৫ই মের কালো রাত ও ইসলাম ভাবনা।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০৮ মে, ২০১৩, ০৭:১৭:৪০ সন্ধ্যা
পাঁচই মে বাংলাদেশের ইতিহাসে আর একটা অধ্যায় রচিত হয়েছে দেশীয় পাকিস্তানি দোষরদের দ্বারা।সাভার ট্রাজেডির লাশ গুনা না শেষ হতেই আরো শত শত লাশ।এদেশের সাধারন মানুষগুলো বিদেশি প্রভুদের প্রেতাত্যাদের মন রক্ষা করতে গিয়ে বার বারই হোচট খাছ্ছে ও রক্তের গঙা বইয়ে দিছ্ছে।৭১ এ যারা দেশ স্বাধীন করেছিল তাদের অধিকাংশ ছিল মাটি ও মানুষের দল ও খেটে খাওয়া আপামর জনসাধারন।তাদের রক্ত দিয়ে দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হলেও তাদের সে শ্রেনী ভোগ করতে পারেনি স্বাধীনতার ফল।যারা দলে দলে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেছিল ও পাকিস্তানি দোষরদের সাথে আঁতাত করে মা বোনদের হত্যা করেছিল তারাই এ দেশের মানুষকে শাসন ও শোষন করে আসছে।রাজনৈতিক অবস্হার বলি যে মানুষগুলো হছ্ছে তারা আজও বুঝতে শিখলো না কাদের ডাকে তারা সাড়া দিছ্ছে? কি জন্য সাড়া দিছ্ছে? সূরা আহযাবের ৬৭-৬৮ আয়াতে আল্লাহ বলেন,' তারা (সমাজের হীন শ্রেনী) বলবে,আমাদের প্রভু! আমরা তো আমাদের নেতাদের ও আমাদের বড় লোকদের আজ্গা পালন করেছিলাম সুতরাং তারা আমাদের পথ থেকে বিপথে নিয়েছিল।আমাদের প্রভু! দ্বিগুন পরিমান শাস্তি তাদের প্রদান কর আর তাদের দিক্কার দাও বিরাট ধিক্কারে.'
মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হতাহতের কোন ঘটনা ঘটেনি বলে সরকারের কিছু মন্ত্রি ও ঢাকা মহা নগর পুলিশ কমিশনার যে বিবৃতি দিয়েছে তার দ্বারা তারা নিউজ ও ভিডিও চিত্রগুলোকে তাদের মিথ্যা দিয়ে ঢেকে দিয়েছে।মানুষ হিসেবে সত্যকে সত্য ও মিথ্যাকে মিথ্যা বলার সৎ সাহস থাকতে হবে।কতজন লাশ হয়ে পর পারে চলে গেছে তা দুনিয়ায় বেরিয়ে না আসলেও আখেরাতে আল্লাহর সামনে বেরিয়ে আসবে।মানুষ হিসেবে সত্যকে সবার উপরে স্হান দিতে হবে।আমরা এই সরলপ্রান মানুষগুলোর আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।যাদের ইসলামের সাথে সম্পর্ক নেই এ রকম মুসলমানের প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই কারন তারা তো ইসলামই বুঝে না বা তার চর্চা করে না।রাসূল সা: এর সাথে ওহুদ যুদ্ধে ৩০০ মুনাপেক ফিরে এসেছিল তারা মুসলমানের ভিতরই ছিল।অনেক সাহাবি বলেছিলেন তাদের হত্বা করার জন্য।রাসূল সা: কি তা করার অনুমতি দিয়েছিলেন? যদি তিনি তা করতেন তাহলে আজ আমরা ইসলামের সৌন্দর্য দেখতে পেতাম না।একজন মুসলিমের একটি বিষয় পরিস্কার থাকা দরকার আর তা হলো, এই দুনিয়ার জীবন একটা পরিক্ষার যায়গা।একজন মু'মিন এখানে কাজ করবে আর আখেরাতে তার পুরস্কার পাবে।সূরা হাশরের ৭ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'রাসূল তোমাদের যা দেন তা গ্রহন কর আর যা করতে নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক।তাহলে মু'মিনের অনুসরনের চরিত্র হলো রাসূল সা: এর নবুওতের ২৩ বছরের জীবন আর আল্লাহর কিতাব।ইসলামে কোন ইমোশন কাজ করবেনা।আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল সা: কে যদি কেউ গালি দেয়, নিশ্চয়ই যে মু'মিন হবে তার অন্তরে লাগবে এটা স্বাভাবিক।কিন্তু কেউ যদি তার ক্ষমতার বাইরে গিয়ে চিন্তা ভাবনা না করে ইমোশনাল হয়ে কোন ধ্বংসাত্মক কাজ করে বসে তাহলে ইসলামের উপরই ব্লেইম চলে আসবে।ওমর রা: তলোয়ার হাতে নিয়ে নবী সা:কে হত্বা করতে বেরিয়ে পড়েছিলেন।পরবর্তিতে নবী সা: ই বলেছিলেন,আমার পরে কোন নবী আসবে না,যদি নবী আসতো তাহলে ওমর নবী হয়ে যেত।আজকের পৃথিবীতে যারা আল্লাহকে বা রাসূল সা: কে গালি দিছ্ছে,তাদের বিরুদ্ধে জন গন সোচ্চার হছ্ছে,মিছিল মিটিং করে প্রতিবাদ জানাছ্ছে।এটা মুসলমানদের অধিকার তারা নিশ্চয়ই প্রয়োগ করবে।আমাদের দেশে সংবিধানে কোন ধর্মের উপর কেউ আঘাত করবে না এবং যদি করে তা হলে বিচারের ব্যবস্হা রয়েছে।রাসূল সা: বলেছেন,' যদি তুমি কাউকে কোন অন্যায় করতে দেখ তাহলে তোমার হাত দিয়ে বাধা দাও।যদি তা না পার তাহলে মুখে বল আর যদি তাও না পার তাহলে সে অন্যায়কে ঘৃনা কর।আমাদের দেশে ইসলামের অবস্হান কি? শতকরা ৯০% মুসলিম বলা হলেও ইসলামি শারিয়ার শাসন এখানে নেই।এমনকি সৌদি আরব ছাড়া পৃথিবীর কোথাও শারিয়ার শাসন নেই।প্রশ্ন উঠতে পারে তাহলে আমরা কিভাবে ইসলামের কাজ করবো? যেহেতু মানবরচিত সংবিধানের আওতায় আমরা বাস করছি সেহেতু আমাদের যতটুকু ক্ষমতা আছে ততটুকুই প্রয়োগ করতে হবে।
ইসলামি দেশগুলোতে যে শাসক বা সরকার এখন বর্তমান তা ফাসেক(যারা ভাল মন্দ মিলিয়ে কাজ করা) সরকার দ্বারা পরিচালিত।এক মাস হয়নি আমি একটি টপিক লিখেছিলাম হেফাজতকে কেন্দ্র করে।যে কথাগুলো বলেছিলাম তার অনেকটাই আজ প্রতিফলিত হয়েছে।ইসলামের একটা নিজস্ব স্বত্বা রয়েছে।ইসলামের চলার এ পথটা আলাদা যা সরল পথ হিসেবে বিবেচিত।ইসলামের ১০০০ বছরের ইতিহাস থেকে আমরা যা পাই তা হলো,খোলাফায়ে রাশেদা (চার খলিফার শাসন) ৩০ বছর শাসন চালিয়েছিলেন রাসূল সা: এর পথ অনুসরন করে।এর পর কালের প্রবাহে রাজতন্ত্র চলে এসেছে।রাজতন্ত্র আসলেও রাসূলের সাহাবারা ও পরবর্তিতে মুহাদ্দেছিন গন দ্বীন প্রচারে তাদের অব্যাহত রেখেছেন সমকালীন শাসকদের আওতায়।তাদের শাসন ক্ষমতার কোন লোভ ছিল না।ঈমাম আবুহানিফাকে উমায়্যা ও আব্বাছিয় শাসনের সময়ে প্রধান বিচারপতির আসন অলংকৃত করতে বলা হয়েছিল,তিনি তা প্রত্যাক্ষান করেছিলেন এবং তারা তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করেছিল।ঈমান মালেক ও তা-ই করেছিলেন।তারা ক্ষমতা নেন নি আল্লাহকে ভয় করে যেন তাদের আখেরাত ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।ঈমাম বোখারি ও ঈমাম মুসলিম আরো ঈমামগন দ্বীন চর্চা করে ইসলামকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।গত ৮০০ বছরে ভারত উপমহাদেশে প্রতিটি এলাকা এখন শির্ক ও বিদাআতে ভরপুর।ইসলামকে বিভক্ত করে যে যার মত ধর্ম প্রচার করছে। শির্ক ও বিদাআতের পিছনে যদি উলামারা কাজ করেন অর্থাৎ সঠিক দ্বীন প্রচার করেন শত শত বছর লেগে যাবে মানুষকে সঠিক পথে নিয়ে আসতে।ইসলামের পথ ও গনতন্ত্র দুটো বিপরিত মুখী।মাননিয় প্রধান মন্ত্রি কি করে বললেন মদিনা সনদ বাস্তবায়ন করবেন আমার জানা নেই।তবে মদিনা সনদ বাস্তবায়ন করতে হলে মানব রচিত সংবিধান উপড়ে ফেলতে হবে।
ইসলামের কথা বলে যারা গনতন্ত্রে নিমজ্জিত হয়েছে তারা ইসলামকে এ পথে বাস্তবায়িত করতে পারবে বলে আমি বিশ্বাসি নই।আমি মনে করেছিলাম হেফাজতে ইসলাম যে মিশন নিয়ে এসেছে তারা একটা তৃতীয় শক্তিতে দাঁড়াবে রাসূল সা: এর পথে চলে।তাদের ক্ষমতার কোন লোভ থাকবে না।বাকী ইসলামি দলগুলো অন্তত বিভক্ত না থেকে একটি ইসলামের শক্তিতে পরিনত হবে।একটা দেশ শাসন করার জন্য যে প্রজ্গা সেটা ইসলামি দলগুলোর মধ্যে তৈরি হতে অনেক সময় লেগে যাবে।আমাদের দেশে আলেম সমাজ একদিকে বিভক্ত। অন্যদিকে তারা কোরান হাদিস ও অধ্যয়ন করে না।একটা দেশ চালাতে যে বহুমুখি জ্গান প্রয়োজন তা তাদের ক' জনের আছে? আমাদের দেশের মাদ্রাসা গুলো চলে মানুষের সাহায্যে।কোন সরকারই এরাবিক প্রতিষ্ঠান গুলোর প্রতি নজর দেয় নি ।আর বিশেষ করে গরীব পরিবারের ছেলে মেয়েগুলোই ঐ সব প্রতিষঠানে পড়াশুনা করে।আমি বলেছিলাম যদি হেফাজত তাদের অঙিকার থেকে পিছলে পড়ে যায় তাহলে তাদের নিজেদের পায়ে তারা আঘাত করবে।আর রাজনৈতিক কোন কোন প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতাও আজ এই ১২-২০ বছরের ছেলে গুলোর জীবন কেড়ে নিল যারা ছিল নিতান্তই দরিদ্র বাবা মা'র সন্তান বা এতিম সন্তান।যারা মেরে ফেললো তারা ও কি ভাবে নি এরা এক রকম শীকার।ফাঁকা অয়াজে ও তো তারা ছত্র ভঙ হয়ে যেত।কামান দাগানোর প্রয়োজন ছিল কি? রাসূল সা: বলেছেন , তোমরা যদি কিছু না দিতে পার এতিমের মাথায় হাত বুলাও।যারা এই ধ্বংসযজ্গ চালালেন তার পরিনাম তো কোরান বলেছে আগুন ছাড়া কিছুই নয়।হেফাজত কি করে চিন্তা করলো তাদের ১৩ দফা এই মানবরচিত সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে যেখানে রয়েছে সিংহভাগ কোরান সূন্নাহ বিরোধী।আর ইসলামকে জোর করে চাপিয়ে না দেয়ার জন্য আল্লাহ কোরনে রাসূলকে নির্দেশ দিয়েছেন।সূরা গাসিয়ার ২২ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,'তুমি তাদের তাদের উপর অধ্যক্ষ নও।" আর হেফাজত যদি কোন রাজনৈতিক ফ্লাটফর্ম তৈরি করে আসতো তা হলেও তাদের দাবি দাওয়া পেশ করতে পারতো।সুতরাং আমি বলবো ইসলামকে কেউ কলন্কিত না করে ইসলামের পথে জনমত তৈরি করুন।কোরান হাদিছ অধ্যয়ন করুন।দেশ পরিচালনা করার মত প্রাজ্গ ও বিজ্গ তৈরি করার জন্য প্রতিস্ঠান তৈরি করুন।মানুষকে দ্বীনদার বানানোর কার্যক্রম হাতে নিন।যে সরকারই আসুক হানাহানি না করে আপনার বক্তব্য উপস্হাপন করুন।ইসলামের যততুকু তাদের কাছ থেকে আদায় করতে পারেন তা-ই করুন।কোন রাজনৈতিক দলের অধীনে না গিয়ে রাসূলের আদর্শে নিজেদের আদর্শায়িত করুন।মানুষের জান মাল হেফাজত করা আমাদের সবারই দায়িত্ব।যততুকু লিগাল উপায়ে শাসকশ্রেনীকে পৌঁছানোর দায়িত্ব ততটুকু পৌঁছানোর চেষ্টা করুন বাকিটা আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিন।কোন মানুষই একশ বছরের বেশী দুনিয়াতে স্হায়ি হবে না।তাহলে কারো কাছে কোন কিছু ছাপিয়ে ইসলামকে কেন ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিছ্ছেন ও জন জীবন বিপর্যস্ত করছেন। আমরা দেশে আর হানাহানি চাই না।ইতিমধ্যে অনকের বুক খালি হয়েছে।আপনাদের আরো দশটা জীবন পেলেও তাদের ক্ষতিপূরন দিতে পারবেন না।
যে কোন সরকার প্রধানই আসুক,তার প্রতি আমাদের আশা সমস্ত অপকর্ম রোধ করার চেষ্টা করুন।বিরোধীমতকে দলিত না করে রিকনসিলিয়েশনে আসবেন এতে জান মালের ক্ষতি থেকে মানুষ রেহাই পাবে।বর্তমান প্রধান মন্ত্রি হয়ত বুঝতে পারছেন না কি ক্ষতি হয়েছে।আওয়ামিলিগ এখন ক্ষমতায় থাকলেও আমরা মন্ত্রিদের কোন প্রজ্গা দেখছিনা।তাদের অনেকের কথা ও কাজে কোন বিচক্ষনতা নেই।এর কারন হিসেবে নিশ্চয়ই বলতে পারি দলের যারা প্রাজ্গ ও বিজ্গ তাদের কোন কন্ট্রিবিউশন নেই।শুধু নতুনদের নিয়ে আসলেই হবে না তাদের মধ্যে দেশ চালানোর মত ইফিসিয়েন্সি যদি না থাকে তাহলে সমাজে সমস্যা লেগেই থাকবে।বর্তমান সরকারের সময় ৪টি বিশেষ ঘটনা জাতি মনে রাখবে অনেকদিন আর এর প্রভাব লক্ষ্য করতে হবে আগামি ভোটে।এ থেকে শাসকদল যেমন শিক্ষা নিবে আবার যারা ক্ষমতায় আসবে তাদের জন্য থাকবে বিরাট শিক্ষা।তবে ইসলাম নিয়ে যারা ভাবেন তাদের প্রতি আমার আকুল আবেদন ইসলামকে বুঝে ইসলামের পথে চলুন।ইসলামের সাধারন মানুষগুলোকে আর যেন বলিদান দিতে না হয় তার জন্য পুরো জাতিকে ভেবে চিন্তে কাজ করার অনুরোধ জানাই।কোন অস্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য যারা দায়ি হবেন তাদের নিশ্চয়ই আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
বিষয়: বিবিধ
১৬৯৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন