্যে যে প্রভাব পড়েছে তা বিশেষ করে ব্যাবসায়ি মহল টের পাছ্ছে আর সাথে সাথে ভোক্তারা তাদের ক্রয় ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে,যা প্রতিদিনের বাজার মনিটরিং থেকে অনুভূত হছ্ছে।আমাদের প্রতিটি শিল্প উদ্যোক্তা ও শিলপপতিরা এ সময়ে বেশি হতাশা ব্যাক্ত করছে।কিছু কিছু মিল ফেক্টরি ছব্বিশ ঘন্টা চালাতে হয়।যে সমস্ত শিল্পের ফেক্টরি পুরো বছর চালু রাখতে হয় তাদের প্রতিদিন কাঁছামালের উপর নির্ভর করতে হয়।কোন কোন ব্যাবসা কিছু সময় বাধাগ্রস্ত হলে অন্য সময় পুষিয়ে নেয়া যায়।তবে যে সমস্ত শিল্পের প্রতিনিয়ত কাঁছামাল দরকার তা যদি ট্রান্সপোর্টের কারনে ব্যাহত হয় সে সমস্ত শিল্প বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি।হর্তাল ও অবরোধের কারনে এ রকম অবস্হা সৃষ্টি হয়েছে এখন।

হরতাল-অবরোধে জীবন ও যানের ক্ষতির আশঙ্কায় ট্রাকের মালিকেরা ১৫ হাজার টাকার ভাড়া এখন এক লাখ টাকার ওপরে দাবি করছেন। বস্ত্র খাতে একটা ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছিল। নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ (নতুন ও পুরোনো সম্প্রসারণ মিলে) হয়েছে। আগে যাঁরা বিনিয়োগ করেছেন, তাঁদের একধরনের সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। কিন্তু, নতুন যাঁরা বিনিয়োগে এলেন, তাঁদের কী হবে? তাঁরা কীভাবে বিনিয়োগের ফল ঘরে তুলবেন? ব্যাংকের টাকাই বা কীভাবে পরিশোধ করবেন? পুরো বিনিয়োগটাই তো ঝুঁকির মধ্যে চলে গেল।আমদানি-রপ্তানি কোনো কাজই তো সময়মতো হচ্ছে না। দেশের মানুষ অত্যন্ত শঙ্কিত।দেশ এখন দীর্ঘ মেয়াদি এক সংকটে ঢুকে পড়েছে।নির্বাচন হোলেই কি না হোলেই কি? যে ৫ বছরের জন্য সাংসদরা নির্বাচিত হয়ে আসেন সে সময়টার ও সিংহভাগ তারা রাস্তায় থাকেন।দেশের উন্নয়নের কথা না ভেবে তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে দেশেকে অস্হির করে তোলেন।আর নির্বাচন কবে হবে তাও নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়।এখনই যদি নির্বাচন হয়, তাতেও কী হবে, সেটা নিয়েই সংশয় আছে। আর এটা যদি আরও দীর্ঘায়িত হয়, নির্বাচনের পরেও চলে, তাহলে বিশ্বব্যাপী ক্রেতারা আমাদের থেকে সরে যাবে।ইতিমধ্যে বস্ত্রখাতের অপার সম্ভাবনা অন্য দেশে চলে যাছ্ছে। কেননা ক্রেতারা কয়েক দিন অপেক্ষা করতে পারে, দীর্ঘ সময় প্রতীক্ষা করবে না। তাতে আমাদের বাজার হাতছাড়া হয়ে যাবে। এটা যে কত বড় ক্ষতি হবে, তা এখনই বোঝা যাচ্ছে না।এভাবে সব রকম ব্যাবসা বানিজ্যে এর প্রতিফলন ঘটবে। বিগত দিনেও হরতাল-অবরোধ হয়েছে। কিন্তু সেটা এক টানা এভাবে হয়নি। আবার সরাসরি অর্থনীতির ওপর এমন আঘাত আগে আর কখনো আসেনি। এখন এটা অবিরাম চলছেই। এখন যা হচ্ছে তা রাজনীতি ও অর্থনীতিকে একত্রে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য করা হচ্ছে। এটা ভয়ংকর। এর প্রতিক্রিয়া এখনই পুরোপুরি অনুমান করা যাচ্ছে না। কিছুদিন পর থেকে অনুমিত হবে কি পরিমান সন্কটে আমরা পড়বো।আগে হরতাল-অবরোধে ব্যবসা হতো, এখন ব্যবসা যা দিয়ে করবে ব্যাবসায়িরা তাও নষ্ট করা হচ্ছে।যেভাবে গাড়ি ভাংচুর হচ্ছে তাতে করে কেউ রাস্তায় গাড়ি নামানোর সাহস করছে না। ফলে এ ক্ষতি অপূরণীয় হবে। বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা কর্মসংস্থান। বছরে ৩০ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি হয়, এর মানে মাসে আড়াই লাখ লোকের কর্মসংস্হান।তার ও ভবিষ্যৎ নষ্ট হবে। আসলে প্রতি পাঁচ বছর পর পর আমাদের রাজনীতি অশান্ত হয়ে যায়। তাতে ক্ষতি যা হয় সেটা পোষাতে এক বছর লাগে। পেছন থেকে আবার শুরু করে আমাদের অগ্রসর হতে হয়। আর এবার অর্থনীতি ও রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ থেকে কিভাবে উঠে দাঁড়ানো যাবে তা একমাত্র বিধাতা-ই ভাল জানেন।এর প্রভাব পড়বে সামাজিক জীবন, ব্যাংক, বিমাসহ সেবা খাত থেকে শুরু করে কৃষি খাত সহ সর্বত্র। সরকার না হয় ব্যাবসায়িদের ক্ষতি পোষাতে একধরনের ভর্তুকি দেবে। কিন্তু, কৃষক কীভাবে উঠে দাঁড়াবেন? তাঁর ফসলের ক্ষতি কীভাবে মেটানো হবে? শীত মৌসুমের সবজি যে নষ্ট হচ্ছে, সরবরাহব্যবস্থা যে ভেঙে পড়েছে, তার কী ভর্তুকি দেবে সরকার? এই আঘাত অর্থনীতির সব ক্ষেত্রে ছড়িয়ে যাবে এতে কোন সন্দেহ নেই।

আমাদের ব্যবসায়িরা এ দেশকে উন্নয়নে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাছ্ছে কিছু দুস্কৃতিকারি ছাড়া।ব্যাবসায়িরা তাদের অনেকেই রাজনীতি করে না।ব্যাবসায়িরা ইদানিং বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন সরকার ও বিরোধীদলের সাথে যাতে অর্থনীতি ক্ষতির দিকে না যায়।অথচ সরকার ও বিরোধীদলের দায়িত্ব তাদেরকে আরো বেশী সক্রিয় করা অর্থনীতিকে চাংগা করার জন্য। তারা প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধন করছে কিন্তু অনুরোধ, চাপ কোনোটাই তো কাজ করছে না। এটা জাতির জন্য খুবই উদ্বেগজনক ও দূর্ভাগ্যের ব্যাপার।রাজনীতিবিদদের মনে রাখতে হবে, অর্থনীতি ভেঙে গেলে তাঁরা দেশ চালাতে পারবেন না। কিসের ওপর ভিত্তি করে রাজনীতি করবেন।আমাদের সাংসদের একটা অংশ এখন ব্যাবসায়ি যারা হয়ত সরাসরি সরকার থেকে সুবিধা নেন কিন্তু যারা বাইরে তারা তো ক্ষতিগ্রস্ত হছ্ছেন চরমভাবে। আমি বলব, আপনারা যারা রাজনীতি করছেন, অর্থনীতিকে মুক্ত রাখুন, সরাসরি অর্থনীতিতে আঘাত আসে এমন কাজ থেকে বিরত থাকুন।রাস্তাঘাটকে মুক্ত রাখুন,রাজনীতিকে সংসদ ও ঘরমুখি করুন,ছাত্র রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সীমিত রাখুন যাতে তারা প্রকৃত রাজনীতি শিখে।সেন্ট্রাল রাজনীতিতে যেন ছাত্ররা জড়িয়ে না পড়ে তার জন্য সরকারকে আইন প্রনয়ন করতে হবে যাতে করে বিশ্ববিদ্যালয় পেরিয়ে আসলে যার যার ইচ্ছানুসারে তারা যে যেখানে যেতে চায় সেখানে যেতে পারে।এতে করে ছাত্ররা শিক্ষার দিকে ধাবিত হবে ও শিক্ষকরা তাদের পাঠদানে সহায়ক হবেন। আর এর সমাধান রাজনীতিবিদদেরই করতে হবে।আপনারা নির্বাচন করুন, বা অন্য কিভাবে সমস্যা সমাধান করবেন সেটা আপনাদের ভাবতে হবে।তবে দেশ যেভাবে আগুনে পুড়ছে ও দেশের মানুষ যেভাবে নি:শ্ব

হছ্ছে তাতে মনে হয় না আমরা কোন সভ্য সমাজে বাস করছি।মানুষের মৃত্যু দেখে স্বাভাবিক ভাবেই মনে হয় আমরা আদিম যুগের দিকে ধাবিত হছ্ছি।

বিষয়: বিবিধ

১২৫৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File