গনতন্ত্রের পিছনে ইসলামের বিজয় নেই বরং ইসলামিক একতা মহিয়ান করবে ইসলামকে।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২১ মে, ২০১৩, ০৪:৪৩:৩৭ বিকাল

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব।তার দ্বারা পৃথিবীর কল্যান ছাড়া কোন অকল্যান হতে পারে না।আল্লাহ পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করে আরশে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।যিনি মানুষকে তার প্রতিনিধিত্ব করার যোগ্যতা দিয়ে নিজের হাতে তৈরি করে প্রথম মানব আমাদের আদি পিতা আদম আ: ও মা হাওয়া আ: কে সৃষ্টি করে জান্নাতে থাকতে দিলেন। কিন্তু শয়তান তাদের প্ররোচনা দিয়ে আল্লাহর বিরোধিতা করার মত কাজ করিয়ে জান্নাত থেকে বিতাড়িত করে পৃথিবীতে নামিয়ে দিল।আল্লাহ তাদের ফরিয়াদের কারনে মার্জনা করলেন।তিনি দুনিয়ার মানুষের সার্বিক কল্যান এবং আখেরাতে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে মুক্তি দিয়ে চিরসুখের জান্নাত দানের লক্ষ্যে যুগে যুগে মানুষের মধ্য থেকে নবী বা রাসূল মনোনীত করে তাদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ও কল্যানকর আইন বিধান সম্বলিত জীবন ব্যাবস্হা পাঠিয়েছেন।এই জীবন ব্যবস্হা হলো আল কুরআন ও তার সহযোগী রাসূল সা: এর সূন্নত বা পথ।আর প্রতিটি মুসলিম ইসলামের অন্তর্ভুক্ত যা সূরা মায়েদার ৩ আয়াতে বর্নিত হয়েছে।সে জন্য ইসলামই হলো মুসলমানের সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যাবস্হা কায়েমের একমাত্র পথ।

মানুষ সামজিক জীব।আমাদের প্রয়োজন ও কল্যানেই সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্হা।প্রতিটি পরিবার রাষ্ট্রের একটি একক।সমাজ ও রাষ্ট্রের মূল বিষয় সার্বভৌমত্ব। আর সার্বভৌমত্ব হছ্ছে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা,আইন প্রনোয়ন ও প্রয়োগের চূড়ান্ত ও সর্বোচ্চ ক্ষমতা।সার্বভৌমত্বের মালিক হওয়ার জন্য চিরন্তন ও চিরস্হায়ী স্বত্বা হওয়া অপরিহার্য।আল্লাহই একমাত্র চিরন্তন ও চিরস্হায়ী স্বত্বা।সমাজ , রাষ্ট্র গঠন ও পরিচালনা সহ সকল ক্ষেত্রেই সার্বভৌমত্বের মালিক একমাত্র আল্লাহ, মানুষ নয়।সার্বভৌমত্ব যার আইন , বিধান ও কতৃত্ব তার-ই।আজ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন ও পরিচালনায় সার্বভৌমত্ব মানুষের এটা চরম মিথ্যা এবং আল্লাহর সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ।আল্লাহর সাথে সবচেয়ে বড় শির্ক যা ক্ষমার অযোগ্য ও মহা অপরাধ।আল্লাহর সাথে শির্ক করলে দুনিয়ার জীবনে অকল্যান,অশান্তি এবং আখেরাতে নিশ্চিত জাহান্নাম।সূরা লোকমানের ১৩ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'নি:সন্দেহে বহুখোদাবাদ তো গুরুতর অপরাধ।'

মানুষের সঠিক অবস্হান হলো আল্লাহর সার্বভৌমত্ব আইন বিধান ও নিরন্কুশ কতৃত্বের প্রতিনিধি এবং তারই দাস।এ অবস্হান থেকে মানুষ বিচ্যুত হলে তার ধ্বংস অনিবার্য।মানুষকে একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এই পৃথিবীতে পরিক্ষামুলক পাঠানো হয়েছে এবং তার কাজের স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে।আর অন্য সব জীব জগতকে তার অধিনস্ত করে দেয়া হয়েছে তার খেলাফত কায়েমের জন্য।সূরা মুলকের ২ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন তোমাদের যাচাই করতে কে তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।' যারা আল্লাহর দাসত্ব মেনে নেয় তারা সফল দুনিয়া ও আখেরাতে।আমরা আল্লাহর‍ই সৃষ্টি।এই যে প্রকৃতির অবারিত দান,তারই রিযিক,তারই দেয়া কর্মশক্তি,বাকশক্তি ,দৃষ্টি শক্তি,মেধা শক্তি,শ্রবন শক্তি,বুদ্ধি বিবেক ব্যাবহার করে যে যার পেশায় উন্নতি করছি।সেই আল্লাহই তার দাসত্ব ,তার আইন বিধানের আনুগত্য করার নির্দেশ দিছ্ছেন।কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়,মানুষের একটা অংশ কুরআন এদের জালেম ও অজ্গ হিসেবে অভিহিত করেছে।পৃথিবীর অমুসলিম ও মুসলিম দেশে ও সমাজে রাষ্ট্র পরিচালনায় মহাশির্করুপী "গনতন্ত্র" এর মাধ্যমে জন গনকে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক মেনে আল্লাহর সাথে শির্ক করে মানব রচিত ব্যবস্হা ও মানুষের মন গড়া আইনের দাসত্ব করে পৃথিবীকে মহাক্ষতিতে নিমজ্জিত করেছে।আর এরই পরিনতিতে মানবসম্প্রদায় বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গনতন্ত্রের চর্চায় নিমজ্জিত হয়েছে।আজকের সমাজ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এর ফলে সংঘাত বেড়েছে,রাজনৈতিক অঙনে অস্হিরতা বেড়েছে,অর্থনৈতিক উন্নয়ন হুমকির মুখে,মানুষের জান মালের কোন নিশ্চয়তা নেই,এক দল আর এক দলকে সমীহ না করে জেল জুলুম এমনকি পাখির মত হত্বা করছে,সুশাসন ন্যায় বিচার ও মৌলিক অধিকার থেকে মানুষ বন্চিত হয়ে চরম দুর্ভোগের শীকার হয়েছে।এই শোচনীয় অবস্হা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় আল্লাহর সার্বভৌমত্বের কাছে মাথা নত করা।

এখন প্রশ্ন হলো গনতান্ত্রিক দেশে এ কিভাবে সম্ভব? একজন মুসলিম যিনি আল্লাহ ও তার রাসূল সা: এর আদর্শে বিশ্বাসি তিনি কখনো গনতন্ত্রের সাথে সংঘাতে লিপ্ত হবেন না।কারন হলো সাখানে মুসলিম হলেও ৯০% কুরআনের আইনের বিরোধী।এ অবস্হায় রক্তাক্ত হওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই।আর আমরা পৃথিবীতে যাদেরই দেখেছি ইসলামের নামে সেখানে যেতে তাদের মধ্যে ইসলামি চরিত্র বিদ্যমান নেই শুধুমাত্র ক্ষমতার লোভ ছাড়া।আমাদের দেশ মুসলিম দেশ হলেও গনতন্ত্রের অনুসারি সরকার বিদ্যমান।এর সংবিধান হলো মানবরচিত সংবিধান।একজন মুসলিম খারাপ কাজকে ঘৃনা করবে এটা স্বাভাবিক কিন্তু ঘৃনা করে বসে থাকলে হবে না সে আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ করবে।এ ক্ষেত্রে মুলিমদের একতাবদ্ধ হতে হবে।তাওহিদ একজন মানুষকে একতাবদ্ধ হতে শিখায়।এই একতা হলো আল্লাহর দ্বীন বাস্তবায়ন ও সৃষ্টির কল্যানের জন্য।একতা শক্তিতে রুপান্তরিত করে আর সেজন্য ইসলাম একতাকে প্রধান্য দিয়েছে।ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে ইসলামে কোন বিভেদ নেই।নবী সা: বিদায় হজ্জে বর্নের পার্থক্যকে মাটিতে পুঁতে দিয়েছেন।তিনি বলেছেন,'কোন আরবের অনারবের উপর প্রাধান্য নেই,সাদার নেই কালোর উপর।সে জন্য আমরা মুসলিম দেশগুলোতে এ পার্থক্য দেখতে পাইনা।সবচয়ে বেশী নিরাপত্বা দিয়েছে ইসলাম সমাজের সর্বক্ষেত্রে। কিন্তু ইসলামকে লালনের অভাবে তার সুফল দেখা যাছ্ছে না।আমাদের দেশে ইসলামের যে চর্চা হওয়া দরকার তা নেই।মানুষকে প্রকৃত দ্বীন দিয়ে তৈরি করার মত প্রতিষ্ঠান যেমন নেই তেমনি আলেম উলামাও তৈরি হয়নি সামন্য ছাড়া।যখনই কোন গোত্র বা সমাজে একতা না থাকে সেখানেই দেখা দেয় বিভেদ।ইসলাম শুধু মুসলিমদেরই হেফাজত করে না অমুসলিমদের ও সব দিক থেকে প্রতিরক্ষা করে।বর্তমান মুসলিমরা পিছিয়ে আছে শিক্ষায়।তাদের লোভ জন্ম নিয়েছে প্রাচুর্যের দিকে।রসূল সা: এর আসহাবে সূফ্ফারা ছিলেন জ্গানী এবং তারা জ্গান চর্চা করতেন। সেজন্য রাসূল সা: বলেছেন,কোন বিচারক যদি বিচার বিবেচনা করে সত্য রায় দেয় তাহলে সে দু'টো পুরস্কার পাবে আর রায় যদি সত্য না হয় তাহলে একটি পুরস্কার পাবে।' এখানে বিষয়টি হলো সত্যবাদিতার।যারা জ্গানী তাদের মত পার্থক্য থাকবে কিন্তু অকল্যানের চিন্তা থাকবেনা।আজকে মুসলিমের মধ্যে এই বিভাজনের কারন হলো জ্গানের অভাব ও একে অন্যকে সহ্য না করতে পারার পরিনাম।এরিষ্টোটলের ছাত্র ছিল প্লেটো।তিনিও তার শিক্ষকের অনেক মতের বিরোধিতা করেছিলেন।ঈমাম আবু হানিফা (র) এর এক নাম্বার ছাত্র ছিলেন ঈমাম আবু ইউছুফ।তিনি তার শিক্ষকের দুই তৃতিয়াংশ মতের বিরোধিতা করেছিলেন কিন্তু শিক্ষখ মেনে নিয়েছিলেন কারন হলো সঠিক যুক্তি।

কিন্তু আজ মুসলিম সমাজে কিছু সংখ্যক অমেধাবি সংগঠক ও বুদ্ধিজীবিদের কারনে রক্তাক্ত হছ্ছে যারা দলে দলে বিভক্ত হয়ে ইন্দন যোগাছ্ছে।যদি এর সংস্কার না হয় তাহলে সমাজ দুষিত হতে থাকবে।আল্লাহ সূরা হুযরাতের ১৩ আয়াতে বলেন, হে মানবজাতি! নি:সন্দেহে আমরা তোমাদের সৃষ্টি করেছি পুরুষ ও নারি থেকে,আর আমরা বানিয়েছি তোমাদের নানান জাতি ও গোত্রে যেন তোমরা চিনতে পার।নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে সম্মানিত তোমাদের মধ্যে সেইজন যে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ধর্মভীরু।' যারা ধর্মভীরু হবে তারা কখনো অপরাধের দিকে বা সংঘর্ষের দিকে যেতে পারে না।কুরআন সব সময় সব জাতির মানুষকে একতার দিকে ডেকেছে।সূরা আল ইমরানের ৬৪ আয়াতে আল্লাহ বলেন,' হে গ্রন্থপ্রাপ্ত লোকেরা! আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে পরস্পর সমঝোথার মাঝে এসো,যেন আমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদাত করবোনা,তার সাথে অন্য কিছুকে শরিক করবোনা,আর আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে মনিব বলে গ্রহন করবো না, কিন্তু তারা যদি ফিরে যায় তবে বলো- সাক্ষি থেকো আমরা কিন্তু মুসলমান।' এই আয়াত যখন নাজিল হয়েছে তখন ইহুদি খৃষ্টানদের উদ্দ্যেশ্যে নাজিল হয়েছিল।কিন্তু কুরআনের যে কোন আয়াত যার জন্যই নাযিল হউক মুসলিম হলেও যারা এর আওতায় পড়বে তাদের জন্যই প্রযোজ্য হবে।মুসলিমদের ধৈর্য ধারন ও প্রজ্গার সাথে সামনে এগুতে হবে।তাদের কাজ সমাজে মানুষ তৈরি করা ও কুরআন ও সূন্নাহর প্রসার।ইসলমি শাসন কায়েম হলো চূড়ান্ত লক্ষ্য।যেখনে মানুষ গড়ার কোন কারখানা নেই,প্রজ্গা সম্পর্ন ব্যাক্তিত্ব নেই সেখানে ইসলামকে ব্যাবহার করে ইসলামের রুপ সৌন্দর্য নষ্ট করা ও ইসলামকে হেয় করার মানে হয় না।সূরা আল ইমরানের ১০৩ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'তোমরা সবে মিলে আল্লাহর রজ্জু শক্ত করে ধর আর বিছ্ছিন্ন হয়ো না।' ধর্ম এসেছে সমাজকে সংস্কার করার জন্য কোন বিশৃংখলা সৃষ্টির জন্য নয়।

আমাদের ভাবতে হবে এই দুনিয়া ক্ষনস্হায়ি।আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব আছে সমাজের জন্য।যে সরকারই আসুক তাদের ইসলাম বা কোন ধর্মের বিরোধিতা করা চলবে না।জাতির কল্যানের জন্য তারা যদি কাজ করে আর অপরাধ থেকে দূরে থাকে তাহলে সমাজে কোন সমস্যা দেখা দিবে না।কিন্তু আমরা তা দেখছিনা।সব সরকারের ছায়ায় থাকে অপরাধির দল যারা জন গনের সম্পদ লুন্ঠন থেকে অসামাজিক কাজ করে থাকে।মানুষকে পিষ্ট করে কোন সরকারই পৃথিবীতে টিকে থাকতে পারেনি।একজন ব্যবসায়ি সারা জীবনে কোটিপতি না হতে পারলেও আজকাল রাজনীতি করে অল্প সময়ে হয়ে উঠেছে হাজার কোটিপতি।এর থেকে প্রতিয়মান হয় সমাজ বিছ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।আইনশৃংখলা বলে কিছুই নেই এখন।সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে গড়ে উঠছে ব্যাবিচারি,গাঁজা ও মদের আসর।মানুষের নিরাপত্বা কত নিছে নেমে এসেছে যা বলার অপেক্ষা রাখে না।ভোগবাদি সমাজের এই করাল গ্রাস থেকে জাতিকে বাঁচানোর একমাত্র পথ নৈতিকতা চর্চার।প্রকৃত গনতন্ত্রের চর্চাও যদি থাকতো তাহলে কেউ কাউকে সমাজে এভাবে হত্বা করতে পারে না।জাতি হিসেবে আমাদের লজ্জাবোধ আমরা হারিয়েছি।একজন পাগল ও বিকৃত মস্তিষ্ক সম্পন্ন মানুষ যেমন উলঙ হলে কিছু মনে করে না, আমরাও বিশ্বের কাছে উলঙিত হতে লজ্জাবোধ করি না। আশা করি গনতন্ত্রমনা ও ইসলামি চিন্তাবিদরা যার যার অবস্হানে দেশের কল্যানের জন্য সহনশীলতার সাথে ও একতার সাথে দেশকে এগিয়ে নিতে সমর্থ হবেন।

বিষয়: বিবিধ

২১২১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File