অন্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন রোজার অন্যতম বৈশিষ্ট।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৩ জুলাই, ২০১৩, ০১:৪১:২৮ দুপুর

রমজান হচ্ছে সহমর্মিতার মাস। অন্যের প্রতি সহমর্মিতা ও সহানুভূতি প্রদর্শন রমজানুল মোবারকের অনন্য বৈশিষ্ট্য। রমজানে রোজাদারকে সহানুভূতি ও সহমর্মিতার মহান শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। আর সারা বছর এর চর্চা করতে হবে। আমাদের বর্তমান সমাজ স্বার্থান্ধতায় কলুষিত হয়ে পড়েছে। নিজের সামান্য স্বার্থের জন্য এখন মানুষ অন্যের মারাত্মক ক্ষতি করতেও দ্বিধাবোধ করে না। একটু স্বার্থের জন্য খুন-খারাবির ঘটনাও এখন মাঝে-মধ্যেই ঘটে। নিজের স্বার্থই এখন সবার কাছে মুখ্য। অন্যের স্বার্থ একেবারেই গৌণ। নিজের প্রয়োজনের ওপর অন্যের প্রয়োজনকে প্রাধান্য দেয়ার মহান শিক্ষা যেন আজ মুসলিম জাতি ভুলেই গেছে। অথচ ইসলাম অন্যের স্বার্থে নিজ স্বার্থকে বিসর্জন দেয়ার মহান শিক্ষা দেয়। সাহাবায়ে কেরামের উত্তম চরিত্রের একটি উজ্জ্বল দিকই ছিল- অন্যের সুখের জন্য নিজের সুখকে বিসর্জন দেয়া। অন্যের প্রতি সহমর্মিতা ও সহমর্মিতার গুণ তাদের স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত করেছিল। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ... আর তারা তাদেরকে নিজেদের উপর অগ্রাধিকার দেয়, নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও যাদেরকে অন্তরের কার্পণ্য হতে মুক্ত রাখা হয়েছে তারাই সফলকাম (হাশর : ৯)।

আয়াতের মর্ম হচ্ছে, আনসারি সাহবায়ে কেরাম নিজেরা অভাবগ্রস্ত ও দারিদ্র্যপ্রপীড়িত হওয়া সত্ত্বেও নিজেদের উপর মুহাজিরদের অগ্রাধিকার দিতেন। আনসারিদের এই গুণটি এতই মহৎ যে, মহান আল্লাহ কোরআনের আয়াতে এ জন্য তাদের প্রশংসা করেছেন। পবিত্র রমজান বারবার আমাদের মাঝে ফিরে আসে রোজাদারকে এই মহৎ গুণে গুণান্বিত করার জন্য। পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ একটি সুশীল সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য সমাজের প্রত্যেকের মধ্যে এ গুণটি থাকা একান্ত জরুরি। বর্তমানে সহনশীলতা, সহানুভূতি, সহমর্মিতা, পরপোকার ও আত্মোৎসর্গের অভাবে আমাদের সমাজ বিষিয়ে উঠেছে।

পৃথিবীটা যেন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। আমরা চরম আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছি। সমাজ জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই আজ স্বার্থান্ধতা ও আত্মকেন্দ্রিকতার কুৎসিৎ প্রকাশ ঘটছে। যার ফলে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-কলহ ঝগড়া-বিবাদ, মারামারি-হানাহানি এখন সমাজ জীবনে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। অথচ ইসলাম যে পারস্পরিক সহানুভূতি, সহমর্মিতা, পরপোকার ও আত্মোৎসর্গের শিক্ষা দেয় তা রীতিমতো নজিরবিহীন। হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে তার সঙ্গে খেয়ানত করবে না। তার বিষয়ে মিথ্যা বলবে না। তাকে অপমান হতে দেবে না। প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানের সম্মান, সম্পদ ও রক্ত হারাম। তাকওয়া হল এখানে (অন্তরে) কোনো ব্যক্তির জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার অপর মুসলমান ভাইকে হেয় দৃষ্টিতে দেখবে না (তিরমিযী)' অন্য একটি হাদিসে রয়েছে, এক মুমিন অপর মুমিনের জন্য ইমারতের মতো। একটি ইট আরেকটিকে শক্তি জুগিয়ে থাকে (তিরমিযী)' এই হাদিসগুলো মুসলিম ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দেয়। পারস্পরিক সহমর্মিতা-সহানুভূতি ও পরপোকারের মহান শিক্ষা দেয়। যে শিক্ষা সৌহার্দ্যপূর্ণ শান্তিময় আদর্শ সমাজ নির্মাণের জন্য অত্যন্ত জরুরি। মুসলিম সমাজে যতদিন এই শিক্ষা ছিল ততদিনই সমাজ অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠীর জন্য ঈর্ষণীয় ছিল। আর যখন থেকে মুসলিম সমাজ এই মহান শিক্ষা থেকে বিচ্যুত হয়েছে তখন থেকে মুসলিম সমাজে পচন ধরেছে। নৈতিকতার চরম ধস নেমেছে। যার কুফল আজ প্রতিনিয়ত পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আরও ভয়াবহ পরিণতি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। সুতরাং আমাদেরকে এখনই সতর্ক হতে হবে। এই দুঃখজনক অবক্ষয রোধের জন্য এখনই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে হবে। পবিত্র রমজানুল মোবারক প্রতি বছর আমাদের মাঝে ফিরে আসে সহমর্মিতার শিক্ষায় মুসলিম জাতিকে উজ্জীবিত করতে। তাই হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, রমজান হচ্ছে সহমর্মিতার মাস। সুতরাং রমজানে রোজা রাখার পাশাপাশি সহমর্মিতা, সহানুভূতি ও পরপোকারের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।কিন্তু বর্তমান মুসলিম সমাজ এ সমস্ত শিক্ষা থেকে দূরে।রমজানের এ মাসটিতে বান্দাহ কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে বাকি মাসগুলোতে চর্চা বজায় রাখবে এটাই স্বাভাবিক।সারা বছর যদি এ চর্চা থাকে তাহলে কোন সন্কটই সমাজে থাকার কথা নয়।প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে থাকছে কেন? এর কারন হলো আমরা রমজানের মাহাত্ম বুঝতে অক্ষম সেজন্য কোন সুফল দেখছি না।রমজানের সুফল বয়ে আনার জন্য সারা বছর এর চর্চা করতে হবে। তাহলে রমজান ও রোজা বছরময় কল্যাণের অবারিত ধারা বয়ে আনবে। সমাজ থেকে অশান্তি, উচ্ছৃখলতা ও অরাজকতা, মারামারি হানাহানি দূর হবে। বছরজুড়ে আমরা ভোগ করব রমজানের কাংক্ষিত সুফল।

বিষয়: বিবিধ

১৩৬৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File