পরিবার ও সমাজে দম্পতিদের ভূমিকা আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করতে পারে।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৫ মে, ২০১৩, ০৩:১৭:৩৩ দুপুর
আজকের সমাজে যে কি বিচিত্র রুপ দেখতে পাওয়া যায় তা ভেবে দেখার কারোরই কোন ফুরসৎ নেই।একটা দম্পতি থেকে পারিবারিক জীবন শুরু হয় আবার সে থেকে ছড়িয়ে পড়ে অসংখ্য মানুষ।সূরা নিসার ১ আয়াতে আল্লাহ বলেন,' ওহে মানবগোষ্ঠী! তোমাদের প্রভুকে ভয়ভক্তি কর যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একই নফস্ থেকে আর তার জোড়া ও সৃষ্টি করেছেন তার থেকে আর উভয় থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু নর নারী।' শহরে ও গ্রামে পরিবারগুলো পর্যবেক্ষন করলে এমন অনেক স্পর্শকাতর দৃশ্য চোখে পড়ে যা ভাবিয়ে তোলে ভাবুকদের।সূরা আল ইমরানের ১৯০ আয়াতে এই জ্গানীদের কথা আল্লাহ এভাবে বলেন,' নি:সন্দেহে আকাশমন্ডলি ও পৃথিবির সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের আবর্তনে বিশেষ নিদর্শন রয়েছে জ্গানবান লোকদের জন্য।'গ্রামীন পরিবারগুলোর মধ্যে অধিকাংশই কৃষক,ব্যবসায়ি ও চাকুরিজীবি।চাকুরিজীবি ও ব্যাবসায়িরা শহরে বা এলাকায় তাদের কাজ কর্ম করেন।কৃষকদের স্হায়ি আবাস গ্রামে।আবার যারা শিক্ষা বা ব্যাবসায় ভাল করেন তারা স্হায়ী হয়ে যান শহরে।কিন্তু দাম্পত্ত জীবনের ক্ষেত্রে অনেক চমৎকার কিছু তথ্য বেরিয়ে এসেছে যা আমাদের সবার ক্ষেত্রে কম বেশী প্রযোজ্য।অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমাদের পুরুষশাসিত সমাজে শিক্ষার আসল মান তথা কুরানিক শিক্ষার আসল রুপটির বাস্তবতা না থাকার কারনে নারিরা অবহেলিত হয়ে আসছে।আমাদের যে নারিবাদি আন্দোলন মাঝে মাঝে মাথাছাড়া দিয়ে উঠে তা আসলে অবহেলিত এই নারিদের নিয়ে নয় যা আমরা তাদের পেশাগত কার্যক্রম থেকে দেখতে পাই।গ্রামে অধিকাংশ নারি দম্পতি অল্প শিক্ষিত।আজকের যুগে শিক্ষার অনেক প্রসার হলেও দারিদ্রতার কারনে পড়াশুনা ব্যাহত হছ্ছে।আর এ কারনে সেকন্ডারির শেষ বা কলেজের প্রথমে অনেক গ্রামীন মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাছ্ছে।এই শ্রেনীটার বেশীর ভাগ অবহেলার শীকার।এই শ্রেনীর পরিবারগুলোতে টানা পোড়নটা বেশী থাকে।সংসার জীবনে প্রেম ভালবাসা ও রোমান্টিকতার যে একটা ব্যাপার আছে তা সুশিক্ষার প্রভাব না থাকলে দম্পতিরা চর্চা করতে পারে না।আজও গ্রামে দেখা যায় অনেক মহিলা স্বামীকে দেখলে ঘোমটা দিয়ে মুড়ে থাকে।স্বামীকে নাম ধরে ডাকতে লজ্জাবোধ করেন।এটা প্রাচীন ও সনাতনি পুরুষ শাসিত পদ্ধতি।কিন্তু ইসলাম কি এরকম কিছু বলেছে যা তারা করে।সূরা রুমের ২১ আয়াতে আল্লাহ বলেন,' আর তার নিদর্শানাবলীর মধ্যে হছ্ছে তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন যুগলদের যেন তোমরা তাদের মধ্যে স্বস্তি পেতে পার।আর তিনি তোমাদের মধ্যে প্রেম ও করুনা সৃষ্টি করেছেন।নি;সন্দহে এতে তো নিদর্শনাবলী রয়েছে তাদের জন্য যারা চিন্তা করে।'
সংসারে দম্পতির ভালবাসা তৈরি হয় বিয়ের পরই।বিয়ের আগে কেন এই ভালবাসা ও রোমান্স হবে না তা বিভিন্ন সামাজিক কেসস্টাডি থেকে জ্গানীরা জ্গান আহরন করতে পারে।ইসলাম এমনিতেই কোন কিছুর সিদ্ধান্ত দেয় নি।ওহির মধ্যে রয়েছে মানব জাতির সমস্ত কল্যান।আবেগ থেকে ভালবাসা তৈরি হয়।আল্লাহ মানুষের এই শরীরকে এমনভাবে তৈরি করেছেন যাতে রয়েছে জৈবিক চাহিদা।এতে পশুশক্তির প্রভাব এমন যে, যে কোন মুহুর্তে বিশৃংখলিত হতে পারে।আর এ কারনে নারিদের ইসলাম হেফাজত করেছে অনেক ক্ষেত্রে।যারা বিয়ের পূর্বে একে অন্যকে ভালবেসেছে ও দৈহিক মিলনে লিপ্ত হয়েছে তাদের ৯৫% বন্চিত হয়েছে ঘর বাধা থেকে।দাম্পত্ব জীবনের প্রথম যে আকর্ষন তা হলো একে অন্যকে পাওয়া ও মিলনের বাসনা।ঘর বাঁধার পর ধীরে ধীরে জন্মে পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধ।আর সামাজিক ক্ষেত্রে একজন পুরুষের চেয়ে একজন মহিলার ভার্জিনতার মুল্য অনেক বেশি।কারন হলো পুরুষ মহিলার ভিতর প্রবেশ করে।তার সাথে অনেক আইন কানুন জড়িত।সেজন্য চেকের ব্যবস্হা অর্থাৎ নিরাপদে থাকতে হবে একজন মহিলাকে।সমাজে অসংখ্য ঘটনার সাক্ষি হয়ে আছে যে,প্রেম হওয়ার পর তারা মিলিত হয়েছে আর প্রেগনেন্ট হওয়ার পর প্রেমিকাকে খুঁজে পাওয়া যায় নি।তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হলো একজন মহিলা।সমাজ যদি বিচার করেও সেই মহিলাকে নিগৃহিত হতে হয় সবচেয়ে বেশি।সেজন্য এই অশ্লিলতাকে ইসলাম হারাম করে দিয়েছে।আমরা যারা সমাজ সংস্কারের কাজ করতে চাই তাদের আরো বেশী মানুষের সাথে মিশে মৌলিক সমস্যাগুলো জানা উচিত।গ্রামের মহিলারা এমনিতে মুখ খুলতে চায় না।এমনকি তাদের অনেক স্বামী ইসলামের কথা বলে যে গোঁড়ামিগুলো করে এর জন্য উলামাদের সঠিক নিয়মকানুন গুলোর প্রচার করা উচিত।গ্রামের অনেক মহিলাকে প্রশ্ন করে জানা যায় তারা তাদের স্বামিদের ভয়ে ভীত থাকে।স্ত্রী যদি একটু সুন্দরি হয় তাহলে তাদের সন্দেহের চোখে দেখে।এই সন্দেহের কারনে দাম্পত্য জীবন হয়ে উঠে কলুষতায়।সেজন্য দেখা যায় দাম্পত্য জীবনের যে স্বতস্পুর্ত আনন্দ তা থেকে বন্চিত হয়ে অনেকে অশহায়ের মত জীবন পার করে দেয়।
শহুরে জীবনে যারা অবস্হান করছে তারাও অনেকে এ থেকে পিছিয়ে নেই।যারা আমরা অফিস করি তারা আট বা দশ ঘন্টা বাইরে থেকেও অনেকে একটা কল দিয়ে খবর রাখেন না।অনেক রাতে ফিরে খাবার দাবার খেয়ে স্ত্রী সন্তানের খবর না নিয়েও ঘুমিয়ে পড়ে।অথচ স্ত্রী সারাদিন সংসার গুছিয়ে অপেক্ষায় থাকে স্বামীর।এ অবস্হায় অনেকের জীবনে চলে আসে অশান্তি ও সেপারেসন।অনেকে স্বল্পভাষী এটা ভাল গুন কিন্তু সেটা কি স্ত্রীর সাথেও? রোমান্টিকতা এমন জিনিস যা মানুষের মনের একটি চাহিদা।এর জন্য প্রয়োজন হয় সুশিক্ষার।অন্তরে কপটতা না থাকলে অন্তর থাকে পবিত্র।সূরা বাক্কারার ১৮৭ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'তারা তোমাদের পোষাক আর তোমরা তাদের পোষাক।' স্মামী স্ত্রী র অবস্হান হলো নিতান্ত পোষাকের মত যা শরিরে লেগে থাকে।অন্তর থেকে একে অন্যকে বুঝা।স্ত্রী যেমন স্বামীর হক্ক গুলো রক্ষা করবেন তমনি স্বামীও।বেশীর ভাগ স্ত্রীরা অবলীলায় তাদের কাজ করে যাছ্ছে কিন্তু স্বামীরা তাদের মুল্যায়ন করছে না।সূরা বাক্কারার ২২৩ আয়াতে আল্লাহ বলেন,' তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের জন্য এক ক্ষেত ক্ষামার। সুতরাং তোমরা যখন যেমন ইছ্ছে কর তোমাদের ক্ষেত ক্ষামারে গমন কর।' আল্লাহ পুরুষদের জন্য মহিলাদের একটা নেয়ামত দান করেছেন তেমনি নারীদের জন্যও।এটার অর্থ এই নয় যে যা ইছ্ছে তা-ই ব্যাবহার করা হবে।আবার অনেক মহিলা আছেন যারা শুধু কাজ নিয়েই ব্যাস্ত থাকেন।স্বামীর সময়গুলোতে যে সময় দেয়া দরকার তার প্রয়োজন অনুভব করেন না।অনেক মহিলা আছেন যারা বাইরে সাজার ব্যাপারে পটু কিন্তু স্বামীর কাছে যখন আসেন তখন আর সাজার খেয়াল থাকেনা।স্বামীর মনকে প্রলুব্ধ করার একটা প্রধান বিষয় হলো পরিছ্ছন্নতা সেজে গুজে থাকা আর এ গুন দুজনেরই থাকতে হবে।সহমর্মিতার ভাব দুজনকেই দেখাতে হবে দাম্পত্ত জীবনে।তাহলেই সেই সংসার সফল হবে।যে সংসার বা দাম্পতি যত সফল তারাই সমাজে স্বাক্ষর রাখেন বেশি।সমাজের আলোকিত পরিবার যারা তাদের মধ্যে এ গুন গুলোর প্রভাব রয়েছে তা দেখেও অনেকে শিক্ষা নিতে পারে।
বিষয়: বিবিধ
১৫২৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন