সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিস্হিতি হিটলারকে স্মরন করিয়ে দেয়।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০৬ মে, ২০১৩, ০৬:২১:৫৮ সন্ধ্যা
আমরা মুসলিম জাতি আজ এক ভয়ংকর সময় অতিবাহিত করছি।ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত লড়াই ছলছে শোষনের বিরুদ্ধে।আসলে যারা এ লড়াই এ নেতৃত্ব দিছে্ছে তাদের বেশির ভাগের অন্তর্নিহিত ভাব হলো হিটলারের পথের সন্ধান।মানুষের কল্যানের জন্য যত কথাই বলুক এগুলো তাদের মুখের বুলি।এর কারন হিসেবে আমরা বুঝতে পারি কেউ কাউকে শহ্য করতে পারে না।যে শাসক যখনই আসে পেশি শক্তির উপরই থাকে তাদের ভর।গনতন্ত্রের যে ধ্বজাধারি কথা তারা বলে এগুলো শুধুই এক প্রহসন।সব সময় আমরা শুনে থাকি এক জনের দ্বারা ইতিহাসের পরিবর্তন হয় না।ইসলামের কথা বাদই রাখলাম।আলে্ক্সান্ডার দি গ্রেট,নেপলিয়ন বোনাপার্ট,খ্রিষ্টফার কলম্বাস এবং আব্রাহাম লিংকন এরাও মানুষের জন্য ভাল বা মন্দ নিয়ে এসেছে সংঘাত ছাড়া।যারা এদের কথা অনুসরন করে পথ চলে তারাও এদের তত্ব সঠিকভাবে অনুসরন করে না।আবার একজন কারখানা শ্রমিকের ছেলে এডলফ হিটলার ৩৫ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু ঘটিয়ে ইউরোপে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল তাও ইতিহাস হয়ে আছে।
এডলফ হিটলার জন্মগ্রহন করেন ১৮৮৯ সালে এবং তার পিতা মারা যান ১৯১২ সালে।পিতার মৃত্যুর পর অষ্ট্রিয়া থেকে বাবারিয়া চলে যান।তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের যৌবনের অবস্হান।তাকে গ্রেফতার করে আবার অষ্ট্রিয়া পাঠিয়ে দেয়া হলো ও আর্মিতে পাঠানো হলো।এর পর আবার বাবারিয়াতে জার্মান আর্মিতে এনলিষ্ট করা হলো একজন অষ্ট্রিয়ান নাগরিক হিসেবে।তার বেসিক ট্রেনিং এর পর তাকে একজন মেসেন্জার হিসেবে ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টে দায়িত্ব দেয়া হয়।তার দায়িত্ব ছিল ফিল্ড কমান্ডার এর আদেশ ফ্রন্ট লাইনে দেয়া।হিটলার দু'বার "আয়রন ক্রস' পুরস্কার পেয়েছিল।প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর হিটলার একজন কোরপোরাল হিসেবে ডেমোক্রেটিক সরকারের একজন স্পাই হিসেবে যোগদান করেন।তার কাজ ছিল নতুন রাজনৈতিক দলগুলোকে পর্যবেক্ষন করা এবং মিউনিকে জার্মান ওয়ার্কার পার্টির মিটিং এ অবস্হান করা।১৯২০ সালে হিটলার তার প্রথম নিয়োগকৃত বক্তব্য উপস্হাপন করেন যার দ্বারা পরিচিত হয়ে উঠেন।এর এক সপ্তাহ পর এই পার্টির নাম পরিবর্তন হয় নেশনাল সোসালিষ্ট জার্মান ওয়র্কারস পার্টি ( নাজি)। ১৯২০ সালের এপ্রিল মাসে তিনি জার্মান আর্মি থেকে ইস্তফা দেন।এর পরই নাজি পার্টির পলিটি্ক্স এ আত্মনিয়োগ করেন।১৯২৩ সালে সরকার অধিগ্রহন করে এক শোচনীয় পরাজয় বরন করে তাকে কারাবরন করতে হয় ৫ বছর।এই কারাগার তাকে শিখিয়েছিল কিভাবে পরবর্তি লক্ষে পৌঁচতে হবে।কারাগারে থাকা অবস্হায় একটি বই লিখেছিলেন " আমার সংগ্রাম " এই বইতে হিটলার তার মতামত বিবৃত করেছেন দুই হাজার বছরের সরকারের প্রাচ্যে বিচরনের উপর ও পুরোপুরি তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও আঁকা ছিল এতে।'
কারাগার থেকে বের হওয়ার পর হিটলার তার পার্টিকে পুননির্মান করা শুরু করলেন ও গোপনে জার্মান আর্মি থেকে সুবিধা গ্রহন করতে থাকলেন নাজি পার্টির সমর্থনে।একটা বড় মিথ্যা প্রচারে নিমজ্জিত করলেন নিজেকে।এই মিথ্যা প্রচারের পিছনে যে থিয়রি ছিল তাহলো," The masses would believe a big lie more than they would believe a little lie,if they heard it often enough." হিটলার গলাবাজি করতে থাকলো শান্তির কথা দ্বারা, ভীতিহীনতা দ্বারা এবং শক্তিশালী জার্মানির একতা সম্বলিত কথার দ্বারা।এর মধ্যেই সে ধারাবাহিকভাবে পরিকল্পনা করে রাশিয়াকে আক্রমন করার।হিটলার নাজি পার্টিকে সুসজ্জিত করে নেয় রংবেরঙের পোষাকে,ফ্লাগ ও বেনার দিয়ে আর ইয়োথ প্রোগ্রাম হিসেবে মিলিটারিকে সুসজ্জিত করে।সে ৭৫ জন দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করে তার গোপনীয় পুলিশ বাহিনি যারা তার দেহরক্ষি হিসেবে কাজ করবে।আর তার হেড বানালেন হিনরিচ হিমলারকে যে ছিল অত্যন্ত জঘন্য ধূর্ত।উইমার সরকারের রুপ ছিল একটা কোয়ালিশন সরকার হিসাবে যেখানে ছিল ফেসিস্ট,কমিউনিষ্ট ,সোসালিষ্ট ও আরো অনেকে।এ সকল পার্টিগুলোর কারোরই যথেষ্ট ভোট ছিল না সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের ও নতুন সেন্চেলর নির্বাচনের।তাই তারা সবাই ঠিক করলো হিটলারকেই সেন্চেলর নির্বাচন করবে এবং এক মাসেরও কম সময়ে হিটলার সেন্চেলর নির্বাচিত হলো।তখন রিসটাগ ভবনে ( ফার্লামেন্ট ভবনের মত) কিভাবে আগুন লেগে গেল।হিটলার এই সুযুগে এটাকে একটা "কু" হিসেবে আখ্যায়িত করে কমিউনিষ্টদের উপর দোষ চাপিয়ে দিল।সমস্ত কমিউনিষ্ট নেতাদের এরেষ্ট করে ডাসাউ( the beginning of the concentration camp) এ পাঠানো হলো। জার্মানের চেন্চেলর হিসেবে জরুরি রাষ্ট্রিয় আইন জারি ,ব্যাক্তিগত ক্ষমতা ও স্বাধীনতা হরন করলো।এই দুর্ঘটনা জনিত আগুন লাগা তাকে একজন ডিকটেটর এ পরিনত করলো।
১৯৩৩ সালের এপ্রিল আর একটি ডিক্রি জারি করলো ইহুদিদের বিরুদ্ধে যে তারা জার্মানীর সমস্ত সমস্যার জন্য দায়ি।একমাসের মধ্যে ইহুদিদের ব্যবসা গুটিয়ে তাদের পৃথক করে দেয়া হলো যার পরিনতিতে ইহুদিরা তাদের আবাস থেকে পলায়নপর হতে লাগলো। ১৯৩৪ সালের ৩০সে জুন হিটলার তার গোপনীয় দেহরক্ষিদের নাজি পার্টির নেতাদের হত্যার আদেশ করলো।এমনকি সবল ও দুর্বল সবাইকে এর অনতর্ভুক্ত করা হলো।এই হত্যাকে বলা হয় " Night of long knives." এভাবেই হিটলার নিজেকে কৃতকার্য করেছিল এডলফ হিটলার হিসেবে।কিন্তু ইতিহাস কি তাকে বা তার কার্যক্রমকে স্বীকৃতি দিয়েছে? হিটলারের শাসন ক্ষমতার পর পৃথিবীর চিত্র পরিবর্তিত হয়েছিল যার ভয়াবহ রুপ নিশ্চয়ই পৃথিবী আর দ্বিতীয় বার অবলোকন করবেনা।
প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার ইতিবাচক মন্তব্যে এবার আমরা সমস্ত ভয় ঝেড়ে আশাবাদী হয়েছিলাম যে দেশে একটা ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে, হয়তবা আমাদের জন গনের ভবিষ্যতের একটা সম্ভাবনা দেখা দিছ্ছে।কিন্তু না ৫ তারিখের হেফাজতের অবরোধকে কেন্দ্র করে আবার মাঠ গরম হয়ে উঠেছে।রাজধানি ঢাকায় জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা।সারা দেশে হতাহতের যে অবস্হান তা নিয়ে দেশের মানুষ সংকিত হয়ে উঠেছে।গত রাতের ঢাকার অবস্হানকে অনেকে ২৫শে মার্চের কালো রাতের মতই বর্ননা করেছে।একটা স্বাধীন দেশে এ অবস্হা অকল্পনীয়।আমি আশ্চর্য হয়েছি কিছু মানুষের কথোপকথন শুনে।যারা সমাজের কৃষক শ্রমিক নন।এরা সমাজকে নিয়ে ভাবেন।কেউ হেফাজতের হতাহতকে স্বাগত জানিয়ে খুশি হয়েছেন আবার কেউ সরকারি লোকদের হতাহতে খুশি হয়েছেন।আমি এখন ভাবি আমি কোন দিকে যাব।এই বিকৃত মানুষগুলোর জন্যই আজ সমাজের এই অবস্হা।একদিকে শাসকশ্রেনী আর একদিকে বিরোধী দল।শান্তি স্হাপনের পথ কি পেশি শক্তির আস্ফালন? পাখির মত মানুষের মৃত্যু,ধন সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি করে যারা দেশ পরিচালনা ও দেশকে ভাল বাসতে চান তারা আসলেই নির্বোধ।যে নেতা নেতৃদের মাধ্যমে মানুষের জান ও মালের ক্ষতি হছ্ছে এখন খুশি হলেও আখেরাতে কি মুল্য দিতে হবে তা ভেবে দেখুন।
রাজনীতিতে সহনশীলতা যদি না থাকে তাহলে শৃংখলা আসবে কোথা থেকে।আমাদের নেতা নেতৃদের কথা শুনলে মনে হয় হত দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসেছে যাদের কোন শিক্ষা নেই।আসলে এ ধরনের মানুষগুলো তো সৎ কোন আচরনের পরিবেশ দেখেনি।অধিকাংসই পড়ালেখা করেছে পিরিঙির দেশে।তাদের দেশেও যে সামাজিক রীতিনীতি আছে তাও যদি শিখে আসতো তাহলে অন্তত এ অবস্হা আমরা দেখতে পেতাম না।ক্ষমতার লোভ লালসা তাদের এতটা নিছে নামিয়ে দিয়েছে যে মানুষকে তারা মানুষ মনে করছে না।আর যারা ইসলামের কথা বলে তারাই বা কেন উছৃংখল হবে।ইসলামি লোকদের কাছ থেকে যদি অনৈসলামিক লোকরা শিখতে না পারে সে ইসলামের মুল্য কোথায়।আমাদের দেশে যে ইসলামের দলগুলো আছে তারা ইসলামের কোন নীতি থেকে বিভক্ত হয়েছে? কোরান ও ছহি হাদিছে কোথায় আছে এই বিভক্তির কথা? যে দেশে ইসলামের খেদমতের মানুষগুলো বিভক্ত সে দেশে ইসলাম কায়েম হবে কিভাবে? আর ইসলামিকে সমাজে রুপ দিতে হলে যে জ্গান ও প্রজ্গার প্রয়োজন তা ইসলামি দলগুলোতে বর্তমান নেই।তাহলে যেখানে মানুষ তৈরি হয় নি সেখানে ইসলাম কায়েম কি করে আশা করা যায়? ইসলাম কি আমাদের শিখায়নি কোন জালেম যদি তোমাদের নেতৃত্ব দেয় তার সাথে সংঘর্ষে গেলে জান মালের ক্ষতি হবে। আজ যে মানুষগুলো মারা গেল তার দায় দায়িত্ব কে নিবে।যে পরিবারগুলো তাদের সন্তান হারিয়েছে তার দায়িত্ব কার।অবশ্যই একদিন সবাইকে আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।যে কোন সরকার ক্ষমতায় আসুক তাদের দায়িত্ব দেশের মানুষের কল্যান করা।৯০% মুষলমানের দেশে ইসলামের উপর আঘাত আসুক বা কোন সংখ্যা লগুর উপর আঘাত আসুক সরকারের দায়িত্ব সাথে সাথে তার প্রতিকার করা।আমাদের সরকার এ ব্যাপারগুলোতে অবশ্যই প্রাথমিক ভাবে ব্যার্থ হয়েছে।মিছিল মিটিং করা একটা গনতান্ত্রিক অধিকার।এখানে বিরোধীদের খেয়াল রাখতে যেন ধ্বংসাত্মক কোন কিছু না ঘটে। আবার সরকারকেও তাদের এগুলোর বিরোধিতা করে হয়রানি যেন না করে সে খেয়াল রাখতে হবে।আমাদের দেশে এখন যে রেওয়াজ শুরু হয়েছে তাতে বুঝা যায় যে-ই ক্ষমতায় আসুক বিরোধীদের দমানো তাদের একটা পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে।আর একটি মজার ব্যাপার হলো প্রশাসন ও দলে ভিবক্ত হয়ে যে যার যার মত ফায়দা লুটছে।এই যে নির্বোধ জাতি তৈরি হয়েছে সে কারনে তাদের ব্যাবহার করে চলছে রাজনৈতিক দল গুলো।যদি দলীয় প্রবনতা না থাকতো তাহলে সামাজিক এই অসংগতি আমরা কমই দেখতে পেতাম না।
আমি অনেক জ্গানীদের দেখেছি কোন দলের ধার ধারে না।কারন তারা কারো কাছ থেকে ফায়দা নেয়ার চিন্তাকরে না।আমরা যদি অধিকাংশ মানুষ দলকে ত্যাগ করি তাহলে একটা সাধারন শক্তি দাঁড়াবে যারা ন্যায়ের কথা বলবে।আর যে সরকারই আসুক তখন তাদের কথা শুনতে বাধ্য হবে।হিটলারের মত মানুষ না আসলেও হিটলারের প্রেতাত্বারা যুগ যুগ ধরে সমাজকে ক্ষত বিক্ষত করার জন্য আসবে তবে আমাদের সচেতন থাকতে হবে।ভালবাসা মানুষকে জয়ি করে।আর হিংসা বিদ্বেষ মানুষকে ধ্বংস করে।আমাদের মধ্যে ভালবাসার বিজ বপনে কাউকে না কাউকে এগিয়ে আসতে হবে।শান্তি আপনিই চলে আসে না, তার জন্য কাজ করতে হয়।আর এ কাজ করতে হবে আমাদের সবাইকে একসাথে তাহলেই আমরা সফলতা দেখতে পাব।
বিষয়: বিবিধ
১৩৩৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন