পরিবার ও রাষ্ট্রে নারীর অবদান স্বত্বেও বৈষম্য বিরাজমান তার সাথে লংঘিত হছ্ছে মানবাধিকার আসলে কারন কি?।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৭ নভেম্বর, ২০১৩, ১০:০৯:৫০ রাত
জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম দেশ।মুসলিম হিসেবে ৯০ ভাগ মুসলিম ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে বাস করে এদেশটিতে। দেশটিতে নারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে সাত কোটি। আর্থসামাজিক উন্নয়ন সূচকে গত এক দশকে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। গত এক দশকে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার কমেছে, নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত হয়েছে, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক খাতে নারীর প্রবেশ ঘটেছে।তবে দুর্ভাগ্যক্রমে এ অগ্রগতির যাত্রায় একটি ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ । এদেশের নারীরা এখনও নানাভাবে সহিংসতার শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ ২০১১-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ দেশের ৮৭ শতাংশ নারী ও কন্যাশিশু সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হন। লিঙ্গভিত্তিক অসমতার সূচকে ১৮৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬।
আমরা যারা প্রতিনিয়ত নিউজ পেপারগুলো ছোখ বুলিয়ে যাই কিছু কি আমাদের মানসপটে ভেসে উঠে না আমরা শুধু নিয়মিত পেশা হিসেবে খবর পড়ে থাকি।মানুষ কি করে মানুষের প্রতি হিংস্র হতে পারে তার কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরতে চাই যাতে হয়তবা আমাদের টনক নড়তে পারে।একটি দু'টো ঘটনা নয় হাজারো ঘটনা। আল্লাহ মানুষকে শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি করে সৃষ্টি করছেন অথচ তাদের কাজ পশুকেও হারিয়ে ফেলছে তারই ক'টি দেখুন।
কাজে একটু ভুল হলেই ব্লেড দিয়ে হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান কেটে দেওয়া হতো গৃহকর্মী আদুরির। ছ্যাঁকা দেওয়া হতো গরম ইস্ত্রি দিয়ে। প্রতিদিন কেবল এক বেলা খাবার জুটত। দিনের পর দিন এ রকম চলছিল। একদিন নির্যাতনের পর অজ্ঞান হয়ে যায় আদুরি। মারা গেছে ভেবে তাকে ফেলে দিয়ে আসে একটি ডাস্টবিনের কাছে। গত ২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার বারিধারা ডিওএইচএস এলাকার ওই ডাস্টবিনের পাশ থেকে আদুরিকে উদ্ধার করেন স্থানীয় দুই নারী। পল্লবীর একটি বাড়িতে কাজ করত আদুরি। সেখানে গৃহকর্ত্রী ও তাঁর স্বজনেরা তার ওপর এ ধরনের অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছেন।রাশেদা খাতুনের সারা শরীরে তীব্র ব্যথা। যন্ত্রণায় রাতের বেলা ঘুমাতে পারেন না। ব্যথার কারণ হচ্ছে স্বামী তাঁকে ইচ্ছেমতো পিটিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, বাড়ি থেকে তাড়িয়েও দিয়েছে। ২৫ দিন ধরে তিনি বাবার বাড়িতে আছেন। দাবি অনুযায়ী যৌতুক না দেওয়ায় রাশেদার এই হাল। কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের নওদাবস গ্রামের দিনমজুর আবদুল জব্বারের মেয়ে রাশেদার বিয়ে হয় সাত মাস আগে পাশের গ্রামের নূর হোসেনের সঙ্গে। কথা ছিল যৌতুক হিসেবে দেওয়া হবে নগদ ৩০ হাজার টাকা ও একটি বাইসাইকেল। বিয়ের সময় দেওয়া হয় নগদ ছয় হাজার টাকা। বাকি টাকা ও বাইসাইকেলের জন্য তিন মাস সময় চাওয়া হয়। সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও যৌতুক না দেওয়ায় রাশেদাকে পিটিয়ে বের করে দিয়েছেন স্বামী। মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার চরজানাজাত ইউনিয়নের ইলিয়াছ আহম্মদ চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে স্কুলে যাওয়া-আসার পথে এলাকার বখাটে যুবক রাসেল গাজি প্রেম নিবেদনের পাশাপাশি অশালীন প্রস্তাব দিতেন। এতে ছাত্রীটি রাজি না হওয়ায় রাসেল ধারালো অস্ত্রের মুখে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এ সময় ছাত্রীটির চিৎকারে স্থানীয়রা এলে রাসেল পালিয়ে যান। বিষয়টি ছাত্রীটির বাবা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. সুলতান মাহমুদকে জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষক চলতি বছরের ২২ জুন স্কুলের লাইব্রেরিতে সালিস বৈঠকের ব্যবস্থা করেন। এতে ইউপি চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত হন। সালিসে স্কুলছাত্রীকে চরিত্রহীনসহ নানা অপবাদ দিয়ে দোষী সাব্যস্ত করার চেষ্টা করে বখাটে যুবকের পক্ষের লোকজন। উভয় পক্ষের সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে বখাটে রাসেল ও স্কুলছাত্রীকে ৫০ বার বেত মারার সিদ্ধান্ত হয়। শুধু তা-ই নয়, ছাত্রীটিকে স্কুলে যেতেও নিষেধ করা হয়। সিদ্ধান্ত দ্রুত কার্যকরও হয়ে যায়। গ্রামের লোকদের এই ফতোয়ার কারণে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে ছাত্রীটির ।গত ২৯ সেপ্টেম্বর নাটোরের বড়াইগ্রামে কুরষাট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন ওই বিদ্যালয়েরই এক শিক্ষক। বৃষ্টি থাকায় সেদিন ক্লাসে ছাত্রীটি ছাড়া আর কেউ উপস্থিত ছিল না। এই অঙ্কের শিক্ষক ক্লাসে ঢুকে ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করার চেষ্টা করেন। এই ঘটনা দেখে ফেলে দশম শ্রেণীর এক ছাত্রী। তার চেঁচামেচিতে অন্য ছাত্রীরা জড়ো হলে শিক্ষক ক্লাস থেকে বেরিয়ে যান। ছাত্রীটির পরিবার পরে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করে।
ওপরের যে কয়েকটি ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হলো তার প্রতিটিতেই নারী ও শিশুর মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। আমাদের দেশে অহরহ এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। যেন নারীরা কোনো মানুষ নয়।বিভিন্ন সময়ে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন নারীরা। অনেক নারী নিজ যোগ্যতায় ও দক্ষতা গুণে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠাও পেয়েছেন। নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। কিন্তু নিরাপত্তাহীনতার আতঙ্ক এখনো কাটেনি। প্রতিনিয়ত কর্মস্থলে, পরিবারে, রাস্তাঘাটে নারীরা শারীরিক, মানসিক নির্যাতনসহ ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যা, অ্যাসিড-সন্ত্রাসসহ বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে করা জরিপে এ চিত্র উঠে এসেছে। এ পরিসংখ্যান দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে পাওয়া। গণমাধ্যমে আসেনি বা প্রভাবশালীদের ভয়ে বা পুলিশের উল্টো হয়রানির আশঙ্কায় থানায় অভিযোগ দায়ের না করা এমন অনেক ঘটনাই রয়ে গেছে আড়ালে।আইন ও সালিশ কেন্দ্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালে সারা দেশে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয় ৩৬ জন নারীকে, একক ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২০৫ জন, গণধর্ষণের শিকার হন ১২৭ জন, ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে ৮৩ জন নারীকে, ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেছেন আটজন, ফতোয়ার শিকার হয়েছেন ২০ জন, অ্যাসিড-সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ৮০ জন, যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২৯৬ জন, গৃহপরিচারিকা নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১১০টি এবং পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩১২ জন নারী।
দিনে দিনে নারী নির্যাতনের ঘটনা যে বাড়ছে, তা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ২০১২ সালের প্রতিবেদনের দিকে তাকালে বোঝা যায়, ওই বছর ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ২৪১ জন নারীকে, একক ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৬০৯ জন নারী, গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২৬৭ জন, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৯৮ জন নারীকে, ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ১৪ জন। এ ছাড়া বখাটের হাতে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ৪৫৯ জন, গ্রাম্য ফতোয়ার শিকার হয়েছেন ৪৮ জন, অ্যাসিড-সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ৬৮ জন, যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৫৩৮ জন, পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪৮২ জন নারী।বেসরকারি সংস্থা নিজেরা করি-এর সমন্বয়ক খুশি কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিভিন্ন অবস্থানে নারীদের উঠে আসা মানেই তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া নয়। পদ মানেই তো ক্ষমতায়ন নয়। পদমর্যাদা বাড়লেও বাড়েনি নারীর নিরাপত্তা। নারীদের পশ্চাৎপদ চিন্তা দূর করতে হবে। নিজের অবস্থা সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। নারী নির্যাতন রোধে আইন থাকলেও তার যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না । এ ব্যাপারে সরকারকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে । সমাজ ও রাষ্ট্র আন্তরিক হলেই নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।’
নারী নির্যাতনের মাত্রা বেড়েই চলেছে, উল্লেখ করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভানেত্রী আয়েশা খানম প্রথম আলোকে বলেন, ৯০ দশক থেকে আমরা দেখছি নারী নির্যাতনের নতুন পদ্ধতি। নারীর ব্যক্তিগত ইস্যুতে ফতোয়া দেওয়া শুরু হলো। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই আক্রমণ হচ্ছে সমাজের পশ্চাৎপদ গোষ্ঠী নারীদের ওপর।
তিনি বলেন, আরবি শব্দ ‘ফতোয়া’-এর অর্থ ‘জিজ্ঞাসা’ বা ‘আইনসম্পর্কিত মতামত’ ধর্মীয় আইনবিশেষজ্ঞ বা মুফতি প্রদত্ত ও প্রকাশিত বিধানকে ফতোয়া বলে। কিন্তু বর্তমানে ফতোয়ার রূপ একেবারেই ভিন্ন। একশ্রেণীর সুবিধাভোগী মানুষ নারীকে দমিয়ে রাখতে, নির্যাতন করতে, নারীর অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে, নারীর চলার পথকে সংকীর্ণ করে তোলার জন্য নিজেদের মনগড়া কিছু আইন তৈরি করে নারীদের ওপর চাপিয়ে দেয় । গ্রাম্য মাতবর, মাদ্রাসার মোল্লা, মসজিদের ইমাম, স্থানীয় চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বা স্থানীয় প্রভাবশালী লোক এমনকি কখনো গ্রাম্য ডাক্তার একযোগে বা কখনো স্বতন্ত্রভাবে ফতোয়া দিয়ে আসছে। দোররা মারা, হিল্লা বিয়ে দেওয়া, একঘরে করে রাখা, মুখে চুনকালি মেখে প্রদর্শন, পাথর নিক্ষেপ, জানাজা না দেওয়া ইত্যাদি ফতোয়া দেওয়া চলছেই।
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী জানান, উচ্চ আদালত ২০০৯ সালের ১৪ মে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ নীতিমালাসংবলিত রায় দিয়েছেন। যার আলোকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন ২০১০ প্রণীত হয়েছে। তা ছাড়া, ২০১১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালতের দ্বৈত বেঞ্চ বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়ে গৃহকর্মীদের সুরক্ষা বিষয়ে দায়ের করা রিটের রায় দিয়েছেন। এর আগে ওই বছরের ১৩ জানুয়ারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক শাস্তি প্রদান প্রতিরোধে নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন। কিন্তু আদালত প্রদত্ত এসব নির্দেশ ও নীতিমালা শুধু নথির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। বাস্তবে তেমন কোনো প্রয়োগ নেই। বাস্তবায়নের জন্য নেই কোনো মনিটরিং কমিটি। এ ছাড়া কখনো সাক্ষী নাই হয়ে যায়, কখনো বাদী ভয়ে পেছায়। এমন পরিস্থিতিতে নারীর প্রতি সহিংসতা উত্তরোত্তর বাড়ছে।
বাংলাদেশে নারীর ওপর এ নির্যাতন অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা দেশটিতে বেড়েই চলছে যার জন্য সরকারের তেমন কোন জোরালো পদক্ষেপ নেই। নারীর ওপর নিপীড়নকে উৎসাহিত করছে এবং নারীর প্রজননস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলছে। নারীর প্রতি সহিংসতার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশ তার সাড়ে সাত কোটি নারী ও কন্যাশিশুর জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে, যাতে তারা দেশের সামগ্রিক উন্নতিতে অবদান রাখতে পারে।সহিংসতার শিকার নারী ও কন্যাশিশুদের সমর্থন ও স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য ও বাল্যবিবাহ বন্ধে ইউএনএফপিএ সরকারের মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করছে। এ ছাড়া সংস্থাটি নারী নির্যাতন ও বাল্যবিবাহের ঘটনা সম্পর্কে স্থানীয় থানাকে অবহিত করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পুলিশ বিভাগের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে।পোশাকশিল্পে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ইউএনএফপিএ তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং আইন ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করছে। এ ছাড়া নারীর ওপর নির্যাতন প্রতিরোধে ইউএনএফপিএ জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থা এবং বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে।পৃথিবীতে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা আর একটিও যেন না ঘটে, নারী ও কন্যাশিশুরা যাতে একটি নির্যাতনমুক্ত ও ভয়হীন পরিবেশে বসবাস করতে পারে সেজন্য ইউএনএফপিএ বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি আশানুরূপ নয়। বিশেষ করে নারীর মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। নারীর জীবনের সার্বিক উন্নতি ঘটাতে প্রয়োজন আরও সচেতনতার, আরও উদ্যোগের।সত্যিকার অর্থে দেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। এখানে গণতন্ত্রের চর্চা সঠিক পদ্ধতিতে হচ্ছে না। পৃথিবীর সব দেশেই জনগণের স্বার্থ, চিন্তা দেশের রাজনীতিতে প্রতিফলিত হয়। এখানে সেটা কম। এখানে দেখা যায় জনগণের চেয়ে দল বড়, নেতা দলের চেয়েও বড়। বহু রক্তের বিনিময়ে যে গণতন্ত্রের অভিযাত্রা শুরু হয়েছিল আমরা, আজ তা বাধাগ্রস্ত। জনগণের ভোটে সাংসদ নির্বাচন হন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর সংসদ বর্জন করেন। সংসদীয় প্রথাকে অনুসরণ করা হয় না। এখানে কী করে উন্নত মানবাধিকার আশা করতে পারি। এখানে রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো দায়বদ্ধতা নেই। নাগরিক সমাজের কথার কোনো গুরুত্ব্ব দেওয়া হচ্ছে না।যদি গনতন্ত্রের কথাই নেতারা ভাবেন তাহলে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ কেন দিতে পারছে না? আসলে তাদের নিত্যদিনের ঘটনা দেখে মনে হয় ৫% সাংসদের নৈতিকতা আছে বলে মনে হয় না।আজ এক কথা আবার কাল ঘুম থেকে উঠে আর এক কথা। তারা দেশকে ভাল বাসেন না শুধুমাত্র ক্ষমতায় গিয়ে নিজের আখের গুছানোকে প্রাধান্য দেন জীবনের সর্বক্ষেত্রে।এটাই মুল কথা। যারা ইসলামকে ভালবাসেন না, গনতন্ত্রকে ভালবাসেন, সেই গণতন্ত্রের চর্চা প্রতিদিন প্রতিষ্ঠানে, পরিবারে, বিচার বিভাগে, নাগরিক সমাজে করতে হবে সেটাও তো আমরা দেখতে পাইনা। অনেকে বলেন গণতন্ত্রের প্রক্রিয়ার গুণগত পরিবর্তন হলে অন্যান্য বিষয়েও পরিবর্তন ঘটবে যদি তা-ই হয় তাহলে তাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে জন গন দেখতে পায় না কেন?
যেখানে দেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি সংকটে, সেখানে এককভাবে নারীর মানবাধিকার পরিস্থিতি ভালো হতে পারে না। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নারীরা সংকটের মধ্যে রয়েছেন। নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জিত হলেও এবং সভ্যতার অনেক উন্নতি সত্ত্বেও রাষ্ট্র ও পরিবারে নারীর প্রতি সদাচরন করা হছ্ছে না। নারীর জীবনের মানবিক বিকাশ ও তার জীবনের নিরাপত্তা এখনো সংকটমুক্ত নয়। ঘরে, সমাজে, কর্মক্ষেত্রে, রাষ্ট্রে নারী দৈহিক, মানসিক ও অন্যান্য প্রকার নির্যাতনের শিকার।
সমাজে নারি পুরুষের বৈষম্য নিয়ে , মানবাধিকার নিয়ে,বিভিন্ন নারিবাদি আন্দোলন , শুশিল সমাজের সভা সেমিনার ও সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ কি এই সামাজিক অনাচার কমাতে পেরেছে? আসুন যারা ইসলাম সম্পর্কে কটুক্তি করেন তারা কি আসলে সত্যিই এ কথাগুলো বলেন না বিদেশী প্রভূদের খুশি রাখার জন্য বলেন।আমি তাদের অনুরোধ করবো ইসলামের সৌন্দর্য দেখার জন্য ইসলামের ইতিহাসের কাছে যান।আলকুরআনে ও ছহি সূন্নাহর কাছে যান,মদিনায় রাসূল সা: এর নেতৃত্যে যে ইসলামি সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার স্বাধ গ্রহন করুন তাহলে বুঝতে পারবেন ইসলাম কিভাবে নারি ও পুরুষের সামাজিক জীবনের সৌন্দর্য প্রতিষ্ঠিত করেছিল।আজকের জগতে যারা ইসলামের নেতৃত্য দিছ্ছে তাদের পুরপুরি এ দু'টি সনদের কাছে না যাওয়ার কারনে সেই সৌন্দর্য মানুষ দেখতে পাছ্ছে না।সূরা বনি ইসরাইলের ২৩/২৪ আয়াত দেখুন পিতা মাতা ও সন্তানের কি সম্পর্ক গড়ে উঠার কথা বলা হয়েছে।সন্তানকে বলেছে যেন পিতামাতা যদি বৃদ্ধ হয়ে যায় তাদের সামনে তাদের ব্যাপারে "উহ্" শব্দটিও করতে পারবে না।আবার রাসূল সা: বলেছেন,সন্তান যখন ৭ বছরে পা দিবে তখন তাকে নামাজের তাগিদ দাও আর ১০ বছর হলে যদিন অনুগত না হয় তবে মৃদু প্রহার কর।আর সূরা লোকমানের ১৪ আ্য়াতে আল্লাহ যে নির্দেশ দিয়েছেন মানবজাতিকে - মা সন্তানকে গর্ভধারন করেন কষ্টের পর কষ্ট করে আর লালন পালন করেন দুটি বছর সে কৃতজ্গতা কি মানুষ করে আল্লাহে আর পিতামাতার।সমাজ বিনির্মান ও পারিবারিক সমতা আনার একমাত্র পথ আল্লাহর ভয়।সূরা নিসার ১ আয়াতে আল্লাহ বলেন,' ওহে মানব গোষ্ঠী! তোমাদের প্রভূকে ভয়ভক্তি কর যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একই নফ্স থেকে আর তার জোড়াও সৃষ্টি করছেন তার থেকে,আর উভয় থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু নর ও নারি,অতএব শ্রদ্ধা কর আল্লাহকে।" আর এই সূরার ১৪ আয়াত পর্যন্ত বর্ননা করছেন সম্পদ কিভাবে বন্টিত হবে এতিমের , আত্বীয় স্বজন ও নিজের সন্তান ও পরিবারে।তাহলে তথাকথিত মানবতাবাদিরা যে বৈষম্যের কথা বলেন তারা মানব রচিত মতবাদের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েই কথাগুলো বলেন।একজন মুসলিমের সনদ হলো দু'টো আর তা আলকুরআন ও রাসূল সা: এর মুখনিসৃত বানি বা ছহি হাদিস।যদি সে মানুষটি ইসলামকে কটাক্ষ্য করে তাহলে বুঝতে হবে তার ইসলামের পিৎরাত নষ্ট হয়ে গিয়েছে।ইসলাম মানবজাতির জন্য পরিপুর্ন বিধান দিয়ে রেখেছে সেটা রাষ্ট্রের সর্বস্তরে ও প্রতিটি জীবনে না আসা পর্যন্ত কখনো সে সৌন্দর্য দেখা সম্ভব নয়। এর জন্য আমাদের সবাইকে সে মানুষগুলো তৈরি করতে হবে সর্বাগ্রে।তা না করে মানব রচিত মতবাদের ভিত্তিতে যতই প্রচেষ্টা চালানো হোক সমাজের এই অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব নয়।
বিষয়: বিবিধ
১৬১৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন