সমকামি বিয়ের বৈধতা নবী লুত আ: এর জাতির ধংসকে স্মরন করিয়ে দেয়।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৯ মে, ২০১৩, ০৪:১৭:১১ বিকাল

বর্তমান গনতন্ত্রের পুরোধা সভ্য দেশ খ্যাত ইউরোপ ও এমেরিকার বিভিন্ন দেশ যেমন-ক্যাথলিক সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ আর্জেন্টিনা, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, কানাডা, ডেনমার্ক, সুইডেন, আইসল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, পর্তুগাল, স্পেন, দক্ষিণ আফ্রিকা- এই দেশগুলো সমকামী বিয়ের আইনি বৈধতা স্বীকার করে নেয়।এবার ফ্রান্সে সমকামী বিয়েকে আইনি বৈধতা দেয়া হলো। এ সংক্রান্ত একটি বিলে স্বাক্ষর করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলান্দ। ফরাসি সরকারি সংবাদপত্র শনিবার জানিয়েছে, শুক্রবার ফ্রান্সের সাংবিধানিক পরিষদ বিলটির বিষয়ে ছাড়পত্র দিলে বিলটি আইনে পরিণত হওয়া সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। বিশ্বের ১৪তম দেশ হিসেবে ফ্রান্সে সমকামী বিয়ে এখন থেকে বৈধ বলে গণ্য হবে।

১৯৮১ সালে মৃত্যুদণ্ড রহিত করার পর সমকামী বিয়ের এই আইনকে ফরাসি সমাজ ব্যবস্থায় সবচেয়ে বড় সংস্কার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময় প্রার্থী হিসেবে ওলান্দ সমকামী বিয়েকে আইনসম্মত অর্থাত বৈধতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।এই আইনের বিরোধীরা আইনটির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ সমাবেশ করে আসছে। যেগুলোর কোনো কোনোটি সহিংস রূপও ধারণ করেছিল। আগামী ২৬ মে নতুন এই আইনটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বিরোধীরা। আগামী ২৯ মে নতুন এই আইনের আওতায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় মন্টপেলিয়ারে ফ্রান্সের প্রথম সমকামী বিয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।গত বছরের গোড়ার দিকে এমেরিকাও সমকামি বিয়ের বৈধতার বিল পাস করেছিল।

এ কোন সভ্যতা ও সভ্য দেশ যারা প্রকৃতির বিরুদ্ধে মানুষকে চালিত করছে।ইতিহাসে এদের ভয়াবহ পরিনাম পরিলক্ষিত হয়েছে।আর এ সব দেশেই এখন মুসলিমরা হিজরত করছে দলে দলে প্রাচুর্যের জন্য।তারা কি দেখেনি নবী লুত আ: এদের কাছ থেকে আল্লাহর আদেশে হিজরত করেছেন এবং তার স্ত্রীকে পিছনে ফেলে এসেছিলেন।আজ মুসলিমদের এক শ্রেনি যারা এর বিরুদ্ধে কথা পর্যন্ত বলছে না।তবে কি তারা দেখতে চায় সেই ভয়াবহতা যা ঘটেছিল।আমরা হয়ত ভুলে গিয়েছি সেই বিভিষিকা।আসুন স্মরন করে নেই ইতিহাসের কিছু বিষয় যা আমাদের ঈমানকে সতেজ করবে ও আমাদের চলার পথকে সহজ করে দিবে ও পাপ পন্কিলতা থেকে দূরে সরিয়ে রাখবে।

হযরত ইব্রাহিম আ: মিশর থেকে তার ভ্রাতিস্পুত্র লুতকে নিয়ে ডেড সি'র পশ্চিম তীরে সাডাম শহরে যান।এই শহরটির লোকেরা খারাপ কাজে লিপ্ত ছিল।ডাকাতি ,লুটতরাজ ও ভ্রমনকারিদের হত্মা পর্যন্ত করত।আর সবচেয়ে বড় আপরাধ ছিল পুরুষেরা সমকামিতা করতো মেয়েদের ছেড়ে।"সডমি" শব্দটির নামকরন হয়েছে পরবর্তিকালে এই সাডাম শহর থেকে।তারা এ কাজটি করতো জনসমক্ষে যা আজকাল মুসলিম /অমুসলিম দেশে ছেলে মেয়েরা বিভিন্ন যায়গায় জনসমক্ষে করে থাকে।এই ভয়াবহ বিপর্যয়ের সময়ে আল্লাহ তার নবী লুত আ: কে পাঠালেন সেই জাতির কাছে যেন এই আচার আচরন পরিত্যাগ করে।কিন্তু তারা এমনই নিমজ্জিত হয়েছিল এ কাজে তাদের কানে লুত আ: এর কথা প্রবেশ করলো না।যখন তিনি আল্লাহর আযাবের কথা বলতে থাকলেন তারা হুমকি দিলেন তাকে শহর বের করে দেয়ার জন্য।আল্লাহ সূরা শুয়ারার ১৬০-১৭১ আয়াত পর্যন্ত বর্ননা করলেন যা পাঠকদের প্রতি অনুরোধ রইলো পড়ার জন্য।তিনি প্রমান করতে চাইলেন যে তিনি আল্লাহর রাসূল।তাদের ধার্মিকতা ও আল্লাহকে ভয় করতে বললেন।পুরুষদের ছেড়ে তাদের মেয়েদের কাছে যেতে বললেন কিন্তু তারা তাকে প্রত্যাক্ষান করলো।আর পরিনামে আল্লাহ তাদের উপর পাথর বর্ষন করলেন।এ ছিল তাদের পরিনাম কিন্তু লুত আ: বছরের পর বছর তার মিশনে কাজ করেছিলেন।মর্মান্তিক বিষয় হলো লুতের স্ত্রীও ছিল নুহ আ: এর স্ত্রীর মত যে নাকি ঘরের খবর বাইরে পৌঁছে দিত নবীর উপর ঈমান না আনার কারনে।আল কুরআনে এ দু'জন মহিলাকে মাবজাতির জন্য উদাহরন করে রাখা হয়েছে।বাস্তবেও আমাদের স্ত্রীরাও হতে পারে তাদের মত যদিও আমরা ঘর সংসার করে যাছ্ছি।সূরা তাহরিমের ১০ আয়াতে আল্লাহ এর স্বপক্ষে বলেন,'আল্লাহ একটি দৃষ্টান্ত উপস্হাপন করেছেন তাদের জন্য যারা অবিশ্বাস পোষন করে- নূহের স্ত্রী ও লুতের স্ত্রীর।তারা দু'জনে ছিল আমাদের সৎ বান্দাহদের অধীনে কিন্তু তারা তাদের প্রতি বিশ্বাসঘতকতা করেছিল,ফলে তারা আল্লাহর বিরুদ্ধে কোন কাজে আসেনি আর বলা হবে তোমরা দু'জনে প্রবেশকারিদের সাথে আগুনে প্রবেশ কর।'

বিপর্যস্ত অবস্হায় লুত আ: আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করলেন তাকে জয়ি ও অরাধিদের ধংসের জন্য।আল্লাহ হযরত ইব্রাহিম আ: এর কাছে ফেরেস্তা পাঠালেন যা সূরা আযযারিয়াতের ৩১-৩৬ আয়াতে বর্নিত হয়েছে।তারা বিকেলে সাডম শহরে উপস্হিত হলো।প্রথমে তাদের লুত আ; এর মেয়ের সাথে দেখা হলো যে নদীর ধারে বসে তার কলসিতে পানি ভরতেছিল।যখন সে তাদের দিকে ফিরে তাকালো সে আশ্চর্য হলো পৃথিবীতে এমন সুন্দর কি মানুষ হতে পারে? তাদের একজন লুতের মেয়েকে জিজ্গেস করলো এখানে কোন অবসর নেয়ার যায়গা হবে কি? অকস্মাৎ তার মনে পড়লো এলাকার দুষ্ট লোকদের কথা ও তার পানির কলসি রেখে বললো,এখানে অপেক্ষা করুন এবং ভিতরে প্রবেশ করবে না যে পর্যন্ত আমি আমার বাবাকে খবর না দেই ও তিনি না আসেন।ক্রন্দনরত

অবস্হায় সে পিতাকে বললো,শহরের ফটকে যুবকরা আপনাকে চায় যাদের মত লোক আমি আগে কখনো দেখি নি।লুত ভীত হয়ে তার মেহমানদের কাছে দৌড়ে গেলেন।তিনি তাদের জিগ্গেস করলেন তারা কোথা থেকে এসেছে ও কোথায় যাবে।তারা তার প্রশ্নের কোন উত্তর দিল না।বরং তারা বললো তিনি তাদের মেহমানদারি করতে পারবে কিনা।লুত আ: তাদের সাথে তার জাতির লোকদের আচরন সম্পর্কে কথা বললেন এবং সেখানে রাত না কাটানোর জন্য পরামর্শ দিলেন।

কিন্তু তারা লুতের কাছে রাত যাপন করার কথা বললেন ও লুত অনুরোধ করলেন যেন কেউ না জানে এমন অবস্হায় রাত কাটায়।যখন শহরে অন্ধকার ছেয়ে আসলো লুত আ: তার মেহমানদের তার ঘরে নিয়ে গেলেন।কেউ তাদের উপস্হিতি টের পেলো না।কিন্তু লুতের স্ত্রী যখন তাদের দেখলো কেউ না দেখে এভাবে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।অতি দ্রুত সে শহরের লোকদের কাছে এ খবর পৌঁছে দিল এবং দুষ্ট লোকেরা লুত আ: এর সম্মুখে এসে গেল।লুত আ: এতে আশ্চর্য হলেন কি করে তারা এদের আবিস্কার করলো।কিন্তু তার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল যখন তিনি তার স্ত্রীকে দেখতে পেলেন না এবং দু:খবোধ করলেন।

যখন লুত আ: দেখলেন লোকেরা সামনে অগ্রসর হছ্ছে তিনি দরজা বন্ধ করে দিলেন কিন্তু তারা দরজা নাড়তে লাগলো।তিনি তাদের আল্লাহর আযাবের ভয় দেখিয়ে বললেন তোমরা এখান থেকে চলে যাও।তিনি আরো বললেন তোমরা তোমাদের নারিদের কাছে যাও তোমাদের যৌনতা নির্বাপনের জন্য।যখন তারা গর্জে উঠলো লুত আ: রাগানন্নিত হলেন ও আসহায় হয়ে লোকদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ালেন।এ অবস্হায় ফেরেস্তারা বললেন আপনি উদ্ভিগ্ন হবেন না ও ভয় পাবেন না।আমরা ফেরেস্তা এবং এরা আপনার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।এ কথা শুনে দুষ্ট লোকেরা ভীত হলো ও লুতের ঘর থেকে পালিয়ে গেল।ফেরেস্তারা লুত আ: কে বললেন ভোর হওয়ার আগে আপনার সাথিদের নিয়ে চলে যাবেন কিন্তু পিছনে ফিরে তাকাবেন না।আর আপনার স্ত্রী পিছনে পড়ে থাকা লোকদের অন্তর্ভুক্ত হবে।আল্লাহর আদেশে এক ভূমিকম্প এলো যা গোটা শহরকে উল্টে দিল ও পাথরের বৃষ্টি বর্ষিত হলো যাতে পুরো শহর ধ্বংস হয়ে গেল।সূরা হিজরের ৫১-৭৭ আয়াতে এর বিবরন আল্লাহ তুলে ধরেছেন যা পাঠকদের পড়তে অনুরোধ করলাম।

মানবজাতির এ জঘন্য কাজের জন্য কুরআনে শিক্ষা রয়েছে।বিশেষ করে যারা বর্তমানে লুতের সম্প্রদায়ের মত এলাকাগুলোতে বাস করেন তারা কি এ সম্পর্কে মানুষকে নসিহত করছেন? যদি না করেন তাহলে পর্যালোচনা করুন আপনাদের মুসলিম দেশ রেখে অমুসলিম দেশে বসবাস কতটুকু যুক্তি যুক্ত।যারা অমুসলিম দেশগুলোতে প্রতিনিয়ত যেনা ব্যাভিচার দেখছেন ও তার মধ্যে অবস্হান করছেন তারা কি ভেবে দেখেন না মৃত্যু যখন আসবে কি পরিনতি হবে।সেখানে নামাজ পড়ার ইছ্ছে থাকলেও মসজিদ দূরে থাকায় যেতে পারে না।আমার জানা মত অনেক মানুষ শুক্রবারে ও নামাজ পড়তে যায় না।সবচয়ে আশ্চর্য হতে হয় এক ধরনের ইসলাম কায়েমিদের অবস্হা দেখে।ভারত উপমহাদেশে যারা ইসলামি রাজনীতি করেন তাদের অনেকের পরিবার ছেলেমেয়ে ঐ সমস্ত দেশে সিটিজেন করে রেখেছেন আর তারা ইসলামের কাজ করছেন নিজ নিজ দেশে।এটা এক ধরনের ভন্ডামি ছাড়া আর কি হতে পারে।যদি কেউ দ্বীন প্রচারের জন্য হিজরত করে তাহলে সেখানে গিয়ে আবার ফিরে আসবে।এ ক্ষেত্রে তারা তাদের পরিবারকে অমুসলিমদের দেশে পন্কিলতার মধ্যে রেখে নিজ দেশে ইসলামের প্রচার করা আল্লাহর সাথে এক ধরনের প্রহসন ছাড়া কিছুই নয়।আশা করি বিশ্বের মুসলিমরা যার যার ক্ষমতানুসারে এই ধরনের অসামজিক ও অপ্রাকৃতিক কাজের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবেন যেন জাতি এর প্রকোপ থেকে রক্ষা পায়।

বিষয়: বিবিধ

৩৩৮৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File