বাবা মা'য়ের দোয়া যাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে তেমনি আমাকে ও।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৯ নভেম্বর, ২০১৩, ০৬:৩১:৩৯ সন্ধ্যা

প্রায় ৪ যুগ পার হতে চললো আর জীবন এগিয়ে চলছে সমাপ্তির পথে।খুব-ই মনে পড়ে।বাবা ছিলেন শিক্ষক আর মা ছিলেন গৃহিনী।সেকালে ৪ ক্লাস পড়েছিলেন মা।বাবা আলিগড়ের অধিনে গ্রাজুয়েট হয়েছিলেন।শিক্ষকতাকে বেচে নিয়েছিলেন জীবনে।আমরা ছিলাম এক ভাই ও ৫ বোন।বাবা মা মিলে ৮ সদস্যের পরিবার।বাবার সব মিলে আয় ছিল ৩০০০ টাকা।জমি থেকে খাবার আসতো।আজকের মত অভাব ছিল না।আয়ের সাথে সংগতি রেখে সংসার চালাতেন যাকে বলে মধ্যপন্থা।এক ছেলে হিসেবে আমাকে কাছে কাছে রাখতেন।সকাল বেলা মসজিদে নামাজের পর কুরান হাদিস নিয়ে কথা বলতেন।আমাদের ছোট বেলায় দেখেছি ফজরের নামাজের পর ঘরে ঘরে কুরান তেলাওয়াত হতো যা আজ শহুরে জীবন যাপন পদ্ধতিতে পরিবর্তিত হয়েছে।আমাদের মা চাচিরা তখন পিঠাপুলি বানাতেন আর সবাই অনেক মজা করে খেতাম।আজকাল সেগুলো তো নে-ই বরং যে যৌথ পরিবার ছিল তা একক পরিবারে পরিনত হয়েছে। মা ৪ ক্লাস পড়লেও সন্তান পালনের ক্ষেত্রে যে ভূমিকা নিতেন আজ তা স্মরন করে মোহিত হয়ে যাই।একজন মায়ের জন্য তার সন্তানকে নিরাপদ, সুস্থ ও ফিট রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সবার ক্ষেত্রে তিনি এ দায়িত্ব পালন করেছেন।পড়ার সময়গুলো তদারকি করতেন।আমাদের দু'টো গাভি ছিল।আমরা যখন পড়তে বসতাম মা বড় জাগে দুধ নিয়ে সবাইকে খাইয়ে দিতেন। এটা ছিল তার নৈমিত্তিক কাজ।খাবার সময়গুলো মেইনটেইন করতেন।বাবা স্কুল থেকে আসার আগে সব ঠিক ঠাক করে রাখতেন।বিকেলে আমাদের নিয়ে বসতেন।নাস্তা খেতে খেতে ছোট ছোট কথা বলতেন।কোরান হাদিসের কথা গুলো শুনাতেন।আমার কুরানের হাতে খড়ি হয়েছিল বাবার হাতে।সেকালে স্কুল মাদ্রাসায় উর্দু ফারসি পড়ানো হতো।বাবা এই দুই ভাষাতে পন্ডিত ছিলেন।আশে পাশের মানুষ আসতো বাবার কাছে দ্বীনি কথা শুনার জন্য।আমরা বাবার কাছে মুসা আ: ও ফেরাউনের এর কাহিনী, নুহ আ: এর জাতির কাহিনী, আদ ও সামুদের কাহিনী শুনেছি।আমি একটু দুষ্টু ছিলাম বলে বলতেন নুহের ছেলের মত হবানা।বাবা মা'র প্রতি,নিকট আত্তিয় পরিজন,অধিনস্তদের প্রতি কেমন ব্যবহার করতে হবে আমরা বাবা মা'র কাছ থেকে শিখেছিলাম।আত্তিয় স্বজন আসলে তখন সবাই এতটা খুশি হতো যে কল্পনা করা যায় না।আমাদের একটি পুকুর ছিল যা সব সময় মাছে পরিপূর্ন ছিল।মা বাড়িতে মুরগি পালতেন।বাড়ির পাশেই ছিল সবুজ তরি তরকারির বাগান।মোটকথা সব-ই তাজা পাওয়া যেত।১৫/১৬ বছর হলো বাবা মা চলে গেলেন না ফিরার দেশে। কিন্তু তাদের জীবনের সৃতিগুলো আমাকে তাড়া করে বেড়ায়।স্কুল জীবনে আমি চন্চল ছিলাম।দেরি করে ফিরতাম।আমি না আসা পর্যন্ত মা খাবার খেতেন না।বাবা মাঝে মাঝে রাগ করতেন কিন্তু মা আগলে রাখতেন।

যে দিন মা চলে গেলেন বাবা আর বেশি দিন থাকলেন না।মা চলে যাওয়ার পর বেশ কান্না করেছিলাম।যখন কুরান হাদিসের কাছে গেলাম তখন দেখলাম বিলাপ করা যাবে না।সেজন্য বাবা মারা যাওয়ার পর আর তা করা হয় নি তবে মক্কা হারামে গিয়ে নিভৃত্বে চোখের পানি ফেলেছি।যতটুকু সামর্থ ছিল আল্লাহর কাছে তাদের মাগফেরাতের জন্য দোয়া করেছি।সূরা বনি ইসরাইলের ২৩/২৪ আয়াতে আল্লাহ বলেন ,'তোমার প্রভূ বিধান করেছেন- তাকে ছাড়া অন্যের উপাসনা করো না আর পিতা মাতার প্রতি সৎ ব্যবহার কর।যদি তোমাদের সামনে তাদের একজন বা উভয়ে বার্ধক্যে পৌছায় তাদের প্রতি আ: শব্দটি করো না,তাদের তিরস্কার করোনা বরং বল নম্র কথা।আর উভয়ের জন্য আনুগত্যের ডান মেলে দাও আর বলো হে আমার প্রভূ! তাদের প্রতি করুনা কর যেমন তারা ছোট বেলায় আমাকে প্রতিপালন করেছেন।" সন্তানদের কাজ সব সময় বাবা মাকে স্বরন করা বিশেষ করে ৫ ওয়াক্ত নামাজের পর দোয়া করা।রাসূল সা: বলেছেন প্রতিটি মানুষ মরে যাওয়ার পর তার আমল বন্ধ হয়ে যায় তবে তিনটি জিনিস কাজে আসে।তার কৃত নেক আমল, নেক সন্তান , ছদাকায়ে যারিয়া।আজ কাল আমরা অধিকাংশ নেক সন্তান তৈরির রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছি।কুরানকে কেউ কেউ মুসলমানিত্ব ধরে রাখার জন্য একজন মুয়াল্লেম রেখে কোন ভাবে দায় সারা করছে।ইংলিশ ও অংকের ক্ষেত্রে খরচ করতে অসুবিধে নেই সে যে পরিমান ই হোক কিন্তু হুজুরকে ১০০/২০০ টাকা দিতে হবে সেখানে দরকষাকষি।এটা নিছক কুরানের প্রতি অবজ্গা।নেক সন্তান রেখে যেতে হলে শরিয়তের বিধিবিধান দিয়ে সন্তান লালন পালন করতে হবে।যদি হাফেয বানানো সম্ভব নাও হয় অন্তত ছহিশুদ্ধ কোরান শিক্ষা শহ গুরুত্বপূর্ন সূরাগুলো মুখস্ত করানোর দায়িত্ব বাবা মাকে নিতে হবে যাতে করে সন্তান সঠিক দ্বীন পালন করতে সমর্থ হয়।

গ্রামের মা চাচিরা দেখতাম অবসর সময়ে পূথি পড়তেন যা একালে নেই।সভ্যতার পরিবর্তনে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়।গ্রাম গন্জের অনেক কিছুই এখন হারিয়ে গেছে।আমার বাবা মাকে দেখতাম নাম ধরে আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন।অনেক বিপদের সম্মুখিন হয়েছিলাম। আল্লাহই মানুষের সব সমস্যার সমাধান করেন তবে সন্তানের জন্য বাবা মা'র দোআ ও বাবা মা'র জন্য সন্তানের দোয়া কার্যকরি হয় দ্রুত।জীবনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রেখেছিলেন বাবা মা।কলেজে উঠার আগেই আমাকে স্বাধীন করে দিয়েছিলেন নিজের জীবন বেচে নেয়ার জন্য।আমি কোন বিষয়ে পড়বো তাও নির্ধারন করেন নি।বলেছেন তুমি যে বিষয়ে ভাল করবে সে বিষয়-ই পড়বে।আমার বাবা সুন্দর চিঠি লিখতেন।চিঠির ভাষা ছিল চমৎকার। ১০/১২ লাইনের চিঠিতে থাকতো নামাজ কায়েমের কথা, নীতি কথা , আমাদের জন্য দোয়া কর আর স্বাস্হ ঠিক রেখো ও সময় মত খেয়ো আর শেষে ছোট্ট করে লিখতেন জীবনে হেরে যাওয়ার বাসনা কখোনো মনে আনবে না,কঠিন পরিশ্রম করা শিখবে।আজ ধীর্ঘ পরে আমি যখন আমার ছেলে মেয়েকে ইমেইল করি বা টেলিফোনে কথা বলি সে কথাগুলোরই অবতারনা করি।সুশিক্ষা সর্বকালেই কালজয়ি।এর কোন পরিবর্তন পরিবর্ধন নেই।শুধু পরিবর্তন হয় যুগের ও মানুষের মানুষিকতার।সে জন্য আমার বাবা মা আমার কাছে অতি প্রিয় যদি ও কাছে নেই।তাদের দিক নির্দেশনা ছাড়া বড় হওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারি না।অধিকাংশ সময় ১২ ঘন্টা অফিস করে কখোনো ক্লান্ত হয়ে পড়লে বাবা মায়ের কথা স্মরন করে নতুন উদ্যম নিয়ে আসি।অনেক সময়ই রাতে লিখতে বসি আর তাদের স্পন্সর করতে ভূলে যাই না।

এক ভাই বলে বোনরা বেশ আদর করতো।বড় হওয়ায় তাদের সবার স্নেহ পেয়েছিলাম।ছু'টিতে তাদের কাছে ছুটে যেতাম।কেনা কাটা থেকে কোথাও ঘুরিয়ে নিয়ে আসা সবই বড় বোন করতেন।মায়ের মতই বড় বোনরা আদর করতেন।পড়ালেখার ব্যাপারে অনুপ্রাণিত করতেন।যেবার এস এস সি তে ভাল রেজাল্ট করেছিলাম, বড় বোন আমার অজান্তেই একটি পার্টির ব্যাবস্হা করেছিলেন।ঢাকা থেকে আমার এক আত্তিওকে দিয়ে বই কিনে এনেছিলেন সেটাই ছিল আমার হাতে খড়ি যা আামাকে লিখার জগতে আসতে সাহায্য করেছে। তাদের কেউ কেউ চলে গেছেন তবে সৃতিতে ভাস্মর হয়ে থাকবেন যতদিন বেচে থাকবো।

বিষয়: বিবিধ

৩০৭৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File