কান্চন মিয়া ভাংলো টিভি মধ্য রাতের টক শোতে।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২১ মে, ২০১৩, ১১:৩১:০৮ রাত

কি এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটে গেল কান্চন মিয়ার জীবনে।পড়ালেখার বহর কম হলেও কাজ থেকে ফিরে এসে টক শো মিস করেনা।এক বন্ধু খবরটা দিতেই জানতে আগ্রহী হলাম কেন সে এমন কাজ করলো।তাই বন্ধুর উপর ভর করে একটা সময় গিয়ে হাজির হলাম।চা চক্র শেষ করে আস্তে করে জিজ্গেস করলাম আপনার টিভিটার এ অবস্হা কেন? জবাব দিলেন,'দিলেন তো আবার মাথাডা গরম কইরা।রাগে ভাইংগা হালাইছি।' জিগ্গেস করলাম কেন রাগ হলো? জবাব দিলেন,' চারডা বছর পার হইয়া গেল দেশেততন আইছি,বউ পোলা পানের দেখা সাক্ষাত নাই।রাইতে খানা খাইলাম আর টিভিডা খুইল্যা হালারে দেইখ্যা মাথা গরম হইয়া গেল,হালা দেশর কতা কয়।তার চৈদ্দ্য গোষ্টি আঁই চিনি,চোরের গরের চোর, হাতর কাছে হাইলাম এককান কাসার বাডি ডিলাম মাইরা ভাইংগা গেল টিভি।' বললাম আপনার কি লাভ হলো? বললেন,'মনের জ্জালা মিডাইছি।' এ ছিল মোটামুটি কথা।এ মানুষগুলো সমাজের প্রান্তিক শ্রেনী।তারা খেটে খায়।তাদের একটাই আশা দু'বেলা খেয়ে পরে সংসার ছেলে মেয়ে নিয়ে কোনভাবে বেঁচে থাকবে। আগে ছিল একটি চ্যানেল এখন অনেক চ্যানেল।নেতা ও বুদ্ধিজীবির অভাব নেই।কথা বলার লোকের অভাব নেই এখন।যারা এখানে কথা বলতে আসে তাদের অনেককেই যে এই প্রান্তিক মানুষরাও ঘৃনা করে ও তাদের কথা শুনতে চায় না এটা একটা প্রমান।

আমাদের দেশে যারা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংসদ ,ব্যবসায়ি,সাংবাদিক ,বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও আইনজীবি তারাই বেশি আসেন টক শো গুলোতে।এখানে যেমন ভাল ব্যাক্তিত্ব আছেন তেমনি আছেন বিপরীত মুখী ব্যাক্তিত্ব।এই মানুষগুলো আমাদের সমাজেরই লোক।তাদের কাজকর্ম সম্পর্কে সমাজের মানুষ খোজ খবর রাখেন।এই যে রানা প্লাজার মালিক রানার বয়স মাত্র ২৮ বছর।মা্ত্র ১০/১২ বছরের মাথায় দারিদ্রতা থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক হলো ও এত অল্প সময়ে কিভাবে হলো তা তো মানুষ ফলাওভাবে জানতে পেরেছে।এভাবে খুঁজে দেখুন দেশের রাজনৈতিক কর্মি থেকে সাংসদ পর্যন্ত অনেকে আছেন এখন কোটি কোটি টাকার মালিক।যারা ধরা পড়ে যায় তারা সামনে আসে।আমাদের দেশের চাকুরিজীবিদের মধ্যে গত কয়েকবছর দেখেছি অফিসের পিয়নরা পর্যন্ত দ'টো বাড়ির মালিক।তাহলে যারা অফিসার তারা কি রকম যায়গা জমির মালিক হয়েছেন।এগুলো কেউ খোঁজ রাখে না কারন কে কার খোঁজ রাখবে।এ দেশে মেলপ্রাকটিসের একটা চেইন তৈরি হয়ে আছে।সে জন্য কেউ কারো খবর রাখে না।আর টক শো গুলোতে অনেকে কথার ফুলঝুরি ছুটান অথচ ব্যাক্তিত্ব কে বিক্রি করতে তাদের বাঁধে না।এই বুদ্ধিজীবিদের অনেকে তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন।এটা বুঝা যায় যখন তারা যুক্তি ছাড়া কথা বলেন।এই একপেশে যারা হয়ে যান তারাই যে কোন সরকার আসলে সুবিধা গ্রহন করে পয়সাওয়ালা বনে যান।তারা জাতির সামনে যখন কথা বলেন তখন সমাজের এই অশিক্ষিত মানুষগুলো তাদের সহজেই ধরে ফেলেন।

মানুষের জীবনের যে একটা সীমাবদ্ধতা আছে ও জীবন ও ক্ষমতা যে ক্ষনস্হায়ী তা অনেকেই ভাবতে চায় না।সে জন্য অনেকে হয়ে উঠে স্বৈরশাসক।ব্যবহার করে তাদের ক্ষমতা অনৈতিকতায়।ক্ষমতা যে চিরদিনের ব্যাপার নয় তা আমাদের দেশের জন গন বার বার দেখিয়ে দিয়েছে। কিন্তু যে কোন শাসক শ্রেনি ভোটের আগে জন গনের কাছে যে অঙিকার করে ভোটের পরে তা আর তারা রক্ষা করে না।তাদের এই উদাসিনতা জাতিকে দিন দিন ক্ষত বিক্ষত করছে।বিভিন্ন সময়ে নেতৃবৃন্দকে জন গন নাজেহাল করার পরও তাদের বোধদয় হয় না।তাদের তো চিন্তা করা দরকার পরের বার যদি আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই তাহলে আমাদের দেশের মানুষের জন্য কাজ করা দরকার।এই মানুষিকতা যদি তৈরি না হয় কখনো গনতন্ত্র স্হায়ি রুপ লাভ করবে না।আমাদের সামনে নির্বাচন।সব দলগুলোকে জাতির সামনে একটা অঙিকার অবশ্যই করতে হবে যে,সমস্ত বিভেদ ভুলে এক হয়ে যাওয়া ও দেশের কল্যানে কাজ করা।আর যারা মিডিয়াতে কথা বলবেন তারা যেন নীরপেক্ষ থাকেন ও জাতির অগ্রগতির জন্য কথা বলেন।যারা অন্যায়ের সাথে জড়িত অচিরেই তাদের অন্যায় কাজ বন্ধ করেন যাতে সমাজে শান্তি ফিরে আসে।এদেশের মানুষ এখন দিন দিন অসহায় হয়ে পড়ছে। এই জাতীয় হতাশা ঘনীভূত হতে থাকলে বড় ধরনের অকল্যান ডেকে নিয়ে আসতে পারে।তাই আমাদের সবার সজাগ হওয়ার সময় এসেছে।

বিষয়: বিবিধ

১৭৯৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File