ইসলাম ও অর্থনীতি সম্পর্কে কিছু প্রাথমিক ধারনা।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২১ নভেম্বর, ২০১৩, ১১:১৮:১৮ সকাল
অর্থনীতিকে সমাজ বিজ্ঙানের একটা অংশ বলা যায় যা সম্পদের উৎপাদন , বিপনন ও ভোগের সাথে জড়িত।প্রতিটি দেশ ও মতবাদ এর ব্যাখ্যা দিতে ছেয়েছে ও তাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক ব্যাবস্হা গড়ে তুলেছে যা দিয়ে দেশগুলো চলছে।গ্লোবালি আমরা যদি পর্যবেক্ষন করি দেখতে পাব অধিকাংশ দেশই ধনতন্ত্র বা সমাজতন্ত্রকে(Capitalism & Socialism) কেন্দ্র করে তাদের অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রন করে থাকে।এ ব্যাপারে প্রত্যেকের একটি নিজস্ব পদ্ধতি রয়েছে।
ধনতন্ত্রে অর্থনীতি নির্নীত হয় প্রাইভেট মালিকানায়।ধনতন্ত্রের এটাই মূল চাবিকাঠি।ধনতন্ত্রে ব্যাক্তি থাকে প্রতিষ্ঠানের মালিক যা প্রাকৃতিক উপাদান (যেমন- লেন্ড) এবং মূলদনজাত দ্রব্য ( যেমন- ফেক্টরির জন্য কাচামাল) কে নিয়ন্ত্রন করেএবং শ্রমিকের মালিক হওয়াকে অবগ্গা করে।সে জন্য দেখা যায় অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারনে ধনী লোক বাড়তে থাকে ও শ্রমিক শোষিত হতে থাকে।এ কারনে সমাজ অস্হির ও গরীব ও ধনীর ব্যবধান বিস্তৃত হতে থাকে।আমাদের দেশ সহ পৃথিবীর অন্যান্য Capitalist country গুলো দেখলে সহজেই আপনারা অনুমান করতে পারবেন।
অন্যদিকে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি গঠিত হয় সরকার বা পাবলিক কে কেন্দ্র করে।ইহা বিকেন্দ্রিত হয় পাবলিক মালিকানায় সম্পদের উৎপাদন ও বিপননের মাধ্যমে যা ধনতন্ত্রের সম্পুর্ন বিপরীত।সমাজতন্ত্রে মানুষ অর্থনৈতিক সুবিধা ভোগ করতে পারে না , অর্থনৈতিক পদ্ধতি(Economic system) অবনমিত হয়, অস্হায়ী এবং অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা করতে পারে না।
ইসলাম অর্থনীতি সম্পর্কে কি বলে?
ইসলাম একটি ব্যাপক প্রতিষ্ঠান যা আমাদের সামাজিক ও আধ্যাত্বিক শিক্ষা দেয়।ইসলামিক অর্থনীতি কোন আলাদা বিষয় নয় বরং সমাজের একটি সাধারন ইসালমিক পদ্ধতির ব্যাবস্হা মানুষের সামগ্রিক জীবনের জন্য।ইসালামিক অর্থনীতির গঠন ব্যাক্তি ও সামাজিক আচরনকে সংরক্ষিত করে।সূরা বাক্কারার ২৯ আয়াতে আল্লাহ বলেন," পৃথিবীতে যা কিছু আছে সব তোমাদের জন্য-ই সৃষ্টি করা হয়েছ." ইসলাম ব্যাক্তি মালিকানাকে স্বীকার করে তবে এই ব্যাবস্হায় কিছু লিমিটেশন রয়েছে অতিরিক্ত সম্পদ সংগ্রহের ক্ষেত্রে।সে জন্য সমাজে অর্থের নিয়ন্ত্রন হয় বিভিন্ন পদ্ধতিতে ও ইসালমিক আইনকে কেন্দ্র করে।সূরা নাজমের ৩৯ আয়াতে আল্লাহ বলেন, "আর এই যে মানুষের জন্য কিছুই থাকবে না যার জন্য সে চেষ্টা না করে।" এই আয়াতে বলা হছ্ছে মানুষের উচিত পরিশ্রমের মাধ্যমে কিছু অনুসন্ধান ও সংরক্ষিত করা।ইসলামি অর্থনীতি গরীব ও ধনীর মধ্যে ব্যাবধান নিয়ন্ত্রন করে কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে পুরো গরিবত্য দূর হবে।আল্লাহ মানুষের পরীক্ষার জন্য ধনী ও গরীবের ব্যাবস্হা রেখেছেন যেন ধনীরা এই দুনিয়াতে পরীক্ষিত হয়। আবার গরিবদেরও এ ব্যাপারে ছবরের মধ্যে থাকতে হবে কারন কোরানে বিভিন্ন আয়াতে বলা হয়েছে আমি কাউকে দেই আবার কাউকে মেপেজোখে দেই।সেজন্য একজন মু'মিনকে এই দুই অবস্হায়-ই ছবর ও কৃতজ্গ থাকতে হবে।জাগতিক মনুষ্য তৈরি মতবাদ থেকে ইসলামি অর্থনীতি সঠিক বলে বিবেচিত হয়েছে।
ইসলামি অর্থনীতির কতেক মূলনীতি:
যে কোন ব্যাবস্হা হোক না কেন সে ব্যাবস্হা চালিত হওয়ার জন্য কিছু নীতি অবলম্বন করা আবশ্যক। তেমনি ইসলামি অর্থনীতি ও সম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু নীতি অনুসরন করে:
১- পৃথিবীর জাগতিক সব সম্পদের মালিক একমাত্র আল্লাহ।আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করে একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অধিকার ভোগ করার জন্য দিয়েছেন। এই আমানতকে যথা যথ ব্যাবহার করা না হলে দুনিয়ায় যেমন বিপর্যয় রয়েছে তেমনি রয়েছে আখেরাতে প্রচন্ড আযাব।সে জন্য যার কাছেই যে সম্পদ আসুক তা হতে হবে হালাল উপায়ে আবার ব্যাবহার ও করতে হবে হালাল উপায়ে।
২-ইসালামি আইন কিছু অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয় অবলম্বন করতে বারন করেছে সেমন- সুদ ও একক বিপনন(Usury & Monopolization) সুদ দেয়া ,নেয়া , সুদের ব্যাবসা করা ও সুদের সাক্ষী থাকা চরম অপরাধ।সূরা বাক্কারার ২৭৫ আ্য়াতে আল্লাহ বলেন ," তারা বলে ব্যাবসা তো সুদের মত অথচ আল্লাহ ব্যাবসাকে হালাল করেছেন আর সুদকে করেছেন হারাম।" সূরা বাক্কারার ২৭৮/৭৯ আয়াতে সুদি কারবারিদের আল্লাহ ও রাসূল সা: এর পক্ষ থেকে যুদ্ধ ঘোষনার কথা বলা হয়েছে।তেমনি যারা মজুদদারি করে বাজারে ক্রাইসিস সৃষ্টি করে অর্থ উপার্জন করে তা ও হারাম করা হয়েছে।
৩-ইসলামি সরকার ইসলামি অর্থনীতি সুপারভাইজ ও নিয়ন্ত্রন করে মানুষের কল্যানের স্বার্থে।ইসলামি আইন অনুযায়ি ইসলামি সরকার ইসলামি অর্থনীতি তথা সম্পদের প্রবাহ ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষন করে।সূরা নিসার ৫৯ আয়াতে আল্লাহ বলেন," ওহে যারা ঈমান এনেছ আল্লাহকে অনুসরন কর ও রাসূলের অনুগমন কর আর তোমাদের মধ্যে যাদের হুকুম দেয়ার ভার দেয়া হয়েছে।যদি তোমাদের মধ্যে কোন মতভেদ দেখা দেয় তাহলে আল্লাহ রাসূলের কাছে ফিরিয়ে দাও।"
৪-ব্যাক্তির মৌলিক প্রয়োজন বিবেচনা ও সমাজের অতি প্রয়োজনীয় (Needy) ব্যাক্তিদের উন্নয়ন।
৫-সম্পদের অপচয় বন্ধ করা।
৬-অর্থনৈতিক লেনদেনের সময় eithical concept অবিরাম স্মরন রাখতে হবে যেমন-সততা, জ্গান,দয়া ও ব্যাক্তি স্বার্থ পরিহার।
৭-মানুষের অর্থ সম্পদের সুরক্ষা করতে হবে।আলি রা: এর খেলাফতের সময় আব্দুল্লাহ ইবনে জামাহ ট্রেজারি থেকে কিছু টাকা ছেয়েছিলেন।আলি রা: বলেছিলেন,ট্রেজারির এই টাকা কড়ি না তোমার জন্য না আমার জন্য এবং এগুলো জন গনের জমাকৃত টাকা।স্মরন করুন তারা দারিদ্র জীবন যাপন করেছেন কিন্তু জন গনের কোন খেয়ানত করেন নি।
৮-যাকাত ,খোমা ও ফিতরার মত বিভিন্ন রকম ট্যাক্স বাস্তবায়ন।
৯-প্রাকৃতিক সম্পদ ও মানুষের দ্বারা অর্জিত হালাল সম্পদের জন্য আল্লাহর নিকট কৃতজ্গতা প্রার্থনা করা।
১০-ছদাকা দেয়ার সময় সুন্দর আচরন করা।সূরা বাক্কারার ২৬৪ আয়াতে আল্লাহ বলেন,"ওহে যারা ঈমান এনেছ তোমাদের দান খয়রাতকে ব্যার্থ করে দিও না কৃতজ্গতাপাশে আবদ্ধ করে ও আঘাত হেনে তার মত যে তার ধন সম্পদ খরচ করে লোকদের দেখানোর জন্য।"
১১-অর্থনৈতিক সাম্যতার সুবিচার করা।ইসলাম ছদাকা ও ইনফাক ফি সাবিলিল্লহতে বিশ্বাস করে। সূরা বাক্কারার ৩ আয়াতে আল্লাহ বলেন ,"আমরা যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে খরচ কর।"
গ্লোবালি অর্থনৈতিক সন্কটের কারন:
পৃথিবীর সব অর্থনৈতিক পদ্ধতি বিভিন্ন রকম সমস্যার সম্মুখিন হছ্ছে।Marxist Theory এর মতে উৎপাদন ও বিপননের সম্পর্কের কারনে এ সমস্যা দেখা যায়।ধনতন্ত্রিরা মনে করে সিংহভাগ সমস্যা আসে প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদের স্বল্পতা থেকে। ইসলামে এ সমস্যা গুলোর সমাধান দেয়ার মত ব্যাবস্হা রয়েছে।ইসলাম এ দু'টো বিশ্বাসে বিশ্বাসি নয়।সবচে বড় সমস্যা হলো মানুষ। যদি মানুষ প্রাকৃতিক সম্পদের যথেচ্ছ ব্যাবহার করে তাহলে অর্থনৈতিক কোন সমস্যা থাকবে না।সূরা ইব্রাহিমের ৩২-৩৪ আয়াতে আল্লাহ বলেন,"আল্লাহ তিনিই মহাকাশমন্ডলি ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন আর আকাশ থেকে বর্ষন করেন পানি তারপর তার সাহায্যে তিনি উৎপাদন করেন তোমাদের জীবিকার জন্য ফলমুল আর তোমাদের জন্য তিনি অধীন করেছেন জাহাজ যেন তার বিধান অনুযায়ি তা সমুদ্রে চলাচল করে আর তোমাদের জন্য বশীভূত করেছেন নদ নদী।আর তিনি অনুগত করেছেন সূর্য ও চন্দ্রকে যারা নিয়ম মত চলমান আর তিনি তোমাদের অধীন করেছেন রাত ও দিনকে।আর তিনি তোমাদের প্রদান করেন তোমরা তার কাছে যা প্রার্থনা কর।আর তোমরা যদি আল্লাহর অনুগ্রহ গননা করতে চাও তোমরা তা গনতে পারবেন না।" এই আ্য়াতগুলো থেকে বুঝা যায় যে আল্লাহ মানুষের জন্য পৃথিবীতে সুন্দর ব্যাবস্হাপনা রেখেছেন তাদের প্রয়ো্জন পূরনের জন্য।মানব জাতি তাদের শ্রেনি বৈষম্য তৈরি করার কারনে একে অন্যকে নিষ্পেষিত করছে।তারা আল্লাহর দয়ার প্রতি অবিচার ও আত্বচর্চা করছে বলে সমাজ অস্হির হয়ে উঠেছে।সম্পদের সুষম বন্টন যদি করা যায় ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে ইসলামিক আইন যদি সঠিকভাবে বলবত করা যায় উৎপাদন ও বিপননের ক্ষেত্রে দারিদ্র কমিয়ে আনা সম্ভব।
বিষয়: বিবিধ
২০৭৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন