রোজাদারের ইফতারের আনন্দ রোজাকে যেমন মহিমান্নিত করে তেমনি বেরোজাদারদের রোজা রাখায় উজ্জিবিত করে।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১১ জুলাই, ২০১৩, ০২:২৯:১২ দুপুর
মুসলমানদের জন্য আরবি নবম মাস অর্থাৎ রমজান মাস এক মহান মাস যার মাধ্যমে বান্দাহ তার কৃত সমস্ত গুনাহ থেকে রেহাই পেতে পারে।রহমত,বরকত ও নাজাতের মাস যাকে আল্লাহ সাহারুল্লাহ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।আর এ মাসের সওয়াব আল্লাহ নিজে দান করবেন।এ মাসের প্রতিটি সময় বান্দাহকে উচ্চ মর্যাদা দিতে সহায়তা করে।এ মাসেই কোরআন নাজিল হয়েছে।এ কোরআন হেদায়াত ও সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য নিরুপন করে।সেজন্য দেখা যায় যে সব আল্লাহর বান্দাহ রমজানের আগে ইসলামি কোন কাজ করে না রমজান এলে সে নিজেকে অন্যান্যদের সাথে আত্মনিয়োগ করে।রমজান মাসের মর্যাদা এসেছে এই কোরআনের কারনে।দু:খ জনক ব্যাপার হলো অধিকাংশ মানুষ তা জানে না বা জানার চেষ্টাও করে না।ইসলামকে শুধু পৈতৃক সম্পদের মত ব্যাবহার করে চলছে।এই মাসে বান্দাহ নিজেকে শরিয়তের বিধান দিয়ে বেঁধে নিবে।ফরয নামাজে ,রোজায়,নফল কাজে,সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নির্দেশে, ভাল ও মন্দের পার্থক্য নিরুপন করে এক মাস এমন পরিশ্রম করবে যেন আগামি ১১ মাস তদনুযায়ি আমল চালু রাখতে পারে।দুর্ভাগ্য জনক ব্যাপার হলো বান্দাহ তা করে না।রমজান আসলে মসজিদ গুলো কানায় কানায় ভরে যায় আবার ঈদের দিন থেকেই এ মসজিদগুলো এতিমে পরিনত হয়।মুসলমানদের এই যে সিজনাল এবাদাত তা আল্লাহ পছন্দ করেন না।আল্লাহ পছন্দ করেন যারা প্রতিনিয়ত এবাদতে নিজেদের মশগুল রাখেন।রমজান মাসে অনেক ফযিলত রয়েছে।তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ ফযিলত হলো শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাত্রিগুলোতে "লাইলাতুল ক্কদরকে" তালাশ করা।রাসূল সা: বলেছেন,তোমরা রোজার শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাত্রিগুলোতে লাইলাতুল ক্কদর তালাশ কর।আর এই লাইলাতুল ক্কদর হলো হাজার মাসের এবাদত হতে উত্তম।এই হাজার মাস প্রায় ৮৪ বছরের মত।একজন মানুষ তো এত বছর হায়াত ও পায় না।সেজন্য যার কাছে রমজান এসেছে আর সে তার থেকে ফায়দা নিতে পারে নি তার মত দুর্ভাগা আর নেই।
রোজাদার ব্যক্তি সারা দিন রোজা রেখে সূর্যাস্তের পরই যেসব খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ করে রোজা ভঙ্গ করেন, তা-ই ইফতার; এর অর্থ রোজা ভঙ্গ করা। আরবি ‘ফুতুর’ শব্দ থেকে এটি উদ্ভূত, যার মানে নাশতা করা, হালকা খাদ্য গ্রহণ করা। ইফতার শব্দের অন্য অর্থ বিরতি, ভঙ্গ করা বা দিন ও রাতের মধ্যবর্তী সময়ের হালকা খাবার। শরিয়তের পরিভাষায় সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর রোজা সমাপ্তির জন্য পানাহার করাকে ইফতার বলা হয়। রোজা পালনে ইফতারের ফজিলত অপরিসীম এবং সময়মতো ইফতার করার মধ্যে রয়েছে অশেষ সওয়াব ও কল্যাণ।
সারা দিন রোজা পালন করে যথাযথভাবে সময়মতো ইফতার করার গুরুত্ব অত্যধিক। সূর্যাস্তের পরপরই ইফতার করা উত্তম। অন্ধকার হওয়ার জন্য বিলম্ব করা উচিত নয়। বিলম্বে ইফতার করা মাকরুহ। সেহরি বিলম্বে খাওয়ায় সওয়াব আর ইফতার বিলম্বে না করায় সওয়াব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ইফতারের সময় হওয়ামাত্র ইফতার করে নাও, এতটুকু বিলম্ব কোরো না।’ হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘মানুষ তত দিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে, যত দিন তারা ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করে নেবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
ইফতারের পূর্বমুহূর্তে দোয়ার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। ইফতারের সময় এ দোয়া পড়তে হয়, ‘আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া আলা রিজকিকা আফতারতু’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! তোমার জন্যই রোজা পালন করলাম, আর তোমার প্রদত্ত রিজিক দিয়েই ইফতার করছি।’ ইফতারের সময়টি যেমন সুনির্দিষ্ট করা, তেমনি এ সময়ে আল্লাহর কাছে রোজাদার ব্যক্তির দোয়াও কবুল করার পরম মুহূর্ত। ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না। তাই প্রত্যেকের উচিত ইফতারের সময় অধিক পরিমাণে দোয়া করা। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘ইফতার করার সময় রোজাদারের দোয়া কবুল হয়ে থাকে।’ (আবু দাউদ)
যে পর্যন্ত সূর্যাস্ত সম্বন্ধে কিছুমাত্র সন্দেহ থাকে, সে পর্যন্ত ইফতার করা জায়েজ নয়। সূর্যাস্তের ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে ইফতার করতে হবে। ঘড়ির হিসাবে সময় হলেও একটু বিলম্ব করে ইফতার করা উত্তম। যখন নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে সূর্য অস্ত গেছে, তখন আর দেরি না করে শিগগির ইফতার করা মুস্তাহাব। হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত আছে যে ‘মহান প্রতাপশালী আল্লাহ বলেন, আমার বান্দাদের মধ্যে যারা দ্রুত ইফতার করে, তারাই আমার কাছে অধিকতর প্রিয়।’ এ সম্পর্কে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আমি ওই ব্যক্তিকে সর্বাধিক ভালোবাসি, যে ইফতারের সময় হওয়ামাত্র ইফতার করে নেয়।’ (তিরমিজি)
ইফতারের সময় হালাল দ্রব্য দিয়ে ইফতার করা মহাপুণ্যের কাজ। খোরমা, খেজুর, কিশমিশ অথবা পানি দিয়ে ইফতার করা ভালো। খুরমার অভাবে অন্য কোনো মিষ্টিজাতীয় খাবার যেমন শরবত বা দুধ দিয়ে অথবা পানি দিয়ে ইফতার করা উত্তম। রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজের আগে কয়েকটি তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। তাজা খেজুর না পেলে শুকনো খেজুর, অর্থাৎ খোরমা দিয়ে ইফতার করতেন। আর যদি তাও না পেতেন, তাহলে কয়েক ঢোক পানি পান করে নিতেন। রোজাদার সারা দিন রোজা রেখে সূর্যাস্তের পর যখন ইফতার করেন, তখন সারা দিনের ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ক্লান্তি, শ্রান্তি ভুলে গিয়ে অনাবিল আনন্দে বিভোর হন। রোজা পালনকারীর জন্য আল্লাহ তাআলা পুরস্কারস্বরূপ ইফতারের ব্যবস্থা রেখেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘রোজাদারের জন্য দুটি খুশি। এর একটি হলো তার ইফতারের সময় আর অপরটি হলো আল্লাহর সঙ্গে তার সাক্ষাতের সময়।’ (বুখারি ও মুসলিম) কোনো রোজাদারকে ইফতার করানোয় অশেষ সওয়াব ও নেকি অর্জন করা যায়। অশেষ নিয়ামত এবং বরকত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তা তার জন্য গুনাহ মাফ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ হবে এবং সে রোজাদারের সমান সওয়াবের অংশীদার হবে।তবে আজকাল উম্মাহ যা করছে তা ইসলাম পরিপন্থি।নামাজ কায়েম করছে না কিন্তু ঢাক ঢোল ফিটিয়ে ইফতার করছে ও করাছ্ছে। এ সমস্ত মুসলমানদের জানা নেই যে , নামাজ কায়েম না করলে সে ব্যাক্তি আর মুসলিম থাকে না।
রমজান মাসের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময় হচ্ছে ইফতার। রোজাদার ধনী-গরিবনির্বিশেষে তার পরিবারের ছোট-বড় সব সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে সাধ্য অনুযায়ী রকমারি ইফতারসামগ্রী সামনে রেখে নির্দিষ্ট সময়ের অর্থাৎ সূর্যাস্তের অপেক্ষায় বসে থাকেন। এহেন কঠিন প্রতীক্ষার মধ্যে প্রকৃত রোজাদারের আল্লাহভীতির পরম শান্তিময় নিদর্শন প্রকাশ পায়। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ইফতার মুহূর্তে ফেরেশতাদের ডেকে বলেন, ‘দেখো! আমার বান্দাকুলের ধর্মভীরুতার কী অপূর্ব রূপ।’ এর ভেতরে রয়েছে আল্লাহভীতি, ন্যায়নিষ্ঠা, সংযম এবং প্রবৃত্তি দমনের চরম নিদর্শন।
সূর্যাস্তের পর ইফতারের সময় রোজাদার নিজের সঙ্গে পথিক, মুসাফির, পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়নির্বিশেষে অসহায় হতদরিদ্রকে সর্বান্তঃকরণে ও সবিনয়ে ইফতারিতে শরিক হতে আহ্বান করে থাকেন। এতে ইসলামের পারস্পরিক ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোধে সবাই উদ্বুদ্ধ হন এবং নিজেদের ইফতারি পরস্পর ভাগাভাগি করে খাওয়ার মধ্যে চরম তৃপ্তি, অশেষ পুণ্য ও কল্যাণ লাভ করেন। সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে মানুষের আত্মশুদ্ধি, সংবেদনশীলতা, পারস্পরিক সহমর্মিতা, ধনী-গরিবের মধ্যকার ভালোবাসার উপলব্ধি ঘটে এবং ইফতার অনুষ্ঠানে এটি আরও বেশি উজ্জ্বল ও উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। তাই সূর্যাস্ত সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়ার পর রোজাদারদের দ্রুত ইফতার করার মাধ্যমে সওয়াব ও আনন্দ লাভের জন্য সচেষ্ট হওয়া উচিত।
বিষয়: বিবিধ
২২৯৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন