বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ও আমরা জন গন কি করছি।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০৬ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৩:০৯:১৫ দুপুর
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কি না তা নিয়ে এখন সবার মনেই আশংকা দেখা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি অন্তর্বর্তী সরকার চালিয়ে যাচ্ছেন এবং প্রধান বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়াকেও এই সরকারে যোগদানের প্রস্তাব করেছেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার কাছে শেখ হাসিনাই হলো 'সমস্যা। এটা অবশ্য একটা সাধারন কথা যে ৫ বছর শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার পর তার ক্ষমতা কুক্ষিগত না করে কোন নীরপেক্ষ সরকারের হাতে ছেড়ে দিলে সমস্যার সমাধান হয়ে যেতো।কিন্তু আমাদের দেশে যে সরকারই ক্ষমতায় এসেছে তারা এর মজা ছাড়তে চান নি। গত সরকারগুলোতে আমরা দেখতে পেয়েছি তবে এবার এ ঘটনাটি প্রলম্ভিত হছ্ছে খুব বেশি। খালেদা জিয়া নির্বাচন বয়কট করলেও একটি নির্বাচন হয়ে যাবে। শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়তে চান না এবং মনে হচ্ছে, তিনি ক্ষমতা ধরে রাখতে সাধ্যের সবটুকুই করবেন।
আমাকে যা অবাক করেছে তা হলো, শেখ হাসিনা সংসদে চার-পঞ্চমাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে টুকরো টুকরো করে ফেলেছেন। তাঁর সরকার পরিচালনার ব্যর্থতাই দুর্নীতি বাড়িয়েছে, এমনকি গ্রামপর্যায়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দূষিত হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত হরতাল দিয়ে খালেদা জিয়া সেই পরিস্থিতি আরো তীব্রতর করে তুলছেন। ফলে সাধারণ মানুষ ভুগছে। অবশ্য শেখ হাসিনাও ক্ষমতার বাইরে থেকে একইভাবে হরতাল দিয়েছিলেন। দুই বেগম, যাঁরা একের পর অন্যজন প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন, তাঁরা টেলিফোনে সম্ভবত প্রথমবারের মতো আলোচনা করেছিলেন। কিন্তু কোনো ফল আসেনি। এমনকি মধ্যস্থতাকারী কারো দ্বারাও মীমাংসা সম্ভব হয়নি দুজনের ব্যক্তিগত রেষারেষির কারণে।আওয়ামিলীগ এর আগে যথেষ্ট পরিমাণ সাক্ষ্য-প্রমান দিয়েছে যে, শেখ হাসিনা ক্ষমতার বাইরে থাকতে খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা তাঁর সভাস্থলে বোমা হামলার পেছনে ছিলেন।এ কাজগুলো সব সরকারের আমলে হয়ে যাছ্ছে এক ধরনের সহযুগী সংগঠনের কুচক্রিদের দ্বারা।আবার ওদের-ই এ দু'টো দল হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।আওয়ামিলীগ এখন যাদের বিচারের জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে তাদের নিয়েই বিএনপির বিরুদ্ধে জয়লাভ করেছিল।আবার এখন এরশাদকে সাথে নিয়ে যে কান্ড করছে এতে জন গনের বুঝতে কোন অসুবিধে নেই যে, তারা জন গনের বা দেশের গনতন্ত্র রক্ষার জন্য কাজ করছে না।এ দুটো দল স্বাধীনতার পর জন গনের আশা আকাংখার ধার ধারে নি বরং তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করেছে।আমরা দেশের খেটে খাওয়া মানুষ গুলো যদি তাদের বয়কোর্ট করতে পারতাম তাহলে তারা কিছুটা হলেও শিক্ষা পেত।এখন জন গনের হাতে একটা পথ আছে তারা তৃতীয় কোন শক্তি যদি তৈরি করতে পারে হয়ত চেষ্টা করে দেখতে পারে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারে কিনা।কারন দু'টো দলের সাথে যারা যুক্ত আছে তাদের অধিকাংশই জন গনের আশা আকাংখার বিরুধী কাজ করবে।নতুন প্রজন্ম দিয়ে যদি সংসদকে ভরে না দেয়া যায় তাহলে এই ঘুনে ধরা সাংসদ দেশকে দুর্নিতির অতলগর্ভে তলিয়ে দিবে বলে আমার বিশ্বাস।
বিএনপি জোটে জামাত থাকায় পরোক্ষভাবে মিছিল মিটিং ও পিকেটিং এ বিএনপি যে লাভবান হয়েছে এট অস্বীকার করা যাবে না। তবে জন গনের জান মালের ক্ষতি করে আন্দোলন বেশিদিন টিকিয়ে রাখা যায় না।এতে আমি মনে করি বি এনপির চেয়ে জামায়াতে ইসলামীই সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে।গত বিএনপির সরকারে তাদের ২ জন মন্ত্রি হলেও পদ্ধতিগতভাবে এবং নিরন্তরভাবে বুদ্ধজীবী সম্প্রদায় থেকে শুরু করে সমাজের সর্ব স্তরে তারা নিজেদের খুপরি তৈরি করতে সমর্থ হয়েছে। জামায়াতের ওপর বিএনপির নির্ভরশীলতা জামায়াতকে বিশেষ সুবিধা এনে দিয়েছে। তারা একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকারে ছিল। যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে, তাহলে জামায়াত কোয়ালিশন সরকারের অংশ হবে বলে আমার ধারনা।তবে এরশাদের মোহাজোট থেকে বেরিয়ে আসা বিএনপির জন্য বড় একটা বিজয় যদি তা অব্যাহত থাকে।এদিকে হেফাযত সহ অন্যান্য ইসলামিক ঐক্যের বেশিরভাগ বিএনপি ও জামাতের সমর্থক বিধায় আগামি নির্বাচন যদি সঠিক সময়ে ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে হয় তাহলে আওয়ামিলীগের যে ভরাডুবি হবে তা নির্দিধায় বলা যায়। তাছাড়া দেশের সচেতন বুদ্ধিজীবি মহল এ মতটি-ই দিছ্ছেন।ধর্মীয় নেতাদের বিষিয়ে তোলা বক্তব্য থেকেও এর ধারনা পাওয়া যায়।অনেকে শেখ হাসিনাকে কৃতিত্ব দিতে চান যে তিনি মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন।আসলে তারা মৌলবাদের কথা বলে শেখ হাসিনাকে যে ডুবাছ্ছেন এটা তিনি বুঝতে পারছেন না।এদেশের ৯০% মুসলিম তথাকথিত মৌলবাদে বিশ্বাসি নন।তারা ইসলামের অনুসারি।ইসালম একটি চিরন্তন ও শান্তির ধর্ম।এদেশে যে সরকারই ইসলামের বিরুধ্ধে যাবে তাদের পতন অনিবার্য।গনতন্ত্রের রাজনীতি ও ধর্মের রাজনীতি এক নয়।তবে যেহেতু দেশে গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার চলছে সেখানে সাধারন নিয়মনীতি মেনে সহনশীলতার মাধ্যমে দেশ চালানো উত্তম যে-ই সরকারে আসুক।একটা স্বাধীন দেশে অসহযোগ আন্দোলন করে , দেশের মানুষকে পুড়ে মেরে,মানুষকে অভুক্ত রেখে,দৈনন্দিন জীবন ব্যাহত করে দেশ পরিচালনা করা কারো পক্ষেই সম্ভব হবে না।অবশ্যই এ পথ প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে পরিহার করে জাতির আশা আকাংখা বাস্তবায়নে সামনে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের একটি নিজস্ব স্বত্বা রয়েছে, বাইরের শক্তি যেন আমাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে না উঠে সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।বিশ্বের যে কোন দেশই হোক তারা আমাদের বন্ধু।তাদের উচিত নয় আমাদের আভ্যন্তরিন বিষয়ে নাক গলানো।ভারতের পররাষ্ট্র সচিব যে বক্তব্য রেখেছেন এটা একটি দেশের স্বাধীনতার জন্য হুমকি স্বরুপ। আমরা প্রতিবেশী দেশের সাথে সুসম্পর্ক চাই এবং এটাই স্বাভাবিক।কোন কারনে যেন বৈরি সম্পর্ক গড়ে না উঠে এটা সব সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।
আস্থা ও আশাবাদের জায়গাও রয়েছে। অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার পরও বাংলাদেশ গত এক দশকে ছয় ভাগ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। কৃষি উৎপাদন দেশটিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে, শ্রমিক আইন কার্যকর না হওয়ার পরও পোশাকশিল্পে এসেছে সমৃদ্ধি। ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন কিছুই বলা যাচ্ছে না। হয়তো বড় ধরনের সহিংসতা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে নির্বাচনের
এ সময় খালেদা জিয়া শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনের বিরোধিতা করছেন। অনেক মানুষ মনে করছেন আবার সেনাবাহিনী আসতে পারে, ঠিক কয়েক বছর আগে যেমন এসেছিল। তারা তখন সরে দাঁড়িয়েছিল যখন দেখেছিল যে জনগণ গণতন্ত্র চায়।তবে সেনাবাহীনির উচিত হবে না ক্ষমতায় আসা।আমাদের সেনাবাহিনীর একটা অতীত ঐতিহ্য রয়েছে দেশের অংশিদারিত্বে।তারা প্রাকৃতিক দুর্যুগে বা যে কোন দুর্যুগে যেভাবে দেশের মানুষকে সাহায্য করেন তা অবিস্মরনীয়।আমাদের বিগত সরকারগুলো তাদের ঐতিহ্য ম্লান করেছে নিজেদের স্বার্থে।সুতরাং এ দৃষ্টিকোন থেকে তাদের নিজেদের মেধার পরিচয় রাখবেন বলে আমাদের চৌকশ সেনা বাহিনীর প্রতি আবেদন রইলো।
বিষয়: বিবিধ
১১৩৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন