ভাল ফল পেতে হলে উন্নত চারা লাগাতে হয় ও নিয়মিত পরিচর্যা করতে হয়।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৩ মে, ২০১৩, ০২:৫৬:৩৭ দুপুর

আমরা সবাই জানি গাছ লাগানোর সময় ভেজা মৌষমে।শুষ্ক মৌষমে চারা লাগালে তা মরে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিরও বিজ বপনের সময় ছিল ৪১ বছর আগে।আমরা সবাই জেনেছি ফড়িয়া ও বর্গীরা আমাদের উৎপাদিত ফসল যথোপযুক্ত দাম না দিয়েই নিয়ে যাছ্ছিল।আমাদের গাছ লাগানোতে সহযোগিতা করছে না তাই সবাই মিলে তাদের আমরা তাড়িয়ে দিয়ে অন্তত: নিজেদের যায়গাটা দখল করে নিলাম।ফলে কি দাঁড়ালো,পুরোনো ফড়িয়া ও বর্গীদের তাড়িয়ে আবার নতুন ফড়িয়া ও বর্গীই তৈরিই হলো না তার সাথে যোগ হলো চোর ডাকাত ও লম্ফটের গোষ্ঠী।আর এভাবেই এসে দাঁড়িয়েছে বর্তমান স্বাধীন বাংলাদেশ।আমাদের দেশের জনপ্রতিনিধিরা দেশের মানুষের কষ্ট বুঝে কিনা জানি না, তবে তারা যে তাদের মসনদের হেফাজতে সর্বদা চাটুকারিতা ও নিজেদের আদর্শকে বলি দেন তা জন গনের কাছে এখন স্পষ্ট।আসলে রাজনীতিটা হলো ক্ষমতা দখল ও নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন।তার প্রমান আমাদের দেশের কিছুসংখ্যক নেতার আদর্শ থেকে বিচ্যুতি।আদর্শটা জীবনের একটা লক্ষ্য।আর ব্যাক্তিত্ব ফুটে উঠে যিনি যে আদর্শে নিজেকে জীবনের শেষ পর্যন্ত টিকিয়ে রাখেন ও জন গনের জন্য সেই আদর্শে থেকে কাজ করেন।আমাদের দেশে দুই মহান দল পালাবদল করে ক্ষমতায় আসেন।তাদের দায়ভাগটাই আমরা দেখি বেশি করে।যারা জোটে এসে ভিড়েন তাদের অনেকে লোভের কারনে আদর্শকে আত্মাহুতি দেন।বিশেষ করে বর্তমান শাসকদলে বাম ঘরানোর যারা অজনপ্রিয় হয়েও সরকারের কর্তাব্যাক্তি হয়েছেন তাদের নিয়ে জনসমক্ষে অনেক সমালোচনা এসেছে।তাদের কথায় কাজে কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায় না।এরা ইতিহাসের পাতায় কলন্কিত হয়ে থাকবেন।লেজুড়বৃত্বিতে কখনো মানুষের মর্যাদা বৃদ্ধি পায় না।অতীতে যাদের দেখেছি এই বড় দুই দলের বাইরে থেকে কঠোর সমালোচনা করেছে তারাই তাদের পার্থিব স্বার্থে লেজুড়ে পরিনত হয়েছে।আমি নাম বলে সম্মান ক্ষুন্ন করতে চাইনা কারন আমি একজন মানুষকে সম্মান জানাতে চাই যেন তারা তাদের ভুল বুঝে নিজেদের সংশোধন করতে পারেন।কিন্তু যারা ধ্বংসের দ্বারে উপনীত হয়েছে তাদের শেষ রক্ষা সম্ভব কিনা আল্লাহ ভাল জানেন।

আমাদের তৈরি পোশাকশিল্পে শ্রমিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিয়ে যে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা দেখে সে কথা মনে হয়েছে। কিন্তু শুধু কথায় নয়, কাজেও সে কথার প্রমাণ দিতে হবে। তৈরি পোশাকশিল্পকে বাঁচাতে হলে এ ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।কোনো কোনো পশ্চিমা বিশেষজ্ঞ অবশ্য মনে করেন, এখন গাছ লাগিয়ে অর্থাৎ সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েও বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পকে বাঁচানো যাবে না। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর অ্যান্ড্রু ওডে গত সপ্তাহে জানিয়েছেন, পশ্চিমা খুচরা ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ বাদে অন্যত্র তৈরি পোশাকের বাজার খোঁজা শুরু করে দিয়েছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসও একই কথা বলেছে। তারা জানিয়েছে, বাংলাদেশের বদলে সবাই এখন যে দেশে ছুটছে সেটি হলো ইন্দোনেশিয়া।সন্দেহ নেই, রানা প্লাজার দুর্ঘটনা বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য অশনিসংকেত হয়ে এসেছে। অনেক দিন থেকেই বলা হচ্ছে, যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে ‘ব্র্যান্ড বাংলাদেশ’ বিপদে পড়বে। এখন সত্যি সত্যি সে ঘটনাই ঘটল। একের পর এক বিদেশি আমদানিকারক বাংলাদেশ থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে। ইউরোপ ও আমেরিকা হুমকি দিয়েছে, তারা বাংলাদেশকে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে যে অগ্রাধিকার সুবিধা দিচ্ছে, তা বাতিল করবে। তেমন কিছু ঘটলে বাংলাদেশের দেড় কোটি গার্মেন্টস শ্রমিক, তার সঙ্গে আরও এক কোটি সরবরাহকারী ও ছোট ব্যবসায়ী পথে বসবেন। বাংলাদেশ এমনিতেই গরিব। তৈরি পোশাকশিল্প মুখ থুবড়ে পড়লে সবচেয়ে গরিব, সবচেয়ে প্রান্তিক মানুষগুলো বিপদে পড়বে সবচেয়ে বেশি। এদের উপর নির্ভর করেই বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। বাংলাদেশের মেয়েরা কর্মক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি যে জায়গা করে নিতে পেরেছে, তা-ও তৈরি পোশাকশিল্পের কারণ। নারী-পুরুষের এই বৈষম্য কমার সঙ্গে সঙ্গে ধর্মীয় রাজনীতির প্রভাবও কমে এসেছে।

এর সবকিছুই বিপদগ্রস্ত হবে যদি তৈরি পোশাকশিল্প খাতের চলতি সংকট আমরা কাটিয়ে উঠতে না পারি।বাংলাদেশের পোষাক শ্রমিকদের মৌলিক জীবনধারা নিশ্চিত করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক নূনতম মজুরি কাঠামো নির্ধরনের আহ্বান জানিয়েছেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনুস।তিনি একটি সঠিক ও গুরুত্বপূর্ন কথা বলেছেন,বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের অব্যাবস্হাপনার দোহাই দিয়ে ক্রেতাদের মুখ ফিরিয়ে নিলে চলবেনা।পোষাক শ্রমিকদের জীবন মান নিশ্চিত করা এই শিল্পের সাথে জড়িত দেশী বিদেশী সকলের দায়িত্ব।বিগত দুর্ঘটনা গুলো থেকে আমাদের সকলকে সংশোধনের সুযোগ নিতে হবে।গার্মেন্ট মালিকদের উচিত অতিসত্বর সরকারের সাথে বসে গার্মেন্ট জোন তৈরি ও শ্রমিকদের বাংলাদেশের মৌলিক জীবন ধারনের ব্যাবস্হা নিশ্চিত করা।তৈরি পোষাক রফতানিতে বাংলাদেশ যেহেতু দ্বিতীয় সেহেতু অন্য দেশে যেন ক্রেতারা না যায় তার জন্য আমাদের সরকারকে কুটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করতে হবে ও সজাগ থাকতে হবে।আর মালিকরা যদি শ্রমিকদের দায় না নেন তাহলে তারাই বা ব্যবসা করবেন কি করে।প্রাথমিকভাবে এখন মালিক পক্ষকে তাদের লভ্যাংশের একটা বিশেষ অংশ ইনভেষ্ট করে এই শিল্পকে টিকাতে হবে।প্রয়োজনে ক্রেতাদের সাথে বসে সহনশীলতা ও চাতুর্যের সাথে এগুতে হবে।এটা যেন এরকম না হয় জনাব লতিফ সিদ্দিকের মত চিঠি লিখার মত বাহাদূরি করা হয়।আমাদের দেশ গরীব আমাদের সহযোগিতার মাধ্যমে এগোতে হবে।কাউকে চড়িয়ে আমাদের ভাল করা সম্ভব নয়।পশ্চিমা দেশগুলো ৫ ডলারে কাপড় বানিয়ে ৩৫ ডলারে বিক্রি করে।আমাদের শ্রমিকরা পায় ৫ সেন্ট। যদি ৫ সেন্টের স্হলে ৫০ সেন্ট দেয়া হয় তাহলে সমস্যা অনেকটাই সমাধান সম্ভব।শ্রমিকদের ঠকিয়ে কখনো ব্যবসা রাইজ করা সম্ভব নয় এটা মালিকদের বুঝতে হবে।মালিক পক্ষকে তাদের আভিজাত্যের বাড়তি কিছু খরচ কমিয়ে হলেও দেশের উন্নয়নে সহযোগিতা করতে হবে।যদি পজিটিভ উদ্যোগ নেয়া হয় তাহলে ৪০ লাখ কেন আমাদের প্রান্তিক নারিদের সিংহভাগ প্রশিক্ষন দিয়ে এই শিল্পে নিয়োগ দেয়া যেতে পারে।

আর প্রধান যে ব্যাপারটি দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে তা হলো হরতালের মত কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।হরতালের কারনে দেশে অস্হিরতা বিরাজ করে।আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির যদি পরিবর্তন না হয় তাহলে দেশের কোন সেক্টরেই ভাল ফল আসবেনা।জঙিবাদের মত বিষয়গুলোকে রোধ করার জন্য সরকার সহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।এই জঙিবাদের কথা সব সরকার মিডিয়ায় ফলাও করে বললেও তারাই তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে।তাদের ভোট ব্যাংকের কাজে এই জঙিবাদ ও সমাজের দাগি আসামি গুলোকে আমরা কাজ করতে দেখি।সুতরাং এসব প্রহসন থেকে সরকার গুলোকে পরিষ্কার থাকতে হবে।অপরাধি যে দলেরই হোক বা দলের বাইরে হোক তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে।আর আইনের শাসন যতক্ষন বলবত করা না হবে এই সমস্ত আসামি আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যাবে যা আমরা দেখছি প্রতিনিয়ত।দ্বৈতনীতি অবলম্বন করা থেকে সব সরকারকে বিরত থাকতে হবে তাহলেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।আমাদের দারিদ্রতা থাকলেও প্রান্তিক মানুষগুলো তাদের কঠোর শ্রমের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাছ্ছে।আগে যেখানে খাদ্যের জন্য মানুষ মারা যেত বা দু'বেলা খাবার পেত না এখন সেটা নেই।শিক্ষার হার বাড়ছে, আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পাচ্ছে, শিশুর মৃত্যুহার কমছে। সব অর্থেই বাংলাদেশ উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি পরিপক্কতা আসছে।কিন্তু মানুষ দ্বারা সৃষ্ট ও মাঝে মাঝে প্রাকৃতিক বিপর্যয় আমাদের কিছুটা থামিয়ে দিছ্ছে তা উত্তোরনের জন্য আমাদের সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে।

আমরা আশ্বস্ত হয়েছিলাম সরকারের সংলাপের মনোভাব দেখে যা আবার মোড় নিয়েছে ভিন্ন দিকে।সংস্কারের চারা গাছ লাগানোর কাজ যদি এখনই শুরু না হয় তাহলে জাতিকে আরো মূল্য দিতে হবে।সামনেই প্রকৃত মৌষম, গাছ যাতে বাড়ার আগেই মরে না যায়, সে চেষ্টায় হাত লাগানোই এখন প্রধান কাজ।গাছ লাগানোর সেরা সময় ছিল ৪১ বছর আগে।পিছিয়ে গেলেও আবার নতুন উদ্দমে দ্বিতীয় সময় এসেছে, আর তা এখনই দল মত নির্বিশেষে এগিয়ে নেয়ার সময় ।

বিষয়: বিবিধ

১৬৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File