তোমরা ভয় করোনা, ভীত হবে না কারন গরীব ধনীদের ৫০০ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৭ এপ্রিল, ২০১৩, ০৬:৩৯:৪৯ সন্ধ্যা

মৃতের সংখ্যা তিন/চার বা পাঁচ শ যাই হোক আর সংখ্যা নিয়ে কথা বলে কোন লাভ নেই।প্রশ্ন হলো ঘুরে ফিরে গরীবরাই তো মরছে? যাদের হাতে দেশের চাকা ঘুরে তাদের কেন নিরাপত্তা নেই? এ কোন হায়েনার দল যারা বারে বারে মৃত্যু পুরিতে পরিনত করে? পালিয়ে বেড়াবে কত দিন? সূরা বাক্কারার ১৫৪-১৫৬ আল্লাহ বলেন,'আর যারা আল্লাহর পথে মৃত্যুবরন করে তাদের মৃত বলো না,বরং জীবন্ত যদিও তোমরা বুঝতে পারনা।আর আমরা নিশ্চয়ই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়,ক্ষুধা,মালাসবাবপত্রের,লোকজনের ও ফল ফসলের লোকসান দিয়ে আর সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের।যারা তাদের জন্য বিপদ ঘটলে বলে,নিসন্দেহে আমরা আল্লাহর জন্য আর আমরা তার কাছে প্রত্যাবর্তনকারি।মৃত্যু আমাদের প্রত্যেকের জন্য অত্যাবশ্যক।তবে অকালে যে মৃত্যুগুলো আসে বা যে জীবন গুলো ঝরে যায় তার জন্য দু:খ্য থেকে যায়।এই যে হাজার হাজার লোকের মৃত্যু ফাঁদ তৈরি হয়েছিল তার জন্য তো একজন দায়ি নয়।ইতিহাসে এরা সবাই ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।মাত্র কয়েকমাস হলো তাজরীনের দুর্ঘটনা আমাদের কাঁদিয়ে গেল।পুড়ে ছাঁই হলো যারা তারা খেটে খাওয়া মানুষ।স্পেকট্রামেও তা-ই হয়েছিল।কোন বিচার হলো না।মাসেক আগে আমার একটি লিখায় লিখেছিলাম।আমি ছুটিতে গিয়ে এক সকাল ও বিকেল গার্মেন্টস শ্রমিক,আমার গরীব ভাই বোনদের সারিবাধা উছ্ছল চলার চন্দ দেখে আমার পরিবারকে বলেছিলাম,যে দেশে এ রকম সম্পদ আছে সে দেশ গরীব থাকে কি করে? যাদের জীবন তুষ্ট মাত্র ৬০/৭০ ডলারে।আর তাদের এ হাসি দেখে মনে হয় জোৎনা আকাশের তারার আলোক। তাদের কষ্ট বিজড়িত উৎপাদন আমাদের দেশের চাকাকে সন্চালিত করে অথচ তারা অবহেলিত ও নিষ্পেষিত।শোষকশ্রেনি তাদের উপর চাবুক চালিয়ে টাকা অর্জন করে বেগমগন্জে বিলাস যাপন করে।তাদের একজনের উপর কি পড়েছে কোন বিল্ডিং ধ্বসে? তবে তাদের অপেক্ষা করতে হবে।পালাবার কোন পথ নেই।কুরআন বলেছে,যদি বিশাল মজবুত অট্রালিকার ভিতরও থাকে মৃত্যু বের করে নিয়ে আসবে।

রাষ্ট্রের ভূমিকা আমরা কখনো দেখিনি তাদের উপর হাতছানি দিয়েছে।শহরের আনাছে কানাছে ,বস্তিতে ,ফুটপাতে তাদের জীবন যন্ত্রনা শাসকশ্রেনীর চোখে পড়ে না।শীতের রাতে যখন ধনীরা ঘরের গ্লাস বন্ধ করে কম্বলের উপর কম্বল চড়িয়ে নিদ্রারত তখন তারা কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে বসে থাকে গাছের ছায়ায় বা কোন ইমারতের আশে পাশে।দুর্ঘটনায় যারা মরে যায় তারা বেঁচে যায় জীবন যন্ত্রনা থেকে।আর যারা বেঁচে থাকে তারা বাঁচে শত গলগ্রহ সহ্য করে।সমাজে যাদের হৃদয় আছে তারা কাতরায় কিন্তু তাদের করার কিছুই নেই।তারাও একরকম অক্ষম।এ কোন সভ্যতা? আমি তো আমাকে সভ্য মনে করতে পারছিনা।এদের শাস্তির জন্য ফরিয়াদ করি যাদের কাছে তারা তো ঘুমের ঘোরে।তাদের জাগানোর শক্তি কারো নাই আল্লাহ ছাড়া।লাশের লাথি দেখে মনে হয়েছে বিজিএমইএ এর বিশাল বিল্ডিং সহ পুরো দেশকে অভিমানে দেখিয়ে দিয়েছে ,আমরা তোমাদের ঘৃনা করি।কেন গরীব বলে তাদেরই মারা হয়? তারাই তো তোমাদের বলরুমের নৃত্যের পয়সা যোগায়।তাদের জীবনকে পুষ্ট করলে তো তোমরাই লাভবান হও।মনে রেখ তারা জাগছে।তোমাদের শায়েস্তা করে ছাড়তে দেরি নেই।এখনো সময় আছে তাদের দিকে ফির।লাভের একটা বিশেষ অংশ দিয়ে তাদের পরিচর্যা কর।তাদের পরিচয় না থাকলেও যুগ যুগ ধরে লিখে রাখবে তাদের নাম।তোমরা হতে পার প্রভাবশালী,হতে পার বিশাল নেতা তাতে তাদের কিছু যায় আসে না।তারা খেটে খাওয়া মানুষ।একদিন তোমাদের অবস্হান দেখে তারাও হাসবে।সূরা আত তাতফিক (প্রতারনা করা) এর ৩৪ -৩৬ আয়াতে আল্লাহ বলেন,'কাজেই আজকের দিনে যারা ঈমান এনেছিল তারা অবিশ্বাসিদের দেখে হাসাহাসি করবে।উঁচু আসনে চেয়ে চেয়ে দেখবে।অবিশ্বাসীদের কি সেই প্রতিফলই দেয়া হলো না যা তারা করতো?

এই ব্যাবসার মালিকগুলো কারো জামাতা , কারো বন্ধু , কারো আত্মীয়।এরা প্রশাসনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।তাদের অর্জিত টাকা বন্টন হয় সমাজের স্তরে স্তরে।সেজন্য তাদের ধরার কেউ নেই।ধরা পড়ে যাদের কোন শক্ত হাত থাকে না।এরা প্রশাসনকে খুশি করে শ্রমিকের রক্তচোষা মুনাফার ভাগ দিয়ে।ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের জন্য চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা রাখে নানাভাবে।তাই তাদের বিচার করার কোন মানুষ নেই।কথায় আছে লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু।ইতিমধ্যে পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে কিভাবে ২৭/২৮ বছর বয়স্ক একজন যুবক কোটি কোটি টাকা অর্জন করছে।যে ঘটনাটি ঘটে তা থেকে একজনের কথা জানা যায়।এদেশে লক্ষ কোটিপতি জন্মেছে যাদের কিছুদিন আগেও দেখেছি এখানে সেখানে যাওয়ার ভাড়া জুটতোনা।হৃদয় স্পর্শি ঘটনা দেখে শিউরে উঠি।কংক্রিট, রড, মেশিন কিংবা বয়লারের পাইপের ভারে থেঁতলে থাকা মানুষের কান্না।কেউ বা দাঁড়িয়ে আছে পিলার ধরে যেন জীবন্ত আসলে মৃত।কোন কোন তরুনীর হাত পা দেখা যাছ্ছে।বাকি অংশ চাপা পড়ে আছে কংক্রিটের দেয়ালে।ভাবলে অবাক হয়ে যাই,যে মানুষগুলো ৫০/৬০ ঘন্টা অন্ধকার মৃত্যুপুরিতে নিজের প্রস্রাব খেয়ে,একই যায়গায় পায়খানা করে বেঁচে আছে,হাত, পা, চোখ আর অনেকটা হূদয় হারিয়ে, স্বজন বা সহকর্মীর সারি সারি লাশের ভার বহন করে, বিকট পতন, আর্তনাদ আর ভয়াল স্মৃতির আতঙ্ক নিয়ে, কেমন করে বেঁচে থাকবেন তাঁরা? এই ভয়াল অবস্হায়ও অনেকে কথায় সংযত হতে পারেনি।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রিকে নিয়ে অনেকে কথা বলেছেন।আমার বলার কিছুই নেই।তবে বৃহত্তর কুমিল্লার একজন হিসেবে আমি তার কথায় লজ্জাবোধ করি।

আমরা কি জাতি হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে এভাবেই আমাদের স্বাক্ষর রাখবো? আমাদের প্রশাসন ও আমলাদের অনেককেই বলতে শুনেছি ছয় মাসের মধ্যেই দেশ সুন্দর হয়ে যাবে যদি আমরা স্ব স্ব যায়গায় নীরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে পারি।বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন আইন যথাযথ মেনে যদি এ বিল্ডিংটি তৈরি হতো তাহলে তো এ দুর্ঘটনা ঘটতো না।একটি ইমারত তৈরির সাথে যারা যারা সংশ্লিষ্ট তাদের প্রত্যেকের যদি দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি হয় তাহলে অন্যায় কমার সম্ভাবনা আছে।যা হারায় তা পাওয়া যায় না।যারা বেঁচে আছে তাদের জীবনের সব রকম নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ত এখন সরকারের।রাজউকের মতে ঢাকা শহরে যদি মাঝারি আকারের ভূমিকম্প হয় তাহলে পুরনো ও নিয়ম না মানা ইমারতগুলোও ধ্বংস হবে।একটি ইমারত পড়ে যাওয়ায় সরকারি যে পদক্ষেপ আমরা দেখছি তাতে আমাদের মনে হয় কোন ভূমিকম্প হলে পুরো ঢাকা শহর মৃত্যুপুরিতে পরিনত হবে।আমরা আশা করবো সরকার আর দেরি না করে পর্যাপ্ত ব্যাবস্হা রাখবে।মন্ত্রি আমলাদের প্রশিক্ষনে না পাঠিয়ে টেকনিকেল এ্ক্সপার্টদের পাঠানো এবং তাদের দিয়ে গন বাহিনীকে প্রশিক্ষনের ব্যাবস্হা করলে অতি দ্রুত মানুষকে বাঁচানো সম্ভব হবে।সাভার ট্রাজেডিতে জন গন যে শাহসিকতা ও কঠোর পরিশ্রম করে,নিজের মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে মানুষকে রক্ষা করেছে তা অতুলনীয়।আমাদের প্রশাসন ও আমরা যেন তাদের ভবিষ্যত উন্নয়নে ভুলে না যাই।তারাই আমাদের চালিকা শক্তি।তাদের বাদ দিয়ে আমাদের কোন মুল্য নেই।আর রানা প্লাজার মালিক রানা সহ সকল দুষ্কৃতিকারিদের এবং ইতিপুর্বে যারা এ রকম কাজগুলো ঘটিয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি হলেই যারা মৃত্যুবরন করেছে তাদের আত্মা শান্তি পাবে।যারা মৃত্যুবরন করেছে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি আর যারা বেঁচে আছে তাদের ঈমানের সাথে যেন আল্লাহ বাঁচার তাওফিক দান করেন।

বিষয়: বিবিধ

১৪৪১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File