বাংলাদেশে ১৬ কোটি মানুষের বাস কি বিস্ময় সৃষ্টি করে না?
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৮ এপ্রিল, ২০১৩, ০২:০৩:৫৮ দুপুর
বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ।যদিও এর প্রাকৃতিক সম্পদ সীমিত তবুও এ দেশ পরিচালিত হচ্ছে ক্ষুদ্র মুক্ত অর্থনীতির কাঠামোয়। ১৬ কোটি মানুষের এই দেশের উন্নয়নযাত্রা তাই বিশ্বব্যাপী বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। তিন দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক উন্নয়ন বেশ ইতিবাচক হলেও রাজনৈতিক আস্হিরতার কারনে পিছিয়ে পড়ছে।বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি অর্জনের পিছনে কয়েকটি বিশেষ দিক চিহ্নিত করা যায়।বাংলাদেশের একটা সামাজিক পুঁজি গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন বেসরকারি উদ্যোগ, সৃজনশীল উদ্যোগ, ক্ষুদ্রঋণ ইত্যাদি ঘটছে।আমাদের প্রান্তিক জন গন বৈদেশিক রেমিটেন্সের মাধ্যমে অর্থনীতির চরম উৎকর্ষ সাধন করছে যাতে সরকারের কোন ব্যায় নেই। আর এসব উদ্যোগ সরকারের উদ্যোগের সঙ্গে মিল রেখে এগিয়ে যাচ্ছে, এগুলো সরকারি প্রচেষ্টার পরিপূরক।এটা বাংলাদেশের একটা বড় অর্জন ও শক্তি। বাংলাদেশের মানুষের সহনক্ষমতা অনেক বেশি। বন্যা-ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েও মানুষ পুরোপুরি ভেঙে পড়ে না। কোনো দুর্যোগেই কোনো খাত পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি।এ সময়ে দেশের সবচেয়ে বড় বিপর্যয় সাভার ট্রাজেডিতে ও আমরা দেখছি সাধারন মানুষ কত সহনশীল ও ধৈর্যের সাথে দুর্যোগ মোকাবিলা করছে অথচ সেখানে সরকারের মদদ থাকার কথা ছিল পুরোপুরি।এ সমস্ত মানুষগুলোকে যদি প্রশিক্ষিত করা যেত তাহলে তারা দেশের উন্নয়নে অনেক ভূমিকা রাখতো।আমাদের দেশে যাদের ট্রেনিং এ পাঠানো হয় আসলে বাস্তবে তারা কোন কাজ করেনা।তাদের অধিকাংশের এ ট্রেনিংগুলোকে প্রমোদভ্রমনই বলা যায়।আমার কতেক বন্ধুর বিদেশ ভ্রমন দেখে মাঝে মাঝে রসিকতা করে জিজ্গেস করতে বাধ্য হই।আসলে আমাদের বুরুক্রেসিতে পালা বদল হয়।যখন যে সরকার আসে তারা সেভাবে সুবিধা ভোগ করে।কাজের ক্ষেত্রে যারা কাজ করার তারা তাদের ভূমিকা রেখে যাছ্ছে।শিল্পের দিক থেকে তৈরি পোষাক শিল্প আমাদের যুগান্তকারি পরিবর্তন এনে দিয়েছে।কিন্তু কিছু সংখ্যক ক্রিমিনাল ও অতিমুনাফালোভীদের কারনে আন্তর্জাতিক বাজারে এই শিল্পটির ধস নেমে আসছে।এর কারন হিসেবে বলা যায়,এই শিল্পপতিদের অনেকে সরকারের অংস।সরকারের ছত্র ছায়ায় থাকার কারনে গুরুতর অন্যায় করলেও তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায় না।যে কোন সরকার যদি দেশের উন্নয়ন চায় তাহলে এদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দিলে বাকী যারা আছে তারা সরল রাস্তায় চলে আসতো।সরকারের জবাবদীহিতা না থাকার কারনে এ শ্রেনী দিন দিন অপরাধ করেই চলছে।তার পরও প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যাপক দুর্নীতিসহ নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বাংলাদেশে যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটছে তাতে অনেকেটাই বিস্ময় প্রকাশ করে।
উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় একটা বড় ভূমিকা রাখছেন আমাদের প্রান্তিক কৃষকেরা।সরকার কৃষিতে যতটা সহযোগিতা করেছে তা অত্যন্ত অপ্রতুল।গ্রামীন কৃষকদের সাথে কথা বলে বুঝা যায় তাদের অধিকাংসই নিজেদের উদ্যোগে উৎপাদনকে এগিয়ে নিয়ে যাছ্ছে।আমাদের কৃষিবিভাগ যদি সরাসরি তাদের সহযোগিতা করতো তাহলে যে পরিমান জমি এখনো অনাবাদি রয়েছে ও বৈজ্গানিক পদ্ধতি যদি অবলম্বন করা যেত তাহলে জনসংখ্যা এর ডাবল হলেও আমাদের খাদ্যে কমতি হবে না। সব চেয়ে বড় কথা হলো কৃষকদের নিজস্ব চেষ্টা ও জীবনের তাগিদে উৎপাদন বজায় রাখছে। ১৬ কোটি মানুষের জন্য খাদ্য উৎপাদন করা একটা সহজ ব্যাপার নয়।আমরা যারা কিছুটা পর্যবেক্ষন করছি এই অর্জনের মূল কৃতিত্ব কৃষকদের।বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় উৎপাদন বেড়েছে। তৈরি পোশাকশিল্পে লাখ লাখ নারী শ্রমিক কাজ করছেন। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলো যার যার জায়গায় সর্বোচ্চ সামর্থ্য উজাড় করে ক্রিয়াশীল রয়েছে। সৃজনশীল উদ্যোক্তা শ্রেণী গড়ে উঠছে।প্রবাসী কর্মজীবীরা দেশে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাঠাচ্ছেন, এটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশে লাখ লাখ মানুষ কাজ করতে যাওয়ার ফলে দেশের ভেতরে কর্মসংস্থানের ওপর চাপ কমছে। তাঁদের পরিবারগুলোর জীবনযাপনের মান বাড়ছে এবং ইতিমধ্যে সেটা একটা মানে উন্নীত হয়েছে। এটা বলা যায় সরকারের ওপর নির্ভরশীল না থেকেই সাধারণ মানুষের ব্যক্তি পর্যায়ের সৃজনশীল অর্থনৈতিক উদ্যোগে কাজগুলো চালিয়ে নিয়ে যাছ্ছে।
আমাদের সবচেয়ে বড় বাধা হলো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না পাওয়া।লক্ষ লক্ষ উদ্যোক্তা রয়েছে রাজনৈতিক অস্হিতিশীলতার কারনে ও সামজিক দুষ্টচক্রের প্রতিবন্ধকতার কারনে শিল্প গড়ে তুলতে পারছে না।সরকার যদি সহযোগিতা না করে ও আইনের শাসন বলবৎ না করে তাহলে আমাদের যে গতিতে এগুনোর কথা তা এগুবেনা।আমরা উত্তরণ-পর্যায়ে আছি, তবে জোরেশোরে উপরে উঠতে পারছি না। দ্রুত ছুটে চলার জন্য যে ক্ষেত্র প্রয়োজন তা অপ্রতুল থাকায় চলা সম্ভব হছ্ছে না।আমাদের সরকার যতই বলছে ২০২১ সালের মধ্যে আমরা মধ্য আয়ের দেশে পৌঁছে যাব সে আশা অত্যন্ত ক্ষীন। আমাদের এগিয়ে যাওয়ার গতিটা বার বার কিছুটা হলেও যেন থমকে যাছ্ছে।যদি এভাবে চলতে থাকে মধ্য আ্য়ের দেশে পৌঁছতে ২০৩০ সাল পেরিয়ে যেতে পারে।আমরা দেখছি সাম্প্রতিক সময়ে এসে অর্থনীতির বিষয়গুলো অনেক পেছনে পড়ে গেছে।ব্যাংক সহ অর্থনৈতিক অনেক প্রতিষ্ঠান ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছে। রাজনৈতিক দ্বন্দ অর্থনৈতিক কাঠামোকে ভংগুর করে দিছ্ছে। সুশাসন ও গণতন্ত্র নিয়ে যত গুরুত্ব দিয়ে ও যেভাবে কথাবার্তা হচ্ছে, অর্থনীতির ক্ষেত্রগুলো নিয়ে সে রকম হচ্ছে না। রাজনীতি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ এবং রাজনীতির অবস্থা ঠিক না থাকলে অর্থনীতিসহ অন্যগুলোও ঠিকমতো চলবে না। কিন্তু নীতিনির্ধারকেরা রাজনীতির দিকে বেশি নজর দিচ্ছেন ক্ষমতার জন্য। তাই সুশাসনের কথা যতই বলা হোক, কার্যত স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আসছে না। গণতন্ত্রের কথা বলা হলেও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল সাধারণ মানুষের কাছে ঠিকমতো পৌঁছাচ্ছে না।
একসময় দেশের মানুষ অনাহারে অর্ধাহারে জীবন অতিবাহিত করতো।এখন সেটা তেমন নেই।মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে কিন্তু ছিন্নমূল শ্রেনীর সংখ্যা বাড়ছে বই কমছেনা।শিক্ষার পরিবেশ এসেছে।এখন সমাজের নিম্ন মধ্যবিত্বের মধ্যেও প্রতিযোগিতা এসেছে কিভাবে তাদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানো যায়।তবে স্বাস্হসেবার দিকটি এখনো উন্নত হয়নি।স্বাস্হকমপ্লে্ক্স থাকলেও সেখানে ইকুইপমেন্ট ও ডাক্তার নেই।আমাদের দেশে গ্রামীন উন্নয়ন পরিকল্পনা না থাকায় বিশেষজ্গ গন শহরে অবস্হান করেন।সুফল যে একেবারেই পৌঁছাচ্ছে না, তা নয়। তবে তা একেবারেই ন্যায়সংগতভাবে পৌঁছাচ্ছে না। এ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির সুফলটা নিয়েছে প্রধানত ধনিক শ্রেণী ও উদ্যোক্তা গোষ্ঠী। সংখ্যায় কম হলেও তারাই বেশির ভাগ অর্থ-সম্পদের মালিক ও নিয়ন্ত্রক। আর জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগ অংশ যে মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষ, তারা পিছিয়ে আছে অনেক, এটাকে দৃষ্টিকটুই বলা যায়। একদিকে বাড়ছে আঞ্চলিক বৈষম্য, অন্যদিকে বাড়ছে ব্যক্তি পর্যায়ের বৈষম্য। আয়-উপার্জনে বড় ধরনের অসমতা তৈরি হয়েছে এবং তা ক্রমেই আরও বাড়ছে। বলা হয়, পাকিস্তান আমলের সেই ২২ পরিবার এখন কয়েক হাজার পরিবার হয়েছে। এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক ও নেতিবাচক। ঢাকা শহরে ধানমন্ডি,গুলশান, বনানী, বারিধারায় বসবাসকারী কিছু পরিবারের কয়েকটি করে দামি গাড়ি আছে। আর এই শহরেই হাজার হাজার কর্মজীবী মানুষ কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য প্রতিদিন রাস্তার ধারে কি যাতনা সহ্য করছে বাসে চড়ার জন্য। সামাজিক বৈষম্যের কারনে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ ধরনের উন্নয়ন কখনো সমাজেকে মজবুত ও টেকসই করবে না। বরং বৈষম্য বাড়তে থাকলে সামাজিক অসন্তোষ ও অস্থিরতা বাড়বে।
আমাদের বৈষম্য বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ সুশাসনের ঘাটতি। সুশাসনের ঘাটতির জন্য বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার ব্যর্থতা বহুলাংশে দায়ী। আমরা এ জন্য দায়ী করি শুধু সরকারকে, কিন্তু অন্যান্য সংস্থা ও ব্যক্তিরাও এজন্য দায়ী। সরকার সার্বিক নীতি প্রণয়ন করবে, নীতির বাস্তবায়ন দেখবে। আর নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো তাদের নিজস্ব আইনি ক্ষমতার আওতায় কাজ করবে। বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বাংলাদেশ টেলিকম রেগুলেটরি কমিশন, বিনিয়োগ বোর্ড ইত্যাদি রাষ্ট্রীয় সংস্থার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য কাজ করার কথা। কিন্তু দক্ষতা ও স্বচ্ছতার অভাবে এবং রাজনৈতিক-আমলাতান্ত্রিক হস্তক্ষেপে তারা তাদের কাজ ঠিকমতো করতে পারছে না। হল-মার্ক কেলেঙ্কারির জন্য দায়ী তো মূলত সুশাসনের প্রকট ঘাটতি। ঋণের নামে সোনালী ব্যাংক থেকে অর্থ নিয়ে আত্মসাতের পর বিষয়টিতে অর্থ মন্ত্রণালয় দৃশ্যমান দ্রুত পদক্ষেপ নেয়নি। বিষয়টির দিকে নজর রাখার মূল দায়িত্ব ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের। এটা দুই বছর আগে ধরা পড়লেও বাংলাদেশ ব্যাংক সময়োচিত ও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সুশাসনের চরম ব্যর্থতার এটি একটি দৃষ্টান্ত।
পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের অর্থায়ন নিয়ে যে পরিস্থিতি হয়েছে, সেটা আরেকটা দৃষ্টান্ত। পদ্মা সেতু অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, বাস্তবায়নযোগ্য ও লাভজনক প্রকল্প। নির্মাণের ক্ষেত্রে কারিগরিভাবে কোনো বাধা নেই। অথচ অর্থায়নের জায়গায় এসে অস্বচ্ছতা-অনিয়ম করে গোল বাধানো হলো। এখন বলা হচ্ছে, নিজস্ব অর্থায়নে করা হবে। এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক চিন্তা। এটি করতে গিয়ে আমাদের সামাজিক খাতে ব্যয়-বরাদ্দ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।বৈষম্য বেড়ে চলার অন্যতম বড় কারণ হলো দুর্বল স্থানীয় সরকার। বাংলাদেশের কোনো সরকারই স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে চায়নি, চায় না। বরং কেন্দ্রীয়ভাবে ওপর থেকে আমলারা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন। উন্নয়নের স্থানীয় চাহিদা ও প্রয়োজন যাচাই করা হয় না, সেটার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয় না। ফলে দূরদূরান্তের হাজার হাজার গ্রামের লাখ লাখ মানুষের সমস্যা ও প্রয়োজন অনুসারে উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় না। মুষ্টিমেয় কিছু লোক রাজধানীতে বসে বিশেষ কিছু এলাকার জন্য কর্মসূচি নেয়। অথচ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী করে স্থানীয় মানুষের চাহিদা অনুসারে পদক্ষেপ নিলে উন্নয়নের সুফল তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছানো সহজ হতো, সম্পদের অপচয়ও কম হতো, বৈষম্যও এভাবে বাড়তে পারত না।এ অবস্হার উন্নয়নে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থনৈতিক বিষয়ে একমত হতে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে ঠিকমতো কাজ করতে দেওয়া, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখা, ব্যবসা-বাণিজ্যের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য অর্থনৈতিক কর্মসূচিগুলো নিয়ে তাদের একমত হওয়া প্রয়োজন। বিপুল জনগোষ্ঠীকে মানবসম্পদ বিবেচনা করে দক্ষতা অর্জনের ওপর জোর দিতে হবে। এ জন্য শিক্ষার গুণগত মানের দিকে নজর দেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। শিক্ষার সঙ্গে কার্যক্ষেত্রে প্রায়োগিক দক্ষতার সমন্বয় ঘটাতে হবে। দেশজ সঞ্চয় ও বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বিনিয়োগের হার এখন ২৩-২৪ শতাংশ। এটি ৩০-৩২ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। বিনিয়োগ বাড়াতে হলে সঞ্চয় বাড়াতে হবে, এ জন্য বাড়াতে হবে মানুষের আয়ক্ষমতা। এটা বাড়বে কর্মসংস্থান তৈরির মাধ্যমে।
বিনিয়োগের কথা বলতে গেলে অবশ্যই বিদেশি বিনিয়োগের কথাও বলতে হয়। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো না থাকলে বিদেশিরা বিনিয়োগ করতে আসবে না। আবার এগুলো ভালো হলেও যদি নীতির নিরবচ্ছিন্নতা বা ধারাবাহিকতা না থাকে, তাহলেও বিদেশি বিনিয়োগ তেমন আসবে না। কেউ তো দুই-তিন বছরের জন্য বিনিয়োগ করে না। সর্বোপরি আর্থিক খাতে যে অনিয়ম-দুর্নীতি প্রকট হচ্ছে, সেটাও ভুল বার্তা দিচ্ছে।আমাদের অর্থনীতি যেভাবে এগোচ্ছে, তা আরও দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে হরতালসহ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে। আমাদের অর্থনীতি আরও বেগবান হওয়ার পেছনের প্রধান কারণগুলো হচ্ছে সুশাসন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহির অভাব, দুর্নীতি এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর ব্যর্থতা। এসব কারণে আমাদের উন্নয়নের গতি মন্থর। এখন এই হরতাল ইত্যাদির কারণে গতিটা আরও মন্থর হয়ে যাচ্ছে। এতে পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা ভয় পাচ্ছে, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসবে না, যারা এসেছে তারা চলে যাচ্ছে, আমরা বিদেশে আমাদের বাজার হারাচ্ছি। আমাদের স্থায়ী অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো তীব্রতর হয়ে উঠছে হরতালসহ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে। কারণ, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য যে শান্তিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা প্রয়োজন, এসবের ফলে তা ভীষণভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে, দেশের বাইরে আমাদের সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা চলে যাচ্ছে।অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সুশাসন অত্যন্ত প্রয়োজন। আবার উন্নয়ন ঘটলেই শুধু চলবে না, উন্নয়নের সুফল জনগোষ্ঠীর সব অংশের মধ্যে সুষমভাবে বা যুক্তিসংগত ন্যায্যতার সঙ্গে বিতরণের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। এটাই গণতন্ত্রের মূল কথা। গণতান্ত্রিক কাঠামো অবশ্যই দরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন পর্যন্ত সর্বক্ষেত্রে। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা গণতন্ত্রকে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি শুধু ভোট দেওয়া আর একটা সংসদ গঠনের মধ্যে। গণতন্ত্রের মূল্যবোধ ও অনুশীলন আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। সে কারণেই মনে হচ্ছে গণতন্ত্র বুঝি উন্নয়নের অন্তরায়। আসলে উল্টোটা, উন্নয়নের জন্য গণতান্ত্রিক কাঠামো, মূল্যবোধ ও অনুশীলন অপরিহার্য।
অপরিহার্য।
বিষয়: বিবিধ
১৫৪১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন