বন্ধুত্বের মাধ্যমে মহা শক্রুকেও জয় করা সম্ভব।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০৯ জুন, ২০১৩, ০২:৪২:৪৫ দুপুর

সমাজ জীবনে বেঁচে থাকার জন্য জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ভাল বন্ধুর প্রয়োজন।যার সংগে মনের মিল থাকে,যে বিপদে পাশে এসে দাঁড়ায়,সুখ - দু:খ ও আনন্দ-বেদনার অংশীদার হয়ে যায় সে-ই তো আসল বন্ধু।এই বন্ধুর সংখ্যা অনেক কম।সচরাচর এক বা দুয়ের বেশী নয়।অনেকে ভাবতে পারে আত্মীয় বা রক্ত সম্পর্কীয় হলেই সম্পর্ক গড়ে উঠে আসলে তা নয়।সমাজে এমনও মানুষ আছে যে চলার পথে কোন এক সময়ে রক্তের চেয়েও আপন হয়ে উঠে বা তার চেয়েও বেশী যে নিভৃতে আপন মনে বন্ধুর জন্য নিজেকে বিলীন করে দেয়।এই বন্ধুরুপী মানুষগুলো নিরন্তর মনের মধ্যে থাকে।হঠাৎ করে এ বন্ধুরা যদি দূরে চলে যায় হৃদয় খান খান হয়ে যায়।আবার এর বিপরীত ও যে নাই তা নয়।নিজের বসত ভিটায় বা নিকট আত্মীয় ও হয়ে উঠে বৈরি স্বভাবের।মুসলমান নামধারি নামাজ কালাম করে,সামাজিক কাজ যেমন মসজিদ মাদ্রাসা করে,মানুষকে সহযোগিতা করে, বাস্তবে এমন লোক ও দেখেছি যে তার পরিবার সন্তানদের প্রতি অবহেলার তীর নিক্ষেপ করছে।জাহেলিয়াত যুগে যে ব্যাবিচার হতো না, বর্তমান এ ভন্ড নামাজিরা নিজের পরিবারের মধ্যেও তা-ই করে চলছে।নিজের স্ত্রীর অধিকার হরন করে ধর্মের মুখোশ পরে এ কাজ নিরন্তর করে চলছে।সমাজে নিজেকে দাবি করছে একজন সমাজপতি,দানশীল হিসেবে,আসলে এরা এক ধরনের ভন্ড ও কপোট যাদের জন্য লেলিহান আগুনের শাস্তির ব্যবস্হা রাখা হয়েছে।একজন ভাল বন্ধু দুরে গেলেও খুবই কাছের।সেখানে কোন প্রতিদানের প্রশ্ন নেই।এমন মানুষের সাথেই বন্ধুত্ব গড়ে উঠে।আমাদের চাওয়াটা অত্যন্ত সাদমাটা হওয়া চাই।আমাদের আশে পাশে যারা আছে তাদের নিয়েই আমাদের একটি জগত।এই জগতটা যদি হয়ে উঠে নির্ভরযোগ্য তাহলেই আমরা স্বার্থক।আমাদের ভালবাসাটা হতে হবে দু'দিক থেকে।যদি আমরা ভালবাসা দ্বারা একে অন্যকে পরিপূর্ন করতে পারি তাহলে আর কোন হিংসা বা বৈরি মনোভাব থাকবে না।ব্যাক্তির এই অসাধারন চিন্তা চেতনা একটা সমাজকে উন্নত থেকে উন্নততর করতে সহায়ক হয়।

আমাদের বাস্তবতা কি তা শিক্ষা দেয়? আমাদের পারিবারিক সম্প্রিতি কি আমরা গড়তে পেরেছি? আমাদের সমাজ দেখে কি তা মনে হয়? না আমাদের বাস্তব জীবনে কোন ভালবাসা নেই,সহমর্মিতা নেই।আমাদের মিডিয়াগুলোর দিকে চোখ দিলেই প্রতিনিয়ত চোখে পড়ে বিভৎসতা অর্থাৎ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যা দেখি তা হলো ভালবাসার বিপরীত অবস্হান।সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে খুন খারাবি,হানাহানি ,লুন্ঠন,হরন-অপহরন,সংঘাত-সহিংসতা, যুদ্ধ, অন্যায়-অত্যাচার, ক্ষমতার অপব্যবহার- কোনোটাই বন্ধুত্বের ফসল নয়, বরং তার বিপরীত।সমাজের বাস্তবতা আমাদের সাক্ষ্য দেয় যে, প্রাচুর্য ও সমাজে প্রতিষ্ঠিত থেকেও আত্মহত্যার শীকার হছ্ছে যুগ যুগ ধরে অনেক নামকরা ব্যবসায়ি,চিকৎসক,সাংবাদিক,সিনেমা আর্টিষ্ট আরো এরকম অনেকে।কেন তারা এ পথ বেচে নেয়? কারন হলো আসলে প্রকৃত ভালবাসা নেই।মানুষ হিসেবে একজন মানুষ আর একজন মানুষের ভালবাসা থেকে বন্চিত।

যে জিনিসগুলো সমাজে প্রতিফলিত হওয়া দরকার তা আমদের সমাজে ফলাও করে প্রচার হছ্ছে না।মানুষের সুশৃংখলভাবে বেঁচে থাকার জন্য,সুন্দর ও শান্তিময় জীবন প্রতিষ্ঠার জন্য যে মানবিক প্রচেষ্টা তা সমাজে খুব কম-ই প্রতিফলিত হয়।অন্যদিকে শত্রুকে বন্ধু করা অথবা দৃশ্যমান অপ্রেমকে প্রেমে পরিণত করার কাজটা অনেক বড় মাপের এবং বেশ কঠিন। কিন্তু সমাজে যখন মিলেমিশে চলার স্বাভাবিক প্রবণতার বিপরীতে দ্বন্দ্ব-সহিংসতার মাত্রা বেড়ে যায়, বিশেষ করে দেশে যখন গৃহযুদ্ধের অবস্থা বিরাজ করে তখন অবন্ধুকে বন্ধু করা, অপ্রিয়জনকে প্রিয় করার তাগিদ আরো তীব্রভাবে অনুভূত হয়।আল্লাহ মানুষের প্রকৃত বন্ধু।একজন মুসলিম আল্লাহ ও তার রাসূল সা: এর কাছে তার আনুগত্বের শীর নত করে দিয়েই মেনে নিয়েছে যে, এক মুসলিম আর এক মুসলিমের ভাই।ভাই যেমন ভাই এর কোন ক্ষতি করে না তেমনি একজন মুসলিম আর একজন মুসলিমের কোন ক্ষত করতে পারে না।সূরা হুযরাতের ৬ আয়াতে আল্লাহ বলেন,' ওহে যারা ঈমান এনেছ! যদি কোন সত্যত্যাগী তোমাদের নিকট কোন খবর নিয়ে তোমাদের কাছে আসে তখন তোমরা যাচাই করে দেখবে,পাচে তোমরা অজান্তে কাউকে আঘাত করে বস,আর পরক্ষনেই দু:খ কর যা তোমরা করেছ।' বন্ধুত্বের মধ্যে ফাটল ধরানোর জন্য কেউ কেউ কাজ করে থাকে সেদিক থেকে সজাগ থাকা জরুরি।

তবে যার সঙ্গে মেলে না, যে প্রতিপক্ষ, যে অষ্টপ্রহর বিরুদ্ধ অবস্থানে, যে প্রতিপক্ষের নিন্দা-সমালোচনার জন্যই কেবল সোচ্চার হয়, কখনো কখনো মারাত্মক ঘৃণা এমনকি সহিংস রূপ নিয়ে সামনে আসে—এমন লোক যাকে কেবল শত্রু বলেই চিহ্নিত করা যায়, তার সঙ্গেও কি কোনোরকম বন্ধুত্ব হতে পারে? উত্তর হলো, হতে পারে। আর সাধারণত তা না হলেও সেরকম কিছু যাতে হয় সেজন্য আমাদের সচেষ্ট থাকা একান্ত প্রয়োজন। কারণ সব সময় না হলেও কোনো কোনো সময় এই শেষোক্ত ধরনের বন্ধুতা ভীষণ দরকার হয়ে পড়ে। যেমন বাংলাদেশে এখন আমাদের সমাজে এই ধরনের বন্ধুত্ব ধারন করা ভীষণ জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে।তুমি তোমার শত্রুকে ভালোবাসো, তার ভালো করো যে তোমাকে ঘৃণা করে। তাকে আশীর্বাদ করো যে তোমাকে অভিশাপ দেয়। তার জন্য প্রার্থনা করো যে তোমাকে নির্যাতন করে। যে তোমার এক গালে চড় দেয় তার দিকে অন্য গালটাও পেতে দাও। যে তোমার আলখাল্লাটা নিয়ে গেছে তাকে তোমার পরনের জামাটাও দিয়ে দিতে দ্বিধা করো না। যে যা চায় তা তাকে দিয়ে দাও। যে তোমার সম্পদ হরণ করে তাকে আর এ নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করো না। তুমি অন্যের কাছ থেকে যেমন আচরণ আশা করো তুমি তার সঙ্গে তেমন আচরণ করো। তোমার শত্রু যদি ক্ষুধার্ত হয় তবে তার মুখে অন্ন তুলে দাও। সে যদি তৃষ্ণার্থ হয় তবে তাকে পানীয় দাও। খারাপের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে তার কাছে পরাজিত হইও না, বরং খারাপকে জয় করো ভালো দিয়ে।' পরম শত্রুকেও ক্ষমা করে দেয়া, মনে-প্রাণে তার কল্যাণ কামনা, তার প্রতি দয়া প্রদর্শন, তার জন্য ত্যাগ স্বীকার করা । মানুষের সহজাত প্রবণতা হলো, কেউ তাকে আঘাত করলে সে পাল্টা আঘাত করে, কেউ তার ক্ষতি করলে সে পাল্টা ক্ষতি করে এর প্রতিশোধ নিতে চায়। নেয়।ইসলাম ক্ষমার আদর্শ স্হাপন করেছে তবে কেউ যদি ক্ষমা না করে তাহলে যতটুকু ক্ষতি হয়েছে ততটুকুরই প্রতিশোধ নিতে পারে।

উন্নত, উদার শিক্ষার আদর্শে উদ্বুদ্ধ আধুনিক, সংবেদনশীল, সুবিবেচক মানুষ যুক্তি দেন যে, ওরকম প্রতিহিংসাপরায়ণ নীতি অনুসরণ করে চললে সমগ্র মানবজাতি অন্ধ হয়ে যাবে। হানাহানি ও সহিংসতা অনন্তকাল ধরে চলতে থাকবে। তাই ব্যক্তি ও সামাজিক অঙ্গনে বৃহত্তর স্বার্থের কথা মনে রেখে প্রতিপক্ষকে ছাড় দিতে হয়। অন্ধকারকে দূর করতে হলে আরো অন্ধকার নয়, আলো ছড়াতে হয়। আর তাই শত্রু কিংবা প্রতিপক্ষের সঙ্গে অনিবার্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা, সংঘাত-সহিংসতার অন্তরালে হলেও এক ধরনের বন্ধুতার চর্চা অব্যাহত রাখাটা ভীষণ জরুরি। এজন্যই সম্ভবত বিজ্ঞ কূটনীতিকরা এমনকি যুদ্ধের সময়টাতেও এ চেষ্টা চালিয়ে যান। এই প্রেক্ষাপটে তাত্ক্ষণিক স্বার্থ চিন্তা, কূট-কৌশল, হঠকারিতাকে পরিহার করে আমাদের আত্মপক্ষ বা বন্ধুর সঙ্গে যেমন, তেমনি শত্রু বা প্রতিপক্ষের সঙ্গেও যতটা সম্ভব ভালো এবং ন্যায্য আচরণ করা দরকার। প্রয়োজন সহানুভূতিশীল, সহূদয় আচরণের মাধ্যমে তাকে ক্রমান্বয়ে জয় করবার জন্য সচেষ্ট থাকা। এমন নীতি অনুসরণ করা উচিত, যাতে আমাদের শত্রু এক পর্যায়ে বন্ধু হয়ে যায়। নিজেদের কাজের সৌন্দর্য দিয়ে প্রতিপক্ষকে আকৃষ্ট ও জয় করবার পথই প্রকৃত মুক্তির পথ ।

বিষয়: বিবিধ

২১৪৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File