শ্রমিকদের পাওনা যথাযথ আদায় ও পূনর্বাসন করার প্রতি কতৃপক্ষের কাছে আবেদন।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০১ মে, ২০১৩, ১২:৪১:৩৩ দুপুর
বর্তমান এই সভ্য জগতে ইতিহাসের বর্বরতম এই গনহত্মার সুষ্ঠু বিচার এখন দেশের সকল মানুষের।বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল সাভারের ধসে পড়া রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা এবং পাঁচ গার্মেন্ট মালিকের সকল স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির নির্দেশ দিয়েছ. ঢাকার ডিসি, এসপি ও জেলা রেজিস্ট্রারকে এ আদেশ কার্যকর করতে বলা হয়েছে। তাদের সম্পদ যাতে অন্য কোন নামে হস্তান্তর হতে না পারে সেজন্য দেশের সকল সাব-রেজিস্ট্রারের প্রতি সার্কুলার জারি করতে নিবন্ধন পরিদপ্তরের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ওই পাঁচ জনের ব্যাংক হিসাব থেকে কোন অর্থ অন্যত্র যেন স্থানান্তর না হয় সেজন্য সকল বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রতি সার্কুলার জারি করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তবে বিজিএমইএ’র তত্ত্বাবধানে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেয়ার জন্য অর্থ তোলা যাবে। আদালতের এ আদেশের বিষয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে আইজেআরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।এছাড়া সারা দেশে যেসব গার্মেন্ট কারখানা ঝুঁকিপূর্ণ তা অবিলম্বে বন্ধ করতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের প্রধান কারখানা পরিদর্শককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে শুনানিতে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে এক কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য প্রস্তাব করেছেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেছেন, ভবন মালিক ও গার্মেন্ট মালিকদের কাছ থেকে ছয় শ’ কোটি টাকা আদায় করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এর মধ্যে ভবন মালিক দেবে তিন শ’ কোটি টাকা ও গার্মেন্ট মালিকরা দেবে বাকি তিন শ’ কোটি টাকা।এটা তার ব্যাক্তিগত মত হলেও তিনি তিনি সে পরিবারগুলোর আকাংখ্যার কথাই বলেছেন।আমরা তার এই মতের প্রতি সাধুবাদ জানাই।যদিও টাকা দিয়ে মানুষের মুল্যায়ন হয় না তার পরও সে পরিবারগুলো বেঁচে থাকার প্রয়াস পাবে।সাথে সাথে ইতিপুর্বে যারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে সমস্ত মালিকদের পাকড়াও করে তাদের সম্পত্তি থেকেও ক্ষতিপুরন আদায় করার জন্য মাননীয় বিচারপতিদের বিনীতভাবে আহব্বান জানাছ্ছি।
সূরা নিসার ১০ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'নি:সন্দেহে যারা এতিমদের ধন সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করে তারা নিশ্চয়ই তাদের পেটে আগুন গিলে।আর তারা শিঘ্রই প্রবেশ করবে জ্বলন্ত আগুনে।' এই গরীব কারখানা শ্রমিকদের অধিকাংশই গরীব ও এতিম।তাদের প্রতি সুবিচার করা সরকার , মালিক তথা সমাজের সকলের অবশ্য কর্তব্য। আমরা ইতিপুর্বে দেখেছি এতিমদের সরকারি টিন পর্যন্ত খেয়ে ফেলেছে সরকারি দলের লোকজন।আমাদের দেশে প্রাকৃতিক দুর্যুগের পর বিভিন্ন সময়ে কোটি কোটি টাকা বিদেশ এসেছে কিন্তু সেই সমস্ত উপকূলীয় এলাকার উন্নয়ন হয় নি।অথচ ঐ টাকায় সে সমস্ত এলাকাকে চির উন্নত করা যেত।যারা এই খেয়ানত গুলো করেছে ও করবে তারা নিশ্চয়ই আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে।এরা তো এক ধরনের মানুষ তাদের পশুর সাথেই তুলনা করা যায় বরং পশুর চেয়েও অধম।সাভার ট্রাজেডিতে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কোম্পানিগুলোর কাছে তাদের কর্মচারিদের লিষ্ট রয়েছে আর বাকি যারা রেয়েছে তাদেরও প্রপার লিষ্ট তৈরি করে মালিকদের ও রানা প্লাজার মালিকের অর্থ থেকে হাইকোর্টের নির্দেশ মোতাবেক তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করতে হবে যাতে তাদের বাকি জীবন কারো দারস্হ হতে না হয়।যারা উদ্ধারকাজে জীবন বাজি রেখে মানুষকে উদ্ধার করেছে তাদের ও সহযুগিতা করার আবেদন করছি।ন্যায় বিচার প্রত্যেকেরই প্রাপ্য। আমাদের দেশে এখন বাংকগুলো বা স্বনামধন্য প্রাইভেট কোম্পানিগুলোও মানুষের টাকা ইনভেষ্ট করে এক কোটিতে মাসিক এক লাখ পন্চাশ থেকে দুই লাখ পর্যন্ত দিয়ে থাকে।যদি সরকারের পক্ষ থেকে এ দায়িত্বটি নিয়ে তাদের পুনর্বাসন করা হয় তাহলে তারা অনেক বেশি উপকৃত হবে।তা না হলে এ টাকা তাদের পরিবারে গেলেও তারা হয়রানির মধ্যে পড়বে।আমি মনে করি রাষ্ট্রই এখন তাদের অভিবাবক।আর যারা হতাহত হয়ে বেঁচে আছে তারা অনেকেই পূর্বের জীবনে ফিরে যেতে পারবেনা।
আদালতের আদেশে ক্ষতিগ্রস্তদের কাকে কি পরিমাণ ক্ষতিপুরণ দেয়া হবে তা গুরুত্ব বিবেচনা করে নির্ধারণ করার জন্য নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি, ঢাকা জেলার ডিসি, এসপি, বিজিএমইএ, ৫ গার্মেন্টের প্রতিনিধি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত, শ্রম মন্ত্রণালয়, বুয়েট-এর একজন করে প্রতিনিধি এবং মেডিসিন, মনোবিদ, অর্থনীতিবিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ কমিটিকে ক্ষতিগ্রস্তদের একটি তালিকাও জমা দিতে বলা হয়েছে। এ কমিটিকে আদেশ পাওয়ার পর এক মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এছাড়া জীবন রক্ষায় সরকার কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে তা সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই ঘটনায় রাজউক, বিজিএমইএ ও শিল্প কলকারখানা পরিদর্শকের নেয়া পদক্ষেপের কথা জানাতে বলা হয়েছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আওতায় কত ভবন আছে তার তালিকা পর্যায়ক্রমে আদালতে দাখিল করতে রাজউককে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। প্রথম পর্যায়ে গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির তালিকা দিতে বলা হয়েছে। দেশের সকল গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ভবন ব্যবহারযোগ্য কিনা, অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা আছে কিনা, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ আছে কিনা তার তালিকাসহ সে বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বিজিএমইএ’কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রানা প্লাজায় অবস্থিত ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যানেজার ভবন ধসের আগের দিন কি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তা লিখিতভাবে আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দুই সপ্তাহের মধ্যে এ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এসব আদেশের পাশাপাশি সাভার উপজেলা ইউএনও কবির হোসেনের বক্তব্য নিয়ে ‘ডেকে এনে শত শত প্রাণ হত্যা’- শিরোনামে ২৫শে এপ্রিল প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রথম আলোর সম্পাদক, প্রকাশক ও তিন প্রতিবেদককে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। গতকাল শুনানিতে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, রানা প্লাজায় ধসের ঘটনায় মূল অপরাধী ও গার্মেন্ট মালিকরা গ্রেপ্তার হয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে জনপ্রতি এক কোটি টাকা করে। এজন্য ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারকে ৬শ’ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য প্রস্তাব করছি। এই অর্থের অর্ধেক ভবন মালিক এবং বাকি অর্ধেক গার্মেন্ট মালিকদের কাছ থেকে আদায় করতে হবে। এজন্য সময় দরকার। এ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে তাদের সম্পত্তি বিক্রি করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দিতে পারেন আদালত। হাইকোর্ট বলেন, তাজরীনের ঘটনায় রুল দিয়েছি ছয় মাস আগে। এখনও রুলের জবাব পাইনি। জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, এটা দুঃখজনক।
মাননীয় আদালত যে কমিটির নির্দেশ দিয়েছেন আমরা আশা করি,কমিটি এর উপর চুলচেরা বিচার করে প্রতিবেদন তৈরি করবেন।জাতি যেন একটা স্বছ্ছ বিচার এই মুহুর্তে দেখতে পায় তার নিশ্চয়তা বিধান করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আবেদন পেশ করছি।যারা মৃত্যুবরন করেছে তাদের বিদেহি আত্মার শান্তি কামনা করছি আর যারা আহত হয়ে আছে তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।
বিষয়: বিবিধ
১২৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন