ডিজিটাল অন্ক হলো ক্ষমতায় থাকা , ক্ষমতা থেকে যাওয়া নয়।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০৬ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৯:২৭:২৩ রাত

নব্বই এর দশকে স্বৈরশাসনকে বিদায় জানিয়ে আমরা যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলাম এই জন্য যে , আমরা পূর্নমাত্রায় একটি আবাধ গনতান্ত্রিক দেশ হিসেবে দেশ মাতৃকাকে প্রতিষ্ঠিত করবো।সেবার দল মত নির্বিশেষে মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিল।দুই নেত্রি-ই তখন নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।স্বাধীনতার প্রাকলগ্নেও আমরা তা-ই দেখেছি শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশের মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে।তখন ছিল বিরোধী শত্রু যাদের আমরা তাড়াতে সক্ষম হয়েছিলাম কারন আমরা তাদের ভালভাবে চিনতাম।স্বাধীনতার পর এখন ধীরে ধীরে চিনতে পারলাম আসলে শুধু বিদেশীরাই আমাদের শত্রু ছিল না।আমাদের এক শ্রেনীর রাজনীতিবিদ ও আমলা যারা তখন রাজভোগ- ভোগ করতে পারেনি বিশেষ করে তারাই দেশ স্বাধীন করার জন্য মানুষকে উজ্জিবিত করেছে।তানাহলে দেশ স্বাধীন করা হলো কেন? স্বাধীনতার তাহলে অর্থ কি? স্বাধীনতার তো অর্থ হলো বন্ছিতদের মুখে হাঁসি ফোটানো,ক্ষুধার্তদের অন্ন দান,নিজস্ব শিল্পের উদ্ভাবন,শিক্ষার বিস্তার ও জীবন মানের উন্নয়ন। গত ৪১ বছরে তা কি সম্ভব হয়েছে?

এখন আমাদের সবচেয়ে বড় উৎপাদন হচ্ছে ক্ষমতায় থাকা ও ক্ষমতায় যাওয়াকে কেন্দ্র করে। আমাদের যদি গণতন্ত্র থাকত, তাহলে এই পালাবদলটা হতো একটা উৎসবের আমেজে। প্রকৃত গণতন্ত্রে ক্ষমতায় যাওয়া হচ্ছে জনসেবা ও দেশসেবার গুরুদায়িত্ব গ্রহণ। যেখানে দেশ বড়, সেখানে পদ্ধতি নিয়ে কোনো তর্ক হয় না, ঝগড়া হয় না। তত্ত্বাবধায়কপদ্ধতি ভালো, নাকি নির্বাচনকালীন একদলীয় অথবা বহুদলীয় সরকারপদ্ধতি ভালো, এ নিয়ে একটি দেশের ভবিষ্যৎ জিম্মি করার চিন্তাও তখন কেউ করে না। প্রকৃত গণতন্ত্র থাকলে পদ্ধতি-নির্বিশেষে নির্বাচন হতো, নির্বাচন সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হতো, বিনা বাক্যব্যয়ে নির্বাচনের ফল সবাই মেনে নিত, সংসদ প্রাণবন্ত ও কার্যকর হতো। প্রকৃত গণতন্ত্র থাকলে প্রতিবাদ হতো, সমালোচনা হতো, সংশোধন-সংযোজন হতো, দেশের প্রশ্নে নানা ইস্যুতে ঐকমত্য হতো। টেবিলের দুই দিকে বসে বিস্তর আলোচনা হতো। নীতি ও কর্মপরিকল্পনা এবং প্রকল্পের ধারাবাহিকতা থাকত।একজন মানুষের মৃত্যুতে আমাদের হৃদয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করতো।অথচ শ'শ মানুষের মৃত্যুতে আমাদের জীবনে কোন আলোড়ন সৃষ্টি হছ্ছে না । তাহলে কি আমরা আদিম যুগের দিকে চলে যাছ্ছি।আমরা কি রাজনীতির আবর্তে ঘুরপাক খাছ্ছি। আমরা এক সময় দেখেছি সত্তর-আশি পেরোনো রাজনীতিবিদেরা পার্কে বসে পত্রিকা পড়তেন, আড্ডা মারতেন আর প্রয়োজনে উপদেশ-অভিমত দিতেন; তাঁদের জায়গা তাঁরা ছেড়ে দিতেন তরুণদের কাছে। প্রকৃত গণতন্ত্র থাকলে দলের ভেতর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হতো এক নম্বর কাজ। ফলে তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে দলের, নির্বাচনের, নানা কমিটির প্রার্থী ও সদস্য নির্বাচিত হতো। সবচেয়ে বড় কথা, প্রকৃত গণতন্ত্র থাকলে আতঙ্ক-অনিশ্চয়তা-আত্মঘাতী-প্রবণতা থাকত না।বাংলাদেশে প্রকৃত গনতন্ত্র আসবে এর কোন নিশ্চয়তা নেই বা কোন লক্ষন দেখা যাছ্ছে না কারন যাদের মাধ্যমে গনতন্ত্র নামক এই রুপরেখাটি প্রতিষ্ঠিত হবে সেই বড় দু'টি দল এখন স্বৈরতান্ত্রিক পথে হাঁটছে।শুধু তা-ই নয় তাদের অধিকাংশ সাংসদ এখানে আসছে নিজেদের জীবন মানের উন্নয়নের জন্য।তাদের তৃনমূলের অনেক কে জিগ্গেস করলেই হতাশা ছাড়া কিছুই দেখতে পাই না।যেখানে দলের মধ্যেই হতাশা সেখানে তারা দেশের মানুষের জন্য কি করবে।তাদের তৃণমূলকে প্রয়োজন পড়ে শুধু ভোটের সময়।এই সাংসদ হওয়া এক বিশাল প্রাপ্তির নাম; শুল্কমুক্ত গাড়ি থেকে নিয়ে নানা পদ-পদবি পাওয়া, মন্ত্রী-ভিআইপি হওয়া আর ব্যবসা-বাণিজ্য-বিদেশভ্রমণের প্রচুর সুযোগ পাওয়ার এক চাবিকাঠির নাম। ঢাকায় কেউ রাজউকের ১০ কাঠার প্লট পেলে যে রকম তাঁকে ভাগ্যবান বলতে হবে, বড় দলের সংসদ সদস্য পদে মনোনয়নটাও যেন তা-ই। সে জন্য ‘মনোনয়নবঞ্চিতরা’ রাস্তায় নামেন, হরতাল করেন, ধ্বংসযজ্ঞ চালান। যদি এমন হতো যে সাংসদ হওয়া মানে ২৪ ঘণ্টা জনসেবার কাজে লেগে থাকা, নাওয়া-খাওয়া ভুলে শিক্ষা-স্বাস্থ্য-যোগাযোগ-দারিদ্র্য নির্মূলের কাজে কোমর বেঁধে নেমে পড়া, তাহলে ছবিটা নিশ্চয় উল্টো হতো। অথবা কে জানে, দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র থাকলে মনোনয়নবঞ্চিতরা প্রতিবাদ মিছিল করে ঘোষণা দিতেন, আগামী পাঁচ বছরে মনোনয়নপ্রাপ্তদের থেকে তাঁদেরই বেশি দেখা যাবে মাঠের কাজে, মানুষের সেবায় ইত্যাদি।

গণতন্ত্রের অনেক আবশ্যকতার মধ্যে নির্বাচন তো মাত্র একটি। নির্বাচনের পর সংসদ রয়েছে; সুশাসন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও হাতভর্তি উন্নয়নের নানা কাজ রয়েছে; সর্বোচ্চ মানের বিচারব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং দুর্নীতিসহ হাজার রকমের সামাজিক-রাজনৈতিক অনাচারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার ব্যাপার রয়েছে; দলগুলোকে গণতন্ত্রচর্চার মডেলে রূপান্তরের বিষয়টি রয়েছে, দলগুলোর ভেতর তৃণমূল থেকে নিয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে স্বচ্ছ যোগাযোগ ও কথোপকথনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, ছায়া সরকার প্রতিষ্ঠা এবং সরকার ও বিরোধী দলের ভেতর ক্রমাগত সংলাপ ও জাতীয় ইস্যু এবং নীতির প্রশ্নে ঐকমত্যের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, নেতা-নেত্রীদের ভেতর সৌজন্য ও সৌহার্দ্যেরও দরকার রয়েছে। কিন্তু নির্বাচন ঘনিয়ে এলে আমাদের দেশে যে রকম আন্দোলন শুরু হয়, তাতে মনে হয়, নির্বাচনই যেন গণতন্ত্রের একমাত্র শর্ত। নির্বাচনে জিতে গেলে তো হলোই, তখন পাঁচ বছর শুধু ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণ। বিপত্তিটা হয় হেরে গেলেই, তখন নানা ছুতায় সংসদ বর্জন (বেতন-ভাতা, শুল্কমুক্ত গাড়ি, বিদেশভ্রমণ বর্জন যদিও নয়)' নির্বাচনকে দেশসেবার সুযোগ হিসেবে না দেখে শুধু ক্ষমতায় আরোহণের উপায় হিসেবে দেখার কারণে গণতন্ত্র তার চরিত্র হারিয়েছে। এর সাথে মাত্রা বাড়াচ্ছে উগ্রবাদীরা, জঙ্গিরা। এখন ধর্মের নামে আতঙ্ক ছড়ায় অনেক দল ও গোষ্ঠী আসলে তারা প্রকৃত ধার্মিক নয়। এতে আরো নাম লেখাচ্ছেন পেশাজীবী ও দলীয় বুদ্ধিজীবীরাও।তবে এসব মেনে নিতে পারে না সাধারণ মানুষ, খেটে খাওয়া লোকজন, ভুক্তভোগীরা। অবরোধের আগুনে ঝলসে যাওয়া বাসযাত্রী গীতা সেনকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তাঁকে তিনি বলেছেন, ‘আমরা অসুস্থ সরকার চাই না’। ‘আপনারা আমাদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন।'

মানুষ চায় পূর্নমাত্রায় গণতন্ত্র । এই গণতন্ত্র আমাদের জাতিসংঘ দিতে পারে না, কোনো ত্রাতা দেশও দিতে পারে না। গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে পারেন একমাত্র রাজনীতিবিদেরাই। তাঁদের সাহায্য করার জন্য মানুষ প্রস্তুত। এখন তাঁরা এগিয়ে এলেই হয়।তাদের দরকার সুস্হ মানুষিকতা , মানুষের প্রতি ভালবাসা।

সারা শরীর আগুনে পুড়ে যাওয়া মনির যখন গাজীপুর চৌরাস্তায় বসে ছিল, হয়তো নিস্তব্ধ বসে বোঝার চেষ্টা করছিল, কেন তাকে এভাবে কোন অপরাধে, অবেলায়, অবর্ণনীয় যন্ত্রণায় চলে যেতে হবে; তার পাশে বসে তার বাবা নিজের চোখে জীবনের সবচেয়ে বড় সর্বনাশটা দেখছিলেন। ওই ছবিটি ডেইলি স্টার-এ উঠেছিল। অন্যান্য কাগজও ছাপিয়েছিল। আমাদের নেতা-নেত্রীদের অনুরোধ, ছবিটি দেখুন। তাহলে বুঝতে পারবেন জালা পোড়ার যন্ত্রনা কি? বিগত রাজনীতিতে পরিসংখ্যান নিন "ক" জন নেতার শরীরে আগুন লেগেছে, "ক" জন নেতার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কারন নেতারা জ্বলেন না তারা জ্বালাতে সহায়তা করেন।

যারা এ জালানো পোড়ানোর কাজ করছে তারা ধরাছোঁয়ার বাইরের মানুষ। পুলিশ তাদের খুঁজে পায় না। তারা সুরক্ষিত ঘরে বসে খেলার ছক কষে; আদেশ দেয়, টাকাপয়সার জোগান দেয়। মাঠে আতঙ্ক উৎপাদনের জন্য তারা নিয়োগ করে আতঙ্ক-শ্রমিকদের। এই শ্রমিকেরা বোমা ফাটায়, ককটেল ও গান পাউডার ছুড়ে মারে, আগুন লাগায়। সারা দেশের শহরে-বন্দরে-গঞ্জে এই শ্রমিকদের পদচারণ; মিডিয়ায় তাদের সবাইকে দেখতে একই রকম লাগে। কৃষিকাজের মতো তাদের উৎপাদনপদ্ধতিও সর্বত্র একই রকম। এখন টিভি খুললেই দেখা যায় কোথাও না কোথাও সহিংস মিছিল হচ্ছে, টায়ার পোড়ানো হচ্ছে, ককটেল ফাটানো হচ্ছে।গত এক মাসে অন্তত ৩০টি তরুণ প্রাণ সন্ত্রাসের বলি হয়ে অকালে ঝরে পড়েছে।প্রথম আলোয় একটি ছবি দেখে মনে হয়েছে, এ রকম ছবি যে দেশে ছাপা হয়, সে দেশের মানুষ বোধ হয় মানুষ নামের যোগ্যতা হারায়। আগুনে বাবাকে হারিয়ে একটি শিশু নিষ্পলক তাকিয়ে আছে—তার কষ্ট, যন্ত্রণা, হারানোর বেদনা, অসহায়ত্ব একটি বর্ণনা-অসম্ভব অনুভূতি হয়ে তার দৃষ্টিকে ঢেকে দিয়েছে। এই শিশুটির চোখের দিকে যদি তাকাত, তাহলে তাদের পাথরের মতো হূৎপিণ্ডে নিশ্চয় কিছুটা চিড় ধরত। কিন্তু তারা যে পত্রিকা পড়ে অথবা টিভি দেখে, সে ব্যাপারটা নিশ্চিত করে বলা যায় না।

সন্ত্রাস এখন তরুণদের বিধ্বংসী হওয়ার শিক্ষা দিচ্ছে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান দিই, পরিবর্তনের রাজনীতির ঘোষণা দিই, কিন্তু প্রতিদিন হাতে-কলমে অসংখ্য তরুণকে তালিম দিই, কীভাবে ঠান্ডা মাথায় যাত্রীভর্তি বাসে আগুন লাগাতে হয়। যে ভয়টা আমাদের তাড়িয়ে বেড়ায়, তা হচ্ছে এই হন্তারকের দলে নাম লেখানো তরুণদের নিয়ে। এরা কি আর কোনো দিন সুস্থ জীবনে ফিরে যাবে? যারা রাস্তায় নেমে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, তারা কি আর কোনো দিন শৃঙ্খলাকে সম্মান করবে? শিক্ষাকে ভালোবাসবে? গুরুজনকে মান্য করবে? মাদকের নেশার মতো ধ্বংসের নেশা থেকে ফেরত আসাটা কষ্টসাধ্য, হাজার হাজার সুন্দরি তরুনিরা এখন মাদকের সাথে জড়িত যাদের মাধ্যমে তরুনরা আকর্ষিত হছ্ছে আর যা আমাদের আবাসিক এলাকাকে করে তুলছে মাদকের আস্তানায়।আমাদের সেনাবাহিনী কোথায়? গোয়েন্দা বাহিনী কোথায়? পুলিশ বাহিনী কোথায়? পত্রিকায় বেরিয়েছে এক শ্রেনীর অসাধু পুলিশদের হাত করে তারা তাদের রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাছ্ছে। কিন্তু আমরা কি সেই মানবিক সমাজ তৈরি করেছি, যে সমাজ এই তরুণদের পুনর্বাসনের সময় ও বিনিয়োগ দেবে? ধ্বংস থেকে সৃষ্টির পথে এদের নিয়ে আসতে পারবে? আমাদের ভাবার সময় যদি না আসে তাহলে বুঝতে হবে আমাদের জন্য এক ভয়ংকর সময় ধেয়ে আসছে যা থেকে আমরা কেউ পরিত্রান পাব না।

বিষয়: বিবিধ

১২১৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File