গভীর সংকট থেকে দেশকে এগিয়ে নিতে জাতিকে এগিয়ে আসতে হবে।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৪ নভেম্বর, ২০১৩, ০১:৫৬:০৬ দুপুর
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা বিষয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ছে। রাজধানীসহ কোন কোন এলাকায় বিলি করা হচ্ছে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে এমন লিফলেট। গতকাল সাভারের আমিনবাজার থেকে জানা যায়, দুপুরের দিকে বিভিন্ন দোকান ও আশপাশের মার্কেটে কম্পিউটারে কম্পোজ করা একটি লিফলেট বিলি করা হয়, যাতে বাংলাদেশে বিদেশি খুনি ও এজেন্টরা সক্রিয় হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়। দেশে নৈরাজ্য ও অশান্তির সুযোগে এরা রাজনৈতিক নেতা, বুদ্ধিজীবী, সংগঠক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করতে পারে বলে দাবি করা হয়। বাংলাদেশে আধিপত্যবাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের পথে যাদের অন্তরায় মনে করা হয়, তাদের দমন-পীড়ন, জেল জুলুম, হামলা-মামলার মাধ্যমে কোনঠাসা করার কৌশল ব্যর্থ হলে এই অপশক্তি সরাসরি দাঙ্গা ও নৈরাজ্যের সুযোগ নিয়ে হত্যা ও নির্মূলের খেলায় মেতে উঠতে পারে। রাজনৈতিক সংঘাত জিইয়ে রেখে দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়ার পেছনে আধিপত্যবাদের একটি সুদূরপ্রসারী উদ্দেশ্য রয়েছে। লিফলেটটির কপি সংগ্রহের চেষ্টা করেও সফল হওয়া যায়নি। এসব যারা পেয়েছেন তাদের কেউই অন্য কাউকে সেটি দিতে বা নিজের কাছে রয়েছে বলে স্বীকার করতে চাইছেন না।
ব্যাপক জনবহুল ও ভৌগলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশে ইচ্ছাকৃতভাবে সংঘাতময় পরিস্থিতি জিইয়ে রাখা খুবই বিপজ্জনক একটি ব্যাপার। রাজনীতিকদের হঠকারিতায় গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি চুরমার হয়ে যাচ্ছে। শাসক দলের ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার অফুরন্ত স্পৃহা, সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্রের বিকাশ ও জাতিকে বিভক্ত করে স্থায়ী সংঘাত, এমনকি গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়ার প্রয়াস দেশের জন্য খুব বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। জাতীয় দাবিকে উপেক্ষা করে সংবিধানের দোহাই দিয়ে একতরফা নির্বাচন জাতিকে কত ভয়ংকর পরিণতি ও অতল অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে পারে তা ভাবতেও শংকা জাগে। বিরোধী দলকে দমন-পীড়নের মাধ্যমে ধ্বংস করে দেয়ার এ চেষ্টা বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে খাপ খায় না। এ ধরনের কাজ কোনদিন সুফল বয়ে আনে না। শাসক দলকে এ ধরনের কর্মকান্ডের জন্য চড়া মাশুল দিতে হবে। বিরোধীদলীয় নেতার সাথে যে আচরণ করা হচ্ছে, তা জনগণ মেনে নেবে বলে মনে করার কোন কারণ নেই।আবশ্য এটা সব শাসকরাই কম বেশী করে থাকে। যখন যে দেশ শাসন করে সে-ই কম বেশি এ কাজটি করে। আর এর পরিনতি ভোগ করতে হয় দেশের সাধারন মানুষকে। গণতন্ত্র ও জননিরাপত্তা বিপন্ন হওয়ার আশংকা থেকে জনগণ মুক্ত না হলে শাসক দলও নিরাপদ থাকতে পারবেন না। তাদের আগামী দিনগুলো হবে কণ্টকময়।
প্রতিদিনের নিউজ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ভর্তমান শাসক শ্রেনীর ভেতর দু’ধরনের আতংক। একদিকে দলের যে রাজনীতি, এতে নেত্রীর সিদ্ধান্ত বা নির্দেশের বাইরে যাওয়ার তো পথ নেই-ই, এমনকি গঠনমূলক কোন পরামর্শ দেয়ার পরিবেশও বর্তমানে নেই। নেত্রীর চিন্তার বাইরে কথা বলবে বা চিন্তা করবে এমন লোকের স্থান আওয়ামী লীগে নেই। অথচ বঙ্গবন্ধু দলটিকে নেতাকর্মী নির্ভর উদারনৈতিক সংগঠন হিসেবেই রেখে গিয়েছিলেন। জেনে শুনেই ক্ষতিকর অনেক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত অভিজ্ঞ ও প্রবীণ নেতাদের মেনে নিতে হচ্ছে, যার পরিণাম ভয়ংকর হতে বাধ্য। দ্বিতীয় ভয় হচ্ছে পরিস্থিতির।
কোন কারণে নেত্রী ব্যর্থ হলে কিংবা সরকারের নিয়ন্ত্রণ হাত থেকে ফসকে গেলে আওয়ামী লীগের উপর নানামুখি বিপর্যয় নেমে আসা স্বাভাবিক। ভিআইপি নেতাদের ছাড়া দেশের সাধারণ নেতাকর্মীদের এসব বিপর্যয় থেকে বাঁচা খুবই কষ্টসাধ্য। নেত্রী ও তার আত্মীয়-স্বজন এসএসএফ নিরাপত্তা পান, তাদের বিদেশে নিরাপদ আশ্রয় রয়েছে যাকে অনেকে বেগমগন্জ হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন। বড় বড় এসব নেতা মন্ত্রী ও উপদেষ্টাদেরও বাঁচার পথ খোলা আছে।কিভাবে তারা বিদেশে এই আবাস গড়ে তুলেছেন মিলিয়ন ডলার দিয়ে তার হিসেব নেয়ার কেউ নেই। প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ নেতাকর্মীদের দেশে থেকেই সব বিপদ মোকাবেলা করতে হবে। হটকারিতা, নির্যাতন, জনবিচ্ছিন্ন রাজনীতি ও অপরিণামদর্শী অতিকথনের প্রতিক্রিয়ার নিরীহ শিকার হবে সাধারণ আওয়ামী লীগাররা।এটা সব দলের নেতা কর্মির জন্যই প্রযোজ্য।তারা কখনো ভেবে দেখে না কি জন্য জীবন দিছ্ছে।নিছক সমান্য কিছু ছাড়া তাদের জীবনে তেমন কিছু নেই।এই প্রান্তিক কর্মিরা অধিকাংশ মধ্যবিত্তশ্রেনি থেকে যাদের নুন আনতে পান্তা পুরায়।
এককেন্দ্রিক সরকারের নেতারা বর্তমানে মোটেও স্বাভাবিক নন। তারা গণতন্ত্রের কথা মুখে বললেও দল ও জোটে গণতন্ত্র চর্চা করতে পারেননি। নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তারা সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্র চর্চা করতে চাইছেন। আন্দোলন, গণঅসন্তোষ ও আত্মসমালোচনার চাপে তারা এখন অস্থিরচিত্ত। এ অবস্থার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে মন্ত্রীদের এলোমেলো বক্তব্যে। প্রধানমন্ত্রী তার জেদ নিয়ে দৃঢ় স্বরে কথা বললেও মাঝে মধ্যেই খেই হারিয়ে ফেলছেন। তিনি মানুষের দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে না পেরে, বলে ফেলেছেন, প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, জনগণের শান্তি চাই- ধরনের কথা। কিন্তু শান্তির জন্য তিনি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ তৈরিতে রাজি হচ্ছেন না। অন্যদিকে সকল মন্ত্রী পদত্যাগ করেও যথারীতি দায়িত্ব পালন ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। এর সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে না পেরে তারা উল্টাপাল্টা কথা বলছেন। আমরা নাগরিকরা কিন্তু খুবই চিন্তিত। একমাত্র প্রধানমন্ত্রী ছাড়া এখন দেশে বৈধ সরকার বলতে কিছু নেই। সংবিধান অমান্য করে চলছে গোঁজামিলের সরকার। এ ধরনরে দুর্বল নাজুক মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ছে নানা গুজব। যারা মহাজোটে আছে তারা এক রকম ভাবে কিন্তু জনগণের ভাবনা সম্পর্কে খবর রাখে এবং ক্ষমতার ভাগ কিংবা হালুয়া-রুটি পায়নি বলে স্বাভাবিক অবস্থাটি এখনো অন্তরে ধরে রেখেছে। তারা সরকারের অসাহয়ত্ব দুর্বলতা, প্রধানমন্ত্রীর পরনির্ভরশীলতা ও দুঃসাহসিকতার রহস্য ভাল ভাবেই বুঝতে পারছে। দেশের নানা অঞ্চলে এমন সব গুজব ছড়ানো হচ্ছে, যা আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি স্বরূপ। রংপুর, রাজশাহী ও বগুড়া থেকে খবর এসেছে যে, বর্তমান সরকার দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বহাল করতে ব্যর্থ হলে এবং একতরফা নির্বাচন করে পুনরায় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে দেশ পরিচালনায় সফল না হলে তারা দেশকে ভারতের হাতে তুলে দেবে।
মন্ত্রিসভা সংবিধান বিরোধী পন্থায় নামমাত্র টিকে থাকলেও বর্তমানে দেশ কেবল প্রধানমন্ত্রীর উপর নির্ভরশীল। তিনি গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের সহায়তায় টিকে আছেন। সরকার তার মেয়াদ শেষ করলে দেশে সাংবিধানিক সংকট চরম আকার ধারণ করবে। নির্বাচন যথারীতি না হলে রাষ্ট্র ও সরকার আটকে পড়বে এক অনিশ্চয়তার পাঁকচক্রে। তখন বিদেশি হস্তক্ষেপ, এজেন্ট ও খুনিচক্রের কর্মকা- ইত্যাদির গুজব দেশকে করতে পারে চরম অস্থিতিশীল। বহিঃশক্তির আগ্রাসনের ভীতিও ছড়াতে পারে ব্যাপক অস্থিরতা। এসব দিক বিবেচনা করেই প্রধানমন্ত্রীকে ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত ছিল। তাঁর কাছে দেশ ও জাতির প্রত্যাশা অনেক। একগুঁয়ে রাজনীতির মুহূর্তের ভুলের মাশুল জাতিকে যেন গভীর অন্ধকারে ঠেলে না দেয়। দেশ ও জাতির চলমান উদ্বেগজনক সময় দীর্ঘয়িত না করে দ্রুত সমাধানের পথ পাইয়ে দেয়ার দায়িত্ব এখন তারই। নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ ও নতুনরূপে সংশোধিত সংবিধান তাকে এ দায়িত্ব দিয়েছে। তিনি এ গুরু দায়িত্ব পালন করে জাতিকে স্বস্তির দিকে নিয়ে যাবেন বলে আমরা এখনো আশাবাদি।
ভবিষ্যতে যারা শাসক হয়ে আসবেন তাদের কি কিছু শিখার আছে? স্বাধীনতার ৪১ বছরেও আমরা তেমন কিছু দেখতে পাই নি। আমরা যারা রাজনীতি করিনা,যারা দেশ নিয়ে ঘরে বসে চিন্তা করি বা আমাদের প্রতিবেদন মিডিয়াতে লিখে পাঠাই তাদের কথাগুলোর মূল্যায়ন সব সরকারই করতে ব্যার্থ হয়েছে।দেশের প্রান্তিক মানুষগুলোর দিকে তাকালে বুঝা যায় তারা খেয়ে না খেয়ে জীবন যাপন করছে।যারা দেশ স্বাধীন করেছে তাদের সন্তানরা দু মুঠো খাবার সংগ্রহের জন্য পড়ালেখা ছেড়ে হাড় ভাংগা কাজ করছে।যাদের ভোট দিয়ে তারা সংসদে পাঠায় তারা ৫ বছরে টাকার পাহাড় গড়ে তোলে।এক সময় সংসদে কিছু হলেও বিবেকবান সাংসদ ছিল।এখন অধিকাংশ সাংসদ ব্যাসায়ি যারা দেশকে এগিয়ে নীতে ব্যার্থ।সে জন্য দেখা যায় তারা দেশের ছেয়ে বিদেশে আবাস গড়ার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠে। আর একটি প্রধান কারন হলো মানুষ যখন অন্যায় করে সম্পদ গড়ে তোলে তখন আপনি থেকেই দেশ ছেড়ে দেয় কারন পরবর্তি সরকার আসলে তাকে জবাবদীহি করতে হবে।আমরা আশা করি মন্ত্রি ও আমলারা অবৈধ পন্হা অবলম্বন থেকে বিরত থেকে দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।জীবন ও মৃত্যু দু'টো- ই পাশা পাশি।অবৈধ সম্পদ আমি আর আপনি কার জন্য রেখে যাছ্ছি সে বিবেচনা করার ভার আমাদের নিতে হবে।জাতি হিসেবে আমরা তখনি সফল হব যখন আমরা আমাদের সব কাজকে আমানত হিসেবে বরন করে নিতে পারবো।আমরা গোটা জাতি সে নেতৃত্যের আশা পোষন করছি যারা আগামি দিন গুলোতে তাদের অতীতের সব কিছু ভূলে নতুন দিগন্ত উম্মোচন করবেন ও একে অন্যকে শ্রদ্ধার সাথে বরন করে একসাথে কাজ করে দেশকে বিশ্বের দরবারে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
বিষয়: বিবিধ
১১২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন