সাভার ট্রাজিডিতে হেফাজতের 'নারি অধিকারের' প্রতিছ্ছবি ফুটে উঠেছে।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৫ এপ্রিল, ২০১৩, ০২:৪১:২১ দুপুর
সাভার ট্রাজিডিতে নয়তলা ভবনটি ধসে পড়ে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ১৭৮ এ দাঁড়িয়েছে।যতই সময় যাছ্ছে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে।আহত হয়েছে দেড় হাজারেরও বেশি।ধ্বংসস্তুপের মধ্যে আটকা আটকা পড়ে আছে বহু নর নারি যার কোন হিসেব নেই।রক্ত দান করছে দেশব্যাপি মানুষ।আহতদের পাশে সাহায্য সহযোগিতায় হাত বাড়িয়েছে হাজার হাজার মানুষ।অবিরাম উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাছ্ছে।অনেকে নিজে জীবন বাজি রেখে ধ্বংসস্তুপে ঢুকে বের করে আনছে লাশ ও আহতদের।মাননীয় প্রধানমন্ত্রি সুচিকিৎসার জন্য বলেছেন।প্রয়োজনীয় রক্ত দিতে হেফাজতের নির্দেশে ছুটে এসেছে মাদ্রাসার হাজার হাজার তরুন তথা আপামর জন গন।নিহতদের মাগফিরাত ও আহতদের সুস্হতার জন্য সারা দেশে মসজিদ মাদ্রাসায় দোয়া করা হছ্ছে।
এ দেশে এর আগেও আমরা ট্রাজিডির পর ট্রাজিডি দেখেছি।এর পিছনে যারা দায়ি তাদের বিচার হয় নি।সাভারের ঘটনাটি সবার সামনে ওপেন সিক্রেট।হাজার হাজার নারি পুরুষ কর্মিদের ইছ্ছে করে মৃত্যুর দিকে যারা ঠেলে দিয়েছে তাদের জরুরি বিচারের আওতায় এনে জাতির সামনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্হা করার মাধ্যমে তাদের আত্মার শান্তি নীহিত।পাশা পাশি নীহিতদের ক্ষতিপূরন,আহতদের উন্নত চিকিৎসা ও পঙুদের চিকিৎসা ও ভাতা দেয়ার দায়িত্ব এখন সরকারকে নীতে হবে।দেশের সর্বস্তরের মানুষ যেন এ গরিব পরিবার ও ভিকটিনদের পাশে আসেন তার জন্য আমি ব্যাক্তিগতভাবে আবেদন জানাছ্ছি।তাদের এখন রক্তের প্রয়োজন,খাবারের প্রয়োজন,পানির প্রয়োজন,পোষাকের প্রয়োজন,প্রয়োজনীয় আরো যা যা দরকার তা সরবরাহ করা আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে।হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবিতে কর্মজীবি নারির জীবন ও কর্মস্হলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে বলা হয়েছে,তাদের নিরাপদ পরিবেশে শিক্ষা ,স্বাস্হ ,কর্মস্হল ,সম্মানজনক জীবিকা এবং কর্মজীবি নারিদের আবাসিক ও ন্যার্য পারিশ্রমিকের ব্যাবস্হা করতে হবে।নারিদের এ ব্যাবস্হা গুলো নিশ্চিত না হওয়ার কারনে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটে যছ্ছে।আর কিছু নারিবাদি সংগঠন আন্দোলনের নামে তাদের ফায়দা লুটছে যা থেকে বন্চিত হছ্ছে এ সাধারন খেটে খাওয়া নারিগন।সরকারি ছত্র ছায়ায় থকে এক ধরনের ইসলাম ও নারিনীতি বিরোধীরা নারিদের তাদের ঢাল হিসেবে ব্যাবহার করছে।আমাদের নারিদেরকে তাদের জীবন চলার পথে ইসলামের অনুশাসন ও ইসলামকে জানার ও বোঝার আমন্ত্রন জানাছ্ছি। ইসলামই একমাত্র ধর্ম যা নারিকে তাদের মর্যাদার শিখরে দাঁড় করিয়েছে।
মহানবী (সা.) সম্পর্কে ইন্টারনেটে কিছু ব্যক্তির আপত্তিকর লেখালেখি সর্বস্তরের মানুষকে ক্ষুব্ধ করেছে। কেবল মুসলমানরাই নন, যে কোন ধর্মাবলম্বী বিবেকবান মানুষ এমন নোংরা ও কদর্য কাজ সমর্থন করতে পারেন না। সর্বস্তরের মানুষের এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশকে ভিত্তি করে দেশের আলেম সমাজ ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের একটি বিশাল অংশ ‘হেফাজতে ইসলামে’র ব্যানারে সংগঠিত হয়েছে। ইসলাম ও মুসলমানের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে সাধারণ মানুষ এক হয়ে জাতীয় জীবনে এক নতুন ধারা সংযোজন করেছে।আমি বার বার বলে আসছি যে হেফাজত যদি একমাত্র রাসূল সা: এর আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে তাদের আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে পারে ও বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় বড় দলের নেতৃত্বাধীন দুই জোটের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব থেকে দূরে থাকতে পারলে এবং দলনিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রাখতে পারলে, বর্তমান সময়ে এ সংগঠনটি আমাদের জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।যদি এ ভূমিকা যথাযথ পালন করতে পারে অল্পদিনের মধ্যেই ‘হেফাজতে ইসলাম’ আর দশটি ইসলামী রাজনৈতিক দলকে ইসলামের এক উম্মাহর দিকে ধাবিত করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস ও তাতে সন্দেহ নেই।তবে যদি তারা অন্যদের সাথে কমপ্রোমাইজ করে তাহলে তাদের আর কোন ঐতিহ্য থাকবে বলে আমার মনে হয় না।তাদের মনে রাখা প্রয়োজন ইসলামের অনেক দল তাদের নেতৃত্বের লোভের কারনে ইসলাম থেকে তারা দূরে সরে গিয়ে দূনিয়া ও আখেরাতের কল্যান বিনষ্ট করেছে।হেফাযতের যে ফর্মুলাটি প্রয়োজন তা হলো,প্রতিটি গ্রামে মসজিদ ভিত্তিক দ্বিনী তালিমের মাধ্যমে মানুষকে কোরআন ও ছহি সূন্নায় প্রশিক্ষিত করা।গ্রাম ভিত্তিক গরীব মানুষের সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে সুচিন্তিত করে তোলা। যতক্ষন ইসলামের কাজগুলো এভাবে সংগঠিত হয়ে না করা হবে ও মানুষ ঈমানি শক্তি অর্জন না করবে ততক্ষন পর্যন্ত ইসলামের সুফল পাওয়া যাবে না।
হেফাজতের প্রধান মুখপাত্র আল্লামা শফী স্পষ্ট ভাষাতেই ঘোষণা করেছেন যে, তাদের কোন রাজনৈতিক অভিলাষ নেই। কিন্তু তাদের কোন কোন মুখপাত্রের বক্তব্য তা থেকে কিছুটা ভিন্ন। তারা স্পষ্টতই রাজনৈতিক লক্ষ্যের আভাস দিচ্ছেন যা মুল নেতৃত্বের পরিপন্হি। তাই বিষয়টা পরিষ্কার হওয়া দরকার।কথা ও কাজে যদি এক না থাকা যায় তাহলে জাতির কাজে তারা নিজেরাই বিভ্রান্ত বলে বিবেচিত হবে।ইসলামের কাজ ইসলামের গতিতে করতে হবে।কোন সংঘর্যে জড়ালে তা আর অন্য সংগঠনের মতই মনে হবে।ব্লগে অনেক ব্যাক্তিত্ব সম্পর্নরাও জাতির সংস্কারের জন্য লিখেন সেজন্য বিবৃতি দেয়ার সময় সব ব্লগারদের একাকার করে কথা বলা সমিচিন নয়।তবে যারা যে কোন ধর্ম বিরোধি আপত্তিকর লেখালেখি করবে তাদের পরিস্কার ভাষায় সরকারকে ও দেশবাসিকে জানিয়ে দিলে কোন অসুবিধে থাকার কথা নয়।ইসলামের প্রচার করতে হবে অত্যন্ত সহনশীলতার সাথে।যারা কটু কথা বলে তাদের জবাব দিতে কুরআন ও ছহি সূন্নাহর আলোকে।দাবি দাওয়া একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার।দাবি যেমন প্রকাশ করতে হবে সুন্দর আচরনের মাধ্যমে আবার সরকারকে ও জন গনকে সুন্দর আচরনের মাধ্যমে তার সমাধান করতে হবে।বাকস্বাধীনতা বা ব্যক্তিস্বাধীনতা যেমন একজন নাগরিকের প্রছ্ছন্ন অধিকার তেমনি কোন ব্যক্তি যদি তার কথা ও কাজে সমাজে অসন্তোষ বা উত্তেজনা ছড়িয়ে জনগণের মধ্যে বিশৃংখলা বা সংঘাত সৃষ্টিতে ইন্ধন জোগায়, সেটাও গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সেই শাস্তি তাদের পেতেই হবে।
কেউ যদি সত্যই মানবতাবিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধ করে থাকে, তা অবশ্যই শাস্তিযোগ্য। একাত্তরে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধ করেছে তাদের অধিকাংশই সেদিনের আন্তর্জাতিক রাজনীতির কূটচালে পার পেয়ে গেছে। এত বছর পর মাত্র অল্প কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা সম্ভব হয়েছে। তাদের বিচার চলছে।বাকি যারা স্বজনপ্রিতির কারনে বাদ পড়েছে তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করে এই বিচার যথারীতি ও যথাশিগগির সমাপ্ত করে আমাদের জাতীয় জীবন থেকে একাত্তরের দুষ্ট ক্ষতটি চিরতরে বিদায় করতে হবে।তা না হলে এ নিয়ে যুগের পর যুগ রাজনীতির কলুষতা তৈরি হবে ও জন গনের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হবে।এখানে একটি জিনিস স্পষ্ট করে বলা দরকার যে, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে ধর্ম নিয়ে কোন সংঘাত বাধেনি। বাংলাদেশের মানুষ পাকিস্তানিদের চেয়ে বরাবরই অধিকতর ধর্মপ্রাণ। আমরা লড়াই করেছি পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ-ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে। আমরা পাকিস্তানের রাষ্ট্র কাঠামোতে আমাদের ন্যায্য হিস্যা চেয়েছি। সমঅধিকার ও পরিপূর্ণ গণতন্ত্র চেয়েছি। পাকিস্তানি শাসকরা এবং তাদের এদেশীয় সমর্থকরা আমাদের সেই সংগ্রামকে ‘ইসলামের বিরুদ্ধাচরণ’ হিসেবে প্রচার করে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। তারা পশ্চিম পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যে এই প্রচারণায় কিছুটা সফল হলেও বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ তাদের সেই প্রচারণায় বিভ্রান্ত হয়নি। দেশের সাধারণ মানুষ তাদের মতলব বুঝে নিয়েছে এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এদেশের প্রতিটি মসজিদে নিত্যদিন মুক্তিবাহিনীর বিজয়ের জন্য মোনাজাত হয়েছে। ঘরে ঘরে আমাদের স্বজনরা তাদের মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্য আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করেছেন। আমাদের মুক্তি সেনারা মাঠে ময়দান থেকে যুদ্ধে অংশ গ্রহন করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর জীবন বিপন্ন করে বিজয় চিনিয়ে এনেছে।আমাদের ইসলাম ও ইসলামের ভূমিকে এক নব জীবনে রুপায়িত করছে।আজ আমরা স্বাধীনতার পর নিজেরা বিভক্ত হয়ে দশকে অরাজকতার দিকে ঠেলে দিছ্ছি।৭১ এর পূর্বে পাকিস্তানিরা এদেশের জন গনকে শোষন করেছিল আর এখন শোষন করছে তাদের প্রেতাত্মারা।হেফাজতের ১৩ দফা এবং নারী অধিকার‘হেফাজতে ইসলামে’র মূল দাবি ইসলাম ও মহানবী (সা.) সম্পর্কে কটূক্তিকারী ব্লগারদের কঠোর শাস্তি। এই মূল দাবির সঙ্গে আরও অনেক দাবি যুক্ত করে তারা এখন ‘১৩ দফা দাবি’ তুলে ধরেছে। এসব দাবির পক্ষে-বিপক্ষে সভা-সমাবেশ-শোভাযাত্রা চলছে।বিরোধিতাকারীরা বলছেন, এসব দাবি মেনে নিলে দেশ ‘১৩ বছর’ পিছিয়ে যাবে। মধ্যযুগে ফিরে যাবে। তাদের মূল অভিযোগ, এই দাবিনামা ‘নারী স্বার্থবিরোধী’ এসব দাবি মেনে নিলে নারীরা ঘরের বাইরে বের হতে পারবে না। কারও সঙ্গে মেলামেশা করতে পারবে না। তারা কোন চাকরি-বাকরি করতে পারবে না। বিশেষ করে লাখ লাখ গার্মেন্ট কর্মীকে আবার ঘরের ফিরে যেতে হবে। এ নিয়ে দেশের নারী সমাজকে প্রতিবাদমুখর করার আয়োজন চলছে।হেফাজতের ১৩ দফা দাবির কোনটাই নতুন কিছু নয়। দেশের রক্ষণশীল আলেম-ওলামারা ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমল থেকেই এসব দাবি তুলে আসছেন। এ নিয়ে এতটা উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু আছে বলে মনে হয় না।
১৩ দফার মধ্যে যেসব দাবি বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিক, যেমন ইসলাম ও মহানবী (সা.)-এর অবমাননাকারীদের শাস্তি এবং এ নিয়ে সাম্প্রতিক আন্দোলনে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি ইত্যাদি বিষয়ে সরকার ত্বরিত ব্যবস্থা নিয়ে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে পারে। এসব দাবির বাইরে নারী অধিকার সম্পর্কিত বিষয়াদি নিয়েও আলোচনার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। সমাজের যে কোন অংশই তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরতে পারে। রাষ্ট্রকে সামগ্রিক বিবেচনায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধান খুঁজতে হবে। কেউ দাবি তুললেই তা যেমন সর্বক্ষেত্রে মেনে নেয়া যায় না, তেমনি সমাজের একটি বৃহৎ অংশের ইচ্ছা-অনিচ্ছা-প্রত্যাশাকেও সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে রাষ্ট্র পরিচালনা অসম্ভব। রাষ্ট্র জনগণের। তাই জনগণের সব অংশের চাওয়া-পাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারিত হতে হবে। বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। তাদের অধিকাংশই ধর্মপ্রাণ। এই রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের চিন্তা-ভাবনা ও পছন্দ-অপছন্দের প্রাধান্য থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। অন্যদেরও তার প্রতি সম্মান দেখাতে হবে।
অপরদিকে হেফাজতে ইসলাম এবং দেশের আলেম সমাজকেও ইসলামের ইতিহাসের দিকে লক্ষ্য করতে হবে,গত ১৪শ’ বছরেও ইসলামের সব অনুশাসন কোন মুসলিম দেশেই পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। বাংলাদেশেও তা তাৎক্ষণিকভাবে একদিনে আদায় হবে না। এক্ষেত্রে তাদের নৈতিক সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে এবং দাবি তুলে ধরার ক্ষেত্রে সব দিক বিবেচনায় নিতে হবে। বাংলাদেশ চলমান বিশ্বের বাইরে একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। আমাদের মুসলমান-অমুসলমান নির্বিশেষে দুনিয়ার তাবৎ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সহাবস্থান করতে হচ্ছে এবং বিচিত্র রীতিনীতি ও মনমানসিকতার মানুষকে নিয়েই একটি ভারসাম্যময় সমাজ গড়তে হবে। অন্যথায় আমাদের অগ্রযাত্রা পদে পদে বিঘ্নিত হবে।
তবে এক্ষেত্রে দেশের আলেম সমাজ এবং ধর্মপ্রাণ মানুষদেরও বাস্তবতা অনুধাবন করতে হবে। হেফাজতের ১৩ দফায় নারীনীতি বাতিল ও কোরআন-সুন্নাহবিরোধী সব আইন বাতিলের কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের সাম্প্রতিক নারীনীতি একটি বিস্তৃত বিষয়। এতে নির্দিষ্ট কোন বিষয়ে কারও দ্বিমত থাকতেই পারে। কিন্তু সাধারণভাবে নারীর উন্নয়ন ও অধিকার সংরক্ষণের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অবশ্যই জরুরি।
হেফাজতে ইসলাম তাদের দাবিনামায় ‘নারী-পুরুষের অবাধ ও অশালীন মেলামেশা’ বন্ধ করার কথা বলেছে। ‘ব্যভিচারে’র বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলেছে। মূলত এ নিয়েই তাদের প্রতিপক্ষ সবচেয়ে বেশি সোচ্চার। এটাকেই তারা নারীর স্বাধীনতা হরণ হিসেবে দেখছেন।‘নারী-পুরুষের অবাধ ও অশালীন মেলামেশা’ কোন সমাজেই গ্রহণীয় নয়। ‘ব্যভিচার’ পশ্চিমের নারী মুক্তির দেশেও অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। ব্যভিচারের সিংহভাগ মাশুল নারীকেই দিতে হয়।
বর্তমান সময়ে স্বাধীনতার নামে কোন কোন ক্ষেত্রে নারীকে সরাসরি পণ্যে পরিণত করে ‘নারী বিপণনে’র যে মহোৎসব চলছে, তা নিয়ে এখন পশ্চিমের দেশগুলোও রীতিমতো উদ্বিগ্ন। ‘ধর্ষণ’ ও ‘গণধর্ষণ’ এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার উৎস কোথায়? ‘ফ্যাশন শো’র নামে বিত্তবান দর্শকদের সামনে কোন জিনিসটি ‘শো’ করা হয়? ‘পরিধেয় বস্ত্র’, নাকি ‘পরিধানকারিণী নারী’? বর্তমানে ভারত থেকে আমদানিকৃত ‘আইটেম গানের’ নামে যে নৃত্য যুবকদের ও কোন কোন বয়স্কদেরওঔম্মাদ করে তুলছে, যার ফলে ছড়িয়ে পড়ছে ‘গণধর্ষণের’ মত ব্যাধি। একজন প্রায় বিবস্ত্র সুন্দরী শতাধিক সুঠাম দেহী পুরুষের মাঝখানে ‘একা’ একাই তিনি উদ্দাম নৃত্য এবং সব রকমের অঙ্গভঙ্গি ও মাখামাখি করে শতাধিক তরুণকে মাতিয়ে চলেছেন। দিল্লির বাসযাত্রী দামিনী নামের মেয়েটির গণধর্ষকরা কি তা থেকেই উদ্বুদ্ধ হয়েছিল?
ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে ধরনের ছবি ও ভিডিও প্রচারিত হয়, সেগুলো দেখার পর কোন সুস্থ-সবল তরুণ যদি পথভ্রষ্ট না হয়, তাহলে সেটা তার বিস্ময়কর আত্সংযম। যারা অতটা সংযমী হতে পারে না, তারা অনাসৃষ্টি কাণ্ড ঘটিয়ে বসলে সে জন্য দোষটা কার?এখন পর্নো ছবির নায়িকা রূপালী পর্দার নায়িকা হয়ে ‘সেলিব্রেটি’ হয়ে সমাজের উপরতলায় সমাদৃত হচ্ছে। সেই সমাজই আবার ধর্ষণ নিয়ে বাদ-প্রতিবাদ করে! শারুখ খান ,অমিতাভ বচ্চন , লতামুংগেস্কারের মত ব্যাক্তিত্বরা আবার বিবৃতিও দেন সে সমাজে বাস করতে তারা লজ্জা বোধ করেন অথচ তারাই এসব নগ্নতার আবিস্কারের পুরোধা। নগ্নতাই প্রগতিশীলতা নয়। আধুনিকতা মানেই ধর্মবিদ্বেষ নয়। হাতা কাটা ব্লাউজ পরলেই হাত কেটে দেয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু কেবল হাতা কাটা ব্লাউজ পরাই আধুনিকতা নয়। আধুনিক হতে হবে মনে ও মননে। বেগম রোকেয়া ফুল হাতা জামা পরতেন। শাড়ি পরতেন পর্দা-পুষিদা মতো। কিন্তু তার চেয়ে আধুনিক মহিলা আজকের দিনে ক’জন পাওয়া যাবে?
আমাদের নারী আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী ফরিদা আখতার ২১ এপ্রিল দৈনিক ইত্তেফাকে এ নিয়ে আলোচনা করেছেন। আমাদের অন্যান্য নারী নেত্রী, নারী সংগঠন ও সাধারণ নারীদেরও বিষয়টি যুক্তি ও বাস্তবতার নিরিখে দেখতে হবে। ইসলামের নারীনীতির কথা উঠলেই মধ্যযুগে বা ১৩শ’ বছর আগে চলে যাওয়ার কথা উঠবে কেন? ‘মধ্যযুগ’ তো বহুক্ষেত্রেই মানব উন্নয়নের দিকনির্দেশক। আর আমরা এখন যে পথে চলছি, কতক ক্ষেত্রে সেটা তো একেবারেই আফ্রিকার গভীর জঙ্গলে আদিম মানব-সমাজের উদ্দাম রঙ্গলীলার ‘আদিম যুগে’ ফিরে যাওয়া।হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ ও পাশাপাশি শাহবাগের ‘গণজাগরণে’র সংবাদ পরিবেশনে মিডিয়ার দ্বিমুখী আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। হেফাজতের অনুষ্ঠানে একজন মহিলা সাংবাদিক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাটি নিয়ে মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। আল্লামা শফী এজন্য দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। তবে দেখা দরকার তিনি কি ‘নারী’ হিসেবে আক্রান্ত হয়েছেন, নাকি মিডিয়া কর্মী হিসেবে? তার সঙ্গে কয়েকজন পুরুষ মিডিয়া কর্মীও আক্রান্ত হয়েছেন।তারা যেভাবে সংবাদ প্রচার করছিলেন, তাতে কি সাংবাদিকতার নীতিমালা কিংবা বস্তুনিষ্ঠতা রক্ষা করা হয়েছে? ওই একই দিনে শাহবাগের ‘গণজাগরণ মঞ্চে’র তুলনামূলকভাবে জনবিরল জমায়েতকে সার্বক্ষণিক লাইভ কভারেজ দেয়া হয়েছে প্রায় সব মিডিয়ায়। কিন্তু হেফাজতের লংমার্চ বা শাপলা চত্বরের জমায়েতের কভারেজ ছিল একেবারেই দায়সারা। শুধু দায়সারাই নয়, ‘নেগেটিভ’ হেফাজতের লংমার্চকে যেভাবে বাধা দেয়া হয়েছে, তা মিডিয়ার কভারেজ পায়নি বললেই চলে।
আমাদের ‘মুক্তমনা’রা অনেকে নারীর সব রকমের দুর্গতির জন্য ইসলামকে দায়ী করেন। ইসলাম নারীকে কোন অধিকার দেয় না, ঘরে বন্দি করে রাখে, নারীকে দাসী বানিয়ে রাখে, নারীর স্বাধীনতা হরণ করে ইত্যাদি। এই বক্তব্য বা প্রচারণা বাস্তবতার সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ, বিশেষত অন্যান্য ধর্মে নারীর অবস্থান বা অধিকার যেভাবে নির্ধারিত আছে তার তুলনায় ইসলামে নারীর অবস্থান ও অধিকার কোন পর্যায়ে আছে, সেই তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের বিশ্লেষণে না গিয়েই ঢালাওভাবে এসব মন্তব্য করা হয়। সত্য বটে, ইউরোপ-আমেরিকার আধুনিক সমাজ জীবনে নারী তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি স্বাধীনতা ও অধিকার ভোগ করে থাকে। কিন্তু এর কিছুই খ্রিস্ট ধর্ম বা ইহুদি ধর্মের অবদান নয়। পশ্চিমের এ দুটি ধর্মই নারীর অবস্থান বা অধিকারের প্রশ্নে ইসলামের চেয়ে অনেক বেশি রক্ষণশীল। ভারতে হিন্দু ধর্মের ক্ষেত্রেও তা-ই।
এটাও সত্য যে, সামাজিক রক্ষণশীলতার কারণে নারীকে যুগে যুগে অনেক অবহেলা, বঞ্চনা ও অত্যাচারের সম্মুখীন হতে হয়েছে। সমাজপতিরা এক্ষেত্রে ধর্মকে ছাতা হিসেবে ব্যবহার করেছে। আমাদের সমাজেও ইসলামকে সেভাবে অপব্যবহার করা হয়ে থাকে। জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত গ্রামে-গঞ্জে ‘ফতোয়াবাজি’।
ইসলাম ধর্মে ব্যাভিচারকে জঘন্যতম অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সমাজবদ্ধ জীবনে ‘ব্যভিচার’ সমাজ জীবনের শৃংখলা বিনষ্ট করে। সে কারণে ধর্মের অনুশাসন ছাড়াই তা নিন্দনীয়, বর্জনীয়। কাজেই এক্ষেত্রে ধর্মের এই অনুশাসনকে ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখতে হবে। কিন্তু ‘ব্যাভিচার’ প্রতিরোধের নামে নারীর ওপর অন্যায় অপবাদ চাপানো এবং তাকে কঠোর শাস্তি প্রদান করা যেন রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সব দায় যেন নারীর।ইসলামের হেফাজতের দায়িত্ব যারা নিয়েছেন, তাদের ইসলামে নারীর অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার বিষয়টি তুলে ধরতে হবে যুক্তি ও তথ্যের ভিত্তিতে। অতি-রক্ষণশীলতা পরিহার করে তাদেরও আধুনিক মনমানসের খোঁজখবর রাখতে হবে। ইসলাম ‘নারীবিরোধী’ নয়, আমাদের নারী সমাজকে সে ব্যাপারে আশ্বস্ত করা তাদের ঈমানি দায়িত্ব। এ দেশে ইসলাম আছে এবং থাকবে। আমাদের নারীদেরও সেই সমাজেই বাস করতে হবে।আর পুরুষদের তাদের ন্যার্য অধিকার ও ভালবাসা দিয়ে সিক্ত করে সহনশীল জীবনে অঙিকারে আবদ্ধ হতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
১৭৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন