মায়ের উপর ছেলেটির কেন এত রাগ?
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৭:৪২:১৮ সন্ধ্যা
সাধারণত মায়ের সঙ্গেই সন্তানের সখ্য থাকে বেশি। সন্তান তার আবদার, চাওয়া-পাওয়া, ভালো লাগা, মন্দ লাগা ভাগাভাগি করে নেয় মায়ের সঙ্গে। কিন্তু এর ব্যতিক্রমও দেখা যায়। যেমন ধরা যাক আমার ৫ সন্তানের মাঝে মাহের দ্বীতিয়।সবে মাত্র এইচ এস সি পাস করেছে। তার বয়স মাত্র ১৭ পড়ালেখায় সে বেশ ভালো। বন্ধুমহলেও সে জনপ্রিয়। পরিবারের প্রায় সব সদস্যের সঙ্গেই তার স্বাভাবিক সম্পর্ক। কিন্তু মাকে সে কিছুতেই সহ্য করতে পারে না। মায়ের প্রতি তার প্রচণ্ড রাগ—মা কিছু বললেই সে ঝাঁজিয়ে ওঠে। কথায় কথায় তর্ক করে, সব ব্যর্থতার জন্য সে মাকে দায়ী করে এবং মায়ের কোনো নির্দেশ সে পালন করে না—মায়ের বিরোধিতা করাই যেন তার প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়ায়। বাবা অনেক চেষ্টা করেছেন ওকে তার মায়ের প্রতি অনুগত করার; কিন্তু যেই কে সেই... তার সমস্যা যেন দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। আজকাল সে মায়ের সঙ্গে কথাই বলে না।বন্ধুদের সাথে বাইরে পড়ার জন্য যাবে বলে বায়না ধরেছে কিন্তু মা এক ছেলে বলে দূরে দিতে রাজি নয়। মা বলেন এখান থেকে ডিগ্রিটা করে তুমি যাবে তখন তোমার বুদ্ধি বিবেচনা হবে। এখানেই মায়ের সাথে তার মুল দ্বন্দ।
মাহেরের মতো সমস্যা এই বয়সের যেকোনো ছেলের মধ্যে যেকোনো সময় দেখা দিতে পারে। নানা কারণে এমনটি হতে পারে। মায়ের কোনো আচরণে যদি সে তীব্র মনঃকষ্টে ভোগে বা প্রতিনিয়ত হতাশ হয়—যেমন মা যদি সার্বক্ষণিকভাবে তাকে উপদেশ-নির্দেশ দিতে থাকেন বা তুচ্ছ বিষয় নিয়ে বারবার তাকে বকাবকি করতে থাকেন, বাবা-মায়ের মধ্যে যদি তুমুল দাম্পত্য কলহ চলতে থাকে, আশপাশের মানুষজন বিশেষত পরিবারের অন্যান্য সদস্য যদি প্রতিনিয়ত তার মাকে কটুবাক্য শোনাতে থাকে, সন্তানের মনে যদি কোনো অমীমাংসিত দ্বন্দ্ব বা তীব্র মানসিক চাপ তৈরি হয় এবং নাটক-সিনেমার রোলমডেলরা যদি নাটকে বা সিনেমায় এ ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে থাকেন, তখন ছেলেমেয়ের মনে মায়ের প্রতি বিরাগ জন্ম নিতে পারে। এ ছাড়া কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডার, অপজিশনাল ডেফিয়েন্ট ডিসঅর্ডার এবং মাদকাসক্তির মতো সমস্যা যদি ছেলেমেয়ের মধ্যে থেকে থাকে, তখন মায়ের প্রতি বা মা-বাবা দুজনের প্রতি এমনকি পরিবারের প্রায় সব সদস্যের প্রতি তার প্রচণ্ড রাগ ও অবাধ্যতা তৈরি হয়।
মায়ের প্রতি বিরাগভাজন শিশু বা অন্য বড় সন্তানদের স্বভাব পরিবর্তন করতে হলে বাবা-মাকে বিশেষত মাকে ধৈর্য ধরে সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে করণীয় বিষয়গুলো হচ্ছে—
আপনার সন্তানকে তার আচরণ পরিবর্তনের জন্য সুযোগ দিন
অযথা তাকে দোষারোপ করবেন না, তার সব কর্মকাণ্ড নিয়ে কটূক্তি, সমালোচনা বন্ধ করুন।
ছেলেমেয়েডের স্বাধীনভাবে ও ধর্মিয় আচরনে বেড়ে উঠতে দিন, নিরাপত্তার অজুহাতে তার ওপর অতিরিক্ত নজরদারি কখনোই নয়।
রূঢ় আচরণ পরিহার করুন, প্রয়োজনে শাস্তির বদলে তাকে তার প্রাপ্য পুরস্কার বন্ধ করতে পারেন, কিন্তু শারীরিক নির্যাতন করবেন না। শোধরানোর জন্য তাকে বাথরুমে বা ঘরে আটকে রাখবেন না।
নিজেই পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করুন। বাবার কাছে বা স্কুলের শিক্ষকের কাছে ওদের বিরুদ্ধে অভিযোগ কখনোই নয়।
দাম্পত্য কলহ এড়িয়ে চলুন, মতের অমিল হলেই ওদেরকে সাক্ষী মেনে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের বিরুদ্ধে বলবেন না।
ওদের মধ্যে কোনো মানসিক চাপ বা দ্বন্দ্ব রয়েছে কি না জানার চেষ্টা করুন— বাড়িতে, স্কুলে বা অন্যত্র সে কোনো ধরনের নিপীড়নের শিকার হয়েছে কি না, জানার চেষ্টা করুন।
বয়ঃসন্ধিকালের সন্তান যদি কারও সঙ্গে আবেগীয় সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে, তখন উত্তেজিত না হয়ে তার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা কথা বলুন।
শিশুটির বন্ধু কারা জানার চেষ্টা করুন, তাদের কারও মধ্যে এ ধরনের আচরণের সমস্যা থাকলে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখতে শিশুকে নিরুৎসাহিত করুন।
দেশি-বিদেশি চ্যানেলের নাটক- সিনেমায় অবাধ্য সন্তানের চরিত্র থাকলে সেগুলো দেখতে তাকে নিরুৎসাহিত করুন।
শিশুর মধ্যে বিষণ্নতা, উৎকণ্ঠা থাকলে তা নিরসনের চেষ্টা করুন।
যদি বিষয়টি তীব্র হয়ে ওঠে, তবে অবশ্যই অন্তর্নিহিত কারণ (কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডার, অপজিশনাল ডেফিয়েন্ট ডিসঅর্ডার ও মাদকাসক্তি) জানা ও তার সমাধানের জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন।
বিষয়: বিবিধ
১৫০০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন