শোকাহত অনেক জাতি অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্তমানে উন্নতির শিখরে উঠে এসেছে-তাহলে আমরা কি অশিক্ষিতই রয়ে যাব?

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০৪ মে, ২০১৩, ০১:২৬:১৮ দুপুর

আমাদের একটার পর একটা ধস, দু:খ বেদনা আসছে আবার কয়েকদিন পর ভুলে যাছ্ছি।অতীতকে স্মরন করে ভবিষ্যৎকে উজ্জ্বল করার বাসনা কখনো যাগে নি।যাদের এগিয়ে আসার কথা তারা হানাহানিতে বিভোর।সাভার ট্রাজেডির পরও মানুষের জীবনের নিরাপত্বা নিয়ে কেউ ভাবছে বলে মনে হছ্ছে না।প্রধান দুই দল তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন ও ক্ষমতায়নের জন্যই এগিয়ে যাছ্ছে।মে দিবস চলে গেল।তার তাৎপর্য বাস্তবায়ন কি একদিন মিছিল মিটিং করে শেষ হয়ে যাওয়া? ১৮৮৬ সালে যে মর্মান্তিক ঘটনা শ্রমিকদের নিয়ে ঘটেছিল তার বাস্তবায়নে এখনো কেউ এগিয়ে আসেনি।তাদের জীবনের নিরাপত্বা দেয়ার জন্য কাজ করেনি কোন সরকার।এমনকি ট্রেড ইউনিয়ন গুলোর নেতারাও নিজেদের সুবিধাভোগের কারনে সরকারের পকেটস্হ হতে দেখা যায়।একটার পর একটা ঘটনা আমাদের বলে দিছ্ছে শ্রমিকদের জীবনের এখন আর কোন নিশ্চয়তা নেই।

শোক আর দুঃখ মানুষকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করে এটাই স্বাভাবিক।কোন মানুষ যখন চরম দুরবস্হায় পতিত হয় সেখান থাকে তার উত্থান হয়।দ্বীতিয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমরা যাপানকে ঘুরে দাঁড়াতে দেখেছি।এর পিছনে তাদের ছিল দেশাত্ববোধ ও কাজের প্রতি একাগ্রতা।আপনি যদি ভ্রমনে যান দেখবেন দীর্ঘ পথ অতিক্রম করছেন অথচ তারা শান্ত,কোন অপ্রয়োজনীয় কথা নেই,বই পড়ছে বা নিজেকে নিয়ে ভাবছে।আর আমরা প্রতি মুহুর্তে কুকুরের মত ঘেউ ঘেউ করছি।কাজে ব্যাস্ত না থেকে অন্যকে বিড়ম্বনা দিছ্ছি। গত শতাব্দীর শুরুতে জাপান কোরিয়াকে যুদ্ধে বিধ্বস্ত করে যেভাবে নিগৃহীত ও অপমান করেছিল, সেখান থেকেই নাকি কোরিয়ার উত্থান। আমরা নিগৃহিত হয়েছি কিন্তু শিক্ষা নিতে পারিনি কারন আমাদের জাতীয় জিবনে দিক নির্দেশনার অভাব আর অভাব আমাদের জ্গানের।আমরা কি কখনো আমাদের ইছ্ছাকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি যে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াবো? আমাদের একটা জিনিসের অভাব নেই তা হলো কিভাবে পরকে ঠাকাবো, কিভাবে অন্যকে পরাস্ত করে নিজে সম্পদশালী হব।এ ভাবনা ব্যাক্তি ও জাতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে।এই যদি অবস্হা হয় তাহলে শ্রমিক তথা সাধারন মানুষ শোষনের যাঁতাকলে নিবদ্ধ হবে এতে কোন সন্দেহ নেই।ইসলামের ইতিহাসে দেখেছি আপামর মানুষ ছিল পুষ্ট আর শাসক শ্রেনী ছিল অভুক্ত।যখন শাসক শ্রেনী ফেঁফে ফুলে উঠে তখন প্রজা গন অপুষ্টিতে ভুগবে এটাই স্বাভাবিক।আজকের অবস্হা দেখে কি অনুমান হয় না, শাসকদের হাত বদল হছ্ছে মাত্র কিন্তু শোষিতরা শোষিতই হছ্ছে।

যে পোশাকশিল্পের সুবিধাবঞ্চিত খেটে খাওয়া মানুষের শ্রমলব্ধ উৎপাদন থেকে বৈদেশিক মুদ্রার সিংহভাগ অর্জিত হয়, তাঁদের জন্য আমরা নিরাপদ কাজের স্থান নিশ্চিত করতে পারিনি। একটি দুর্ঘটনায় শত শত মানুষ মারা যাওয়ার পরও পরবর্তী দুর্ঘটনা ঠেকানো যাচ্ছে না, বরং আরও বড় আকারে সংঘটিত হচ্ছে। সম্প্রতি সাভারের দুর্ঘটনায় সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ যেভাবে জীবন বাজি রেখে উদ্ধারকাজে শরিক হয়েছে, তা তাদের অদম্য ইচ্ছাশক্তিরই বহিঃপ্রকাশ। তারা আবার প্রমাণ করল ‘মানুষ মানুষের জন্য ।’তাদের এই নিঃস্বার্থ সেবার জন্য গোটা জাতি গর্ববোধ করতে পারে। অভিযোগ রয়েছে, সাভারে ধসে পড়া রানা প্লাজা অপরিকল্পিতভাবে ও বেআইনি জায়গায় বাড়তি লাভের আশায় মাত্রাতিরিক্ত উঁচু করা হয়েছিল। এটা সত্য, অধিকাংশ ক্ষেত্রে অধিক মুনাফার জন্য ত্রুটিযুক্ত কাঠামোর ওপর যে দালানকোঠা গড়ে উঠেছে, তাতে নিরাপত্তার বিষয়টি কখনোই গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। সে ক্ষেত্রে অনুরূপ মানবিক দুর্যোগ যেকোনো মুহূর্তে আসতে পারে। এর প্রতিকারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সময়ও এখনই।

যে পোশাকশিল্প নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে, তাকে এমন অবহেলা করা অমার্জনীয় অপরাধ। তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের নিরাপত্তাহীনতার কারণে পোশাক রপ্তানিতে জাতীয় জীবনে মহাদুর্যোগ নেমে পড়তে পারে এমনই আভাস পেয়েছি সিএনএন যখন প্রধান মন্ত্রির সাক্ষাৎকার নিয়েছিল।

দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য এবং দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি সীমিত রাখার জন্য আমাদের অনেক পদক্ষেপ নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে প্রতিটি ভবন বা কারখানার অবকাঠামো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য থাকার কথা। না থাকলে, দ্রুততম সময়ে স্থাপত্য নকশাসহ প্রয়োজনীয় তথ্য দ্রুত জোগাড় করতে হবে। শুধু তা-ই নয়, দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য ন্যূনতম সরঞ্জামাদি, বিশেষ করে জনবহুল প্রতিষ্ঠানে নিশ্চিত করতে হবে ।অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তুলনামূলকভাবে কম নিরাপদ স্থাপনাগুলোকে প্রকৌশলীদের দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ বাধ্যতামূলক করতে হবে। নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়া সমীচীন হবে না, কেননা সে ক্ষেত্রে দেশ ও জাতিসমূহ ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।কারখানায় যাতে আগুন না লাগে, সে জন্য যেমন সতর্কতা প্রয়োজন, ঠিক তেমনি নেভানোর জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি থাকতে হবে। আমাদের ফায়ার সার্ভিস বিভাগকে দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগাতে হবে। শুধু আগুন লাগার সময়েই নয়, আগুন প্রতিরোধে সারা দেশে পূর্বপ্রস্তুতিমূলক মহড়ার আয়োজন করা যেতে পারে। যেসব স্থাপনায় অনেক মানুষ একযোগে কাজ করে, তাদের জন্য মহড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আগুন নেভানোর যন্ত্রপাতির স্থান এবং তা কীভাবে দ্রুত ব্যবহার করা যায়, তা শেখানোর অনুশীলন নিয়মিত দরকার। ঘনবসতিপূর্ণ স্থান ও স্থাপনাগুলোর কাছে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ভবন ধসে যাওয়া, আগুন লাগাসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে কীভাবে নিরাপদ থাকা যায়, তার মহড়া বড় বড় প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক করা উচিত।এলাকায় এলাকায় দুর্ঘটনা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে কার্যকর করার জন্য সচেতন নাগরিকদের দিয়ে কমিটি করে অরক্ষিত স্থাপনাগুলো খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা যেতে পারে।

বিষয়: বিবিধ

১১৯৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File