ইসলাম ধর্মকে সঠিকভাবে বুঝতে শিখা ,গ্রহন করা ও তার অনুশীলন নেই বলে সমাজ কলুষিত হছ্ছে।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০২ জুন, ২০১৩, ০৭:৫০:২৯ সন্ধ্যা

আমি মাঝে মাঝে আশ্চর্যবোধ করি ইসলামে চরমপন্থিদের কর্মে ও আচরনে যা আমাদের সমাজকে অস্হিতিশীল করে তুলেছে।যারা ইসলাম বুঝে না তাদের কথা না-ই বা বললাম।যারা ইসলাম অনুশীলন করে বা ইসলামের প্রচারে নিমগ্ন তারা বিভক্ত হয়ে যে যার মত ইসলাম প্রচার করছে।প্রথম কথা হলো ইসলামে একটি দল ছাড়া আর কোন দল নেই।দুনিয়ার সমস্ত মুসলমান এক আল্লাহ ও রাসূল সা: এর অনুসারি।যারা আল্লাহ ও তার রাসূল সা: এর পথে থেকে কুরআন ও সূন্নাহের অনুশীলন করেন দৈনন্দিন জীবনে ও মানুষকে ডাকেন দ্বীনের দিকে,শরিয়তের হালাল ও হারাম দিকগুলো অন্যকে জানিয়ে দেন সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় তার জন্য তো কারো সাথে সংঘর্ষ হতে পারে না।তবে যদি কেউ কারো উপর কোন কিছু ছাপিয়ে দেয় তাহলে সংঘর্ষ হতে বাধ্য।আল্লাহ সূরা মুমতাহানার ৮ আয়াতে বলেন,' আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করছেন না যে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে ধর্মের কারনে যুদ্ধ করেনি ,তোমাদের বাড়িঘর থেকে তোমাদের তাড়িয়ে দেয় নি,তাদের সংগে তোমরা সদয় ব্যবহার করবে ও তাদের প্রতি ন্যায়পরায়ন হবে।নি:সন্দেহে আল্লাহ ন্যায়পরায়নদের ভালবাসেন।' আমাদের যে ভূখন্ড এখানে অনেক সম্প্রদায়ের বাস।যে যার মত তাদের ধর্মের অনুশীলন করবে এটাই স্বাভাবিক।প্রত্যেকে তার ধর্ম প্রচার করবে অবলীলায়।আবার কেউ যদি স্বইছ্ছায় অন্য ধর্ম গ্রহন করে বা ধর্মান্তরিত হয় সেটাও তার নিজস্ব ব্যাপার।কারন এই দুনিয়ার জীবনে আল্লাহ মানুষকে শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি করে মৃত্যু পর্যন্ত তাকে স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছেন যেন তিনি আখেরাতে তার ভাল ও মন্দ কাজের বিচার করতে পারেন।সেজন্য একজন মুসলিম যদি তার বিবেকের বিচারে অন্য ধর্ম গ্রহন করে বা একজন ইয়াহুদি বা খৃষ্টান যদি মুসলিম হয়ে যায় তাকে কটাক্ষ বা এক ঘরে করার কারো অধিকার নেই।তবে কেউ কারো ধর্ম বা ধর্মের অবতারের নামে কটুক্তি করতে পারবেনা।ধরুন বাজারে অসংখ্য কোম্পানি রয়েছে।প্রত্যেক কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভ রয়েছে পন্য বিক্রয় করার জন্য।তারা তাদের প্রডাক্টের গুনাগুন ভোক্তাদের কাছে প্রচার করতে পারে কিন্তু এটা কখনো বলবেনা যে ঐ কোম্পানির প্রডাক্ট আমার প্রডাক্টের চেয়ে খারাপ।যদি এমন হয় তখনি সংঘর্ষ বাধবে।যদি প্রত্যেকে তাদের সঠিক নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে ধর্ম পালন ও প্রচার করেন তাহলে সমাজে ধর্মীয় কোন সমস্যা থাকবে না।

আমাদের সমাজে ধর্মকে ইস্যু করে যে আস্তিক , নাস্তিক,ধর্মভিত্তিক রাজনীতি, রাষ্ট্র ও ধর্মের পৃথকিকরন যে কথাগুলো প্রচলিত আছে তার মাধ্যমে মুসলমানরা বিছ্ছিন্ন পথ বেচে নিছ্ছে।আগেই বলেছি একজন যে ধর্ম অনুশীলন করছেন তিনি তার ধর্ম মেনেই চলবেন।তিনি যদি মনে করেন অন্য একজন ভিন্ন চরিত্রের মানুষ এবং তার সাথে চললে তিনি নিজেকে কলুষিত করবেন, তার থেকে তিনি দূরে থাকতে পারেন তবে যদি ভিন্ন চরিত্রের মানুষটি মুসলিম হয় তাহলে তিনি সুন্দরভাবে তার ক্রুটিগুলো উপস্হাপন করতে পারেন।আমাদের মনে রাখতে হবে ধর্ম প্রচারে কোন বাড়াবাড়ি চলবে না।আল্লাহ সূরা বাক্কারার ২৫৬ আয়াতে বলেন,' ধর্মে জবরদস্তি নেই,নি:সন্দেহে সত্য পথ ভ্রান্ত পথ থেকে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে।অতএব যে তাগুতকে ( যে নিজে দ্বীন পালন করেনা ও অন্যকে করতে বাধা দেয় সে-ই তাগুত) অস্বীকার করে এবং আল্লাহতে ঈমান আনে সে-ই ধরেছে শক্ত হাতল যা ভাংবার নয়।' আমাদের সমাজে পরিবারগুলো দেখুন।এক পরিবারে সদস্য সংখ্যা ৬ জন বা এর কম বেশি।দেখা যায় বাবা মা দ্বীনদার আবার ছেলেমেয়ে তেমন দ্বীনদার নয় বা কোন একজন তাগুতের মত।এখন বাবা মা'র কাজ কি সেক্ষেত্রে।ছেলে মেয়ে যতই খারাপ হোক কিছুটা হলেও বাবা মা'কে সমীহ করবে।এক্ষেত্রে বাবা মা'র কাজ হলো তাদের প্রতি সুন্দর ভাষায় নসিহত করা।ছেলে মেয়ে ছোট হলে শা্সন করা যায় কিন্তু এডাল্ট হলে সেটাও অনেক ক্ষেত্রে করা যায় না। উত্তম নসিহতের মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রে ফিরিয়ে আনা যায়।যদি কর্কশ ভাষা ব্যবহার করা হয় তাহলে ঝগড়া বিবাদের সৃষ্টি হবে ও হানাহানিতে পরিবার ধ্বংসের দিকে ধাবিত হবে।

আমাদের আজকের সামাজিক অবস্হা তাই নয় কি? এই দুনিয়ার জীবনকে বুঝতে হবে কেন আল্লাহ এভাবে সৃষ্টি করেছেন।সমাজে যদি বেনামাজি, সুদখোর,ঘুষখোর,ব্যাবিচারি ও এরকম আরো অন্যায়াচারি না থাকে তাহলে ভাল মানুষগুলো কাকে নসিহত করবে আর আল্লাহ আখেরাতে কি বিচার করবেন? আল্লাহতো অতীত ,বর্তমান ও ভবিষ্যত সম্পর্কে জানেন।কে জান্নাতে যাবে ও জাহান্নামে যাবে তিনি জানেন। তিনি তো মানুষকে সৃষ্টি করেই জান্নাত ও জাহান্নামে দিয়ে দিতে পারতেন।যদি জান্নাতিদের জান্নাতে দিতেন তারা কিছুই বলতো না কারন সেটা সুখের যায়গা।কিন্তু জাহান্নামীদের জাহান্নামে দিলে তারা বলতো আমরা দুনিয়ায় ভাল কাজ করতাম।এই একটি কারনে তিনি দুনিয়ার সময় তাদের দিয়েছেন যেন আখেরাতে তারা বিতর্ক না করতে পারে।

আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন সত্য উপস্হাপন ও ন্যায় বিচার করার জন্য।আমাদের দৈনন্দিন ব্যাক্তিগত ,সমাজ ও রাষ্ট্রিয় জীবনে একে অন্যের প্রতি কুৎসা রটনা,গালিগালাজ,মারামারি ,হত্যা ও অসহিষ্নুতা তার কারন হলো লোভ ও হিংসা।আমরা কে কার আগে বড় হব,অন্যকে ঠকিয়ে নিজে সম্পদশালী হব, কে কত বড় নেতা হব ও নেতৃত্বের আসন গ্রহন করবো।আল্লাহতো এ কাজ করার জন্য আমাদের সৃষ্টি করেন নি।আল্লাহ তার নবী কে সূরা আ'রাফের ২৯ আয়াতে বলেন,' তুমি বলো-আমার প্রভু আদেশ দেন ন্যায় বিচারের আর তোমাদের মুখ সোজা দাঁড় করো প্রত্যেক সিজদাস্হলে আর তাকে ডাক তার প্রতি ধর্মে একনিষ্ঠভাবে।যেমন তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন তেমনি তোমরা ফিরে আসবে।' মুসলিম দেশগুলোতে গনতন্ত্রের আওতায় শাসন চললেও নৈতিক দিক ও মানুষের কল্যান করার যদি আকাংখ্যা থাকে তাহলে সমাজে কোন বিশৃংখলা থাকার কথা নয়।অনৈতিক মানুষের সংখ্যা প্রকট বলে কোথায়ও স্বস্তি নেই।যে সাম্প্রদায়িকতার কথা আমরা অনেকে বলি তা তো এসেছে বৃটিশদের কাছ থেকে।তারা শুধু আমাদের নির্যাতন ও বন্চিতই করেনি বরং মুসলমানদের মধ্যে সংঘাতের বীজ বপন করে গিয়েছিল যা মুসলমানরা আজও আনেকে বুঝতে পারছেনা।এই মুসলমানদের প্রতি অর্ধশতাব্দি যাবত যে ঘৃনা ও অভহেলা দেখানো হয়েছে তা আধুনিক ভারতীয় সাহিত্য চর্চা দেখলেই বুঝা যায় আর ইতিহাসে তো সাক্ষি আছেই।মুসলমানরা তাদের ইসলামের মৌলিক ঐতিহ্যকে বাদ দিয়ে ঠুনকো জিনিস নিয়ে দ্বন্দ সংঘাতে লিপ্ত।আর মুসলমানদের একটা শ্রেনী তাদের সংস্কৃতি দাঁড়ি ,টুপি ,পর্দা এগুলো দেখলে নিজেদের বিষিয়ে তোলে।প্রকৃত অর্থে এরা মুসলমান নয়।যাদের অন্তরে ইসলাম বিদ্বেষ থাকে তারা হলো কট্টর মোনাপেক বা হিপোক্রেট।

একটা সমাজে বিভিন্ন মতাদর্শের লোক থাকতেই পারে।আমরা যদি একে অন্যকে শ্রদ্ধা সম্মান করি তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারি।আমাদের সমাজে যে উশৃংখলতা আমরা দেখতে পাছ্ছি তা কোন মানবীয় চরিত্রের মধ্যে পড়ে না।মানুষ হত্বা,সম্পদ লুন্ঠন,জাতীয় ও ব্যাক্তিগত সম্পদ ভাংচুর , সহিংসতা এগুলোকে কোন নীতির আওতায় আমরা ফেলবো।আমরা কথার মাধ্যমে ,লিখার মাধ্যমে ,গোলটেবিলে বসে আমাদের সমস্যার সমাধান করতে পারি।আমাদের ঈমানের জোর এত বেড়ে যায় যখন আমরা কোন কটুক্তি শুনি আল্লাহ ও রাসূল সা: সম্পর্কে।অথচ ঐ লোকগুলো ৫ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে কায়েম করে না,যাকাত দেয় না সঠিকভাবে,রোজাগুলো পালন করে না পালন করার মত।রাসূল সা:কে মক্কার চত্তরে নামাজরত অবস্হায় পশুর নাড়িভুঁড়ি চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল,রক্তাক্ত করা হয়েছিল কিন্তু ঐু রকম প্রতিহিংসার যযবা তৈরি হয় নি।রাসূল সা: এর কাজের অনুশীলনই তাকে ভালবাসা।তাকে যথাযত অনুসরন করা ছাড়া ইসলামের উন্নয়ন সম্ভব নয়।বিভিন্ন মসজিদে ঘুরে দেখুন ফজরের নামাজে কয়জন জামাতে সামিল হয়।আর এই নামাজ কায়েম না করা লোকদেরই দেখতে পাবেন তারা ইসলামকে অনুসরন না করে দ্বীন কায়েম করতে চায়।সুতরাং ইসলামপ্রিয় ভাইদের ইসলাম সম্পর্কে প্রকৃত জ্গান আহরন করার জন্য কুরআন ও সূন্নাহের সঠিক অনুশীলন অত্যাবশ্যক।এর মাধ্যমেই সমাজের সব অস্হিতিশীলতা দুর হবে।প্রতিহিংসা কখনো সমাজে শান্তি বয়ে আনে না।শান্তির জন্য দরকার সহনশীলতা,একে অন্যকে শ্রদ্ধাবোধ ,বিনয় ও নম্রতা প্রদর্শন ও সর্বোপরি সামগ্রিক কল্যান কামনা।

বিষয়: বিবিধ

১৩৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File