গনতন্ত্রের রক্ষাকবচ এখন অনৈতিক ব্যবসায়ি ,দলকানা রজানীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবিদের খপ্পরে।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৮ মে, ২০১৩, ০৭:৫৩:৫৩ সন্ধ্যা
গনতন্ত্রের মূলকথা হলো " government of the people,by the people and for the people." আমাদের দেশে যারা ইসলামের কথা বলে গনতন্ত্রের মধ্যে এসে ঢুকে পড়েছে তাদের বাদ দিয়ে রাখছি।তারা ভুলশুদ্ধ যা-ই করুক এখানে এসে রক্তক্ষরন ছাড়া ভাল কিছু জাতিকে উপহার দিতে পারবেনা কারন হলো ইসলামের মূল পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছেন।তারা যদি ইসলামি শাসনতন্ত্র চান তাহলে বিভক্ত না থেকে রাসূল সা: এর আদর্শ মোতাবেক কাজ করে মানুষ তৈরি করে ইসলামি জীবন বিধান সমাজে বাস্তবায়নের রুপরেখা তৈরি করবেন আর এটা সময়ের ব্যাপার।এ ব্যাপারে আনেক সময়ই আমি লিখেছি।যে কোন আন্দোলন হলো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যকে বাস্তবায়ন করা।আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো এই আন্দোলন করতে গিয়ে হোমওয়ার্ক করেন কিনা,এবং এই হোমওয়ার্ক কতটুকু প্রজ্গার সাথে করেন তা আমাদের নীরপেক্ষ মানুষদের ভাবিয়ে তুলছে।যারা সরকারে থাকে তাদের আন্দোলনের প্রয়োজন নাই কারন গোটা দেশের প্রশাসন তখন তাদের হাতে।আর আমাদের দেশের সরকারি ও বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান এবং কিছুসংখ্যক লোকজন ছাড়া বাকি সবাই কোন না কোন দলের সাথে যুক্ত।আর বিরোধী দল যেহেতু ক্ষমতাচ্যুত সেহেতু তারা তাদের মতের বিপরীত কাজ দেখতে পায় বলে সরকারি দলের সাথে দ্বন্দের বশে হরতাল ,ভাংচুরের মত কার্যকলাপ করে থাকে।রাজনীতি হলো একটা sophisticated বিষয় যার চর্চা করে সাংসদরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।আর তার জন্য প্রয়োজন সত্যবাদিতা , নীতি ও আদর্শ।আমি কোন % দিলাম না সাংসদরা ও সাংসদের বাইরে যারা দেশ নিয়ে ভেবে দেখুন এর কত% আপনাদের মধ্যে আছে।যদি নিজের বিচার করতে পারেন তাহলে নিজের পরিসংখ্যান বের করুন।আমরা যাদের দেখি বিভিন্ন সময় দেশের পরিসংখ্যান দেন তাদের অনেকের ব্যাক্তিজীবনের মধ্যে যে অসারতা আছে তা দেখে জাতি বিভ্রান্ত।আমার সমাজে যেখানে আমি বাস করি প্রতিনিয়ত আমি মনিটর হতে থাকি অন্যের দ্বারা।আর একজন সমাজপতি বলুন বা সরকারি কোন আমলাই বলুন তাদেরও জন গন মনিটর করে প্রতিনিয়ত কোন পথে চলাফেরা করেন।যারা সমাজে দাগি আসামি বা অনৈতিক কাজ করে অল্প সময়ে দামি মানুষে পরিনত হয়েছেন তাদের কি এতটুকু লজ্জা হয় না যখন জাতির সামনে সুন্দর কথা বলেন।সূরা বাক্কারার ৭-১২ আয়াতে এ সমস্ত লোকদের ব্যাপারে ডিটেইল বলা হয়েছে যা পাঠকদের পড়তে হবে।এ সমস্ত লোকদের অন্তরে,কানে ও চোখের পর্দায় সিল মেরে দেয়া হয়েছে যাতে তারা বুঝতে পারে না,শুনতে পায় না ও দেখতে পারে না।তাদের সামনে পর্দা ফেলে দেয়া হয়েছে।এজন্য যখন তারা মিথ্যা বলে তারা কিছুই মনে করে না কিন্তু জাতির সমানে যখন কথা বলে , জাতি তাদের মিথ্যুক হিসেবে চিনে।একটি দেশের সরকার যে দল থেকেই আসুক তাদের মূল চালিকা শক্তি অবশ্যই হতে হবে সত্যবাদিতা , নীতি ও আদর্শ বিষয়গুলো।
সবচেয়ে দু:খ্যজনক হলো আমাদের শিক্ষক নামের বুদ্ধিজীবিরা যেভাবে দলবাজিতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে তা আগে কম বুঝা গেলেও মিডিয়াতে টক শোর কারনে তাদের অনেকের চেহারা ফুটে উঠেছে।এই দলকানা বুদ্ধিজীবিরা কেন ভাবছেন না তারা জাতির আশা আকাংখার প্রতীক।তাদের কাজ হলো যুক্তি নির্ভর কথা বলা।রাজনৈতিক নেতারা সকালে এককথা বিকেলে আর এক কথা বলতে পারেন কারন তাদের ও রকম নৈতিক শিক্ষা নেই।কিন্তু একজন শিক্ষক যখন জাতির উদ্দশ্যে কথা বলবেন তিনি ডকুমেন্ট ছাড়া কথা বলবেন না।সাদাকে সাদা ও কালকে কাল চিহ্নিত করেই কথা বলতে হবে।এদিক থেকে কিছু ব্যাক্তিত্বকে ধন্যবাদ না দিয়ে পারা যায় না।জনাব আসিফ নজরুল যখন কথা বলেন তাকে দেখেছি দলমত নির্বিশেষে যার যেখানে ক্রুটি আছে সেটা অকপটে বলেন।বুদ্ধিজীবিদের জাতির জন্য নিরেপেক্ষ থাকতে হবে ও কল্যানের পরামর্শ দিতে হবে।তা নাকরে যদি বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য উপস্হাপন করা হয় তাহলে তারা নিজেরাই আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপিত হবেন।আর এখন তাদের কেউ কেউ অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করতেও কার্পন্য করেন না।জাতির যদি এ অবস্হা চলতে থাকে তাহলে একটা সময় আসবে সমাজ বিনির্মান না হয়ে অন্ধকার গলির দিকে ধাবিত হবে।আশা করি আমাদের বুদ্ধিজীবিদের বোধদয় হবে যাতে আগামি তরুনরা সঠিক পথের সন্ধান পায় সে রকম দিকনির্দশনা দিবেন।স্বাধীনতার চেতনার নামে তরুনদের আগুনের দিকে তাড়িয়ে দিলে তার লেলিহান শিখা ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়বে ও জাতি হবে বিনষ্ট।
সমাজের মধ্যবিত্ত , নিম্ন মধ্যবিত্ত,নিম্ন বিত্তের অবস্হান থাকে জীবন সংগ্রামের সাথে জড়িত।তাদের অন্য কিছু ভাবার সময় নেই।সংসারের টানাপোড়নে প্রতিনিয়ত ঘানি টেনে জীবনকে এগিয়ে নিছ্ছে।দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের যে ভীত এ শ্রেনিই সচল রাখছে আর এরাই হছ্ছে নির্জাতিত।পোষাকশিল্প ইদানিং একটি আলোচিত বিষয়ে পরিনত হয়েছে কয়েকটি দুর্ঘটনার পর। সাভার ট্রাজেডি , তাজরিন স্ফেকট্রামের পর সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের পোষাক শ্রমিকদের নিম্ন আয় নিয়ে আলোচনা হছ্ছে এমনকি পোপ ও বলেছেন বাংলাদেশের শ্রমিকদের ক্রীতদাস হিসেবে দেখা হছ্ছে।এ দেশের মানুষ শুধু দেশে নয় বিদেশেও ক্রীতদাসের কবলে পড়েছেন অনেকে।পাছারকারিদের কবলে পড়ে ৮০ বাংলাদেশি ব্রাজিলে অবস্হান করতে গিয়ে সে দেশের পুলিশ দ্বারা উদ্ধারকৃত হয়েছে।তাদের দিয়ে ক্রীতদাসের মত বিভিন্ন কাজ করাতো এই পাছারকারিরা।বিবিসির খবরে বলা হয় পাছারকারিরা মাসিক দেড় হাজার ডলার আয় করার প্রলোভন দেখিয়ে এদের ব্রাজিলে নিয়ে যায়।আর তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে নেয় দশ হাজার ডলার।এই কাজগুলো কারা করছে? সমাজে কালো টাকার মালিক যারা তাদের মধ্যেই এ পাছারক যারা আন্তর্জাতিক চক্রের সাথে জড়িত। সবচয়ে বড় সমস্যা হলো দেশের সরকার এ সমস্ত সমস্যার সমাধান করতে ব্যার্থ কারন হলো এই ব্যাবসায়িগুলোর অনেকে সাংসদের আসনে নিজেদের অলংকৃত করে রেখেছেন।সুতরাং অপরাধ করার পর দলীয় কারনে তাদের কোন শাস্তি মিলে না।আর আপরাধি চক্ররা তাদের চেইন অব কমান্ড অনুসরন করছে।শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান ও তাদের জীবনকে মূল্যহীন মনে করার কারনেই এই দূর্ঘটানা গুলো ঘটছে।আর একটি প্রধান কারন হলো অপরাধিদের বিচারের মুখোমুখি না করা।যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যাবস্হা না করা হয় তাহলে এ সমস্যার কোন সমাধান নেই।যেখানে ১২০০ এর উপর মানুষ মরে গেল সেখানে কি করে সরকারের একজন মন্ত্রি বলতে পারেন এই ঘটনা নাকি বড় ঘটনা নয়।তিনি বড় ঘটনা মনে করতে পারতেন যদি তার মত মানুষদের উপর এ রকম একটা দালান ভেংগে পড়ত।যারা মারা গেলেন তারা তো গরীব যাদের কোন বাকশক্তি নেই,অর্থ নেই,সামাজিক সম্মান নেই। শুধু এখানেই নয়।আমরা ঢালওভাবে উদ্যোক্তাদের দোষ চাপালেও হবে না।আমাদের অনেক মালিক তাদের কর্মচারিদের নিজের মতই খোঁজ খবর নেন তবে তাদের সংখ্যা কম।বিদেশী ক্রেতারা এখন চাপে পড়ে যে যা-ই বলুক তারাও এর দায় বহন করবেন।কারন তারা আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশ থেকেই কম দামে পোষাক ক্রয় করেন। আমদের ব্যবসায়িরা তাদের ব্যবসাকে সচল রাখার জন্য তাদের এই কম মূল্যে এগ্রিমেন্ট করেন।কিন্তু ব্যবসায়িদের মনে রাখতে হবে যাদের দ্বারা তারা মুনাফা অর্জন করবেন তাদের ঠকাছ্ছেন কিনা? তাদের যদি সঠিক পরিবেশ না দেয়া হয় তাহলে তারা কখনো সম্পদ হয়ে উঠবে না।
আমাদের দু'টো রাজনৈতিক দল দেশ শাসন করে আসছে দীর্ঘকাল।যদিও তাদের কথায় প্রকাশ পায় জন গন সব শক্তির উৎস।এটা গনতনত্রের কথা।একজন মুসলিমের জন্য কথাটা একটু আলাদা সেটা হলো আল্লাহ ও তার পরে সবকিছু।সমস্ত ক্ষমতার উৎস হলো আল্লাহ তার পরে মানুষের দ্বারা নির্বাচিত,কথাটা এভাবে হলে আল্লাহর বড়ত্বকে খর্ব করা হয় না।কিন্তু সেখানে যেহেতু আল্লাহকে বুঝার লোক কম সেখানে জন গনই শক্তির আধার হয়ে যায়।যা-ই হোক সেই নীতিতেও আমরা তদের থাকতে দেখি না।তাদের কাছে এখন দলের মূল শক্তি নেতা-কর্মী ও তাদের সাথে অন্যান্য সমর্থক।এটা বুঝা যায় যখন আমরা কোন কাজে অফিস আদালতে যাই।কাজ ছোট বা বড় যা-ই হোক বাসা থেকে বের হওয়ার সময় দোয়া পড়তে পড়তে বের হতে হয় যেন কোন খপ্পরে পড়ার আগে কাজটা সেরে আসতে পারি।সব মন্ত্রনালয় থেকে শুরু করে গুরুত্বপুর্ন অফিসগুলোতে মন্ত্রি,সচিব থেকে শুরু করে নিচ পর্যন্ত মানুষের যে কাজের তদবির তাতে সাধারন মানুষের সংখ্যা খুবই নগন্য।এভাবেই চলছে দেশ।অনেক বাম দলই তাদের আত্মপরিচয়কে বিসর্জন দিয়েছে। কিন্তু ইদানীং সরকারি দল ও বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীদের মুখে সকালে এক কথা, বিকেলে আরেক কথা শুনে মনে হচ্ছে, সেই অবস্থানটি আর নেই। নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন না যে কী করবেন। নেতারা একবার বলেন, বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করে আগামী নির্বাচনসহ সব সমস্যার সমাধান করবেন। আরেকবার বলেন, আলোচনার কী আছে; বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও সেই পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে।আগামী নির্বাচনের মতো এটিও শেখ হাসিনার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করি। সাভারে ভবনধসের প্রেক্ষাপটে তিনি বিরোধী দলের প্রতি ২ মে আহূত হরতাল প্রত্যাহারের অনুরোধ জানালে খালেদা জিয়া তাতে সাড়া দেন এবং তাঁকে বিরোধী দলের দাবির প্রতি সাড়া দেওয়ার অনুরোধ জানান। একই দিন ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের নেতার আহ্বানের প্রত্যুত্তরে বলেন, ‘আসেন, বসি, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করি। সেটা যেখানেই হোক। তবে সংসদে এসে আলোচনা করলে ভালো হয়। সংসদ আলোচনার উপযুক্ত স্থান এবং নিরাপদ জায়গা।’ হরতাল প্রত্যাহার করায় খালেদা জিয়াকে দুই-দুবার ধন্যবাদও জানান শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বৈরী ও বিদ্বিষ্ট রাজনীতির পটভূমিতে পারস্পরিক এই উদারতা ও সহিষ্ণু বক্তব্য জনমনে কিছুটা হলেও আশা জাগিয়েছিল, তাহলে নেতা-নেত্রীদের সুমতি হয়েছে।ওই দিনই বিকেলে অফিসার্স ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আরেক ধাপ এগিয়ে বললেন, ‘দু-এক দিনের মধ্যেই সংলাপের জন্য বিরোধী দলকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেওয়া হবে।’ এরপর ৩ মে শেখ হাসিনা হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আবার আলোচনার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বললেন, ‘বিরোধী দলকে যথাসময়ে সংলাপের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেওয়া হবে।’
৪ মে শাপলা চত্বরে বিরোধী দলের নেতা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মানতে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়ার পরও সরকারি দলের নেতারা বলেছিলেন, ‘আলোচনার দরজা খোলা থাকবে।’ কিন্তু এখন দেখছি, সেই দরজা খোলার কোনো উদ্যোগ নেই। চিঠি লেখা কিংবা বিরোধী দলকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেওয়ার চিন্তাও আপাতত বাদ দিয়েছে সরকারি দল।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের আগ্রহে সংস্থাটির সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর নেতৃতে আরেকটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসে ১০ মে। তাঁরা দুই দলের শীর্ষ নেত্রী ছাড়াও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাঁরা অব্যাহত সংঘাত থেকে বেরিয়ে আসতে সংলাপের ওপর জোর দেন। জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা দ্বিতীয় দিন যখন ক্ষমতাসীন দলের দুই নীতিনির্ধারকের সঙ্গে আলোচনা করে দ্বিতীয়বারের মতো বিরোধী দলের নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন, তখন অনেকেই মনে করেছিলেন, সুড়ঙ্গের শেষে বোধ হয় মৃদু আলো আছে। এমনকি বিরোধী দল শর্ত ছাড়াই আলোচনায় সম্মত বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। এর আগে বিএনপির নেতারা আলোচ্যসূচি ঠিক করার ওপর জোর দিয়ে আসছিলেন। ঢাকা ত্যাগের আগে সংবাদ সম্মেলনে অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো বলেন, ‘সময় দ্রুত চলে যাচ্ছে। এখনই সংলাপে বসুন।’
বিদেশি বন্ধুরা আমাদের রাজনৈতিক সমস্যা নিয়ে যতই উদ্বিগ্ন হোন না কেন, দেশের নীতিনির্ধারকদের সেসব নিয়ে আদৌ মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। ১৯৯৪ সালে স্যার স্টিফেন নিনিয়ানের আলোচনার উদ্যোগও ভেস্তে গিয়েছিল দুই পক্ষের অনড় মনোভাবের কারণে।
প্রধানমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতাদের কথাবার্তায় মনে হচ্ছে, ‘হয় তাঁরা সমস্যাটি উপলব্ধিই করতে পারছেন না অথবা উপলব্ধি করলেও গায়ের জোরেই তার একটি সমাধান বের করতে চাইছেন। গায়ের জোরে কিংবা নিছক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরেও গণতন্ত্র চলে না। গণতন্ত্র চলে পারস্পরিক আস্থা ও বোঝাপড়ার ভিত্তিতে। একটি সরকার গণতান্ত্রিক কি না, তার বড় পরীক্ষা সেই সরকারের প্রতি বিরোধী দলের আস্থা-অনাস্থার ওপর। আর বিরোধী দল মানে কয়েকজন নেতা বা তাঁদের সমর্থক-কর্মীরা নন, বিরোধী দল হলো সরকারের সঙ্গে দ্বিমত পোষণকারী বিশাল জনগোষ্ঠী। সরকার সমস্যার যে সমাধানই করুক না কেন, সেই জনগোষ্ঠীকে আস্থায় এনেই তা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, প্রধানমন্ত্রী কিংবা সরকারি দলের নেতারা এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে যেসব যুক্তি দাঁড় করাচ্ছেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে খালেদা জিয়া ও তাঁর সহকর্মীরাও একই যুক্তি দিতেন।
সরকারি দল অনির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে দেশ শাসনের ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া যায় না বলে যে যুক্তি দেখাচ্ছে, সেই যুক্তি আলোচনার টেবিলে তুলতে অসুবিধা কোথায়? তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার দুর্বলতা ও ত্রুটিগুলোও তারা উপস্থাপন করতে পারে। তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া কীভাবে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা যাবে, সেই প্রতিবিধান ক্ষমতাসীনেরা এখনো দিতে পারেনি। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের ধারণা দিয়ে তারা কিন্তু প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিয়েছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।ক্ষমতাসীনদের এও বুঝতে হবে যে কেবল এক-এগারোর ধুয়া তুলে কিংবা দুই বছরের অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়কের ভয় দেখিয়ে মানুষের মনোভাব বদলানো যাবে না। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রস্তাবিত অন্তর্বর্তী সরকারের একটি রূপরেখা দিতে পারেন। স্পষ্ট করতে পারেন সেই সময়ের জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান কী হবে, তা-ও। আওয়ামী লীগের দাবি, বর্তমান সরকারের আমলে স্থানীয় সংস্থার সাড়ে পাঁচ হাজার নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু এই নির্বাচনের মাধ্যমে তো ক্ষমতার পরিবর্তন হয়নি। জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতার পরিবর্তন হবে, এ কারণেই প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা জরুরি। তা ছাড়া ৩৬ শতাংশেরও বেশি ভোটারকে (বিএনপি ও জামায়াত-সমর্থক) বাইরে রেখে কি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব? ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টি-জামায়াত মিলে পারেনি, ১৯৯৬ সালে বিএনপি পারেনি, ২০১৩ সলে আওয়ামী লীগ বা মহাজোট পারবে, তার নিশ্চয়তা কী? আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা ৫ মে হেফাজতের সরকার উৎখাতের চক্রান্তের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের যোগসাজশের কথাও বলছেন। দেশের বৈধ সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে সরকার অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে। সেই এখতিয়ার তাদের আছে। কিন্তু তার সঙ্গে আগামী নির্বাচন নিয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনাকে যুক্ত করা কোনোভাবেই সমীচীন নয়। জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা এসেছিলেন ৫ মে হেফাজতের নারকীয় তাণ্ডবেরই পর, আগে নয়।এ মুহূর্তে সরকারের কর্তব্য হলো বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনায় বসে আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে একটি সমঝোতায় আসা। সেই প্রায়-অসম্ভব কাজটি শেখ হাসিনা করতে পারলে ইতিহাস তাঁকে মনে রাখবে। না পারলে ভবিষ্যতে হয়তো এই সংশোধনী বাতিলের দাবিতে তাঁকেই রাজপথে নামতে হবে। এখন যাঁরা সহযোগী হিসেবে তাঁকে অনড় ও অনমনীয় থাকার সুপরামর্শ দিচ্ছেন, সে সময় তাঁদের অনেককেই খুঁজে পাওয়া যাবে না।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়ই বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের মধ্য থেকে উঠে আসা দল এবং জনগণই তাদের প্রধান শক্তি। তাহলে সেই দলের বিরোধী পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসতে অসুবিধা কোথায়?
বিষয়: বিবিধ
১৩৮২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন