আজকের বাংলাদেশের ভিত যে মুসলমানকে ঘিরে তা ইসলাম বিদ্বেষীদের জানা দরকার।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২০ মে, ২০১৩, ১১:০৫:৫৬ রাত
ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ এ স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখার পিছনে যারা অবদান রেখেছিল তারা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম।শেখ মুজিবুর রহমান সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালগুদের নেতৃত্ব দিয়েই এ দেশ স্বাধীন করেছিলেন।যুগ যুগ ধরে মুসলমানদের ছিল ইসলামি স্বাতন্ত্র ও চেতনা।তারা যেমন ছিল জ্গান বিজ্গানে উন্নত তেমনি ছিল ধর্ম পরায়ন।আজকের মুসলমান নামধারি ইহুদি নাসারাদের অনুসারি ছিলনা তারা।হাজার বছর ধরে ইসলামের মুল চেতনার স্বাক্ষর রেখেছিল।কিন্তু কালের পরিক্রমায় শক্রুদের রোষানলে এরা পর্যুদস্ত হতে থাকে।তাদের ঐতিহ্য হারিয়ে মূল শ্রোত থেকে ছিটকে পড়তে থাকে।তার পরও বৃটিশের নাগপাশ চিহ্ন করে এই দুর্বল মুসলিমরাই একটি ভূখন্ডের মালিক হলো যার নাম বাংলাদেশ।বাঙালি হিন্দুরা কখনো চায় নি একটি পৃথক স্বাধীন বাংলাদেশের।তারা বিশ্বাস করতো ভারতীয় জাতীয়তাবাদে।কিন্তু বাংলাভাষী মুসলমান তা করেনি আর এর ফলেই অভ্যুদয় হয়েছিল সোনার বাংলাদেশ।১৯৭১ সালে ভারত আমাদের সাহয্য করেছিল তাও নৈতিক কারনে নয় , তাদের উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানকে পৃথক করা ও যাতে বাংলাদেশ তাদের একটি অঙরাজ্য হয়ে যায় কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ আবেগি হলেও তা কখনো হতে দিবে না। আজ যারা নজরুলকে ছেড়ে রবীন্দ্রনাথের গুন গান করেন সেই রবীন্দ্রনাথ ও তার লেখায় বিরোধীতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন।
সমাজের এই প্রান্তিক মানুষগুলোর ছেলে মেয়েদের সিংহভাগ মাদ্রাসাগুলোতে পড়ে।দ্বীনি শিক্ষার যেটুকু এদেশে আছে তা আলিয়া ও কওমি মাদ্রাসা থেকেই দেয়া হয়।এদের ভোটেই আমাদের সরকার গুলো জয়ি হয়ে আয়েস করে থাকেন অথচ এরাই সবচয়ে বেশি বন্চিত।এর প্রধান কারন হলো সরকারের অবহেলা।দ্বিতীয়ত আমাদের দেশে ইসলামের বিভাজন ও তাদের উন্নত দৃষ্টিভঙি নাথাকার কারনে আরো নিজেদের অসহায় করে ফেলেছে।বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মানুষের যে আকাংখ্যা ছিল তা রাজনৈতিক গোষ্ঠির উদাসিনতা ও ক্ষমতা দখলের উচ্চাভিলাসের কারনে ব্যার্থতায় পর্যবসিত হয়।আমাদের এই ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠির দিকে তাকালে দেখা যায় বিভিন্ন ধর্মের একত্রে বসবাস।এখানে ধর্মের কারনে কোন বিছ্ছিন্নতা দেখা যায় নি।ইদানিং যে বিছ্ছিন্ন ঘটনা গুলো ঘটেছে তার সাথে রাজনৈতিক কারন অবশ্যই জড়িত।স্বাধীনতার চেতনার কথা বলে যে রাজনৈতিক পরিচালনা এটা রাজনীতিবিদদের জন গনের সাথে এক ধরনের প্রহসন।৪১ বছর থেকেই আমরা শুনে আসছি, আন্দোলন হয়ে আসছে কিন্তু এই চেতনার বাস্তবায়ন কেউ করতে পারেনি।স্বাধীনতার চেতনা হলো জন গনের জীবন মানের উন্নয়ন।গ্রামীন জীবনে কতটুকু উন্নয়ন হয়েছে।বরং বর্তমানের অপরাজনীতির চর্চা, ক্ষমতাসীনদের সন্ত্রাস, লুটপাট, দলীয়করণ, দুর্নীতি, দলবাজি ও অপশাসনে সীমাহীন বঞ্চনার বিরুদ্ধে ফরিয়াদ নিয়ে কোটি কোটি মানুষ এখন আল্লাহর দরবারে আশ্রয় প্রার্থনা করতে বেরিয়ে পড়েছে।এদেশের মানুষ না খেয়ে থাকলেও ধর্মিয় অনুভূতিতে আঘাত সহ্য করে না।তাছাড়া যারা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানছে তারা একধরনের মুসলিম নামের মুরতাদ।আমাদের অনেক বাম নেতা কথায় কথায় ইসলামকে জামাতের সাথে সম্পৃক্ত করে ইসলামের উপর কালিমা লেপন করেন।ইসলামে কোন সন্ত্রাস নেই এটা তাদের জানা থাকা উচিত।ইসলাম সম্পর্কে জেনে কথা বলা উচিত। যারা ইসলামের নামে সন্ত্রাস করছে তারা ইসলামকে পিছিয়ে দিছ্ছে।তবে ইসলামের অনুসারিরা যদি ইসলামের পথে চলে তাহলে ইসলামি রাষ্ট্র কায়েম করতে পারবে যেভাবে নবী সা: করেছেন।এটা স্বাভাবিক কথা যে,যারা ইসলামের কথা বলবে তাদের মুল একই হতে হবে এতে কোন সন্দেহ নেই।যারা বাম চর্চা করেন তারা হয় ধনতন্ত্রের নতুবা সমাজতন্ত্রের ধরার চর্চা করেন।কিন্তু ইসলামের কথা শুনলে তাদের কেন গায়ে আগুন লেগে যায় এটা বুঝা খুব কঠিন।অনেক নেতাই জীবনে এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারেনি।রাজনীতিতে অনাদর্শিক এমন কয়েকজন অন্য আদর্শের কাছে মাথা নত করে নিজেদের কিছু স্বার্থসিদ্ধি করলেও জন গনের কাছে তারা মুল্যহীন হয়েছেন।ভোট প্রার্থনা করে তারা এমপি হওয়ার যে যোগ্য নন ইতিপূর্বে জন গন প্রমানিত করেছে।তাদের সম্ভ্রম থাকলে বড় বড় কথা বলা বন্ধ করা উচিত।এদেশের সাধারন মানুষ এই ঘুনে ধরা রাজনীতির কাছা কাছি নয়। তাই এই সাধারন মানুষগুলো তাদের ধর্মানুভূতিকে রক্ষার জন্য প্রয়াস চালিয়ে যাছ্ছে।এখন প্রশ্ন হলো তাদের পক্ষে কতটুকু এ আন্দোলন এগিয়ে নেয়া সম্ভব।তারা যদি তাদের নীতি ও ইসলামের সঠিক পথের উপর থাকে তাহলে দেশের একটা ইসলামিক শক্তিতে পরিনত হবে। আমাদের দেশে মক্কা মদিনার ইসলামের চর্চা কতটুকু সেটা ক্ষতিয়ে দেখার ও ব্যাপার রয়েছে।একবিংশ শতাব্দির কুরআন ও সূন্নাহর আলেমদের ইসলামি দর্শন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় আমাদের ভারত উপমহাদেশে ইসলামকে ক্ষত বিক্ষত করেছে ইসলামের এই বিভাজিত শক্তিগুলো।ইসলাম অনুসরনের দুটি গাইড।একটি হলো কুরআন আর একটি রাসূল সা: এর ছহি সূন্নাহ।কুরআনে সূরা আন'আমের ১৫৯ আয়াত ও সূরা রুমের ৩২ আয়াতে নবী সা: স্পষ্ট ভাষায় বলে দেয়া হয়েছে যারা ইসলামকে বিভক্ত করেছে তাদের প্রতি তোমার কোন দায়িত্ব নেই।রাসূল সা: বলেছেন গোটা দুনিয়ার মুসলিম হলো একটি উম্মাহ।
উপমহাদেশে মাযহাবকে কেন্দ্র করে ইসলামের যে বিভাজন তৈরি হয়েছে তা আজ ইসলামকে তার মুল স্রোত থেকে সরিয়ে ফেলেছে।এখানে এখন ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন অবতার যার যার ইছ্ছা মত ধর্মকে অনুসরন করছে।আবার আর এক শ্রেনি আছে তারা সঠিক পথে কুরআন ও সূন্নাহ মেনে তাদের দৈনন্দিন জীবন পরিচালনা করছে।কুরআনের ভাষায় এরা সঠিক পথের উপর অধিষ্ঠিত। মাযহাবের চার জন ঈমাম তারা অনুসরন করেছিলেন রাসূল সা: এর আদর্শ অর্থাৎ ছহি সূন্নাহ।তাদের মৃত্যুর কয়েকশ বছর পর অনুসারিরা কিতাব লিখেছে ও ছহি সূন্নাহ ছেড়ে দিয়ে তাদের ফিকহ বা কথাগুলোর অনুসরন করে বিভাজন তৈরি করেছে।ইংরেজ শাসনের ১৯০ বছরে তারা তাদের শাসন কাজের স্বার্থে মুসলমানদের মধ্য থেকে এক শ্রেনিকে বেচে নিয়েছে মুসলমানকে বিভক্ত করার জন্য।তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল গোলাম আহম্মদ ক্কাদিয়ানি যে ছিল হানাফি উলামা পরে হানাফি থেকে বের হয়ে নিজেকে নবী দাবি করেছিল ও ক্কাদিয়ানি গ্রুপের প্রনেতা।আর একজন আহম্মদ রেজা খান যে ছিল বেরুলেবি গ্রুপের প্রনেতা ও কবর পূজারি।এর পর ধীরে ধীরে ব্যাক্তি স্বার্থে ধর্মের আরো বিভাজন শুরু হলো।দেওবন্দি গ্রুপ ,ইলিয়াসি তাবলিগ, মওদুদির জামাত ও পিরতন্ত্র।আর পরিতন্ত্র এখন ছড়িয়ে গেছে দেশের আনাছে কানছে যার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই।তারা যে বিদাআতি ও শির্কিয় এবাদত করছে সেগুলো কোন ইসলামের কাজ নয়।উপমহাদেশের এই ইসলামিক দলগুলোর ব্যাপারে কুরআন ও সুন্নাহর আলেমদের ( আল্লামা নাছিরুদ্দিন আলবানি, আল্লামা শাইখ বিন বাজ, আল্লামা আব্দুল আজিজ আফিফি,আল্লামা আব্দুল আজিজ শেখ) প্রমুখের ফিখহ রয়েছে যে তারা যে ইবাদাত করছে তাতে কুসংস্কার রয়েছে।আর তারা কুরআন সূন্নাহ বাদ দিয়ে তাদের আলেমদের কিতাব পড়াশুনা করে যাতে রয়েছে শির্ক ও বিদাআত।তাদের আক্কিদা ভিন্নমুখি এবং অন্তর্দন্দ ও ইসলামের এই বিভাজন থাকলেও ইসলামের উপর আঘাত সাধারন ভাবে মেনে নেয়ার মত নয়।সেজন্য আমরা দেখতে পাই যখনি ইসলামের উপর আঘাত আসে তারা এক হওয়ার চেষ্টা করে।
যুগ যুগ ধরে এই নিষ্পেষিত কওমি জন গোষ্ঠি (হেফাজতে ইসলাম) সরকারের কাছে তাদের ১৩ দফা দাবি উত্থাপন করেছে এবং গত ৫ই মের মধ্যে সরকারকে মেনে নেয়ার দাবি জানিয়েছে। হেফাজতে ইসলাম বা তাদের এই ১৩ দফা দাবি যে হঠাৎ তৈরি হয়েছে তা নয়।ইসলামের উপর বার বার আঘাত ও গন জাগরন মন্চের ইসলাম বিদ্ধেষী মনোভাব ই তাদের অন্দোলনকে সাহস যুগিয়েছে।কেউ কেউ একে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের সাথে তুলনা করছেন কারন সেদিন যে বন্চিত জন গন রেসকোর্স ময়দানে একত্রিত হয়েছিল আজও তাদের সামনে এই বন্চনার সাথে ইসলামের মত আর একটি মহান মৌলিক বিষয় জড়িত হয়েছে।ইসলামি আন্দোলনের মূল মন্ত্র হলো নবী সা: জীবন থেকে শিক্ষা নেয়া ও সেই ভাবে অগ্রসর হওয়া।হেফাজতে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিল তারা কি আসলে ঈমানি শক্তি নিয়ে এসেছিল? আর তারা যে দাবি আদায় করতে এসেছিল এর পিছনে তাদের মূল শক্তিটি কি? যদি ঈমানি শক্তি হয়ে থাকে তাহলে নেতারা পালিয়ে বেড়াবে কেন? এতগুলো মানুষ মরে যাওয়ার পর এ লাখ লাখ মানুষের চেতনা কোথায়? ইসলাম এ ধরনের আন্দোলন চায় না যাতে সঠিক নেতৃত্ব নেই।যারা এ নেতৃত্ব দিয়ে নীরিহ মানুষগুলো হত্বা করিয়েছে আখেরাতে তাদের জবাব দিতে হবে।ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে সব ইসলাম পন্থিদের এক হতে হবে।রাসূল সা: সূন্নাহ মোতাবেক অনুসারিদের প্রশিক্ষিত করতে হবে।বর্তমান দুনিয়ায় নেতৃত্ব দেয়ার মত কুরআন ও সূন্নাহর পাশাপাশি আধুনিক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও প্রযুক্তি সম্পর্কে শিক্ষিত করে তুলতে হবে।আর এর জন্য বাংলাদেশে অনেক সময়ের প্রয়োজন রয়েছে।যারা ইসলামি আন্দোলন করে তাদের অধিকাংশ ঠিক ভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজই পড়ে না।ঈমান কি জিনিস তা-ই তো বুঝে না।যদি তাদের আন্দোলন সঠিক হতো তাহলে লক্ষ মানুষের মধ্যে ক'জন মানুষের মৃত্যুর পর আন্দোলন স্তিমিত হতো না।এতে তারা ইসলামের ক্ষতিই করেছে।
তবে সরকারগুলোকে অবশ্যই পর্যালোচনা করা উচিত তাদের শিক্ষা ব্যবস্হাকে যগোপযুগি করা।তারা দেশের সম্মানিত অংশ। কেন তাদের অবহেলিত করে রাখা হবে।যদি স্বাধীনতার পর তাদের উন্নয়ন করা হতো তাহলে কখনো তারা আন্দোলনে সামিল হতো না।এটা সব সরকারের একটা বড় দুর্বলতা।আসলে এ সরকারগুলো কেউ ইসলামের জাগরন চায় না।তবে তাদের বুঝতে হবে এভাবে তারা নিষ্পেষিত হতে থাকলে তাদের জন্যই বিষফোঁড়া তৈরি হবে।৯০% মুসলমানের দেশে তাদের ভোটাধিকার যখন ব্যাবহার করছে সরাকরগুলো তাদের যেন আর অবহেলার চোখে না দেখা হয়।আর ইসলামি দলগুলোকে বলবো আপনারা অপসংস্কৃতির রাজনীতি বন্ধ করে রাসূল সা: তথা মক্কা মদিনার ইসলামকে জীবনে ধারন করুন ও দেশের গ্রামে গন্জে দ্বীনি শিক্ষা ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে মানুষকে কুরান ও সুন্নাহ দিয়ে প্রতিষঠিত করুন।রাসূল সা: মানুষ মক্কায় ১৩ বছর মানুষ তৈরি করেছিলেন দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যানের জন্য।দ্বীন জীবনে প্রতিষ্ঠিত হলে দুনিয়ায় ও আখেরাত দু'যায়গায়ই প্রতিষ্ঠিত হবে।যারা ইসলাম বিদ্বেষি তারা ইসলামকে বুঝার চেষ্টা করুন।আপনার যেমন অধিকার আছে তাদেরও তেমনি অধিকার আছে।সুতরাং কেউ যদি কারো অধিকার খর্ব করার প্রয়াস চালান সেখানেই সংঘর্ষের সূত্রপাত হবে।
বিষয়: বিবিধ
১৭৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন