সংক্ষিপ্ত বেড়ানো: মদিনা ,ইয়াম্বো ও তাইফের নিজের চোখে দেখা সৌন্দর্য।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০৮ জুলাই, ২০১৩, ০৭:০২:২২ সন্ধ্যা

অসংখ্য কবি সাহিত্যিক প্রকৃতির সৌন্দর্যকে তাদের নিজ নিজ চোখে এঁকে তা আবিষ্কার করার চেষ্টা করেছেন। 'সৌন্দর্য আবিষ্কারের অর্থ হলো ভালবাসাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে নেয়া।' কবি মতিউর রহমান মল্লিকের কবিতার এই পঙক্তির উপর সৌন্দর্যের আর কোন রুপ থাকতে পারে বলে আমার মনে হয় না।যাকে ভালবাসা যায় ততই তার সৌন্দর্য আবিষ্কার হতে থাকবে।ভালবাসা শব্দটি আপেক্ষিক,যেখানেই ব্যাবহৃত হয় সেখানেই নান্দনিকতা জন্ম হয়।সেখানেই বেঁচে থাকার অবলম্বন তৈরি হয়।আমাদের আজকের জীবন ইট কাঠের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে যান্ত্রিকতায় রুপান্তরিত হয়েছে।তার পরও ভালবাসার মানুষ থাকে,ভালবাসার স্হান ও জিনিস থাকে সে স্হান গুলোতে হৃদয়কে ভরে নেয়া যায় ও নতুন কর্মপৃহা জাগানো যায়।

ছুটি আসলে মনে হয় কোথাও বেড়িয়ে আসি।আর সেরকম একটি সুযুগ ও এলো।আমার সহধর্মীনি (তামান্না) তিন মেয়ে মালিহা,মারিয়া ,মাহদিয়াকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।নুসরাত ও মাহের বাংলাদেশে থাকায় তাদের সবাই বেশ অনুভব করছিল। ভেবেছিলাম প্রথমে মদিনা জেয়ারত করবো।সেভাবে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লাম প্রাতের কিছু পরে।দিনের ভ্রমন ও রাতের ভ্রমনে কিছুটা পার্থক্য আছে।রাতের স্নিগ্ধ আভা ও নয়নাবিরাম দৃশ্য যেন বেশ ফুটে উঠে।দিনে সেগুলো দেখা যায় না।মরুপ্রান্তর ছুটে চলছি আর আমার মেয়েরা চারদিকের দৃশ্য আবলোকন করছে।কোথাও বানর , কোথাও মরুবাহি উট দেখে আমার ছোট দু'মেয়ে মারিয়া ও মাহদিয়া খুব আনণ্দে মেতে উঠেছে।আবার মাঝে মাঝে পেট্রোল পাম্পগুলোতে রেষ্টুরেন্ট এ বসে বিশ্রাম ও খাবার খেতে বেশ মজা পাছ্ছিল সবাই।৫ ঘন্টার মধ্যে আমরা আল্লাহর ইছ্ছায় মদিনায় ক্কুবা মসজিদে পৌঁছে গেলাম।ওজু করে দু'রাকাত নামাজ আদায় করে আবার সবাই রাসূল সা: এর মসজিদের উদ্দ্যেশ্যে চললাম।৩০ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম।সময়টা ছিল বেশ গরমের সময়।আমরা নাস্তা খেয়ে মসজিদে চলে গেলাম।ওরা ঘন্টাখানেক রেষ্ট নিল তার পর ওজু করে ফ্রেস হয়ে যোহরের নামাজ আদায় করে রাসূল সা: এর কবর যেয়ারত করে নিলাম সবাই।বাইরে বেরিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম মসজিদের সন্নিকটে রেস্তোরায়।এর পর বিভিন্ন দোকানে সপিং করে আমার গৃহীনি বললো চলো ওহুদ ঘুরে আসি।সেভাবে কিছুক্ষনের মধ্যে পৌঁছে গেলাম ওহুদের প্রান্তরে।যদিও আমরা এর আগেও গিয়েছিলাম বহুবার।কবর যেয়ারত করে সেখানে কিছু কেনা কাটা করে বেরিয়ে পড়লাম।তবে একটি জিনিস দেখে খুবই মর্মাহত হতে হয় আর তা হলো কিছু অগ্গ লোকজন কবরকে সামনে রেখে দীর্ঘ সময় ধরে দোয়া করে থাকে।কবরের কাছে যাওয়ার অর্থ হলো নিজের মৃত্যুকে স্মরন করা ও কবরবাসিদের জন্য দোয়া করা।একইভাবে নবী সা: এর কবরের পাশেও মোজাবির রা দীর্ঘ সময় বসে থাকে।এরাই কবর পূজারিদের একটা অংশ যারা কবরের কাছে গিয়ে কবরবাসির কাছে কিছু পেতে চায় অথচ এই কবরের বাসিন্দা নিজেও জানে না কখন তাকে কবর থেকে উত্থিত করা হবে।

আমরা যখন ওহুদ থেকে বেরিয়ে পড়লাম তখন গরমের কারনে আমার মেয়েরা সেখানে থাকার জন্য তেমন অনুভব করলো না।আমি বললাম তাহলে চল আমরা ইয়াম্বো হয়ে জেদ্দা যাব।মদিনা থেকে হাই ওয়েতে বেরিয়ে পড়লাম।গাড়িতে পেট্রোল পুরে নিলাম।ইয়াম্বো যেতে দুপাশে পাহাড় আর পাহাড়।কুরআন বলেছে পাহাড়গুলো জমিনে পরেকের মত পুরে দেয়া হয়েছে যেন জমিন নড়াচড়া করতে না পারে।যেতে যেতে মাঝে কিছু যায়গা আছে যেখানে ডেন্জার সংকেত দেয়া আছে।অর্থাৎ ঔ পাহাড়ি এলাকায় ধূলিঝড় হয়।রাস্তার পাশে পাহাড়গুলো লাল রং এর ধূলিতে ভরা।একটু ঝড় হলেই এলাকা অন্ধকার হয়ে যাবে সে কারনে সেখানে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে চলতে হবে।প্রায় তিন ঘন্টার মধ্যে আমরা ইয়াম্বো ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকায় চলে এলাম।দিনে দেখে তেমন মনে হয় নি যেমন দেখলাম রাতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকার সৌন্দর্য।দূর থেকে বিদ্যুৎ বাতির ঝলমলে আলো যেন সোনার এক আভা।এক অপরুপ সৌন্দর্য যা চোখে না দেখলে বুঝা কঠিন।কর্নিসে ঢুকার আগে একটি রেষ্টুরেন্ট এ রেষ্ট ও খাবার দ'টৌই সেরে নিলাম।আমরা প্রায় ১০ কিলোমিটার ভিতরে গিয়ে কর্নিসে গিয়ে পৌঁছলাম।বিশাল সমুদ্রের পাড় ঘেঁষে ঘুরে একটি পার্কের সবুজ উদ্দানে বিছানা পেতে শুয়ে পড়লাম।মারিয়া ও মাহদিয়া পার্কে খেলছে আমাদের পাশেই।কিছুটা গরম থাকলেও পড়ন্ত বিকেলের কারনে ও সমুদ্রের নির্মল হাওয়ায় তেমন অশ্বস্তি মনে হয় নি।সন্ধা ঘনিয়ে আসতেই তামান্না দেখলাম থাকার প্রয়োজন অনুভব করলোনা।পরামর্শ করে আবার বেরিয়ে পড়লাম।অবিরাম ৭০০ কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে আমার তেমন কষ্ট অনুভব হলো না।রাস্তায় বললাম চলো তাইফে ঘুরে আসি।তামান্না বললো যাব তবে চল বাসায় রেষ্ট করে বিকেলের দিকে যাব।চললাম নিজের আবাসিক এলাকা জেদ্দার দিকে।সকালের দিকে জেদ্দায় পৌঁছে পরের দিন সকালে তাইফের উদ্দ্যেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম।

ঐতিহাসিক নগরী তায়েফ পরিভ্রমন করেছিলাম এর আগেও। ১৯৯৬ সালে আমরা প্রথম গিয়েছিলাম।এর মধ্যে ধীরে ধীরে অনেক উন্নতি হয়েছে।এখানে সাধারন মানুষ যেমন যায় তেমনি হজ্জ ও ওমরাহ পালনকারি হাজিদের সংখ্যা ও অনেক কারন শহরটি মক্কার কাছাকাছি। হজ ও ওমরা পালনকারীদের জন্য সৌদি আরবের সব শহরে যাওয়া-আসার সুযোগ অবারিত থাকলে বহু ঐতিহাসিক স্থান দেখার সুযোগ যেমন সৃষ্টি হতো, তেমনি বৈদেশিক মুদ্রা আয়েরও ব্যবস্থা হতো। অবশ্য ভিজিট ভিসা থাকলে সৌদি আরবের যে কোনো স্থানে যেতে বাধা নেই। সাধারণ পর্যটকদের পক্ষে ভিজিট ভিসা জোগাড় করা রীতিমত কঠিন।দৈনিক কয়েক হাজার যানবাহন তায়েফ-মক্কা-তায়েফ মহাসড়কে চলাচল করে থাকে। নির্ধারিত চেকপোস্টে গাড়ির গতি শ্লথ করা বাধ্যতামূলক। দায়িত্বরত কর্মকর্তারা ইচ্ছে করলে সন্দেহভাজন গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রীদের আকামা, ভিসা, পাসপোর্টসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখেন অথবা হাত নেড়ে চলে যাওয়ার ইঙ্গিত দেন। দুপুরে কড়াকড়ি তুলনামূলক কম। সম্ভবত গ্রীষ্মের দাবদাহের তীব্রতা, দ্বিপ্রহরের খাবার গ্রহণের তাড়া এবং নামাজের প্রস্তুতির কারণে কিছুটা শৈথিল্য দেখা দেয়। গাড়িতে শিশু ও মহিলা থাকলে অনেক সময় বিশেষ ছাড় পাওয়া যায়। ছুটির দিন হওয়ায় গাড়ির চলাচল একটু বেশি।

জানালার কাচ দিয়ে মক্কা-তায়েফ মহাসড়কের দু’পাশের বিস্তীর্ণ পর্বত, কন্দর ও উপত্যকার দৃশ্য উপভোগ করতে থাকি। আল্লাহ তায়ালার কী লীলাখেলা! গাছপালাবিহীন পর্বতমালা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।আমার নতুন টয়োটা Fortuner ক্রমান্বয়ে পাহাড়ের কোলঘেঁষে উপরে উঠতে লাগল।সৌদি আরব সরকার সৌদি বিনলাদিন গ্রুফকে দিয়ে কঠিন পাহাড়ের গা কেটে দ্বিমুখী রাস্তা (Two way traffic) তৈরি করেছে, যাতে সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। একেক পাহাড়ের চূড়া থেকে অন্য পাহাড়ের চূড়া পর্যন্ত রয়েছে বেশ কটি ওভারব্রিজ। ১৯৬৫ সালে বাদশাহ ফয়সাল এ পার্বত্য সড়ক নির্মাণ করেন। পার্বত্য পথে রয়েছে ৯৩টি বাঁক। সড়কের নির্মাণশৈলী আধুনিক ও মনোমুগ্ধকর।সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো গাড়ি চলার পথে নিছে দেখা যায় সেকালের হাটা পথ। কি কঠিন পরিশ্রম করে এঁকে বেঁকে রাস্তা তৈরি হয়েছে এত উপরে মানুষ রাস্তা বেয়ে উঠেছে।প্রস্তরপূর্ণ সমতল ভূমি থেকে সর্পিল পথে যতই উপরে যাচ্ছি, শিহরিত হচ্ছি। নিচের দিকে তাকালে রক্ত হিম হয়ে যায়। পাহাড়ি পথের বাঁকে বাঁকে প্রলম্বিত কেশরধারী বানরের ঝাঁক চোখে পড়ার মতো।সাইনবোর্ডে লেখা আছে (Beware of Monkey) ‘বানর থেকে সাবধান। পাহাড়ের কোলে গড়ে ওঠা এক ধরনের উদ্ভিজ্জ ফলমূল তাদের একমাত্র খাবার। এসব বন্যখাদ্য অপ্রতুল বলেই হয়তো অনেক সময় তারা লোকালয়ে অথবা পর্যটকদের ওপর হামলে পড়ে। শিশুদের হাতে রাখা খাবার অনেক সময় বানর ছোঁ মারতে পারে—এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যায় না।প্রথমে আমরা রমাদায় "কেবল কার্ট" এ আসলাম।আমার মেয়েরাতো বেশ উৎফুল্ল কারন ইতিপূর্বে যেগুলোয় উঠেছে তা ছিল মাত্র ৫ মিনিটের।আমরা টিকিট সংগ্রহ করে কার্ট এ উঠলাম।কার্ট যতই নিছের দিকে যাছ্ছে ততই নিছের দৃশ্য দেখে বেশ আনন্দ অনুভব করলাম।

ঘন্টাখানেকের মধ্যে আমরা ‘আল হাদা’ নামের অধিত্যকায় উপনীত হয়েছি। মক্কার সমতল ভূমিতে যেখানে প্রচণ্ড গরম, আল হাদার পাহাড় চূড়ায় শীতল হাওয়ার পরশ। আল হাদা ভূমি থেকে ১৮৭৯ মিটার উচ্চতায় তায়েফ পর্বতমালায় অবস্থিত ছোট্ট শহর। নবাগত পর্যটকরা ব্যায়াম, সিঁড়ি আরোহণ অথবা ভারী দ্রব্যসামগ্রী বহনের সময় অক্সিজেন-স্বল্পতা অনুভব করে থাকেন।এখানে এসে প্রথমে চোখে পড়লো অনেক ফলের দোকান।তাইফের ডালিম খুবই মজার।সদ্য নিয়ে আসা কার্টুন দেখে তামান্না বললো ডালিম কিনে নাও।তার সাথে আরো কিছু ফল কিনে নিলাম। যোহরের নামাজ আদায় করে খাবার কিনে উঁচু এক পাহাড়ের পাদদেশে যেখানে একটি প্যালেস আছে তার ফটক সন্নিহিত পাহাড়ের ছায়ায় খেতে বসলাম।দীর্ঘ সময় ধরে খাবার ও গল্পের মধ্যে আমরা আসরের নামাজের কাছাকাছি হয়ে গেলাম।তায়েফ মক্কা প্রশাসনিক প্রদেশের ঐতিহাসিক একটি শহর। সারওয়াত পর্বতমালা সংলগ্ন উপত্যকা থেকে এর উচ্চতা ৬.১৬৫ ফুট। ৫ লাখ জনঅধ্যুষিত তায়েফ আঙুর, আনার, গোলাপ ও মধু উত্পাদনের বিখ্যাত কৃষি অঞ্চল। প্রতি বছর গ্রীষ্ম মৌসুমের প্রচণ্ড দাবদাহে সৌদি কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যক্রম তায়েফ থেকে পরিচালিত হয়। তায়েফের জনগোষ্ঠীর বিরাট অংশ হাম্বলি ও মালিকি মাজহাবের অনুসারী। বিভিন্ন আরব দেশ, তুরস্ক ও এশিয়ার বংশোদ্ভূত বেশ কিছু সংখ্যক বিদেশি জনগণও তায়েফে বসবাস করেন। তায়েফকে বলা হয় ‘হেজাজের বাগান।' তায়েফে রয়েছে একটি আধুনিক বিমানবন্দর। জেদ্দা, রিয়াদ এবং পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশে নিয়মিত ফ্লাইট চলাচল করে। তায়েফ অঞ্চলের বেদুইনরা কঠোর পরিশ্রমী। শস্যচাষ ও পশুপালন তাদের মূল পেশা। সমতল ভূমি বেশ উর্বর। সৌদি আরবের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতমালা ‘ইবরাহিম জাবল’ তায়েফ থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পর্যটনের জন্য অত্যন্ত উপযোগী স্থান।

মক্কা থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত তায়েফ প্রাচীনকাল থেকে ধর্মীয় গুরুত্ব বহন করে আসছে। আইয়ামে জাহেলিয়া যুগের মানুষ তায়েফের নারী দেবী ‘লাত’ মূর্তির পূজা করত। সে যুগে এখানে বাস করত ছাকিফ গোত্র। উরওয়াহ ইবন মাসউদ, আবদ ইয়া লায়ল ইবন আমর, উসমান ইবন আবুল আস ছিলেন সে যুগের নামকরা গোত্র অধিপতি। ৬৩০ সালে তায়েফের কাছে সংঘটিত হয় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নেতৃত্বে হুনায়েনের যুদ্ধ। অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি তায়েফে জন্মগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে যিয়াদ বিন আবি সুফিয়ান (রা.), মুগিরা ইবন শো’বা (রা.), হাজ্জাজ ইবন ইউসুফ, আল মুখতার, ইরাকের বাদশাহ ফয়সাল, নায়িফ ইবন আবদুল আযিয, হজরত উসমান ইবন আফফান (রা.), মুতলাক হামিদ আল উতায়বী, ব্রুনাই দারুসসালামের তৃতীয় রাষ্ট্রপ্রধান সুলতান শরীফ আলী অন্যতম।বহু বিখ্যাত ব্যক্তি জীবনের একটি অংশ তায়েফে কাটিয়েছেন। তাদের মধ্যে মুহাম্মদ ইবনে কাসিম, খোলাফায়ে রাশেদিনের তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান ইবন আফফান (রা.), তুর্কি উসমানি খিলাফতের সংবিধান রচয়িতা আহমদ শফিক মিফহাত পাশা (১৮২২-১৮৮৪), মুহাম্মদ মুহসিন খান, হজরত আবদুল ইবন আববাস (রা.)।' তায়েফ মানে প্রদক্ষিণকারী, তাওয়াফকারী। ছুটির দিনে এটা সর্বস্তরের মানুষের পর্যটন ও মিলনকেন্দ্র।

তায়েফ থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে রয়েছে প্রাক-ইসলামী যুগের ঐতিহাসিক স্থান, যেখানে বার্ষিক মেলা বসত। বিভিন্ন গোষ্ঠীর সর্দাররা রাজনৈতিক, সামাজিক ও বাণিজ্য বিষয়ে মতবিনিময় করতেন। এখানে গদ্য সাহিত্য ও কবিতা প্রতিযোগিতার আসর বসত। শ্রেষ্ঠ কবিতা পর্বতগাত্রে উত্কীর্ণ করে রাখা হতো। এখনও ব্যাসালটিক পাথরে এসব স্মৃতিচিহ্ন রক্ষিত আছে। এর পাশে অবস্থিত তুর্কি দুর্গ। এখানে বহু যুদ্ধ সংঘটিত হয়। বেশ কিছু কবরের চিহ্নও বিদ্যমান। কথিত আছে, ১৯১৭ সালে লরেন্স অব অ্যারাবিয়া এখানে যুদ্ধরত ছিলেন। আল হাদা ও শেরাটন হোটেলের মাঝখানে রয়েছে জীবন্ত বন্যপ্রাণী, পাখি ও বনজ-ফলদ গাছগাছালির সংগ্রহশালা। পর্বতচূড়া থেকে সূর্যাস্তের দৃশ্য বড়ই মনোহর।

এ তায়েফ শহরের সঙ্গে বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর জীবনের এক বেদনাবিধুর স্মৃতি বিজড়িত। এখানে দশদিন অবস্থান করে তিনি আল্লাহর বাণী প্রচারে প্রয়াসী হন। কিন্তু বিপথগামী তায়েফবাসী প্রস্তর নিক্ষেপ করে তাঁকে শহর থেকে বিতাড়িত করে দেয়। অপমান ও লাঞ্ছনা সহ্য করেও তিনি তায়েফবাসীকে অভিসম্পাত করেননি।তিনি তাদের জন্য দোয়া করেছিলেন আর তার ফলেই আজ সেখানে মুসলমানদের উপাসনার কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে।আমাদের জন্য এ থকে অনেক শিক্ষা রয়েছে।আমরা একটুতেই মানুষকে বদদোয়া করি।আমাদের উচিত খারাপ কাজের জবাব ভাল কাজ দিয়ে দেয়া।তাহলে একে অন্যের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রিতি বাড়বে।

অল্প সময়ের ভ্রমন হলেও আমরা বেশ আনন্দ পেয়েছিলাম।বিশেষ করে যারা ছোট তাদের জন্য এটা বাড়তি আনন্দ।আজকাল শিশুরা পড়াশুনা ও ইটের দেয়ালে দীর্ঘ অভ্যস্ততার কারনে এক ঘেয়েমি জীবন লাভ করে।আমাদের উচিত ছুটি গুলোতে তাদের নিয়ে কোন অজানা যায়গা যেখানে প্রকৃতি ছড়িয়ে রেখেছে অপার আনন্দ সেখানে বেড়িয়ে আসা।আমাদের দেশে ছড়িয়ে আছে অনেক স্বাস্হকর স্হান।সরকারের উচিত পর্যটকদের জন্য এগুলোর সংস্কার , প্রয়োজনীয় হোটেল মোটেল নির্মান,প্রশাসনিক সুবিধা সহ সব ব্যবস্হা করা যাতে বিদেশী পর্যটকরা ও আকর্ষিত হয়।আপনিও আপনার জীবনের একটা ছক তৈরি করুন যেন বছরের ছুটিগুলো পরিবার নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন।

বিষয়: বিবিধ

১৬২৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File