আল্লাহর বিরোধিতা সমাজে আযাব ডেকে নিয়ে আসে।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৪ মে, ২০১৩, ০২:৩৯:১৪ দুপুর

আমার ভাবনায় প্রায়শই আঘাতপ্রাপ্ত হই যখন আমি ভাবি আমি একজন মুসলিম।এই মুসলিম নাম ধারন করে যে কত বড় দায়িত্ব নিয়ে জন্মেছি তার কততটুকু হক্ক আদায় করতে আমি সক্ষম হলাম।যখন কুরআনের পাতা উল্টাই দেখি আখেরাতের আয়াতসমূহ।হয় চরম আযাবের না হয় চরম শান্তির।কোন আ্য়াত শান্তির কথা দিয়ে শুরু হয়ে পর পরই চলে আসে আযাবের কথা।এগুলো বিশ্বাসের ব্যাপার।মানুষ নগদে বিশ্বাসি বলে দেখেও না দেখার ভান করে, শুনেও না শুনার ভান করে।জীবন্ত মানুষকে বুঝানোর কোন উপায় নেই।যে শুধু ধ্বংশে নিপতিত হয়েছে সে-ই বুঝেছে তার মজা।কত ট্রাজেডি আমাদের সামনে দেখেছি।সাভার ট্রাজেডি,তাজরিন,স্পেকট্রাম,নিমতলি,বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভাসিয়ে নেয়া লাখ লাখ মানুষ।যারা এর কবলে পড়েছে তারাই বুঝেছে কষ্ট আর ধ্বংশলীলা কেমন।জীবন এবং মৃত্যু দু'টো ই যে পাশা পাশি আমরা বুঝতে চাই না।কেমন বিচিত্র জীবন ভেবে দেখছি কি? সকালে আছি বিকেলে নেই বা সন্ধায় আছি সকালে নেই।স্বামি স্ত্রী রাত যাপন করছে সকালে দেখে একজন অন্যজনকে হারিয়েছে।আসলে দুনিয়া ও আখেরাত শুধু একটি পর্দার ব্যাপার।যখন মালাকুল মওত এসে যায় তখন একজন মানুষের কাছে আর দুনিয়া থাকে না।তার চার পাশে আত্মীয় স্বজন ঘেরা থাকলেও সে দেখে মালাকুল মওত ও তার সাথে অন্যান্য ফেরেস্তাদের।আমাদের ভাবনার জাল বুনি দুনিয়ার চাকচিক্যের জন্য।অথচ আল্লাহ সূরা আযযারিয়ার ৫৬ আয়াতে বলেছেন,'আমি জ্জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার ইবাদাত করার জন্য।' আর মওত ও হায়াতের ব্যাপারে সূরা মুলকের ২ আয়াতে বলেন,' আমি মওত ও হায়াত সৃষ্টি করেছি তোমাদের যাচাই করার জন্য কার কাজ সর্বোত্তম।' তাহলে একজন মুসলিমের কাজইতো হলো ভাল কাজের লোভ থাকা।অপরাধ করার কারন হলো আমাদের বিশ্বাসে দুর্বলতা।যদি একজন মুসলিম তার বিশ্বাসে অটল থাকে সে কোন রকম অনাচার সৃষ্টি করতে পারে না।মানুষকে সৃষ্টির সেরা করার পর আল্লাহ আবার বলেছেন এই মানুষগুলো ই সৃষ্টির অধম।সূরা আততিনের ৪-৫ আয়াতে আল্লাহ বলেন,' নিশ্চয়ই আমরা মানুষকে সৃষ্টি করেছি সুন্দর আকৃতিতে তারপর আমরা তাদের পরিনত করি হীনতম থেকে হীনতমে.' এই হীনতম শ্রেনি হলো মানবজাতির অত্যাচারি সম্প্রদায়।

যারা ইসলামের দিকে ডাকে তারাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি।মানুষের মধ্যে ভুল থাকবে,কেউই ভুলের উর্দ্ধে নয়।আল্লাহ কুরআনে প্রশ্নের আকারে বলেছেন যে অন্ধ আর যে অন্ধ নয় তারা দু'জন কি এক? যারা ইসলামের দিকে ডাকে আর যারা ইসলাম বিদ্ধেষি তারা কি এক? যারা ইসলামের কাজ করেন আল্লাহ তাদের ছোট খাট ভুলক্রুটি মাপ করে দিতে পারেন।তবে ইসলামে বিশ্বাসি কোন লোক কখনো বড় অন্যায় করতে পারে না।যারা বড় অপরাধ করে তারা হয় মুনাফিক অথবা কাফের রুপী ছদ্ধবেশি।৫ই মে যে মানবসৃষ্ট প্রলয়টি হয়ে গেল তার নেপথ্যে অনেক প্রশ্ন উদিত হছ্ছে জন মনে।সরকার এই মানুষগুলো সরাতে কেন কামান দাগলো? কেন কিছু মিডিয়া বন্ধ করে দিল? কেন মিডিয়ার লোকদের সরিয়ে দিল? কেন দমকল বাহিনী দিয়ে রাস্তা অতি দ্রুত পরিষ্কার করা হলো? হেফাজতের লোকরা যখন দোকান পুড়ে তখন যৌথ বাহিনী কেন প্রতিরোধ করলো না? সরকারি বাহিনীর সাথে কারা পিস্তল নিয়ে হাঁটছিল? তাদের কেন ধরা হলো না? এ রকম হাজার প্রশ্ন উঁকি দিছ্ছে।একি কখনো সম্ভব যারা আল্লাহ ও রাসূলের অপমান সহ্য করতে না পেরে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে খেয়ে না খেয়ে তাদের নেতার ডাকে এসেছে,তারা কোরআন পোড়াবে? আসলে তাদের ভিতর সূন্নতি লেবাসে ঢুকে পড়েছিল দুষ্ট চক্র।হেফাজতে ইসলামের প্রজ্গার কমতির কারনে তারা হারিয়েছে অনেক কোরানের ছাত্রকে।বিচার পৃথিবীতে না পেলে কি হবে,যারা ইসলামে বিশ্বাসী আল্লাহর সামনে নিশ্চয়ই উঠে আসবে অপরাধীর দল।সূরা সফ এর ৭ আয়াতে আল্লাহ বলেন,' তার চাইতে কে বেশী অন্যায়কারি যে আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা রচনা করে,অথচ তাকে আহ্বান করা হছ্ছে ইসলামের দিকে? আর আল্লাহ অন্যায়াচারি জাতিকে সৎপথে চালান না।' তবে যারা ইসলামের কাজ করবে তারা যদি অন্যায় পথ অবলম্বন করে তাহলে কখনো ইসলাম বিজয় লাভ করবে না।ইসলামের সাথে সংঘর্ষ আসতে পারে কিন্তু বাংলাদেশ যেহেতু ৯০% মানুষ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী তাদের একে অন্যের সাথে চরম সংঘর্ষ করে,জান মালের ক্ষতি করে,দেশ অচল করে দিয়ে আন্দোলন করা সমিচিন নয়।যেহেতু ইসলামি সরকার হলেও ফাসেক সরকার সেখানে সহনশীলতার মাধ্যমে দাবি দাওয়া আদায় করতে হবে।মানুষ হত্যা , মালের ধ্বংস করে কোন দাবি আদায়ের পথ হতে পারে না।এ পথ সরকার ও বিরোধী সবাই করে থাকে।এটা বন্ধ না করলে কখনো শান্তি আসবে না।

ইসলামের ইতিহাস বলে মানব সমাজে যখনই আযাব এসেছে তা তাদের কর্মের ফল এবং এর থেকে শিক্ষা নেয়ার ব্যাপার রয়েছে।আমাদের দেশে যে ইসলামের নামে উগ্র সম্প্রদায় রয়েছে এরা নাস্তিকবাদি অনেক রাজনৈতিক দলের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে।এদের পালন করা হয় সমাজকে অস্হিতিশীল করার জন্য।আন্তর্জাতিক একটা চক্র রয়েছে যারা এ অপরাধের সাথে যুক্ত ও কালো টাকার মালিকরা এদের কাছাকাছি।আশ্চর্যের ব্যাপার হলো অনেক সময় আমাদের সরকার মসজিদ মাদ্রাসা গুলোর যখন আঘাত করে বা বন্ধ রাখে তখন মুসলিমদের মনে আঘাত আসে।আল্লাহ এর স্বপক্ষে সূরা বাক্কারার ১১৪ আয়াতে বলেন,' আর তার চাইতে কে বেশি অন্যায়কারি যে আল্লাহর মসজিদ সমূহে বাধা দেয় এই জন্য যে ,সে সবে তার নাম স্মরন করা হবে আর চেষ্টা করে সে সবের অনিষ্ট সাধনে? তাদের জন্য এই দুনিয়ায় আছে অপমান আর পরকালে তাদের জন্য কঠোর শাস্তি।' সমাজে আজ যারা জালিয়াতি করে , গরীবদের ঠকিয়ে টাকার পাহাড় গড়েছে তাদের এই হঠকারিতার জন্য কুরআনে কঠিন আযাবের কথা বলেছে।সূরা বাক্কারার ১৮৮ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'তোমাদের সম্পত্তি পরস্পরের মধ্যে জালিয়াতি করে গ্রাস করোনা আর বিচারকদের কাছে পেশ করোনা যাতে লোকের সম্পত্তির কিছুটা অন্যায়ভাবে গিলে ফেলতে পার জেনে বুঝে।' সূরা নিসার ১০ আয়াতে আল্লাহ বলেন,' নিসন্দেহে যারা এতিমের ধন সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করে তারা নিশ্চয়ই তাদের পেটে আগুন গিলে আর তারা শীঘ্রই প্রবেশ করবে জ্বলন্ত আগুনে।' আমাদের চার পাশে আমরা এখন যা দেখছি অধিকাংশ মানুষ এভাবেই পরের হক্ক নষ্ট করে বড় হছ্ছে।আর এর প্রমান হলো শ্রমিক শ্রেনির উপর মালিকদের নিষ্পেষন।আমাদের অনেক মালিক শ্রেনি রয়েছেন যারা নীতি মেনে চলার চেষ্টা করেন।কিন্তু অধিকাংশই লাভের সিংহভাগ দিয়ে নিজেরা আয়েস করেন।যদি মালিকরা শ্রমিকদের সাধারন সুবিধাগুলো দেন তারা হতে পারে সম্পদ ও মালিকের প্রতিষ্ঠানের রক্ষাকবচ।অনেক মালিক আছে শ্রমিকদের ঠকিয়ে নিজে লেটেষ্ট মডেলের গাড়ি চালান ও বিদেশে পরিবার প্রতিপালন করেন।তারা যদি শ্রমিকদেরও তাদের মত মানুষ হিসেবে চিন্তা করতেন তাহলে এটা কখনো করতে পারতেন না।দুনিয়ার জীবনতো সামন্য।এই সামন্য সময়ের জন্য আয়েস করে জ্জ্বলতে হবে প্রজ্জলিত আগুনে।

আমরা যারা ইসলামের কথা বলি তারাও পিছিয়ে নেই।ইহুদি ও খৃষ্টানদের আলেমগন যেভাবে তাদের জন গনকে শোষন করত আমাদের সমাজে পিরতান্ত্রিক কায়দায় মুরিদদের শোষনের বহু আখড়া ভারত উপমহাদেশে গজিয়ে উঠেছে ইসলামের নামে।দেখতে মনে হয় এরা ইসলামের ধারক বাহক কিন্তু তাদের শির্ক ও বিদাআতি কিতাব ঢেকে দিয়েছে কুরআন ও ছহি হাদিসকে।যার ফলে কোটি কোটি অজ্গ জনসাধারন এদের কবলে নিপতিত হয়েছে।আর মুসলিমদের মধ্যে বহুসংখ্যক রয়েছে যারা সোনা রুপা জমা করে অথচ সঠিকভাবে যাকাত আদায় করে না।আল্লাহ সূরা তওবার ৩৪ আয়াতে তাদের আযাবের হুশিয়ার করে বলেন,' ওহে যারা ঈমান এনেছ! নিসন্দেহে পন্ডিতদের ও সন্নাসীদের অনেকে লোকের ধন সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গলাধকরন করে আর আল্লাহর পথ থেকে ফিরিয়ে রাখে।বস্তুত: যারা সোনারুপা পুন্জিভূত করে অথচ আল্লাহর পথে খরচ করে না তাদের সংবাদ দাও মর্মন্তুদ শাস্তির।' আমাদের করনীয় কাজ হলো সমাজ থেকে এসব অনাচার দূর করার জন্য একত্রে কাজ করা।ইসলামের কাজ নসিহতের মাধ্যমে করতে হবে।কাউকে কটাক্ষ করা বা জোর করে কিছু ছাপিয়ে দেয়া ইসলামের কোন কাজ নয়।নূহ আ: ৯৫০ বছর দাওয়াত পেশ করেছিলেন সহনশীলতার সাথে।কারো সাথে সংঘর্ষ করে ইসলামের বিজয় আনা যায় না।আপনার দাওয়াত আপনি দিতে থাকেন সরল পথে।আপনার পাওনা আল্লাহর কাছে।আল্লাহর কাছে আপনি সাহায্য চান।অন্যায় পথে ইসলামের বিজয়ের জন্য কোন পাছেকের সাহায্য নিতে গেলে আপনি ইসলামের মর্যাদা ক্ষুন্ন করবেন।ইসলামের জ্গান আহরন করুন।আমাদের দেশে অসংখ্য ইসলামের কর্মি ঈমান কিভাবে লালন করতে হয় জানেনা,নামাজ আদায় করে না অথচ আল্লাহ ও রাসূল সা: এর নামে কেউ কিছু বললে শহিদ হওয়ার জন্য রাস্তায় বেরিয়ে যায়।এটাকে ইসলাম বলেনা।যদি আল্লাহ ও রাসূল সা: কে ভালবাসতে চান তাহলে আল্লাহর কুরআনকে অনুসরন করুন,তা থেকে জ্গান আহরন করুন,রাসূল সা: এর কাজগুলোকে নিজের জীবনে বাস্তবায়িত করুন।তাহলেই নিজে সফল হবেন ও সমাজকে সুন্দরভাবে বিনির্মান করতে পারবেন।আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।

বিষয়: বিবিধ

১৪১২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File