প্রচন্ড শীতের কবলে পড়ে প্রান্তিক ও চিহৃমূল লাখো মানুষ যা দেখার কেউ নেই।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৫ নভেম্বর, ২০১৩, ১২:৪৭:১৯ দুপুর
কি এক আশ্চর্য পৃথিবী! ভেবে অবাক হই বার বার।এ ধরনীর রুপ সৌন্দর্য নিয়ে কত কবি সাহিত্যিক না তাদের হৃদয়ের আল্পনা এঁকেছেন।বিশেষ করে আমার দেশ যাকে সোনার বাংলায় আখ্যায়িত করে গান রচিত হয়েছে।সারা দশে সবুজের সমারোহ এককালে আমাদের হৃদয়কে আন্দোলিত করতো।তার সাথে নদ নদী , হাওর , বাঁওড়,মাঠভরা ধানক্ষেত,কৃষকের গোলাভরা ধান।সে আজ আজ অকল্পনীয় চিন্তা।যে কৃষকের হাতে ছিল তার সারা বছরের জীবনধারনের মেঠো জমি সে এখন অন্যের জমিতে খেটে খায় ।নদীগুলো শুকিয়ে একাকার,কৃষকের ধানের জমি আজ বিলীন প্রায়।হাওর বাঁওড় নেই আগের মত ,গাছপালা কেটে উজাড়।পরিবেশ দূষনে জনজীবন বিপর্যস্ত।মানুষ মেশিনের মত চলছে টানা পোড়নের জীবন যাত্রাকে অব্যাহত রাখতে।বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ।যদিও এর প্রাকৃতিক সম্পদ সীমিত তবুও এ দেশ পরিচালিত হচ্ছে ক্ষুদ্র মুক্ত অর্থনীতির কাঠামোয়। ১৬ কোটি মানুষের এই দেশের উন্নয়নযাত্রা তাই বিশ্বব্যাপী বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। তিন দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক উন্নয়ন বেশ ইতিবাচক হলেও রাজনৈতিক আস্হিরতার কারনে পিছিয়ে পড়ছে।এদেশের মানুষ বড় বড় বিপর্যয়েও হেরে যেতে শিখেনি বরং নতুন উদ্যম নিয়ে সামনে এগিয়েছে।
গত কয়েক বছর থেকে বিজ্ঞানীগন পৃথিবীর আবহাওয়া সম্পর্কে যে তথ্য দিয়েছেন তার ফলাফল কিছুটা হলেও আমরা পেতে বসেছি।মাহাশুন্যে ভাসমান পৃথিবী নামক গ্রহে কেন এবং কিভাবে এই জীব জগৎ সৃষ্টি হলো এবং এই জীব জগতের স্হায়িত্ত রক্ষায় মানুষের ভূমিকা কি হওয়া দরকার সেই জ্ঞান না থাকায় আবহাওয়া বিপর্যয়ের অশনীসংকেত দিছ্ছে আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা।পন্ডিতগন প্রতিনিয়ত তাঁদের জ্ঞানগর্ব কল্পকাহিনী ছেপে যাছ্ছে। কে আছে শোনার? কে আছে বাস্তবায়ন করার? বিজ্ঞানীগন বলে আসছেন আবহাওয়া এক ভয়ন্কর অবস্হা সৃষ্টি করবে বিশ্বজুড়ে।পড়বে।আমরা প্রতি মুহূ্র্তেই প্রকৃতির বৈরি স্বভাব লক্ষ্য করছি।বেশ কয়েক বছর আগে একটি আর্টিকেল পড়েছিলাম।সেখানে বলা হয়েছিল,২০১০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে ভয়ন্কর অবস্হায় পড়বে এই গ্রহটি।আমরা ইত্যবসরে অনুভব করতে শুরু করেছি পৃথিবীর তাপদগ্ধতা। যার ফলে কোথাও ঘন ঘন বারি বর্ষন হছ্ছে,পানি বন্দী হছ্ছে বিভিন্ন অন্চল।বায়ুর গতিবেগ বেড়ে যাছ্ছে এবং ঘূর্নিঝড়ে রুপান্তরিত।ভূপাতিত হছ্ছে বড় বড় গাছপালা। এতে করে মানুষের অক্সিজেন ধারন ক্ষমতা কমে যাছ্ছে।অতীতের সারা দিনের বৃষ্টিপাতের গড় পরিমান হবে বর্তমানের আধাঘন্টার বৃষ্টি।আমরা এখনি লক্ষ্য করছি আভহাওয়ার পূর্বাভাষ ও কার্যকর করা কঠিন হছ্ছে।
শীতের সময় এসে পড়েছে বেলা গড়ালেই মলিন আবছা অন্ধকার ঘনিয়ে আসে এখন। খুব তাড়াতাড়ি নেমে আসে সন্ধ্যা। আকাশে জমে ওঠে হালকা কুয়াশার স্তর। গা শিরশির করা হিমেল স্পর্শ বুলিয়ে দেয় মৃদু হাওয়া। এসবই জানিয়ে দিচ্ছে শীতের আগমনী। অগ্রহায়ণ মাসের প্রথমার্ধ প্রায় ফুরিয়ে এল। দেশের প্রান্তিক এলাকাগুলোতে, বিশেষত উত্তরাঞ্চলে এখন বেশ শীত। বরাবরই রাজধানীতে শীত আসে একটু দেরিতে। এখনো গরম কাপড়চোপড় দেখা যাচ্ছে না নগরবাসীর গায়ে। কোট-জাম্পার-চাদরের বাক্সবন্দী দশা ঘুচতে শুরু করেছে, তবে লেপ-কম্বলের আরও অন্তত সপ্তাহ দুয়েক আটক থাকতে হবে। সাধারণত ডিসেম্বরের আধাআধি না যাওয়া পর্যন্ত ঢাকার শীত লোকজনকে লেপ মুড়ি দিতে বাধ্য করার মতো শক্তিমান হয়ে ওঠে না। আবার ফেব্রুয়ারি শুরু হতে না হতেই হাওয়া বদলের রেশ।
দাপুটে হোক বা দুর্বল, রাজধানীতে কিন্তু শীত নিয়ে রকমারি আয়োজনের কোনো ঘাটতি থাকে না। হেমন্তের শুরু থেকেই পাড়া-মহল্লা, বাজার, অফিস এলাকার ফুটপাত দিয়ে বসে গেছে পিঠা তৈরির দোকান। বিকেল থেকে ভাপা, চিতই, তেলের পিঠা বিক্রি হচ্ছে দেদার। কাঁচাবাজারে শিম, মুলা, কপি, বরবটি, টমেটোসহ শীতের সবজিগুলো এসেছে শীত আসার আগেই। খেজুরের রস দুর্লভ, তবে চলে এসেছে নতুন পাটালি। রসনায় শীতের স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে পুরোপুরি। সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও পড়েছে শীতের সাড়া। নানা ধরনের আয়োজনে উৎসবমুখর হয়ে উঠছে ঢাকার মঞ্চ-মিলনায়তনগুলো।তবে কত ভাগ লোক এগুলো ভোগ করতে পারছে।চেয়ে দেখুন ফুটপাতে,বাসষ্টেশন,রেলষ্টেষন,ব্যাস্তএলাকাগুলোতে,বস্তিগুলোতে,ডাষ্টবিনের পাশে,আমার আর আপনার বাড়ির পাশেই ভাংগাচুরা টিনচালাগুলোতে যারা বাস করে।প্রচন্ড ঠান্ডায় শিশু,কিশোর,মধ্যবয়সী ও প্রৌড় মহিলা পুরিষ কিভাবে একটু কাপড় জড়িয়ে রাত কাটিয়ে দেয়।আর তার পাশেই গরমের দিনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আবাসন আবার শীতে উন্নত মানের লেপ কম্বল ও রুচিকর খাবারের সমারোহ।ওরাই আমাদের বাসাগুলোর রান্না বান্না পরিষ্কারের কাজ করছে সামান্য বেতনে।রাসূল সা: অধিনস্তদের সম্পর্কে বলেছেন, তোমরা যা খাও তাদের তা খেতে দিবে , তোমরা যা পর তাদের তা পরতে দিবে।আমরা কি তাই করি? না করি না।যাকাতের সময় খুঝতে থাকি কোথায় সস্তা কাপড় পাওয়া যায়।খাবারের সময় উছিষ্ট যদি থাকে তা-ই তাদের ভাগ্যে জোটে।তারাও যে আমার মত মানুষ,তাদেরও যে আমার মত মন ও সাধ আছে তা আমাদের ভাবনায় যুক্ত হয় না।আমরা এত স্বার্থপর কেন?
অগ্রহায়ণের পাকা ফসল কৃষিনির্ভর আমাদের জনজীবনে নিয়ে আসে স্বছ্ছলতা। শীতকালটি তাই আমাদের দেশে আনন্দময়, উৎসবমুখর হয়ে আছে আবহমানকাল থেকে। আবার উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে প্রচণ্ড শীতে দরিদ্র অসহায় মানুষের প্রাণহানিও ঘটে।প্রতিবছর যেভাবে মানুষের অসহনীয় জীবন ও মৃতের খবর ছাপা হয় তা দেখে আমরা কি ভাবতে পারি সভ্য সমাজের আমরা ক'জন? এভাবে আনন্দের গায়ে লেগে যায় বিষাদের দাগ। এসব আর্তজনের জন্য সহমর্মিতার হাতও বাড়িয়ে দেন বহু মানুষ।যারা শীত আসার আগেই পরিকল্পনা করেন কিভাবে তাদের সামন্য পোষাক হাতে ধরিয়ে দিবেন।তবে এ সামান্য পোষাক কি তাদের রক্ষা করবে খোলা আকাশের নিছে ঝর ঝরে পতিত কুয়াশার টিপ টিপ বারি বর্ষনকে।তাদের জন্য স্হায়ী আবাসন প্রয়োজন।সরকার ও ধনাড্য পরিবার গুলো যদি এগিয়ে আসেন তাহলে তাদের এই সমস্যা সমাধান সম্ভব।
এত প্রতিকূল থাকা স্বত্বেও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি অর্জনের পিছনে কয়েকটি বিশেষ দিক চিহ্নিত করা যায়।বাংলাদেশের একটা সামাজিক পুঁজি গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন বেসরকারি উদ্যোগ, সৃজনশীল উদ্যোগ, ক্ষুদ্রঋণ ইত্যাদি ঘটছে।আমাদের প্রান্তিক জন গন বৈদেশিক রেমিটেন্সের মাধ্যমে অর্থনীতির চরম উৎকর্ষ সাধন করছে যাতে সরকারের কোন ব্যায় নেই। আর এসব উদ্যোগ সরকারের উদ্যোগের সঙ্গে মিল রেখে এগিয়ে যাচ্ছে, এগুলো সরকারি প্রচেষ্টার পরিপূরক।এটা বাংলাদেশের একটা বড় অর্জন ও শক্তি। বাংলাদেশের মানুষের সহনক্ষমতা অনেক বেশি। বন্যা-ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েও মানুষ পুরোপুরি ভেঙে পড়ে না। কোনো দুর্যোগেই কোনো খাত পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি।দেশের সবচেয়ে বড় বড় বিপর্যয় ট্রাজেডিতে ও আমরা দেখেছি সাধারন মানুষ কত সহনশীল ও ধৈর্যের সাথে দুর্যোগ মোকাবিলা করছে অথচ সেখানে সরকারের মদদ থাকার কথা ছিল পুরোপুরি।
আসন্ন শীতের মৌশুমে বিশেষ করে এখন থেকে সারাদেশ ব্যাপি প্রচার গড়ে তুলুন।যার যা আছে তা নিয়ে এই গরীব চিহৃমূলের পাশে আসুন।আপনার সামান্য সাহায্য তাদের জীবনকে সুখি করবে এতে কোন সন্দেহ নেই।মনে রাখবেন আজকে যাদের চিহৃমূল দেখছেন তারাই যদি সৎ জীবন যাপন করে আখেরাতে জান্নাতে অবস্হান করবে ধনীদের আগে। কারন রাসূল সা: বলেছেন গরীব ধনীর ৫০০ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে।আসুন আমরা জনমত নির্বিশেষে তাদের পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করি।
বিষয়: বিবিধ
১৬২৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন