কৈশোর ও যৌবনের মাঝামাঝি সময় সন্তানদের পাশে বাবা মাকে থাকতে হয় একজন বিচক্ষন ডাক্তারের ভূমিকায়।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৪:০৮:০৫ বিকাল

আঠারো থেকে বাইশ বছর বয়সটা অদ্ভুত এক সময়। যা আমরা বয়োজেষ্ঠরা পেরিয়ে এসেছি আর যারা এ পথে ফাঁড়ি জমিয়ে পার করছে। কৈশোরের সিঁড়ি থেকে যৌবনের সিঁড়িতে পা রাখার ঠিক আগের মুহূর্ত যেন এটা। আশেপাশের মানুষজন ছোট হিসেবেও দেখছে না,আবার কেউ পূর্ণবয়স্ক হিসেবে মেনেও নিচ্ছে না। অদ্ভুত কিছু পরিবর্তন দেখা যায় নিজের মধ্যে।চলাফেরায় উঠাবসায় এক নব দীগন্ত উম্মোচনের এ ক্রান্তিলগ্ন।এ সময়কে কারো উপেক্ষা করার উপায় নেই।আজ আমরা যারা বৃদ্ধের কোঠায় , অবচেতন মনে চিন্তা করলে অতীতের কথামালা গুলো ভেসে আসে।এ বয়সের চন্চলতা এক নতুন জীবনের সন্ধান করতে চায়।এ সময়টা জীবনকে দাঁড় করানোর শ্রেষ্ঠ সময় আবার নিস্তেজ করারও শ্রেষ্ঠ সময়।বিশেষ করে শারিরিক গঠন , যৈবনের উম্মাদনা প্রকটভাবে নাড়া দেয়।কৃষক যেমন ভাল ফলন ফলানোর জন্য জমি চাষ করার একটা পরিকল্পনা নেন আগে থেকেই,প্রতিটি দম্পতিকেও বিয়ের পূর্বেই একটি সঠিক পরিকল্পনার ছক এঁকে নিতে হয়।এই পরিকল্পনায় যদি ব্যার্থতা আসে তাহলে অনাগত ভবিষ্যতে যারা আসবে তাদের জীবনে এর প্রভাব নিশ্চয়ই পড়বে। আর সেজন্যই আমরা পারিবারিক জীবনে দেখি শান্তি ও অশান্তির ফলন।মেয়েদের মধ্যে এই পরিবর্তনগুলো বেশ লক্ষণীয়, ছেলেদের মাঝে অনেকটাই থাকে চাপা।

এ সময় আবার কারো কারো মধ্যে বড় আকারে, আবার কারো মধ্যে ছোটখাটো কিছু পরিবর্তন আসে। কৈশোরের চঞ্চলতা স্থিমিত হয়ে আসে। নিজেকে নতুন রূপে দেখতে ভালো লাগে। বিভিন্ন ধরনের কথা ভাবতে ভালো লাগে।ভাষার ভাব গাম্ভীর্য বৃদ্ধি পায়। গানের প্রতি মোহ তৈরি হয়।বন্ধুদের নিয়ে ঘুরা ঘুরির প্রবনতা বৃদ্ধি পায়। ছোটখাটো যে ব্যাপারগুলো যা আগে ভালোমতো খেয়ালই করা হয়নি, সেই ব্যাপারগুলোই এখন লক্ষণীয় হয়ে উঠে। এমন অনেক জিনিস- যা আগে বিরক্ত লাগত- সেগুলোই প্রিয় হয়ে উঠে ধীরে ধীরে। কিছুটা স্বাধীনতা পাবার চেষ্টা, সেই সাথে নতুন কিছু করার আগ্রহ জন্মে। প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যায় অনেকেই। যদিও সবার ক্ষেত্রে একই ব্যাপার ঘটে না কিন্তু ছোটখাটো কিছু পরিবর্তন এই বয়সের সবার মধ্যেই আসে।বাসায় অথিতি এলে এ বয়সের ছেলে ময়েরা একে অন্যের সাথে মেলামেশা করতে চায়।বাবা মা যদি চোখে চোখে রাখতে চান তা আর কতক্ষন পারেন।উঁকি ঝূঁকি মারা,বাহানা করে বেড়াতে যাওয়া ইত্যাদি এ বয়সের ছেলে মেয়েদের কাজ।যৌবনের উম্মাদনায় একে ওন্যের সাথে মন বিনিময় তার ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে স্তিমিত করে ফেলে অনেক ক্ষেত্রেই।এ কারনে ইসলাম অশ্লিলতাকে পরিহার করার জন্য পর্দার ব্যবস্হা করা হয়েছে।সূরা আহযাবের ২৮ থেকে ৩৪ পর্যন্ত অশালিনতা ও অন্তরের এসব ব্যাধির ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে যা মেনে চললে পারিবারিক ও সমাজ জীবনে খুব কমই সমস্যার সম্মুখিন হয়।

কৈশোর পার করার পর মানসিকতার পরিবর্তন হয় বড় আকারে। হুটহাট এখানে-সেখানে যাওয়া, এটা-সেটা করে ফেলার প্রবণতা ক্রমশ বাড়তে শুরু করে। আগে যেমন সব পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন ভালো লাগতো, এখন সেসব পারিবারিক পরিবেশে যেতেই লজ্জাবোধ হয়।নিজের নতুন পৃথিবীতে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে ইচ্ছা হয়। কলেজ পার হয়ে ইউনিভার্সিটির আঙিনায় এসে নতুন ভাবে নিজেকে চিনতে শেখার সময় এটা। ইউনিভার্সিটি জীবনের ব্যস্ততার ফাঁকে নিজেকে সময় দেয় অনেকেই। আগের মত চাঞ্চল্যতা ঝেড়ে ফেলে একলা সময় কাটানোতে আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায় এই বয়সে।১৫-১৮ বয়সের কিশোর কিশোরীদের সাথে ৪-৫ বছর বয়েসী বাচ্চাদের খুনসুটি লাগা নতুন কিছু নয়। চঞ্চল বাচ্চাদের দুষ্টুমি ও ছোটবাচ্চাদের কান্না অনেকের কাছে অসহনীয় ব্যাপার মনে হলেও ছোট শিশুদের প্রতি মায়া মমতা বাড়তে শুরু করে আঠারোর পর থেকেই। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে। এই ব্যাপারটি অনেকেই লক্ষ্য করেন না। কিন্তু এই সময়ে বাচ্চাদের উপস্থিতি অনেক আনন্দদায়ক ও উপভোগ্য লাগে। তারুণ্যের এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।বিশেষ করে যৌবনের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের মধ্যেই আর একটি জনিস পাওয়ার আশায় হৃদয়কে পুলকিত করে আর এ সময় অনেকে চরম ভাল রেজাল্ট করার আগ্রহে আগ্রহি হয়ে উঠে।কেমন মেয়েটি হবে জীবন সংগিনী।ভাল পরিবেশে নিজেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোন প্রফেশনটা চুজ করলে ভাল।এনগেজমেন্ট রিং ও বিয়ের পোশাকের প্রতি আগ্রহ জন্মে। আমার বিয়েতে এই ধরনের পোশাক পরবো, ওই ধরনের গহনা থাকবে, এনগেজমেন্ট রিংটা এমন হবে এই ধরনের চিন্তা মাথায় আসতে শুরু করে।এ ধাপে আনেকে সফল হয় আর আনেকে বিফল জীবনে প্রবেশ করে।বাবা মা'কে ভালবাসা ও বন্ধুত্বের আলোকে খোলামেলা আলোচনা করতে হয় যেন সন্তান ফসকে না পড়ে।স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যেখানে যেখানে হোছট খেতে পারে তা আলোচনা করা ও সন্তানদের প্রতিনিয়ত মনিটর করা জরুরি। স্কুল ,কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসতে দেরি হলো কেন? বা হোষ্টেলে থাকলে নিয়মিত খবর রাখা এসব বাবা মাকে নিতে হয়।অধিকাংশ ক্ষেত্রে কম বাবা মা ছেলে মেয়েদের খবর রাখে। যার পরিনতি ভোগ করতে হয় পুরো পরিবারকে।বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই বেশির ভাগ প্রেমের উপাখ্যান তৈরি হয়। এই সময়ে প্রেম সম্পর্কিত ব্যাপারটি অনেক আগ্রহ ও গুরুত্বের সাথে নিয়ে থাকে ছেলেমেয়েরা। ক্লাসে কিংবা ইউনিভার্সিটির বিশেষ কোন একজনকে ভালো লাগা শুরু করে। তাকে নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে। পছন্দের মানুষটির পাশে নিজেকে কল্পনা করে আনন্দ পেতে ভালো লাগে। যদি কারো সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়া হয়, তবে তার সাথে সময় কাটাতে বেশি ভালো লাগে। গভীর রাতে ফোনালাপ করতে পছন্দ করে অনেকে। সেই বিশেষ মানুষটিকেই জীবনের লক্ষ্য বলে মনে করে।ইসলামে এগুলোকে হারাম করা হয়েছে যা বাবা মাকে আগে থেকেই সতর্ক করে দেয়া বা নৈতিক ও ইসলামিক নীতিমালার সাথে যুক্তিগুলো উপস্হাপন করা উচিত। অনেক বাবা মাকে দেখেছি সন্তানের সাথে খোলামেলা আলাপ করতে ল্জ্জাবোধ করেন।রাসূল সা: শরিয়তের ব্যাপার গুলো মহিলা সাহাবাদের শিক্ষা দিতেন।

অনেকের এ সময় দায়িত্বশীলতা বাড়ে।নিজেকে বড় প্রমাণ করার তাগিদ থেকেই দায়িত্ব নেয়ার প্রবণতা আসে। এমন কিছু কাজ যা আগে করতে চাইত না, সে সব কাজ নিজ দায়িত্বে করে থাকে অনেকেই। নিজের কাজকর্মের প্রতি মনোযোগ বাড়ে। ছোট খাট কাজ ও দায়িত্বের প্রতি শ্রদ্ধা ও মনোযোগী হয়ে উঠে মনের অজান্তেই। নিজেকে সবার সামনে দায়িত্বশীল ও কর্মঠ হিসেবে উপস্থাপন করতে পারলে খুব আনন্দ হয়।নতুন কিছু করতে আগ্রহ প্রকাশ করে ।নিজের ছোট গণ্ডি পার হয়ে কৈশোর পরবর্তী জীবনে পা রেখে নতুন অনেক কিছুই করতে আগ্রহ জাগে এই সময়ে। বন্ধু বান্ধবের সহযোগিতায় এবং প্রভাবে ভালোমন্দ উভয় ধরনের "নতুন" কিছুতে আগ্রহ বাড়ে। ভালো কাজের ক্ষেত্রে বন্ধুদের সাথে মিলে গঠনমূলক কাজে অংশ নেয়ার দিকটি দেখা যায়। অপরদিকে বন্ধু বান্ধবের সাথে মিলে দু একবার ধূমপান অথবা মদ্যপানে আগ্রহী হতে দেখা যায় অনেককেই। এছাড়াও অনেককে পরিবারের কাছে ছোটখাটো মিথ্যে বলে ভ্রমনে বের হওয়ার প্রবণতা দেখা যায় শুধুমাত্র নতুন কিছু করার নেশায়।

আর অনেকের মধ্যে খরচের প্রবণতা বেশি দেখা দেয়। কৈশোর কালে টাকা খরচ ব্যাপারটি ঠিক বোধগম্য না এবং যৌবন বয়সে টাকা খরচের ব্যাপারে মায়া- এই দুইয়ের ঠিক মাঝামাঝি সময় হল কৈশোর পরবর্তী তারুণ্যের সময়। আগে যে জিনিষটি হয়ত টাকা খরচ করে কিনতে বা করতে চাইত না, এখন সেই জিনিষটি সহজেই টাকা খরচ করে কিনে বা করে ফেলা হয়। এই সময়ে অনেক কিছুই ভালো লাগে, সেটা পেতে ইচ্ছা হয়। বন্ধু বান্ধবকে টাকা ধার দিতে দ্বিধাবোধ করে না কেউ।পরবর্তী সময়ে নিজেকে অনেক বয়স্ক ভাবেন অনেকেই। তারই প্রেক্ষিতে নিজের থেকে কমবয়সী ছেলেমেয়েকে নানান বিষয়ে উপদেশ দিতে ভালো লাগে। ছোটোদের কিভাবে পড়ালেখা করা উচিত, কি কি করলে ভালো হবে, কেমন ভাবে চলতে হবে এই ধরনের উপদেশ দেয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। এমনকি ছোটখাটো অনেক বিষয় আছে যা নিজে কিশোর বয়সে করেছে, সেসব বিষয়েও বাঁধা দিতে চায় ছোটোদের।সবার ক্ষেত্রে একই ধরনের পরিবর্তন আসবে এমন কোন কথা নেই। কিন্তু কিছু কিছু বিষয়ে সবারই একই ধাঁচের পরিবর্তন আসে এই সময়ে।

আমাদের বর্তমান সামাজিক অবস্হা পর্যালোচনা করলে সহজেই অনুমান করা যায়, তরুন সমাজ আজ ইসালমি ঐতিহ্য থেকে অনেক দূরে সরে যাছ্ছে।অনেক বাবা মা চেষ্টা করেও পারিপার্শিকতার কারনে ছেলেমেয়েকে আগলে রাখতে পারেন না। তবে আমাদের সবার উচিত পারিবারিক বন্ধনকে আরো সুদৃড় করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।পাড়ায় পাড়ায় সুস্হ ইসলামি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তুলতে পারলে মা'রা সন্তানদের নিয়ে অবসর সময়গুলো কাটাতে পারেন।আমাদের মিডিয়াগুলো যদি অশ্লিলতা পরিহার করে সমাজ বিনির্মানে প্রোগ্রাম তৈরি করতে পারেন তাহলে তারা বেড়ে উঠবে সঠিক বাড়ায়। মাদক ও অন্যান্য ব্যাপারে সরকার যদি কঠোর নীতি গ্রহন ও আইন শৃংখলা বাহিনী যদি তাদের সঠিক দায়িত্ব পালন করে অসম্ভব নয় আমাদের সন্তানরা আবার নতুন ভাবে গড়ে উঠবে।আর প্রত্যেক বাবা মা'কে ছেলেমেয়ের নেগেটিভ দিকগুলোকে একজন বিচক্ষন ডাক্তারের ভূমিকায় অবতীর্ন হয়ে তাদের সুস্হ করে তোলার দায়িত্ব নিলেই একটা সভ্য সমাজ বিনির্মান করা সম্ভব হবে বলে আমার বিশ্বাস

বিষয়: বিবিধ

১৪১৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File