দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্ত হাতে গড়ে তোলা না হলে দুর্নীতি উচ্ছেদ কখনো সম্ভব নয় আর যারা এ ব্যাপারে বদ্ধপরিকর নয় তারা কখনো প্রকৃত গণতান্ত্রিক হতে পারে না
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৬ নভেম্বর, ২০১৩, ১২:৩৯:০৭ দুপুর
একসময় এই উপমহাদেশে লেখাজোখা, সংবাদপত্র কিংবা গণমাধ্যম ছিল সৃজনশীল শিক্ষিত মানুষের সমাজ পরিবর্তনের একটি ভরসাস্থল; অথবা তাঁদের গঠনমূলক চিন্তাচেতনার বহিঃপ্রকাশের একটি নির্ভরযোগ্য ক্ষেত্র। তাতে যাঁরা রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন এবং যাঁরা পরিচালিত হতেন, তাঁদের মধ্যে যোগাযোগের একটি দ্বিমুখী ধারা প্রবহমান ছিল। পত্রপত্রিকা কিংবা গণমাধ্যমের জগৎ এখন আরো সুবিস্তৃত হলেও মূল উদ্দেশ্যটি কিন্তু আমাদের দেশে ক্রমশ স্তিমিত হয়ে পড়ছে। যে কর্তৃপক্ষ কিংবা যাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য পত্রপত্রিকা কিংবা টেলিভিশনসহ গণমাধ্যমের অন্যান্য ধারায় জনগণ অথবা সমাজের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরা হচ্ছে, সেগুলো যেন আগের মতো আর তেমন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারছে না। শেষ পর্যন্ত সবই যেন অরণ্যে রোদনে পরিণত হচ্ছে।আমাদের রাজনীতিবিদ ও তথাকথিত সমাজসেবকরা মুখে গনতন্ত্রের কথা বললেও কাজে বাস্তবায়িত করতে পারেন না তাদের অনৈতিকতার কারনে।রাজনীতিবিদরা তাদের ইস্তেহার দিয়ে ক্ষমতায় আসলেও লুটপাট করে ৫ বছর কাটিয়ে দেয়।তার ফলে জন-গন যেখানে থাকার সেখানেই থাকে।অনেক সময় প্রান্তিক জন-গনের ভাষা পত্র পত্রিকায় আমরা এভাবে দেখতে পাই ," আনডা ভোট আইলে হেতারগ লাই যুদ্ধ করি আর হেতারা ভোট শেষ অইলে আমগরে চিনে না।" এটাই বাস্তবতা।
৯০% মুসলিমের দেশে গনতন্ত্র আসার কথা ছিল না কিন্তু শাসকশ্রেনী যদি প্রকৃত গনতন্ত্রের পথে চলতো ও একে অন্যকে শ্রদ্ধার সাথে দেখতো তাহলে তো অরাজোকতার সৃষ্টি হতো না।গত ৪১ বছর প্রতিটি সরকার দেশের উন্নয়নকে প্রাধান্য না দিয়ে অতীতের খারাফ দিকগুলো নিয়ে এসে দেশে উন্নয়নের পরিবর্তে অরাজোকতা সৃষ্টি করেছে।এক সরকার কোন পদক্ষেপ নিলে পরের সরকার এসে সেগুলো ভাংচুর করছে বা বিরোধীদলকে জেলে পুরিয়ে দিছ্ছে কারনে বা অকারনে যার সাথে দেশের উন্নয়নের কোন সম্পর্ক নেই।
বৃহত্তর জনস্বার্থের সমষ্টি বা গোষ্ঠীগত কায়েমি স্বার্থের কাছে গুরুত্ব হারিয়ে ফেলছে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, নাগরিকসমাজের বৈশিষ্ট্য ও জনগুরুত্বসম্পন্ন বিষয়াদি ক্রমশ যেন জবাবদিহিতাহীন, আধিপত্যবাদী ও লা-পরোয়া মনোভাবাপন্ন রাজনৈতিক মহলের কাছে হালে পানি পাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যাপারে গণমাধ্যমের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টাকে অবজ্ঞা করে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল তাদের নিজ নিজ অবস্থানকেই শেষ পর্যন্ত সুদৃঢ় করার চেষ্টা করেছে। তাতে সমস্যা যে তিমিরে ছিল, সে তিমিরেই রয়ে গেছে। আপামর জনসাধারণ কিংবা দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সংকট নিরসনে তেমন কোনো অগ্রগতি সাধিত হয়েছে বলে মনে হয় না। বিরাজমান সমস্যা সমাধানের চেয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে ছলচাতুরীর আশ্রয় নেওয়াই যেন দেশের বর্তমান রাজনীতির মূলমন্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। তদুপরি সরকারের শেষ সময়ে এসে তড়িঘড়ি করে এমন কিছু আইন পাস করিয়ে নেওয়া হয়েছে, যা কোনোমতেই জনস্বার্থ কিংবা দেশের স্বার্থে কোনো অনুকূল ভূমিকা পালন করতে পারবে না বলে আমরা অনেকে বিশ্বাস করি। সংসদে গৃহীত তেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংশোধনী বিল ২০১৩' ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ (টিআইবি) এ সংশোধনী বিলে সম্মতি না দিতে রাষ্ট্রপতির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল অভিযোগ করেছেন, মেয়াদের শেষ সময়ে এসে সরকার প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘনে সর্বোচ্চভাবে সচেষ্ট হয়েছে। তারা শেষ মুহূর্তে অত্যন্ত চুপিসারে এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিলটি পাস করিয়ে নিয়েছে। যেসব আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ দুর্নীতি দমনবিষয়ক সংশোধনী ও সুপারিশমালার সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাঁদের না জানিয়ে ও কোনো মতামত না নিয়েই সরকার শেষ পর্যন্ত তড়িঘড়ি করে আইনটি পাস করিয়ে নিয়েছে। তাতে দুর্নীতি দমনে দুদকের নিরপেক্ষতা, স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান- সংবিধানের এ ধারার সঙ্গে দুর্নীতি দমনবিষয়ক সংশোধনীগুলো এখন সাংঘর্ষিক হয়ে পড়েছে। দুদক তাই প্রশ্ন তুলেছে, সংবিধানের সবাই সমান হলে এ আইন কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে না? প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত ও মামলা দায়ের করার জন্য সরকারের পূর্ব অনুমতির যে বিধান বর্তমান সংশোধনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তা কোনোমতেই প্রশাসন থেকে দুর্নীতি উচ্ছেদ ও আইনের শাসন (সব নাগরিকের সম-অধিকারের ভিত্তিতে) প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সহায়ক হবে না বলে টিআইবিসহ আইন বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, নতুন সংশোধনীর ফলে দুদক এখন একটি দন্তনখরহীন বিড়ালে পরিণত হয়েছে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, আইনটির ৩২(২) ও ৩২(ক) ধারার প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়াটি ও সংশোধনীর মর্মার্থ পুরোপুরি অসাংবিধানিক, বৈষম্যমূলক, প্রতারণামূলক, আত্মঘাতী ও গভীরভাবে হতাশাব্যঞ্জক। আগের আইনে সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে দুদকের একক ক্ষমতা ছিল। সেখানে এখন ১১৫ বছরের পুরনো ফৌজদারি কার্যবিধি দুদক আইনে ঢুকিয়ে জজ, ম্যাজিস্ট্রেট ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা করার আগে সরকারের অনুমতি নেওয়ার বিধান সংযোজিত করা হয়েছে। তাতে এ আইনটি এখন অসাংবিধানিক হয়ে পড়েছে বলে আইন বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেছেন। নতুন সংশোধনীর ফলে দুদকের সাহসী ও দক্ষ কর্মকর্তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হবেন না বলে তাঁরা মত প্রকাশ করেছেন। ফলে এ সংশোধনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন দুদকের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহাবুদ্দিন। তিনি অভিযোগ করেছেন, বর্তমান আইন অসাংবিধানিক। আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান- বর্তমান সংশোধিত আইন তার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এ আইনে সব পর্যায়ে দুর্নীতি উচ্ছেদ বা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা মোটেও সম্ভব হবে না।
জাতীয় জীবনের সব পর্যায় থেকে কালব্যাধি দুর্নীতি উচ্ছেদের ব্যাপারে কঠোরহস্ত না হয়ে শাসনক্ষমতার শেষ পর্যায়ে এসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার এমন একটি গণবিরোধী কালাকানুনকে সংশোধনী আকারে কিভাবে দুর্নীতি দমন আইনের সঙ্গে সংযোজিত করল, তা কারো কাছে বোধগম্য নয়। সে কারণেই টিআইবি এ সংশোধনী বিলে সম্মতি না দিতে রাষ্ট্রপতির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। তবে এ বিলটি সংবিধানের সঙ্গে নাগরিকদের সম-অধিকারের প্রশ্ন সাংঘর্ষিক বিধায় অনেক অধিকার-সচেতন নাগরিকই এর বৈধ্যতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতের শরণাপন্ন হবেন বলে অনেকের বিশ্বাস। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ (টিআইবি) থেকে শুরু করে বাংলাদেশের বিভিন্ন নাগরিক অধিকার ও সামাজিক সংস্থা সরকার গৃহীত এ বিলের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। তা ছাড়া দেশের অধিকার-সচেতন মানুষ ক্রমেই এ সংশোধনীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে শুরু করেছে বলে জানা গেছে।দুর্নীতি বাংলাদেশের এমন এক কালব্যাধি, যা ইতিমধ্যেই আমাদের সমাজজীবনের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে দুর্নীতি এখন একটা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা কায়েম করে ফেলেছে; যা উচ্ছেদ করা এত সহজ হবে না। স্বাধীনতার পর অতি অল্প সময়ের মধ্যে দুর্নীতির প্রকোপ অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে যায়। ফলে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে এর প্রতিকার ও প্রতিরোধের ব্যাপারে সর্বত্র দাবি জানানো শুরু করে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৪ সালে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকার তদানীন্তন দুর্নীতি দমন ব্যুরোকে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিশনে পরিণত করার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু বিভিন্ন আইনি ক্ষমতা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার অভাবে দুদক নামক প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়া দুর্নীতির বিস্তারকে কাঙ্ক্ষিতভাবে রোধ করতে পারেনি। বিগত নির্বাচনের আগে দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল দুর্নীতি উচ্ছেদের ব্যাপারে সোচ্চার হলেও বর্তমান সরকারের ক্ষমতা শেষ হওয়ার কিছু আগে দুর্নীতি দমনে একটি শক্তিশালী সংস্থা হিসেবে দুদদকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কিছু প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে তার জন্য যথাযথ আইন পাস করা অত্যন্ত জরুরি বলে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেছিলেন, জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশনেই ২০০৪ সালে প্রণীত দুর্নীতি দমন আইনে যথাযথ সংশোধনী আনা হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন সংশোধনী এনে যেভাবে বিলটি সংসদে পাস করা হয়েছে, তাতে দুদকের নিরপেক্ষতা, স্বাধীনতা ও কাঙ্ক্ষিত কার্যকারিতা বরং প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।
বিগত 'ওয়ান-ইলেভেনের' ঘটনার পর সামরিক বাহিনী সমর্থিত তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিশেষ করে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তখন থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করা হলেও তার ছিল না প্রয়োজনীয় অনেক আইনি শক্তি বা ব্যবস্থা। তারপর ২০০৮ সালে ক্ষমতাবলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারও দুর্নীতি দমন কমিশনকে প্রকৃত অর্থে একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার তাগিদ অনুভব করে। তারই ধারাবাহিকতায় কয়েকটি বিশেষ কমিটি প্রায় তিন বছর ধরে কাজ করে দুদকের জন্য বেশ কিছু সুপারিশ তৈরি করেছিল। সে সুপারিশমালা বিল আকারে অনেক দিন পড়েছিল সংসদীয় কমিটিতে এবং সংসদের শেষ অধিবেশনের শেষ সময়ে এসে যেসব আইন বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক নেতা বিভিন্ন সুপারিশের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাঁদের কোনো মতামত না নিয়েই বিলটি চুপিসারে পাস করানো হয়েছিল। বিষয়টি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের জন্য একটি বিশেষ কলঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ সংগত কারণেই এ বিষয়কে টিআইবি ও দুদক যেভাবে গ্রহণ করেছে, তা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের জন্য কোনোভাবেই সুখকর হতে পারে না। কারণ নিজেদের অর্থনৈতিক কিংবা প্রশাসনিক দুর্নীতি ঢাকার জন্য যে বা যারাই দুদককে নিষ্ক্রিয় করে রাখতে চাইবে, তারাই শেষ পর্যন্ত তার শিকারে পরিণত হতে বাধ্য। কারণ কথায় বলে ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। ক্ষমতায় দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার আগেই আওয়ামী লীগ নেতারা দুদক নিয়ে যে গণবিরোধী কালাকানুনের সূচনা করে গেলেন, তার খেসারত কাউকে না কাউকে তো দিতেই হবে।বাংলাদেশের বর্তমান আর্থসামাজিক ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে মূলত দুর্নীতি ও মূল্যবোধগত অধঃপতন থেকে। দুর্নীতি শুধু আমাদের জন্য কিছু সামাজিক সমস্যাই সৃষ্টি করেনি, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে করেছে বিপর্যস্ত এবং রাজনীতিকে অনেকাংশে করেছে কলুষিত। ভুলে গেলে চলবে না যে মূলত দুর্নীতির কারণেই আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কাঙ্ক্ষিতভাবে অগ্রসর হতে পারছে না এবং রাজনীতি দুর্বৃত্তায়নের শিকারে পরিণত হচ্ছে প্রতি পদে পদে। এ অবস্থায় প্রশাসনকে আইনি মারপ্যাঁচে জবাবদিহিতা কিংবা জনস্বার্থ থেকে বিচ্ছিন্ন করা কোনো গণমুখী রাজনীতিকের কাজ হতে পারে না। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কিংবা বিচারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আগে যদি সরকারের অনুমতি নিতে হয়, তাহলে দুর্নীতি দমন কমিশন স্বাধীন হলো কিভাবে? সে প্রশ্ন তুলেছেন দুদকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহাবুদ্দিন! তিনি অভিযোগ করেছেন, দুর্নীতি দমন আইনে এত বড় বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে যে তা কখনোই প্রতিষ্ঠা পেতে পারে না। জনগণ এর বিরুদ্ধে দাঁড়াবে বলে দুদকের চেয়ারম্যানের দৃঢ় বিশ্বাস। এ অবস্থায় শেখ হাসিনার দল কিভাবে বিশ্বাস করে যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের প্রণীত আইন আসলেও কোনো কাজে লাগবে?
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ নিজে একজন আইনজীবী। জাতীয় সংসদে সদ্য পাস হওয়া দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংশোধনী বিলে সম্মতি না দিতে রাষ্ট্রপতির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশের (টিআইবি) কর্মকর্তারা। কিন্তু রাষ্ট্রপতি তাতে কর্ণপাত করেননি। যথারীতি স্বাক্ষর করে দিয়েছেন। তাতে টিআইবি ও দুদকসহ প্রায় সব মানবাধিকার ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রপতি এবং আওয়ামী লীগের ওপর বেশ অসন্তুষ্টই হওয়ার কথা। কারণ দেশ থেকে দুর্নীতি উচ্ছেদের লক্ষ্যে দুদককে শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারেই উল্লেখ করা হয়েছিল। টিআইবি, দুদকসহ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার মানুষ দেশ থেকে দুর্নীতি উচ্ছেদের ব্যাপারে রাজনৈতিক মহলের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে তাই বিভ্রান্ত ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। দুর্নীতি উচ্ছেদ করার বিষয়টি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ।আমদের রাজনীতিবিদসহ অনেকে জানেন কিনা জানি না প্রধানমন্ত্রি শাসিত সরকারে প্রেসিডেন্টের জানাযা পড়ানো ছাড়া কোন কাজ নেই।তার পরও অনেকে সেখানে যান তিনি যেন হস্তক্ষেপ করেন।প্রেসিডেন্টকে যা বলা হয় তিনি তা-ই করবেন এর বেশি কিছু করার তার ক্ষমতা নেই।
আগামী ১৪ জানুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন সম্পন্ন হতে হবে।গনতান্ত্রিক দেশে ক্ষমতাশীন সরকার সংবিধান অনুসারে ৫ বছর পর ক্ষমতা হস্তান্তর করবে এটাই স্বাভাবিক তা না করে তড়িগড়ি নির্বাচনের তারিখ ঘোষনা করেছেন শেখ হাসিনা অথচ জনগণ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলের ইশতেহার সম্পর্কে কোনো ধারণাই পায়নি। কিন্তু নির্বাচন যেভাবে সাজানো হচ্ছে, তাতে শেষ পর্যন্ত কোনো দলের রাজনৈতিক ইশতেহারের আর প্রয়োজন হবে কি? হয়তোবা সে কারণেই দুর্নীতি দমন আইন পাস করা হয়েছে চুপিসারে, অত্যন্ত তড়িঘড়ি করে।দেশের সার্বিক রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এমন এক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে, যা এর আগে আর তেমনভাবে কেউ প্রত্যক্ষ করেনি। আগামী ছয়-সাত সপ্তাহের মধ্যে দেশের রাজনীতি কী পরিণতি লাভ করবে, তা কেউ জানে না বলেই এত উদ্বেগ, এত সংশয় ও এত উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে পদে পদে। এ রাজনীতি কোনোমতেই কোনো স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক ধারা ও ঐতিহ্য বহন করে আসেনি। বাংলাদেশের জন্য হয়তো আরো অনেক বিস্ময় অপেক্ষা করছে। কিন্তু অগণতান্ত্রিক পন্থা অবলম্বন করে আমরা কেন দেশের ভবিষ্যৎকে পদে পদে কণ্টকাকীর্ণ ও দুর্বিষহ করে তুলি? তার পরিণতি সাধারণত ভালো হতে দেখা যায় না। কিন্তু সব কিছু জেনেশুনেও বাংলাদেশ এক অভিশপ্ত ঘূর্ণাবর্তে ঘুরপাক খেয়ে যাচ্ছে। তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। এসব চিন্তায় বাংলাদেশের মানুষ যখন বেশ কিছুটা হতবিহ্বল তখনই দুদককে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অপ্রত্যাশিত খবর আমাদের অত্যন্ত হতাশ করে তুলেছে। এসব ব্যাপারে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক মহল ও বিরোধী জোটগুলোর উচিত জনগণের সামনে গণতান্ত্রিক বিধিবিধানসম্মত সুস্পষ্ট ও বলিষ্ঠ বক্তব্য ও প্রতিশ্রুতি তুলে ধরা। যারা দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে বদ্ধপরিকর নয়, তারা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য উপযুক্ত হতে পারে না।
বিষয়: বিবিধ
১১১৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন