মৃত্যু , মৃত্যুদন্ড ও বিজয় উল্লাস।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১২ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৫:৩২:৩৬ বিকাল
একজন মুসলিমের মৃত্যুর সাথে যত বেশী পরিচয় আছে তা অন্য কোন ধর্মে আছে কিনা আমার সন্দেহ আছে।আলকুরআনে অর্ধশত আয়াত পাবেন এ ব্যাপারে।সূরা ২,৩,৪,৫,৬,৮,১৬,২২,২৩,৩১,৩২,৩৯,৪০,৪৪,৪৭,৫০,৫৬ ও ৬৭ ছাড়াও অন্যান্য সূরাতে বিক্ষিপ্তভাবে মৃত্যুর কথা স্মরন করে দেয়া হয়েছে যাতে করে মানব সম্প্রদায় এ দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য না দেয়।আমি একজন মুসলিম হিসেবে ও সাধারন মানুষ হিসেবে মানবিক দিক থেকে প্রত্যক্ষ করে আসছি স্বাধীনতার পর থেকে স্বাধীনতার পক্ষ , বিপক্ষের ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা।গত ৪১ বছর ধরে এ কথাগুলো যতবার শাসকদের মুখে শুনেছি এর নিতান্ত কমই শুনেছি সাধারন মানুষের কাছে।কারন হলো সাধারন ও মুক্তিকামি মানুষ এ দেশ স্বাধীন করেছে সব রকম বন্চনা থেকে মুক্তির জন্য।অথচ শাসকগোষ্ঠী তাদের কল্যানে অগ্রবর্তী না হয়ে মানুষের স্পর্ষকাতর বিষয়গুলো জি-এ রেখে রাজনীতি করছে। যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল তাদের কেন ক্ষমা করা হলো? কেন সাথে সাথে বিচার করা হলো না? কেন তাদের সাথে নিয়ে অন্দোলন সংগ্রাম করা হোলো? আবার তারা বিরোধীদলে ভিড়লে তাদের বিচারের ব্যাবস্হা হলো? কেনই বা তাদের ছাড়া দু'শাসক দল চলতে পারে না? গত ৪১ বছর ধরে মানুষের মনে অনেক প্রশ্নের জন্ম হয়েছে।আমাদের এই দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের অবস্হান হলো ক্ষমতা দখল করা সে যেভাবেই হোক।অপরাধির একটা বৈশিষ্ট হলো, সে যে কোন ভাবেই বাঁচতে চায়।বাঁচার জন্য শেলটার চায়।যদি আমরা জানি কেউ আপরাধি তার সাথে সাথেই বিচার হওয়া উচিত।যদি বিচার না করে নিজেদের সুবিধা আদায়ের জন্য শেলটার দেই সেটা হলো ইনজাষ্টিফিকেশন।এ ধীর্ঘ সময় ধরে জাতি এ প্রহসন গুলো দেখে আসছে ও যার পরিনতিতে সমাজে হত্বা,রাহাজানি,আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্বা ও ঝলসানো,বোমাবাজির মত অবস্হা সমাজকে অস্হির করে তুলছে।যারা এই হত্বাকান্ডের সাথে জড়িত তারা কোন না কোন ভাবে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মানুষগুলোকে হত্বা করে সে পরিবারগুলোকে পথে বসিয়ে দিছ্ছে। যাই হোক আমি আর এ ব্যাপারে বিস্তৃত কিছু বলতে চাই না।আসল বিষয় হলো আমাদের মুসলিম সংস্কৃতিতে যে কোন মানুষ মরে গেলে একজন মানুষের করনীয় কি? সেটা জানা একজন মুসলিমের জন্য অবশ্য করনীয় কাজ।আমি লক্ষ্য করছি জীবনের অনেক সময় ধরে আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কেউ যখন মারা যায় তখন আর এক পক্ষ উল্লাস করতে থাকে।আমার তখন সন্দেহ হয় এ সমস্ত মানুষগুলো কি আসলে মুসলমান না আর অন্য কোন ধর্মের?
কোন মানুষ যত আপরাধই করুক, যখন সে বিচারের আওতায় আসে তখন তার বিচার করার দায়িত্ব বিচারবিভাগের।বিচার বিভাগ যদি স্বাধীন হয় আর সঠিক বিচার হয় তাহলে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু আমদের দেশে বিচারবিভাগ বিভিন্ন সময়ে যে সকল কাহিনী জন্ম দিয়েছে তা আন্তর্জাতিক বিচারালয় ও কটাক্ষ করেছে যা পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।বিচারবিভাগের প্রতি যে মানুষের একটা অস্হা থাকা দরকার সেটা হয়ে উঠছে না বিচারপতি ও আইনজীবিদের সরকারের লেজুড় বৃত্তির কারনে।আইনের শাসন যতক্ষন প্রতিষ্ঠিত না করা যায় ততক্ষন বিচারবিভাগ নীরপেক্ষ কাজ করতে পারবে না।সংবিধানের আইন লংঘন করে যেখানে বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়,বিচারপতিরা যেভাবে দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে সেখানে ন্যায় বিচার পাওয়া কঠিন।তবে কোর্টের অবস্হা যা-ই হোক সরকার যদি ইনফ্লুয়েন্স না করেন ও বাইরে থেকে তাদের ভয় ভীতি না দেখান তাহলে যুক্তি সংগত দলীল দস্তাবেজ , বিরোধীদের মতামত,আইন সালিশ কেন্দ্র অধিকার , এমনেষ্টি ইন্টারনেশনাল ও হিউমেন রাইটস এর মতামত নিয়ে যদি বিচার করা হয় তাহলে হয়তবা জন গন অন্তত বিচারের প্রতি আস্হা রাখতে পারে।তবে বিচারকদের মনে রাখতে হবে তাদের উপরও একজন বিচারপতি আছে যার কাছে সবারই যবাবদীহি করতে হবে।
যুদ্ধাপরাধি আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ডের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ হওয়ার সাথে সাথে গনজাগরনমন্চের নেতা কর্মিরা যেভাবে উল্লাস করেছে তাতে আমার মনে হয় নি আমাদের সত্যিকার মুসলমানিত্ব আছে।আবার গনজাগরন মন্চের কেউ যদি মারা যায় তাহলে অন্যরা যদি উল্লাস করে তাতেও আমার মনে হয় না তারা মুসলিমের অন্তর্ভুক্ত।এই যে মুসলমানের মধ্যে ও বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি এবং যে সমস্ত রাজনৈতিক নেতারা ইন্দন যোগাছ্ছেন, এরাই একদিন আপনাদের কাল হয়ে দাঁড়াবে।আজ যে সামাজিক অস্হিরতা দেখছেন তার কারন কিন্তু আমার আপনার এই অবুঝ সন্তানরা নন । তাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে,ইসলামের গনজাগরনের চেতনার নামে যারা মাঠে নামিয়ে দিছ্ছেন তারাই মুলত দায়ী।আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন গত ৪১ বছরে "ক" জন প্রথম সারির নেতা এমপি বা মন্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে।মাঠের কর্মি,শ্রমিক, সাধারন জন গন ও তাদের ভাড়া করা কিলারদেরই মৃত্যু হয়েছে।আমাদের জন গনকে বিচারের প্রতি আস্হা রাখতে হবে।আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা সম্মান রাখতে হবে।কোন অনাকান্খিত কাজ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।কারো জান মাল ও ধ্বংসাত্বক কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।সূরা আল ইমরানের ১৮৫ আয়াতে আল্লাহ বলেন,' প্রত্যেক স্বত্বাকে মৃত্যুবরন করতে হবে।কেয়ামতের দিন তাদের প্রাপ্য পরিশোধ করা হবে।যাদের আগুন থেকে নিষ্কৃতি দিয়ে জান্নাতে প্রবিষ্ট করা হবে তারাই সফলকাম।আর এ দুনিয়ার জীবন ধোকার সম্বল ছাড়া কিছুই নয়।" সুতরাং যারা বলবে আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান নিয়ে এসেছি তাদের কাজ হলো ধৈর্য ধারন করা।একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে মানুষ হত্বা বা মানুষের ঘর বাড়ি জ্বালানো ইসলাম এগুলো সমর্থন করে না।
আমাদের রাজনৈতিক চর্চার আর একটি দিক হলো, যে কোন দলের লোকই মারা যায় তাকে শহিদ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।ইসলামে শহিদের ব্যাখ্যা হলো যারা ধর্মকে উঁচু করার জন্য জীবন দান করেন তাদের শহিদ বলা হয়।সূরা বাক্কারার ১৫৪ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'যারা আল্লাহর পথে মৃত্যুবরন করে তাদের মৃত বলো না বরং তারা জীবিত যদিও তোমরা বুঝতে পার না।" আমরা যারা মুসলমান হিসেবে বেঁচে থাকতে চাই তাদের মুসলমান হয়েই বাঁচা উচিত।আর তা করতে হলে কুরআন ও সূন্নাহের উপর নির্ভরতা বাড়াতে হবে।সমাজকে বিভক্ত না করে মানুষের কল্যানে প্রতিটি মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।সরকার ও বিরোধীদলকে আর দেরি না করে মানুষের জীবনের ও মালের নিরাপত্বার দিকে এগিয়ে আসতে হবে।যদি গনতন্ত্রই চর্চা করা মূল লক্ষ হয় তাহলে মানুষকে ভালবাসুন , দেশকে ভালবাসুন, দেশের মানুষের জন্য কাজ করুন।নিজের মৃত্যুর কথা চিন্তা করুন।আপনারা ক্ষমতায় থেকে যতই নিরাপত্বা চান না কেন, একবার ভেবে দেখুন কবরে কে আপনার নিরাপত্বা দিবে?
বিষয়: বিবিধ
১১৮১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন