শিক্ষা ব্যবস্হায় সরকারের দ্বৈতনিতি শ্রেনীবৈষম্যের কারন।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৪ মে, ২০১৩, ০৯:৪০:৩১ রাত

আমরা পরাধীনতার শৃংখল থেকে যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি তা আজও অর্থবহ হয়ে উঠেনি সাধারন মানুষের কাছে।যে কৃষক সে কৃষকই রয়েছে বরং সে কৃষি জমিও নেই এখন।এভাবে সমাজের এ ধরনের অন্যশ্রেনিগুলো আজ নিস্তেজপ্রায়।তাদের আশা আকাংখ্যার প্রতিফলন ঘটেনি বাস্তবে।তবে প্রতিনিয়তই শুনতে পায় ভাগাড়ম্বর গল্প।আমাদের মত শিক্ষা ব্যবস্হা পৃথিবীর কোথায় ও আছে কিনা আমার জানা নেই।ছোট্ট একটি দেশ, এখানে শ্রেনীর অভাব নেই।শাসক শ্রেনী,আমলা শ্রেনী,ব্যবসায়ি শ্রেনী, উচ্ছ বিত্ত,মধ্যবিত্ত,নিম্ন মধ্যবিত্ত ও বিত্তহীন।আর শাসক ও আমলা শ্রেনী বাকিদের নিয়েই রাজনীতি করে থাকে।৪২ বছর ধরে শুনতে শুনতে কান ঝালা পাড়া হয়ে গেছে নির্বাচনী ইশতিহার,আমরা ক্ষমতায় গেলে এ করবো ,ও করবো ।আর ক্ষমতায় গেলে কিছুদিনের মধ্যেই দেশে বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে উঠে।যে সাধারন মানুষগুলো দু'বেলা খেতে পায় না,তাদের ছেলে মেয়ে স্কুলে পাঠাতে পারে না,রোগে চিকিৎসা পায় না,জ্বরাজীর্ন বাসস্হান যেখানে টিপ টিপ বৃষ্টি হলে ঘর ভেসে যায় তারাই শাসকদের পাঠায় সংসদে।তাদের আলিশান বাড়ি,গাড়ি,সুচিকিৎসা,বিদেশ ভ্রমন,তাদের পরিবারের বিদেশে ব্যায়ভার বহন করে চলছে রাষ্ট্র যার আয়গুলো আসে এই জীর্ন শীর্ন মানুষগুলোর কঠোর পরিশ্রম থেকে।

বাংলাদেশের রাস্ট্রিয় কার্যক্রমে নীতি সবল নয় বলেই কোন কালেই কোন বাস্তব সম্মত শিক্ষানীতি বা কার্যক্রম গড়ে উঠেনি।যে দেশের টপ টু বটম চুরি ,ডাকাতি,লুটতরাজ,দুর্নিতি,প্রতারনায় ছেয়ে গেছে সে সমাজে শিক্ষার আলো জ্বলবে কি করে? কারন শিক্ষানীতির ধারক বাহকরা যে শিক্ষা গ্রহন করে আসছে তা প্রকৃত শিক্ষার পরিপন্থি।তাদের দ্বারা যে শিক্ষানীতি তৈরি হয় তা কখনো শিক্ষার মানকে বিকশিত করে না।

আমাদের শাসক ও আমলাশ্রেনীর কোন চিন্তা থাকার কথা নয় দেশ কোথায় যাছ্ছে।কারন তাদের বেশির ভাগ পরিবার বিদেশে বসবাস করেন।আর যারা এখনো বেগম গন্জে স্হায়ী অবস্হান করতে পারেন নি তাদের সন্তানরা পড়ার সুযুগ অন্তত করে নিছ্ছেন।আর সুযোগ্য সন্তানরা পড়াশুনা শেষ করে বাবার তৈরি করা রাজনীতির হাল ধরেন বা উচ্চপদস্হ কর্মকর্তা বনে যান। এ এক চিরাচরিত পদ্ধতি ।এটা যে আমাদের দেশে তা নয়।পৃথিবীর সব দেশেই শাসক শ্রেনী এ হাতিয়ারটি ব্যাবহার করে যুগ যুগ পারিবারিক ঐতিহ্য বজায় রাখছে।আমাদের দেশে শিক্ষা ব্যাবস্হার যে আজব রুপ তা নিয়ে আমাদের তথাকথিত বুদ্ধিজীবিদের কোন মাথা ব্যাথা নেই।বুদ্ধিজীবিদের একটা বিরাট অংশ যে দিকে বাতাস আসে সেদিকে তারা হেলে পড়ে।কছ্ছপ যেমন সুযুগ পেলে মাথা বের করে আবার বৈরি ভাব হলে মাথা ভিতরে ঢুকায় তারাও এরকম।এই মাথাগুলোতে পঁচন ধরার কারনে আর একটা জটিলতা সমাজে সৃষ্টি হয়েছে।এরশাদ সাহেবের সময়ে শুনেছি এদের কেউ কেউ কবিতা লিখে দিয়ে তাকে কবিও বানিয়েছেন আবার সুযুগ বুঝে সরেও পড়েছেন।আমাদের দেশে যে শিক্ষা নীতিমালা তাতে সাধারন ও মাদ্রাসা শিক্ষায় বিভক্ত।সাধারন শিক্ষা ব্যাবস্হা আবার বোর্ড ও ইংরেজি মাধ্যমে বিভক্ত।বোর্ড স্কুলগুলোর মান আবার বিভাগীয় শহর থেকে উপশহর গুলোতে ভিন্ন।সাধারনত শহরে থাকে নামি দামি ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকরা আর তাতে পড়াশুনা করে উচ্চবিত্তের ছেলে মেয়েরা।উপশহরগুলোতে স্হানীয় শিক্ষকরা পড়িয়ে থাকেন।আর লোকালের একটা ছেলে বা মেয়ে পড়ালেখায় ভাল হলেও অনেক ক্ষেত্রে শহরের ছেলেমেয়ের সাথে প্রতিযুগিতায় টিকে উঠতে পারে না।সেজন্য সব ক্ষেত্রে একটা বৈষম্য দেখা যায়।ইংরেজি মাধ্যমগুলোর ও একই অবস্হা।পয়সাওয়ালা লোকদের ছেলে মেয়েরা ভাল স্কুলগুলোতে পড়ে ও তারা 'ও' বা 'এ" লেভেল করার পর বিদেশে চলে যায়।আর দেশে 'ও' বা 'এ" লেভেল করে যারা বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে প্রতিযোগিতা করে তাদের অনেকেই সাধারন ছাত্রদের সাথে কুলিয়ে না উঠতে পেরে ঝরে পড়ে।আর মাদ্রাসা গুলো হলো নিম্নবিত্ত ও গরীব পরিবারের জন্য।যার প্রতি কখনো কোন সরকার খেয়াল করেনি যা অভহেলিত অবস্হায় পড়ে আছে।শতকরা ৯০% মুসলমান হওয়া স্বত্বেও মাদ্রাসা শিক্ষা কেন পিছিয়ে আছে তা নিয়ে কারো মাথা ব্যাথা নেই কারন সেখানে যারা পড়াশুনা করে তাদের অর্থ নেই ,প্রভাব নেই,তাদের পক্ষে কথা বলার লোক নেই।আমার নিজের একটা বড় অভিজ্গতা হয়েছিল, আমি যখন বিভিন্ন মিডিয়াতে কিছু আধুনিক মাদ্রাসার বিজ্গাপন দেখলাম ও তা ভিজিট করলাম সেই সব স্কুলের অবস্হান দেখে মনে হয়েছিল ভাল মাদ্রাসা করেছে।হাঁ বলতে হবে অন্য মাদ্রাসাগুলোর তুলনায় তাদের শিক্ষার মান ভাল।কিন্তু ঐ খরচ বহন করার মত পরিবার মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের নেই। একটি স্কুল বা মাদ্রাসার জন্য প্রয়োজন ভাল শিক্ষক,শিক্ষার আধুনিক পরিবেশ,নিয়মশৃংখলা ও নিয়মানুবর্তি ছাত্র ছাত্রী।মজার ব্যাপার হলো যারা ঐ মাদ্রাসাগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা করেন তাদের ছেলেমেয়ে পড়ে সাধারন স্কুলগুলোতে।বানিজ্যিকভাবে গড়ে উঠেছে এ রকম অনেক প্রতিষ্ঠান।আর গ্রামে গন্জে রয়েছে আলিয়া ও কওমি মাদ্রাসার মত প্রতিষ্ঠান যেখানে নেই এরাবিক শিক্ষার সাথে আধুনিক শিক্ষার কোন ছোঁয়া।সে কারনে তারা যখন ঐ সব প্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে আসে কোথাও সুযুগ থাকে না মাদ্রাসা ছাড়া।এই নিম্ন আয় দিয়ে চলতে থাকে তাদের জীবন।

শহর ও গ্রামের এই যে শিক্ষা ব্যবস্হার বৈষম্য তার কারন হলো আমাদের শিক্ষানীতিকে ঢেলে না সাজানো।এরশাদ সাহেব বলেছিলেন গ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে।কথাটা সত্য কিন্তু তিনিও বাঁচানোর কাজ করতে পারেন নি।আমাদের শিক্ষা ব্যবস্হার যদি উন্নয়ন করতে হয় তাহলে শিক্ষার মধ্যে কোন বৈষম্য রাখা যাবে না।শহরের আধুনিকতা গ্রামে পৌঁছানোর জন্য আমাদের আফিস আদালতকে ডিসেন্ট্রালাইজেশন করতে হবে।একটা শিক্ষা ব্যবস্হাকে সারা দেশে ঢেলে সাজাতে হবে।এরাবিক প্রতিষ্ঠান গুলোতে মানসম্মত শিক্ষা দেয়ার জন্য সাধারন শিক্ষার বিষয়গুলো সন্নিবেশিত করা হলে তারা পিছিয়ে থাকবেনা।আজকে রাজনৈতিক নেতারা যে তালেবানি ব্লেইম দিছ্ছে মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্রদের উপর এর জন্য তারাই দায়ি।কারন তারা শিক্ষা ব্যবস্হায় বৈষম্য তৈরি করে তাদের ঐ সব পথে ধাবিত করছেন।সমাজের এলিটদের কাউকে দেখা যায় না তাদের সন্তানদের ইসলামি শিক্ষার জন্য পাঠাতে।অথচ বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে তাদের ইসলামি পোষাকে দেখা যায় ইসলামের কথা বলতে।যে ছেলেটি কম মেধাবি তাকে পাঠানো হয় মাদ্রাসায়।সে যখন মুফতি হয়ে বেরিয়ে কোন ফিখহ বা রায় দেয় তখন তা মেনে নিতে চায় না সমাজ।আগামি সরকার গুলোর প্রতি আবেদন থাকবে মানুষ হিসেবে সব মানুষকে সমান করে দেখে গ্রাম ও শহরের শিক্ষা ব্যবস্হার বৈষম্য দূরিকরনে এগিয়ে আসবে।আর গ্রামের স্কুলগুলোকে যদি আধুনিকিকরন করা না হয় তাহলে দিন দিন এই বৈষম্য বাড়তে থাকবে।আজ মানুষ যেভাবে শহর মুখী হছ্ছে আগামী বছরগুলোতে ভয়াভহ যে হবে তা অনুমান করা যাছ্ছে।

ইসলামি দেশ হলে ইসলামের উপর নিশ্চয়ই গুরুত্ব দিতে হবে।একজন মুসলমানের ঐতিহ্য হলো তার কুরআন ও ছহি সূন্নাহর অনুশীলন।স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যদি কুরআন

ও ছহি সূন্নাহর অনুশীলন থাকে সে জাতিই হবে উর্বর।কারন অপরাধবোধ জিরো % এ চলে আসবে।সৌদি আরবের মত দেশে ছেলেমেয়েকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কুরআন ও হাদিসের আলোকে দেয়া হয় বলে যে কোন যায়গায় নামাজের সময় তারা ঈমাম না থাকলেও ঈমামের দায়িত্ব পালন করতে পারে।কারন তাদের ইসলামি শরি্যত দিয়ে জীবনের প্রথমে ঢেলে সাজানো হয়।আমাদের দেশে এর বিপরিত অবস্হার কারনে মুলমান হলেও ইসলাম থেকে দূরে সরে গিয়ে পাশ্চাত্তের সংস্কৃতির বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে দুনিয়া আখেরাতে খেসারতের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে।মানুষের উপর অত্যাচার ও নিষ্পেষন যত বাড়তে থাকবে ততই মানুষ প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে উঠবে।যার পরিনতি আমরা দেখতে শুরু করেছি।আমরা আশা করবো সব রকম বিভেদ ভুলে ধনী গরীবের বৈষম্য দূর করার ও গ্রাম উন্নয়নে এগিয়ে আসবে সরকার, বিরোধী ও জন গন সবাই।কারো একার পক্ষে দেশের কল্যান সম্ভব নয়।সমাজ থেকে অপরাধ দূর করতে আমাদের সততা ও উন্নত দৃষ্টিভঙির প্রতি সবারই গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।

বিষয়: বিবিধ

১৩৮৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File